হুহাই (胡亥) | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
চীনের সম্রাট | |||||||||
রাজত্ব | অক্টোবর, ২১০ - অক্টোবর ২০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | ||||||||
পূর্বসূরি | কিন শি হুয়াং | ||||||||
উত্তরসূরি | কিন সান শি | ||||||||
জন্ম | ২২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | ||||||||
মৃত্যু | ২০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (২২ বছর) | ||||||||
| |||||||||
রাজবংশ | কিন সাম্রাজ্য | ||||||||
পিতা | কিন শি হুয়াং |
কিন এর শি | |||||||||||
চীনা | 秦二世 | ||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আক্ষরিক অর্থ | কিন সাম্রাজ্য দ্বিতীয় প্রজন্ম | ||||||||||
|
কিন এর শি (চীনা: 秦二世; ফিনিন: Qín Èrshì; ম্যান্ডারিন: [tɕʰǐn ɑ̂ɻ ʂɨ̂]; ২২৯ – অক্টোবর, ২০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ছিলেন কিন সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট এবং কিন শি হুয়াংয়ের পুত্র। তিনি ২১০ থেকে ২০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ কিন সাম্রাজ্য শাসন করেন।
এই অল্প সময়ে তিনি ঝাও গাও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানসহ অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। এছাড়া তিনি বিশাল বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেন, সেনা সদস্য বৃদ্ধি করেন, কর বৃদ্ধি করেন এবং যেসব দূত তার কাছে খারাপ খবর নিয়ে আসত তাদের হত্যা করেন।[১]
দ্বিতীয় কিন সম্রাটের ব্যক্তিগত নাম ছিল হুহাই (胡亥)। প্রাচীন চীনা ভাষায় যার উচ্চারণ হল Ga-gə′।[২]
যদিও সিমা কিয়ান[৩] সহ অনেক ইতিহাসবেত্তা তার বংশপরিচয় নিয়ে সন্দিহান, তারা কিন এর শিকে কিন রাজ্যের য়িং পরিবারের একজন বলে অনুমান করেন। তার বংশের নাম ছিল ঝাও (বংশনাম) (趙)। আধুনিক চীনা নাম অনুসারে যদিও তাকে য়িং হুহাই নামে ডাকা হয়, কিন্তু প্রাচীন প্রথায় কখনো এভাবে নাম যুক্ত করা হত না এবং তার নাম কখনো য়িং, ঝাও বা কিন নামের সাথে যুক্ত করা হয় নি। [৪]
তার রাজউপাধি কিন এর শি (秦|二|世) মানে হল "দ্বিতীয় কিন প্রজন্ম"। এটা কিন এরশি হুয়াংডির (秦|二|世|皇帝) সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ হল "দ্বিতীয় প্রজন্মের কিন সম্রাট"। নামটি প্রথম সম্রাটের প্রতিষ্ঠিত নাম অনুসারে রাখা হয়। প্রথম সম্রাট ধারণা করেছিলেন সাম্রাজ্যটি হাজার হাজার প্রজন্ম পর্যন্ত শাসন করবে এবং তার উত্তরসূরীরা এই নাম বহন করবে। কিন্তু এই প্রথা তৃতীয় সম্রাট জিয়িংয়ের সময়ই শেষ হয়ে যায়, যখন কিন সাম্রাজ্য চু রাজ্য ও হান রাজ্যের লিউ বাং কর্তৃক বিপর্যস্ত ও বিলুপ্ত হয়।[৫]
কিন এর শির মৃত্যুর পর সেনাপ্রধান খোজা ঝাও গাও তার নিন্দা করেন এবং তার রাজকীয় সমাধি দিতে নিষেধ করেন। তাই তার নামে কোনো সমাধি নেই।
প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং পূর্ব চীনে অমরত্ব লাভের আশায় ভ্রমণকালে খ্রিস্টপূর্ব ২১০ অব্দের ১০ সেপ্টেম্বর (জুলিয়ান দিনপঞ্জি) শাকিউ প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবর আরও দুই মাস পরে প্রকাশ করা হয় এবং এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী লি সি এবং সেনাপ্রধান ঝাও গাও রাজধানী সিয়াংইয়াংয়ে ফেরত এসে সম্রাটের উইল পরিবর্তন করে।[৬]
সম্রাটের বড় পুত্র ফুসুর সিংহাসনে আরোহণের কথা থাকলে লি সি ও ঝাও গাও ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে যাতে ফুসুর প্রিয় সেনাপ্রধান মেং তিয়ানকে সরিয়ে দেওয়া যায়। কারণ মেং তিয়ান রাজদরবারে তাদের বিদ্রোহী ছিল। তাই ফুসু সিংহাসনে আরোহণ করলে তাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয় ছিল। লি সি ও ঝাও গাও মিলে কিন শি হুয়াংয়ের পক্ষ থেকে এক ফতোয়া জারি করে এবং ফুসু ও মেং তিয়ানকে আত্মহত্যা করার আদেশ দেন।[৭] তাদের পরিকল্পনা কার্যকর হয় এবং শি হুয়াংয়ের ছোট পুত্র হুহাই দ্বিতীয় সম্রাট হিসেবে কিন এর শি উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।[৬]
খ্রিস্টপূর্ব ২১০ অব্দে হুহাই যখন কিনের দ্বিতীয় সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করে তখন তার বয়স ছিল ২১। তিনি ঝাও গাওয়ের উপর নির্ভরশীল ছিলেন ফলে তিনি ঝাও গাওয়ের পুতুল হয়ে উঠেন।[৮] এক যুদ্ধাভিযানের পর ঝাও গাও তাকে গভর্নর ও সেনাপ্রধানদের পরীক্ষা করতে বলেন এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে বলেন। ফলে বিভিন্ন প্রদেশের ছয়জন যুবরাজকে তু (杜) বাজারে হত্যা করেন।[৩] পরে তিনি ছোট ছোট অপরাধের জন্য জনগণকে শাস্তি দিতে থাকেন। সম্রাটের ভাই জিয়াংলু (將閭) ও আরও দুই ভাইকে বন্দী করা হয়। কারাগারে তাদের মৃত্যুদন্ড পড়ে শুনানোর জন্য একজন দূত পাঠানো হয়। জিয়াংলু আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে বলেন তিনি কোনো অপরাধ করেন নি।[৪] তিনি ভাই তাদের তলোয়ার বের করে আত্মহত্যা করল। পরে ঝাও গাও বলেন এর শি এখনো অনেক ছোট এবং যেহেতু তিনি স্বর্গীয় সন্তান, কেউ তার কণ্ঠস্বর শুনতে পারবে না এবং তার চেহারা দেখতে পারবে না। সম্রাট প্রাসাদের অভ্যন্তরে থাকতে লাগলেন এবং শুধুমাত্র ঝাও গাওয়ের সাথে দেখা করতেন। ফলে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও তার সাথে দেখা করার সুযোগ পেত না।[৩]
দস্যু ও ডাকাত বাড়তে লাগল এবং বিভিন্ন দিক থেকে কিন সাম্রাজ্যে আক্রমণ করতে লাগল। চেন শেংসহ সেনা প্রধানদের অনেকে কিন এর শির শাসনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করল এবং ফুসুকে রাজ সিংহাসনে আরোহণ করার আগ্রহ জানাল। প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ২০৯ অব্দে ডাজেসিয়াং বিদ্রোহের মাধ্যমে।[৯] তারা তৎকালীন চু রাজ্যের এক অঞ্চলে বিদ্রোহ করে এবং চু রাজ্যকে পুনরায় শক্তিশালী করার ঘোষণা দেয়।[১০]
কিন এর শি তার পিতার মত সুযোগ্য ও দক্ষ না হওয়ায় দেশব্যাপী সংঘটিত বিপ্লব মোকাবেলা করতে পারেন নি। তার বিরুদ্ধে কিছু বিদ্রোহ দমন করা হলেও তার সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সবকিছু প্রথম সম্রাটের মৃত্যুর অল্প দিন পর থেকেই শুরু হয়।[১১] পরবর্তীতে এক দূত রাজদরবারে বিদ্রোহের খবর নিয়ে আসেন। সম্রাট তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করেন। এতে বাকি দূতরা তার কাছে খবর নিয়ে আসল বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে এবং দস্যুদের বন্দী করা হয়েছে। সম্রাট কোন প্রকার দুশ্চিন্তা ছাড়াই এই খবরে খুশি হলেন।[৩]
দস্যু ও ডাকাতদের আক্রমণ আরও বাড়তে থাকলে চ্যান্সেলর ফেং কুকি, প্রধানমন্ত্রী লি সি ও সেনাপ্রধান ফেং জিয়ে অভিযোগ জানান যে কিন সেনাবাহিনী বিপ্লব থামাতে পারছে না। তারা এপাং প্রাসাদ নির্মাণ বন্ধের প্রস্তাব দেন কারণ করের পরিমাণ বাড়ছে যা জনগণ দিতে পারছে না। সম্রাট তাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।[৩] তিনজন কোন অপরাধে অপরাধী কিনা তা পরীক্ষার জন্য তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফেং কুকি ও ফেং জিয়ে অসম্মানিত হওয়ার আগেই আত্মহত্যা করেন। লি সিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় এবং পরে পাঁচ যন্ত্রণাময় শাস্তি দিয়ে হত্যা করা হয়। [১০] ঝাও গাও সম্রাটকে আরও যারা আনুগত্য প্রকাশ করছে না তাদের খোঁজে বের করে শাস্তি দিতে বাধ্য করেন। মেং য়ি ও অন্যান্য প্রধান প্রধান মন্ত্রীদের হত্যা করা হয়। বারোজন রাজকুমারকে সিয়ানইয়াংয়ের এক বাজারে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় এবং দশজন রাজকুমারীকে ডুতে হত্যা করে তাদের দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়। [১২]
খ্রিস্টপূর্ব ২০৭ অব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর, খোজা ঝাও গাও সম্রাটের বিরুদ্ধে তার ক্ষমতার পরীক্ষা করল। সে সম্রাটের সামনে একটি হরিণ নিয়ে এসে বলল সেটা ঘোড়া।[১৩] সম্রাট হেসে বললেন হয়ত চ্যান্সেলর ভুল করে হরিণকে ঘোড়া বলছেন। সম্রাট রাজদরবারে উপস্থিত সকল পদস্থ কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করলেন। কেউ চুপ রইল, কেউ ঝাও গাওয়ের পক্ষ নিল। যেসব পদস্থ কর্মচারী হরিণকে হরিণ বলল ঝাও গাও তাদের হত্যা করল।[৩]
কিন দেশব্যাপী বিদ্রোহ দমন করতে সমর্থ হলে বিদ্রোহীরা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। কিনের সেনাবাহিনী ও খাদ্যের মজুদ কমতে থাকে। অবশেষে কিন সাম্রাজ্য ধোঁকা কবলে পরে জুলুর যুদ্ধে পরাজিত হয়। কিন এর শি বোকার মত কিন সেনাপ্রধান ঝাং হানকে হত্যা করেন। ফলে সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং প্রায় ২০০,০০০ সেনা সদস্যকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। সর্বমোট ৩০০,০০০ সেনা সদস্য মারা যায়। কিন এর শি তার আরও অনেক সেনা সদস্য বাকি আছে ভেবে এই পরাজয়কেও আমলে নেন নি। অবশেষে একজন সাহসী ও অনুগত খোজা তাকে সত্য ঘটনা জানান। কিন এর শি ঝাও গাওকে বন্দী করে তাকে অপরাধী সাবস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঝাও গাও আগে থেকে আন্দাজ করেছিলেন এমন কিছু হবে তাই ঝাও গাও তার কিছু অনুগত সৈনিককে দিয়ে সম্রাটকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র করেন। চারিদিকে সৈন্যবেষ্টিত এবং পালনোর পথ না পেয়ে কিন এর শি তার অনুগত খোজাকে জিজ্ঞাসা করেন কেন সে তাকে আরও আগে সত্য জানাল না। খোজা উত্তর দেন তার কারণ তিনি নিজেই। কেউ খারাপ সংবাদ নিয়ে আসলে তিনি তাকে হত্যা করতেন।[৩]
খ্রিস্টপূর্ব ২০৭ অব্দে কিন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পনের বছরের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। ফুসুর পুত্র জিয়িংকে আরও ছোট পদ দিয়ে কিন রাজ্যের রাজা করা হয়। জিয়িং ঝাও গাওকে হত্যা করেন এবং এক বছর পরেই লিউ বাংয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।[৮]
কিন এর শি ঝাও গাওয়ের সৈন্য পরিবেষ্টিত হয়ে খ্রিস্টপূর্ব ২০৭ অব্দের অক্টোবরে আত্মহত্যা করেন। দ্বিতীয় কিন সম্রাটের সমাধি ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডার নিকট সি'য়ানে অবস্থিত। সমাধিটি প্রথম কিন সম্রাটের সমাধি থেকে কম বিস্তৃত এবং এতে কোন টেরাকাটা সেনা নেই।[১৪]
দ্বিতীয় কিন সম্রাট এর শির নাম এর শি জু (二世祖) নামে ক্যান্টনিজ ভাষায়ও অন্তর্ভুক্ত হয়।[১৫] এটি একটি নেতিবাচক শব্দ যার অর্থ হল বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তান, যার মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতা বা দৈনন্দিন কাজের জন্য যে যোগ্যতার প্রয়োজন তার বালাই নেই।
ঘোড়া-হরিণ বিষয়ক ঘটনাকে জাপানি শব্দ বাকা দ্বারা ব্যাখা করা হয়, যার অর্থ হল বোকা।
কিন এর শি জন্ম: খ্রিস্টপূর্ব ২২৯ অব্দ মৃত্যু: খ্রিস্টপূর্ব ২০৭ অব্দ
| ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী কিন শি হুয়াং |
চীনের সম্রাট কিন সাম্রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ২১০ - ২০৭ অব্দ |
উত্তরসূরী কিন সান শি |