কিতাব-উল-হাইয়াওয়ান (كتاب الحيوان; ইংরেজি: Book of Animals) হলো ১৯টি গ্রন্থের একটি আরবি ভাষার অনুবাদ সংকলন। অনূদিত গ্রন্থগুলো হলো:
হিস্টোরিয়া অ্যানিমেলিয়াম : গ্রন্থ ১ – ১০
ডি পার্টিবাস অ্যানিমেলিয়াম : গ্রন্থ ১১ – ১৪
ডি জেনারেশনি অ্যানিমেলিয়াম : গ্রন্থ ১৫ – ১৯।
মধ্যযুগীয় আরবি রীতি অনুসারে অনুবাদগুলো ইয়াহিয়া ইবনুল বাতরিকের বলে মনে করা হয়। তবে কয়েকজন সমকালীন পণ্ডিত ও গবেষক এরূপ নির্দেশের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন। এই আরবি সংস্করণগুলো ১২১৭ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে টোলেডোতে মাইকেল স্কটের ল্যাটিন অনুবাদ ডি অ্যানিমেলবাস-এর উৎস বলে ধারণা করা হয়।[১][২] সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপিগুলোর বেশ কিছু সংস্করণ লেইডেন, লণ্ডন এবং তেহরানে সংরক্ষিত আছে।[৩] তবে অ্যারিস্টোটলের তিনটি উৎসগুলো থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনূদিত পৃথক পৃথক খণ্ড একাধিকবার সম্পাদিত হয়েছে। মিশরীয় অস্তিত্ববাদী দার্শনিক আব্দুর রহমান বাদাভী গ্রন্থ ১ – ১০ পর্যন্ত (হিস্টোরিয়া অ্যানিমেলিয়াম) তিবা আল-হাইয়াওয়ান নামে[৪] এবং গ্রন্থ ১১ – ১৪ (ডি পার্টিবাস অ্যানিমেলিয়াম) আজজা আল-হাইয়াওয়ান নামে সম্পাদনা করেন।[৫] গ্রন্থ ১৫ – ১৯ (ডি জেনারেশনি অ্যানিমেলিয়াম) ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অ্যারিস্টোটলিস সেমিটিকো-ল্যাটিনাস সিরিজের অংশ হিসেবে প্রথম আবির্ভূত হয়।[৬] একই সিরিজের অংশ হিসেবে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থ ১১ – ১৪[৭] এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থ ১ – ১০ প্রকাশিত হয়।[৮]
আনুমানিক ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে আরব্য দার্শনিক আল-কিন্দির একটি লেখায় সর্বপ্রথম বইটির উল্লেখ করা হয় বলে জানা যায়। ইবনে সিনা তার বিশ্বকোষীয় গ্রন্থ আল-শিফায় বইটির ভাষান্তর করেন, এবং সম্পূর্ণ লিখিত গ্রন্থের ওপর মন্তব্য করেন; এ কারণে গ্রন্থটির ওপর ইবনে সিনার সম্যক ধারণা ছিল বলে মনে করা হয়। স্পেনে ১২শ শতাব্দীর দার্শনিক ইবনে বাজা ডি পার্টিবাস এবং ডি জেনারেশনি গ্রন্থের ওপর লেখালেখি করেন। হিস্টোরিয়া গ্রন্থের সাথে প্রাচ্যের ইসলামি বিশ্বের নির্দেশ খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে অন্য দুইটি বই পাশ্চাত্যের প্রতি নির্দেশ করে। এই ধারার অনুসারে ইবনে বাজার মতো ইবনে রুশদ-ও ডি পার্টিবাস এবং ডি জেনারেশনি গ্রন্থের ওপর লিখেন, যেখানে তিনি ইবনে সিনার ভাষান্তর বা ব্যাখ্যার সমালোচনা করেন।
কিতাব-উল-হাইয়াওয়ান অন্তত বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ জীববিজ্ঞানীর সাথে পরিচিত ছিল, যার মধ্যে আল-জাহিজ (কিতাব-উল-হাইয়াওয়ান), আল-মাসুদি (মুরাওওয়াজ আল-দাহাব), আবু হাইয়ান আল-তাওহিদি (আল-ইমতা ওয়াল-মুয়ানাসা), আল-কাজিনি (আজাইব আল-মাখলুকাত) এবং আল-দামিরি (হায়াত আল-হায়াওয়ান) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তারা হয়তো অ্যারিস্টোটলীয় কিতাব-আল-হাইয়াওয়ান-এর আরবি সংকলনের নির্দিষ্ট ধারার বিষয়ে পরোক্ষভাবে জানতেন। কেবলমাত্র মুসা বিন মাইমুনের প্রতি নির্দেশিত (সম্ভবত ভুলভাবে) মাকালা তুশতামালু আ লা ফুসুল মিন কিতাব আল-হাইয়াওয়ান গ্রন্থে আরও বিস্তারিত পাওয়া যায় এবং একাদশ শতাব্দীতে দামেস্কের নিকোলসের গ্রিক সংস্করণের অন্তত আংশিকভাবে লভ্য ছিল।
শেষ পর্যন্ত, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মাইকেল স্কট কর্তৃক কিতাব-উল-হাইয়াওয়ান-এর লাতিন অনুবাদ ডি অ্যানিমেলিবাস পূর্বোক্ত গ্রন্থের পশ্চিম ইউরোপে বাহিত হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও মাইকেল স্কট অনুবাদটি "নিজের নামে চালিয়েছেন" বলে ইংরেজ দার্শনিক রজার বেকন অভিযোগ করেন এবং এর অনুবাদক জনৈক আন্দ্রিয়াস নামক ইহুদি বলে মন্তব্য করেন। এর অর্থ হতে পারে যে, তিনি হয়তো আরবি পাণ্ডুলিপি অনুবাদে সহায়তা নিয়েছেন অথবা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে হিব্রু-আরবি বা হিব্রু থেকে অনুবাদ করে থাকতে পারেন। স্কটের ডি অ্যানিমেলিবাস-এর আংশিক সংস্করণ বর্তমানে উপলব্ধ।[৯]