কিমচি (ইংরেজি ভাষায়: Kimchi; /ˈkɪmtʃiː/; কোরীয় ভাষায়: 김치, রোমান-হরফ: gimchi, IPA: [kim.tɕʰi]), হলো কোরীয় রন্ধনশৈলীতে প্রধান একধরনের সহযোগী পরিবেশণ খাবার পদ, যেটি স্বাদ-অনুসারে লবণ এবং গাঁজানো শাকসবজি যেমন নাপা বাঁধাকপি (napa cabbage) এবং কোরিয়ান মূলো, গোচুগারু "고추장” (কোরিয়ান মরিচের গুঁড়া), পেঁয়াজ পাতা, রসুন, আদা সহ বিভিন্ন ধরনের রূচিবর্ধক বস্তু এবং মশলা, এছাড়া জত্গাল "젓갈”(লবণযুক্ত সীফুড), ইত্যাদি দিয়ে তৈরি।[১][২] এটি বিভিন্ন ধরনের স্যুপ(soup) এবং স্টুতে (stew)- ও ব্যবহৃত হয়। এটি প্রায় প্রতিটি কোরিয়ান খাবারের সাথে সাইড্ ডিশ(Side dish) অর্থাৎ সহযোগী পরিবেশণ খাবার পদ হিসাবে খাওয়া হয়।[৩]
প্রতিলিপি | |
---|---|
হান্গল্হাঞ্জাসংশোধিত রোমান
ম্যাককান–রাইশাউর |
김치
gimchi kimch'i [kim.tɕʰi] |
প্রধান উপাদান হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজি দিয়ে তৈরি করা হয় শত শত রকমের কিমচি (김치) পদটি।[২] ঐতিহ্যগতভাবে, শীতের কিমচি, যাকে কিমজাং (김장) বলা হয়, শীতের মাসগুলিতে হিমায়িত হওয়া রোধ করার জন্য এবং গ্রীষ্মের মাসগুলিতে গাঁজন প্রক্রিয়াটিকে ধীর করার জন্য এবং যথেষ্ট ঠাণ্ডা রাখার জন্য বড় মাটির গাঁজন পাত্রে সংরক্ষণ করে ঢেকে সেটিকে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়, এই বড় পাত্রটিকে ওংগি (옹기) বলা হয়।[৪] এই বড় পাত্রগুলিকে বাড়ির বাইরে খোলা জায়গায় রাখা হয়, যেটি “জাংদোকদে (장독대)” নামে পরিচিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে, গৃহস্থালিরা কিমচি রেফ্রিজারেটর বেশি ব্যবহৃত করে কিমচি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য।[২] এটি বাংলার আচারের মতো।
“জি” (지) শব্দটি, যার উৎপত্তি প্রাচীন কোরীয় শব্দ “দিহি” (디히) থেকে, যেটি প্রাচীন কাল থেকে কিমচি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।[৫] শব্দ পরিবর্তনকে মোটামুটি এভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে:[৬]
মধ্য কোরীয় সময়ে “দিহি” (디히) শব্দটি জোসন (1392-1897) কালের বিভিন্ন বইতে খুঁজে পাওয়া যায়।[৭][৮] আধুনিক কোরীয় যুগে, প্রমিত ভাষায়(standard language) “–জি (Ji;지)” প্রত্যয় হিসেবে যুক্ত আছে (যেমন- জ্জানজি ”jjanji ; 짠지”, সকবাক-জি ”seokbak-ji ; 석박지”),[৯][১০] এবং পাশাপাশি গিওংসাং (Gyeongsang ; 경상) এবং জ্যল্লা (Jeolla ; 전라) উপভাষায় প্রত্যয় রূপে “–জি (Ji;지)” ও বিশেষ্য রূপে “জি” রয়েছে।[১১] “দি” রূপটি পিয়ংগান উপভাষায় (P'yŏngan dialect) সংরক্ষিত রয়েছে।[১২]
“কিমচি” (김치) শব্দটি হল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয় দেশের ভাষাতেই স্বীকৃত শব্দ। শব্দের আগের রূপের মধ্যে রয়েছে “তিমচাই” (timchɑi ; 팀ᄎᆡ), যেটি মধ্য-কোরীয় সময়ে প্রতিলিপিত হয়েছে চীন-কোরীয় শব্দ “沈菜” (আক্ষরিক অর্থে "নিমজ্জিত সব্জি") থেকে। “তিমচাই”(timchɑi;팀ᄎᆡ), “সোহাক এয়নহে” (Sohak Eonhae ; 소학 언해)-তে কোরীয় ভাষায় লিপিবদ্ধ রয়েছে,[১৩] 16 শতকের চীনা বই, “সাওষয়ে”(Xiaoxue)-এর থেকে।[১৪] শব্দের ক্ষেত্রে মধ্য কোরীয় থেকে আধুনিক কোরীয় শব্দের পরিবর্তনকে এভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে:[১৫]
“তিমচাই”(timchɑi ; 팀ᄎᆡ)-এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনিটি “দিমচাই”(dimchɑi ; 딤ᄎᆡ)-এ পরিবর্তিত হয়, তারপর “জিমচাই”(jimchɑi ; 짐ᄎᆡ)- এ পরিবর্তন হয়েছে। শব্দটি তখন কোরিয়ান ভাষায় ɑ (ㆍ) স্বরবর্ণ হারানোর সাথে সাথে “জিমচুই”(jimchui;짐ᄎᆡ) হয়ে ওঠে, তারপরে “কিমচি”(kimchi;김치) শব্দে পরিণত হয়। আধুনিক কোরীয় ভাষায়, হাঞ্জা অক্ষর “沈菜” উচ্চারণ করা হয় “চিমছে” (chimchae;침채) শব্দে, এবং কিমচি বা অন্য কিছু বোঝাতে ব্যবহৃত হয় না। কিমচি শব্দটিকে একটি চীনা- কোরীয় (sino-korean) শব্দ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।[১৫] অনেক আঞ্চলিক উপভাষায় শব্দের পুরানো রূপগুলি বজায় রাখা হয়েছে, যথা: জিমচ্যা”jimchae”(জ্যল্লা”jeolla”, হামগিং উপভাষা” Hamgyŏng dialects”),[১৬] জিমচি”jimchi”(ছুংছং” Chungcheong”; গাংওন” Gangwon”; গ্যায়ংগি” Gyeonggi”, গ্যায়ংসাং” Gyeongsang”, হামগ্যোং” Hamgyŏng”, জ্যল্লা” Jeolla” উপভাষা), [১৭]এবং দিমচি”dimchi”।[১৮]
কোরিয়ার তিন রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক নথি “সামগুক সাগি”(Samguk Sagi ; 삼국사기), যেখানে শাকসবজি গাঁজন করতে ব্যবহৃত আচারের বয়ামের কথাও উল্লেখ রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে ওই সময়ে গাঁজন করা শাকসবজি সাধারণত খাওয়া হত।[১৯][২০] সিল্লা (Silla) রাজবংশের সময়ে (57 খ্রিস্টপূর্বাব্দ – 935 খ্রিস্টাব্দ) “কিমচি” প্রচলিত হয়ে ওঠে কারণ সেই সময় বৌদ্ধধর্ম দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় একটি নিরামিষ জীবনধারা গড়ে উঠেছিল।[২১]
রেফ্রিজারেটরের (refrigerator) আগে শাকসবজির আচার তৈরির একটি আদর্শ পদ্ধতি ছিল, যা খাবারের জীবনকাল রক্ষা করতে সাহায্য করতো। কোরিয়াতে, কিমচি তৈরি করা হতো শীতকালে, শাকসবজির গাঁজানোর জন্য “ওংগি (옹기)” নামক ঐতিহ্যবাহী বাদামী চীনামাটির বড় পাত্র মাটিতে পুঁতে। এই শ্রম পরিবারের মধ্যে মহিলাদের মধ্যে একটি সুন্দর বন্ধন তৈরিতে সাহায্য করে।[২১] “কোরিয়ান মূলো” (Korean radish) নিয়ে একটি কবিতা যা ১৩শতকের একজন সাহিত্যিক “ই গিউবো” (Yi Gyubo ; 이규보) লিখেছেন, যেখানে দেখানো হয়েছে যে “মূলো কিমচি” গোরিও(Goryeo ; 고려) রাজবংশের রাজত্বের সময়কালে(918-1392)-ও একটি অংশ ছিল।[২২][২৩][২৪]
কিমচি(김치) হলো কোরীয় সংস্কৃতিতে একটি প্রধান সহযোগী পরিবেশণ খাবারপদ, তবে ঐতিহাসিক সময়ে এটি ঝাল স্বাদযুক্ত ছিল না।[২৫] কিমচির প্রাথমিক রেকর্ডে “রসুন এবং লঙ্কার” উল্লেখ নেই।[২৬] কিন্তু এখন লঙ্কা (chilli pepper) হলো কিমচির একটি আদর্শ উপাদান, এটি একটি নতুন “বিশ্ব ফসল” হওয়ার কারণে সপ্তদশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত কোরিয়ায় অজানা ছিল।[২৭] লঙ্কা (chilli pepper), মূলত আমেরিকার স্থানীয়, পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের দ্বারা পূর্ব এশিয়ায় প্রবর্তিত হয়েছিল।[২৬][২৮][[২৯] লঙ্কার(chilli pepper) প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় “জিবোং ইউসলের”(Jibong yuseol ; 지봉유설) 1614 সালে প্রকাশিত একটি এনসাইক্লোপিডিয়াতে।[১৯][৩০] খামার ব্যবস্থাপনার উপর “সাল্লিম গেয়ংজে”র(Sallim gyeongje ; 산림경제) লেখা (17-18 শতকের) একটি বইতে কিমচির সাথে লঙ্কার (chilli pepper) কথা উল্লেখ করেছেন।[১৯][৩১] যাইহোক, উনিশ শতক(19th century) পর্যন্ত কিমচিতে লঙ্কার ব্যবহার ব্যাপক ছিল না।[৩২] উনিশ শতক(19th century)- এর গোড়ার দিকের খাদ্যপ্রণালিগুলি আজকের কিমচির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।[৩৩][৩৪]
1766 সালের একটি বই “জ্ংবো সাল্লিম গেয়ংজে” (Jeungbo sallim gyeongje ; 증보산림경제)- তে, ছোংগাক-কিমচি “chonggak-kimchi” (ছোংগাক মূলো “총각무” দিয়ে তৈরি কিমচি), ওই-সোবাগি ”oi-sobagi” (শসা দিয়ে), সকবাক-জি ”seokbak-ji” (জোগি-জত “조기젓” দিয়ে), এবং দোংছিমি(Dongchimi ; 동치미) অগণিত উপাদান দিয়ে তৈরি কিমচির জাতগুলির প্রতিবেদন করে৷ [১৯][৩৫] যাইহোক, নাপা বাঁধাকপি শুধুমাত্র উনিশ শতক(19th century)- এর শেষের দিকে কোরিয়াতে প্রবর্তিত হয়েছিল,[৩২] এবং পুরো-বাঁধাকপির কিমচির যেটি বর্তমান কিমচির রূপের মতোনই, সেই সময়ের প্রকাশিত একটি রান্নার বই “সিউইজনসো”(Siuijeonseo ; 시의전서)- তে বর্ণনা করা রয়েছে।[৩৬]
ভিয়েতনাম যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার অংশগ্রহণের সময় কিমচি উৎপাদনের শিল্পায়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণ ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কারণ কোরিয়ান সরকার তার সৈন্যদের জন্য রেশন সরবরাহ করতে চেয়েছিল। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার সৈন্যরা খাদ্যের জন্য "মরিয়া" হয়ে উঠেছিল, এবং যাতে তারা সেটি মাঠে পেয়ে যেতে পারে সেইজন্যে কোরিয়ান সরকার আমেরিকার থেকে সাহায্যের অনুরোধ করেছিল।[৩৭][৩৮]
2008 সালে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ কম-ক্যালোরি, ভিটামিন-সমৃদ্ধ এবং ব্যাকটেরিয়া-মুক্ত (যদিও পৃথিবীতে গাঁজন সংঘটিত হওয়ার জন্য এটি অপরিহার্য, তারা আশঙ্কা করেছিলেন যে মহাজাগতিক রশ্মি তাদের পরিবর্তন করতে পারে) "স্পেস কিমচি" আবিষ্কার করে। “ই সো-ইয়ন"( Lee So-yeon; 이소연)- যিনি হলেন প্রথম মহাকাশচারী, তিনি তার সাথে সেটি "স্পেস কিমচি" মহাকাশে নিয়ে যান।[৩৯]
১৯৯৬ সালে কোরিয়া, কিমচির বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য জাপানিদের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলো, তর্কের বিযয় ছিল যে জাপানিদের উৎপাদিত কিমুচি, কিমচির থেকে আলাদা। জাপানি কিমচি ফারমেন্টেড ছিল না এবং অনেকটা আশাজুক-এর মতো ছিল। কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যানডার্ড-এর জন্য আইনত পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওয়ার্ড হেল্থ অরগানাইজেশন-এর সাথে যুক্ত, কোডেক্স অ্যালিমেন্টরিয়াস নামক একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে, যে সংস্থাটি বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য খাদ্য প্রস্তুতিকরণে স্বেচ্ছাসেবী সট্যানডার্ডকে সংজ্ঞায়িত করে।[৪০][৪১] ২০০১ সালে কোডেক্স অ্যালিমেন্টরিয়াস একটি স্বেচ্ছাসেবী সট্যানডার্ড বের করে, “একটি ফারনেন্টেড খাদ্য যেটিতে নুন মাখানো নাপা বাঁধাকপিকে প্রথান উপকরণরূপে ব্যবহার করা হয়, সিজনিং-র সাথে, এটি নিম্ন তাপমাত্রায়, ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরী প্রক্রিয়ার মধ্যে যা্য়” এইরূপে কিমচিকে সংজ্ঞায়িত করে; কিন্তু ফারমেন্টেশনের কোনো সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্দিষ্ট করা নেই অথবা কোনো অ্যাডিটিভের ব্যবহারেও নিষেধ নেই।[৪২] উল্লেখ্য কিমচি স্ট্যানডার্ডের অর্ন্তভুক্তির কারণে, কোরিয়ার কিমচি রপ্তানি বৃদ্ধি পায় কিন্তু তার সাথে চীনে কিমচি প্রস্তুতি ও কোরিয়ায় তার আমদানিও বৃদ্ধি পায়।[৩৮]
দক্ষিণ কোরিয়া, প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তাদের কোরিয়ায় ফেরা এবং কোরীয় হওয়ার প্রকৃত অর্থ কি সেটা শিখবার জন্য এক ধরনের বিশেষ কর্মসূচির ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি কর্মসূচি হলো কীভাবে কিমচি তৈরী করতে হয় তা শেখা।
২০১০ সালে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বাঁধাকপি ও কিমচি প্রস্তুতিকরণের অন্যান্য উপকরণগুলি চাষের সময় খুব কম পাওয়া যায় এবং ফলস্বরূপ কিমচির ও কিমচির উপকরণগুলির মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়। কোরীয় এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকা এই মূল্য বৃদ্ধিকে একটি জাতীয় দুর্বিপাক বলে বর্ণনা করেন।[৪৩] কিছু রেস্তোরাঁ, বিনামূল্যে কিমচিকে সাইড ডিশ হিসেবে দেওয়া বন্ধ করে, যেই ঘটনাকে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, একটি আমেরিকান হ্যামবার্গার রেস্তোরাঁর বর্তমানে কেচাপ না দেওয়ার সাথে তুলনা করে।[৪৪] দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার, কিমচির উপকরণের মূল্য দুর্বিপাকের কারণে কিমজাং সিজনের সাথে মিলের উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে, আমদানি করা বাঁধাকপির উপর তারিফের হার কমান।[৪৩]
ইউনেসকো-র 'রিপ্রেসেনন্টিটিভ রিসর্ট অফ্ ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ্ হিউম্যানিটি'-তে উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বারা কিমচি সম্বন্ধীয় বিষয় যুক্ত হয়েছে। এটি কিমচিকে দ্বিতীয় অধরা ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে, অন্যদিকে লোকগান "আরিরাং"-ও দুই কোরিয়ার দ্বারা জমা করা হয়েছিল।
কিমজাং হল কিমচি তৈরী এবং ভাগ করে নেওয়ার প্রথা যেটা শরতের শেষের দিকে পালন করা হয়, যেটিকে "গিমজাং, রিপাবলিক অফ কোরিয়ার কিমচি তৈরী এবং ভাগ করে নেওয়ার প্রথা" হিসেবেও তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গিমজাং প্রথার চল কোরিয়ার পরিচয় এবং পারিবারিক সহযোগিতাকে পুনরায় নিশ্চিত করে। গিমজাং প্রথা কোরিয়াবাসীদের আবার করে মনে করায় যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রকৃতির সাথে একত্রে, শান্তিতে থাকা প্রয়োজন যা অতি গুরুত্বপূর্ণ।[৪৫]
উত্তর কোরিয়ার কিমচি তৈরী, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তালিকাভুক্ত করা হয়।[৪৬] "রিপাবলিক অফ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক মানুষের কিমচি তৈরীর ঐতিহ্য"।[৪৭] সাধারণত উত্তর কোরিয়ার কিমচি, দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় কম মশলাযুক্ত হয়।[৪৮] সামুদ্রিক খাদ্য কম ব্যবহৃত হয় এবং লবণের পরিমাণও কম থাকে। শীতল জলবায়ু অঞ্চলে ফারমেন্টেশনে সুবিধার জন্য তিনি ব্যবহার করা হয়।[৪৯]
২০১২ সাল থেকে চীনের সরকার কোরিয়ার থেকে কিমচি আমদানি কার্যকরভাবে বাতিল করে সরকারী আইনের মাধ্যমে। কোডেক্স অ্যালিমেন্টরিস্ দ্বারা প্রকাশিত স্ট্যান্ডার্ডকে অবহেলা করে চীন বর্ণনা করে, কিমচি খাদ্যটির উৎস হল চীনা খাদ্য পাও শাই।[৫০] কিন্তু পাও শাইয়ের থেকে ভিন্ন উপায়ে তৈরি করার কারণে ফারমেন্টেশনের দরুণ কিমচিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পরিমাণে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা চীনের নিয়মকে ভঙ্গ করে।[৫১] ২০১২ সাল থেকে চীনে, কোরিয়ার কিমচির বাণিজ্যিক রপ্তানি শূন্য পৌঁছেছে, পরোক্ষভাবে চীনে এক্সিবিশন অনুষ্ঠানের কারণে অল্প পরিমাণ কোরিয়ার কিমচির আমদানি হয়ে থাকে।[৫০]
২০১৭ সালের নিউইয়র্ক টাইমস্-এর একটি পত্রে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার টিএইচএএডি ডেপ্লয়মেন্টের গ্ৰহণযোগ্যতার পরে, চীনের কোরিয়া বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, সরকার পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম কোরিয়ার দ্রব্য বয়কটে ইন্ধন যুগিয়েছে, চীনের জাতীয়তাবাদী মনোভাবসম্পন্ন মানুষজন কিমচি না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে।[৫২] এই পদক্ষেপকে আরেকদল জাতীয়তাবাদী মনোভাবসম্পন্ন মানুষ সমালোচনা করেছেন, তারা বলেছেন চীন আনুষ্ঠানিকভাবে, কোরিয়ার জাতিগোষ্ঠীকে বহুজাতিক রাষ্ট্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করেছিল এবং ইয়ানবিয়ান কোরিয়ান অটোনোমাস প্রিফেক্চার হলো কিমচির আদি উৎস। চীনা জাতীয়তাবাদী মনোভাবসম্পন্ন মানুষজনেরা কিমচিকে পাতি আচার বলেও সমালোচনা করেছেন,[৫৩] যেখানে চীনা কিমচি পাও শাইয়ের আক্ষরিক অর্থ হলো "সবজি আচার"।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যানডার্ডাইজেশন (আইএসও) পাও শাই তৈরীর নতুন নিয়মাবলী প্রকাশ করে।[৫৪] একই মাসে বিবিসি নিউজ জানায় যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অধিকৃত ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস্ দাবি করে, নতুন আইএসও স্ট্যান্ডার্ড ছিল "চীনের দ্বারা চালনা করা, কিমচির শিল্পের একটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড"।[৫৫] এটি দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়া ও মানুষের মধ্যে প্রচন্ড রাগের জন্ম দেয়,[৫৬][৫৭][৫৮][৫৯][৬০][৬১][৬২] অন্যদিকে চীনের কিছু নাগরিকরা এবিষয়ে তর্ক করে জানান যে চীনের অধিকার আছে, কিমচিকে তাদের নিজের বলে দাবি করার।[৬৩]
এই বিতর্ক উদিত হওয়ার পর, গ্লোবাল টাইমস্ এই বিতর্ককে "অনুবাদের ভুল বোঝাবুঝি" বলে দাবি করে এবং জানায় যে "কিমচি হলো একধরনের ফারমেন্টেড বাঁধাকপির আহার মা কোরিয়ার খাদ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, অন্যদিকে পাও শাই অথবা সিচুয়ান হলো সবজির আচার যেটি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশে উৎসগতভাবে জনপ্রিয়, বর্তমানে উত্তর চীনের অধিকাংশ অংশে সবচেয়ে জনপ্রিয়"।[৬৪] গ্লোবাল টাইমস্ আরো জানায় যে অনুরোধের পর বাইদু বাইকে নামক চীনা অনলাইন বিশ্বকোষ, বিতর্কমূলক অংশ "কোরিয়ার কিমচির উৎস চীনা"।[৬৪] দক্ষিণ কোরিয়ার মিনিস্ট্রি অফ কালচার, স্পোর্টস্ ও ট্যুরিজম্, পরবর্তীকালে নির্দেশিকা পেশ করে কিমচির সঠিক চীনা অনুবাদ "শিন কি" করার জন্য, যখন পূর্বের বিতর্কের সময় "পাও শাই" ছিল গ্ৰহণযোগ্য অনুবাদ।[৬৫]
মার্চ ২০২১-এ এক ব্যাক্তি দাবি করেন যে তিনি চীনে কিমচি শিল্পক্ষেত্রে কাজ করেন এবং তিনি উইবো-তে চীনের কিমচি তৈরী নিয়ে একটি বিতর্কমূলক সিন্ পোস্ট করেন।[৬৬] পোস্ট করা ছবিটিতে কিমচি তৈরীর জন্য বাঁধাকপিগুলি ঢাকনাবিহীন পাত্রে প্রসেস্ করা হচ্ছে। একটি খননকারী যন্ত্রের কাঁটা কিমচির পুকুরে ডূ্বে রয়েছে এবং এক ব্যক্তি কোনো পোশাক ছাড়া চীনা বাঁধাকপি আলাদা করছে। চীনের কতৃপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়াকে বর্ণনা করে যে এই "নির্বাচিত বাঁধাকপিগুলি" চীনা বাজারের জন্য, রপ্তানির জন্য নয়।[৬৭] ফলস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ার কতৃপক্ষ চীনের থেকে কিমচি আমদানির ক্ষেত্রে আরও নজরদারি বাড়ায়।
কিমচির বিভিন্ন জাতগুলি প্রধানত বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উপাদান এবং স্বাদের জন্য ব্যবহৃত মসলার মিশ্রণ দ্বারা নির্ধারিত হয়।
অনেক পরিবারের জন্য, তীব্র এবং মশলাদার খাবারপদ হলো গর্বের উৎস এবং এটি বাড়ির স্বাদ স্মরণ।[৬৮]
বিভিন্ন ধরনের বাঁধাকপি (নাপা বাঁধাকপি, বোমডং “봄동”, গোল বাঁধাকপি) এবং মূলো (কোরিয়ান মূলো, পোনিটেল মূলো “총각무”, গেগল মূলো ”게걸무”, ইওলমু মূলো ”열무”) হল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিমচি সবজি।[১][২]
অন্যান্য কিমচি শাকসবজির মধ্যে রয়েছে: অ্যাস্টার(aster), বেলুন ফুলের শিকড়(balloon flower roots), বারডক রুট(Burdock Root), সেলেরি(celery), চামনামুল(chamnamul), ধনেপাতা, ক্রেস(cress), ক্রাউন ডেইজি শাক(crown Daisy greens), শসা, বেগুন, রসুন, রসুনের গাছ (Garlic chives), আদা, কোরীয় অ্যাঞ্জেলিকা গাছের শিকড়(Korean angelica-tree shoots), কোরীয় পার্সলে(korean persley), কোরীয় ওয়াইল্ড চিভ (Korean wild chive), পদ্মের শিকড়(lotus roots), সরিষার শাক(mustard greens), পেঁয়াজ, পেরিলা পাতা(perilla leaves), বাঁশের অঙ্কুর(Bamboo shoot), মোমরডিকা চারেন্টিয়া(momordica charantia), কুমড়ো, মূলো শাক, রেপসিড পাতা(rapeseed leaves), স্ক্যালিয়ন(scallions), সামুদ্রিক শৈবাল(seaweeds), সয়াবিন গাছের অঙ্কুর (soybean sprouts), পালংশাক(spinach), সুগার বিটস (sugar beets), মিষ্টি আলু গাছের অঙ্কুর (sweet potato vines) এবং টমেটো।[৬৯]
ব্রিনিং সল্ট(Brining salt) অর্থাৎ খাওয়ায় উপযুক্ত সামুদ্রিক লবণ (রান্নাঘরের লবণের তুলনায় একটু বড় আকারের দানার মত), প্রধানত কিমচি সবজির প্রাথমিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি গাঁজনযুক্ত খাদ্যে স্বাদ আনতে সাহায্য করে।[৭০] মশলাদার কিমচি তৈরি করার সময় বাঁধাকপিতে সাধারণত দুইবার লবণ মাখানো বা মেশানো হয়।
সাধারণভাবে ব্যবহৃত মশলাগুলির মধ্যে রয়েছে কোরীয় লাল লঙ্কার পাউডার “গোচুগারু” (gochugaru ; 고춧가루), স্ক্যালিয়ন(scallion), রসুন, আদা এবং জতগাল (jeotgal ; 젓갈),[১][২] কোরিয়ান উপদ্বীপের ঠান্ডা উত্তর অংশে “জটগাল”, কাঁচা সামুদ্রিক খাবার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।[৭১] যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে মৃদু স্যাউজত “새우젓”(লবণযুক্ত চিংড়ি) বা জোগিজত”조개젓” (লবণযুক্ত ক্রোকার) পছন্দ করা হয় এবং উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে জতগালের পরিমাণও হ্রাস পেতে থাকে।[৭১] অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়াতে ভালো পরিমাণে তীব্র মিওলছিজট”멸치젓”(লবণযুক্ত অ্যানকোভিস) এবং গালচি-জট”갈치젓”(লবণযুক্ত হেয়ারটেল) সাধারণত ব্যবহৃত হয়। [৭১]কাঁচা সামুদ্রিক খাবার বা “ডেগু-আগামি-জট ; daegu-agami-jeot”(লবণযুক্ত কড গিলস) পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ব্যবহার করা হয়।[৭১]
লবণ, স্ক্যালিয়নস(scallions), রসুন, মাছের তৈরি একধরনের সস(fish sauce), এবং চিনি সাধারণত কিমচির স্বাদে যোগ করা হয়।[৭২]
যে কোনো কিমচি তৈরির প্রথম ধাপ হল বাঁধাকপি বা ডাইকনকে ছোটো টুকরোর আকারে কাটা।[৭৩] তারপর টুকরোগুলোকে সংরক্ষণের পদ্ধতি হিসেবে লবণ মাখানো হয়, লবণ সাহায্য করে বাঁধাকপি থেকে জল বের করে তাকে নরম এবং নমনীয় হতে।[৭৩] লবণাক্তকরণ পর্যায়ে 12 ঘন্টার জন্য 5 থেকে 7% লবণতা বা 3 থেকে 7 ঘন্টার জন্য 15% লবণতা ব্যবহার করতে পারে।[৭৪] অতিরিক্ত জল তারপর সরিয়ে, তাতে মসলার উপাদানগুলি যোগ করা হয়। [৭৩]মাঝে মাঝে যে চিনি যোগ করা হয় তা মুক্ত জল(free water)-কে আবদ্ধ করতেও কাজ করে যা এখনও রয়ে যায়, মুক্ত জলে(freewater)-র কার্যকলাপকে আরও কমিয়ে দেয়। পরিশেষে, শুকনো শাকসবজি একটি বায়ুরোধী জারে রাখা হয় এবং ঘরের তাপমাত্রায় 24 থেকে 48 ঘন্টার জন্য রেখে দেওয়া হয়।[৭৩] গাঁজন প্রক্রিয়ার সময় আদর্শ লবণের ঘনত্ব প্রায় 3% থাকে।[৭৪] যেহেতু গাঁজন প্রক্রিয়ার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়, তাই গ্যাস নির্গত করার জন্য জারটিকে প্রতিদিন ক্ষণিকের জন্যে খুলে রেখে আবার বন্ধ করে রাখা হয়।[৭৩] যত বেশি গাঁজন ঘটবে, তত বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড অন্তর্ভুক্ত হবে, যার ফলে খুব কার্বনেটেড-পানীয়-সদৃশ প্রভাব পড়বে।
কিমচিতে উপস্থিত অণুজীবগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যাসিলাস মাইকোয়েডস(Baciluss mycoids), বি. সিউডোমাইকোয়েডস(B. pseudomycoids), বি. সাবটিলিস(B. Sabitilis), ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্রেভিস(Lactobacillus brevis), এলবি কিমচি(Lb. kimchii), এলবি. কার্ভাটাস (Lb. curvatus), এলবি কিমচি (Lb. kimchii), এলবি. পেরাব্রেভিস(Lb. parabrevis), এলবি. পেন্টোসাস(Lb. pentosus), এলবি প্ল্যানটারাম (Lb. plantarum), এলবি সাকেই(Lb. sakei), এলবি স্পিচেরি(Lb. spicheri), লাক্টোকোকাস কির্নোস্যম(Lactococcus carnosum), এলসি. জেলিডাম(Lc. gelidum), এলসি. ল্যাকটিস(Lc. lactis), লিউকোনোস্টক কার্নোসাম(Leuconostoc carnosum), এলএন. সিট্রিয়াম(Ln. citreum), এলএন. গ্যাসিকোমিটেটাম(Ln. gasicomitatum), এলএন. গেলিডাম(Ln. gelidum), এলএন. হোলজাপফেলি(Ln. holzapfelii), এলএন. ইনহ্যা(Ln. inhae), এলএন. কিমচি(Ln. kimchii), এলএন. ল্যাকটিস(Ln. lactis), এলএন মেসেনটেরইডস(Ln. mesenteroides), সেরাটিয়া মারকেসেন্স(Serratia marcescens), ওয়েসেল্লা সিবেরিয়া(Weissella cibaria), ডব্লিউ. কনফুসা(W. confusa), ডব্লিউ. কেন্ডলেরি(W. kandleri), ডব্লিউ. কিমচি(W. kimchii), ডব্লিউ. কোরিনসিস(W koreensis), এবং ডব্লিউ. সোলি(W. Soli) ।[৭৫][৭৬][৭৭][৭৮][৭৯][৮০][৮১][৮২] আর্কেয়া(Archaea) এবং ঈস্ট(yeasts), যেমন স্যাকারোমাইসিস(Saccharomyces), ক্যান্ডিডা(Candida), পিচিয়া(Pichia) এবং ক্লুইভেরোমাইসেস(Kluyveromyces)- ও কিমচিতে উপস্থিত থাকে,[৮৩][৮৪] যেটি পরে অবাঞ্ছিত সাদা চড় অর্থাৎ সাদা আস্তরণের জন্য দায়ী যা কখনও কখনও খাবারবস্তুর মধ্যে তৈরি হয় এবং সেইসাথে খাবারটিকে নষ্ট এবং স্বাদহীন করে তোলে।[৮৩][৮৫]
প্রাথমিক গাঁজন পর্যায়ে, কম অ্যাসিড সহনশীলতা(acid tolerance) এবং মাইক্রোঅ্যারোফিলিক(microaerophilic)- এর বৈশিষ্ট্যের কারণে লিউকোনোস্টক(Leuconostoc) জাতটি কিমচির গাঁজনে বেশি প্রাধান্য পায়; লিউকোনোস্টক(Leuconostoc) জাতটিও কম লবণের ঘনত্বে ভাল বৃদ্ধি পায়।[৮৩] গাঁজন প্রক্রিয়া জুড়ে, অম্লতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, ল্যাকটোব্যাসিলাস(Lactobacillus) এবং ওয়েসেলিয়া(Wessellia) জাতগুলি তাদের উচ্চ অ্যাসিড সহনশীলতার কারণে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। ল্যাকটোব্যাসিলাস উচ্চতর লবণের ঘনত্বের সাথেও ভালভাবে বৃদ্ধি পায়।[৮৩]
প্রাকৃতিক মাইক্রোফ্লোরার(mycroflora) কারণে কিমচিতে এই অণুজীব(microorganisms)- গুলি বিদ্যমান থাকে।[৮৬][৭৪]কাঁচামাল লবণাক্ত করার পদক্ষেপের পাশাপাশি লাল লঙ্কার গুঁড়ো যোগ করায় মাইক্রোফ্লোরাতে(microflora) উপস্থিত প্যাথোজেনিক(pathogenic) এবং পট্রিফ্যাক্টিভ(putrefactive) ব্যাকটেরিয়াকে বাধা দেয়, এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া (lactic acid bacteria “LAB”) -কে বিকাশ লাভ করতে এবং প্রভাবশালী অণুজীব হয়ে উঠতে সাহায্য করে।[৮৬][৮৭]এই “অ্যানেরোবিক অণুজীব”(anaerobic microorganisms)-গুলি গাঁজনের মাঝামাঝি পর্যায়ে ক্রমাগতভাবে সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় এবং প্রায় 10℃ কম তাপমাত্রায়, 4.2-4 মান pH, এবং 1.5% - 4% NaCl এর উপস্থিতিতে থাকতে পছন্দ করে।[৮৩][৮৬] pH স্তরের দ্রুত হ্রাসের জন্য ব্যাকটেরিয়া সংস্কৃতির বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় একটি দ্রুত গাঁজন বেছে নেওয়া যেতে পারে।[৮৩]
যেহেতু কাঁচা ক্রুসিফেরাস সবজি নিজেই গাঁজন করার জন্য প্রয়োজনীয় LAB এর উৎস, তাই কিমচি উৎপাদনের জন্য কোনো স্টার্টার কালচারের প্রয়োজন হয় না; বরং, স্বতঃস্ফূর্ত গাঁজন ঘটে।[৮৮] প্রক্রিয়াকরণের শুরুতে উপস্থিত অণুজীবের মোট জনসংখ্যা গাঁজনের ফলাফল নির্ধারণ করে, যার ফলে চূড়ান্ত পণ্যটি গুণমান এবং স্বাদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিবর্তনশীল হয়।[৮৬]
বর্তমানে, চূড়ান্ত ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য গাঁজন চলাকালীন মাইক্রোবায়াল সম্প্রদায়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন প্রস্তাবিত পদ্ধতি নেই।[৮৮] কিমচির শিল্প উৎপাদনে, লিউ দিয়ে তৈরি স্টার্টার কালচারের। মেসেন্টেরয়েডস, লিউ. Citreum, এবং এলবি. প্লান্টারাম ব্যবহার করা হয়, যা প্রায়শই ব্যর্থ হয় কারণ তারা কাঁচামালের প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া সংস্কৃতির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ব্যর্থ হয়।[৮৩]
LAB ব্যাকটেরিয়া বিপাকের সময় উপজাত হিসাবে ল্যাকটিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন পারক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড দ্রুত পিএইচ কমিয়ে দেয়, একটি অম্লীয় পরিবেশ তৈরি করে যা লবণাক্ততা থেকে বেঁচে থাকা অন্যান্য অণুজীবের জন্য বসবাসের অযোগ্য।[৭৪]
এটি উপ-উপাদানের স্বাদ পরিবর্তন করে এবং কাঁচামালের পুষ্টির মান বাড়াতে পারে, কারণ গাঁজন প্রক্রিয়ায় জীবাণু সম্প্রদায় বি ভিটামিন সংশ্লেষিত করতে পারে এবং উদ্ভিদের টিস্যুতে সেলুলোজকে হাইড্রোলাইজ করে পুষ্টির মুক্ত করতে পারে যা সাধারণত মানুষের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট দ্বারা হজম হয় না।[৭৪] হাইড্রোজেন পারক্সাইড হ্রাসকৃত নিকোটিনামাইড এডেনাইন ডাইনিউক্লিওটাইড (NADH) এর অক্সিডেশন দ্বারা গঠিত হয় এবং কিছু অবাঞ্ছিত অণুজীবকে বাধা দেওয়ার জন্য একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করে।[৭৪] কার্বন ডাই অক্সাইড সংরক্ষণকারী হিসাবে কাজ করে, একটি অ্যানেরোবিক পরিবেশ তৈরি করতে অক্সিজেন ফ্লাশ করে, সেইসাথে চূড়ান্ত পণ্যে পছন্দসই কার্বনেশন তৈরি করে।[৭৪]
কিমচি তার শক্তিশালী, মশলাদার, স্বাদ এবং গন্ধের জন্য পরিচিত, যদিও হালকা জাত বিদ্যমান। গাঁজন প্রক্রিয়ার বৈচিত্র্যের কারণে চূড়ান্ত পণ্যটি গুণমান এবং গন্ধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিবর্তনশীল হতে পারে।[৮৬] তীব্র গন্ধ বিশেষ করে কিমচির রসুন এবং আদা থেকে আসা সালফার যৌগের সাথে যুক্ত, যা পশ্চিমাদের কাছে কম আকর্ষণীয় হতে পারে। এই জন্য, বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে আবেদন বাড়ানোর জন্য গন্ধ কমানোর জন্য এর উৎপাদন ব্যবহৃত ব্যাকটেরিয়াগুলির ধরন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।[৮৯] এই প্রচেষ্টাগুলি কিমচি প্রেমীদের দ্বারা সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত হয় না, কারণ এই প্রক্রিয়ায় স্বাদ প্রভাবিত হয়, এবং কেউ কেউ দেখেন যে "নিজস্ব রান্নার প্রধান সম্বন্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্ণনা" বিদেশীদের রুচির সাথে মানানসই করা হচ্ছে৷।[৯০]
কিমচি কোরিয়ান খাবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রন্ধনপ্রণালী । কোরিয়ান শব্দ "কিমচি" বলতে বোঝায় গাঁজন করা শাকসবজি, এবং এতে লবণ আর পাকা শাকসবজি রয়েছে।[৬৮] এটি প্রধানত প্রতিটি খাবারের সাথে একটি সাইড ডিশ হিসাবে পরিবেশন করা হয়, তবে এটি একটি প্রধান খাবার হিসাবেও পরিবেশন করা যেতে পারে।[৯১] কিমচি প্রধানত বিশ্বব্যাপী একটি মশলাদার গাঁজানো বাঁধাকপি খাবার হিসাবে স্বীকৃত।[২১]
কিমচির নতুন বৈচিত্র তৈরি হতে থাকে[৯২] এবং অঞ্চল ও ঋতুর উপর নির্ভর করে স্বাদ পরিবর্তিত হতে পারে।[৯৩] প্রচলিতভাবে, কিমচি প্রস্তুতির গোপনীয়তা মায়েদের দ্বারা তাদের কন্যাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা তাদের স্বামীদের উপযুক্ত স্ত্রী হিসাবে তৈরি হয়।[৯৪]
যাইহোক, বর্তমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে, বিশ্বব্যাপী অনেক ব্যক্তি এখন কিমচি প্রস্তুতির রেসিপি অ্যাক্সেস করতে পারেন। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং অনেক শ্রেণীর লোকেদের অনুকূলে গভীর-গন্ধযুক্ত এবং মশলাদার খাবার সরবরাহ করে এবং কোরিয়ান সংস্কৃতিকেও চিত্রিত করে।[৯৪]
কিমচিকে প্রধান উপাদান, অঞ্চল বা ঋতু দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। কোরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে তাপমাত্রার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।[৯৫] কিমচির 180 টিরও বেশি স্বীকৃত ধরন রয়েছে।[৯৬]
সবচেয়ে সাধারণ কিমচি বৈচিত্র্য:
১. বেচু-কিমচি (배추김치): মশলাদার নাপা বাঁধাকপি কিমচি, পুরো বাঁধাকপি পাতা থেকে তৈরি।
২. বেছু-গোথজেওড়ি (배추겉절이): আনফারমেন্তেড নাপা বাঁধাকপি কিমচি।
৩. বসাম-কিমচি (보쌈김치): মোড়ানো কিমচি।
৪. বায়েক-কিমচি (백김치): সাদা কিমচি, কাঁচামরিচ ছাড়া তৈরি।
৫. ডংচিমি (동치미): একটি অ-মসলা জলযুক্ত কিমচি।
৬. নাবক-কিমচি (나박김치): একটি হালকা মশলাদার জলযুক্ত কিমচি।
৭. চোংগাক-কিমচি (총각김치): কিউবড চোংগাক "পনিটেল" মূলা, একটি জনপ্রিয় মশলাদার কিমচি।
৮. কাকডুগি (깍두기): মশলাদার কিউবড কোরিয়ান মূলা তীব্র-গন্ধযুক্ত কিমচি যাতে গাঁজানো চিংড়ি থাকে।
৯. ওই-সোবাগী (오이소박이): শসা কিমচি যা সামুদ্রিক খাবার এবং মরিচের পেস্ট দিয়ে স্টাফ করা যায় এবং বসন্ত আর গ্রীষ্মের ঋতুতে এটি একটি জনপ্রিয় পছন্দ।
১০. পা-কিমচি (파김치): মশলাদার সবুজ পেঁয়াজ কিমচি।
১১. ইয়েওলমু-কিমচি (열무김치): বসন্ত এবং গ্রীষ্মের সময় এটি একটি জনপ্রিয় পছন্দ, এবং এটি ইওলমু মূলা দিয়ে তৈরি করা হয় আর অগত্যা গাঁজন করতে হবে না।
১২. গাট-কিমচি (갓김치): ভারতীয় সরিষা দিয়ে তৈরি।
১৩. ইয়াংবেচু-কিমচি (양배추 김치): মশলাদার বাঁধাকপি কিমচি, "হেডেড" বাঁধাকপির পাতা থেকে তৈরি (নাপা বাঁধাকপির বিপরীতে)।
কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কিমচিতে লবণ এবং লাল মরিচ কম থাকে এবং সাধারণত মসলা তৈরির জন্য ব্রাইন্ড সামুদ্রিক খাবার অন্তর্ভুক্ত করে না। উত্তর কিমচি প্রায়ই একটি জলীয় সামঞ্জস্য আছে। কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে তৈরি কিমচি, যেমন জিওলা-ডো এবং গেয়ংসাং-ডো, লবণ, কাঁচা মরিচ এবং মিয়োলছিজিওট, (멸치젓-ব্রাইন্ড অঞ্চোভী গাঁজন করা হয়) ব্যবহার করে অথবা সেউজিওট, (새우젓, ব্রাইন্ড চিংড়ি গাঁজন অনুমোদিত), মেওলছিএকজিওট, (멸치액젓), কাকনারিএকজিওট, (까나리액젓), তরল অ্যাঙ্কোভি জিওট, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবহৃত মাছের সসের মতো, তবে ঘন।
সেউজিওট (새우젓) বা মাইওলচিজিওটকে কিমচি মশলা মিশ্রণে যোগ করা হয় না, তবে গন্ধ কমাতে, ট্যানিকের স্বাদ এবং চর্বি দূর করতে প্রথমে সিদ্ধ করা হয় এবং তারপরে চাল বা গমের মাড় (풀) দিয়ে তৈরি একটি ঘন পদার্থের সাথে মিশ্রিত করা হয়।
সাদা কিমচি লাল বা মশলাদার নয়। এতে সাদা নাপা বাঁধাকপি কিমচি এবং অন্যান্য জাতের যেমন সাদা মূলা কিমচি (ডংচিমি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জলযুক্ত সাদা কিমচি জাতগুলি কখনও কখনও ডংচিমি ব্রাইনে (ডংচিমি-গুকসু) ঠান্ডা নুডলসের মতো বেশ কয়েকটি খাবারে উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
১.গোথজেওড়ি (겉절이) তাজা, আনফার্মেন্টেড কিমচি।
২. মুকউনজি (묵은지), মুকউনকিমচি (묵은김치), বয়স্ক কিমচি নামেও পরিচিত।
এই আঞ্চলিক শ্রেণিবিভাগটি ১৯৬০-এর দশকের এবং এতে প্রচুর ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে, কিন্তু কোরিয়ার বর্তমান কিমচি তৈরির প্রবণতাগুলি সাধারণত নীচে উল্লিখিতগুলির থেকে আলাদা।[৯৫]
১. পিয়ংগান-ডো (উত্তর কোরিয়া, পিয়ংইয়ংয়ের বাইরে): তীব্র খাদ্য সংকটের কারণে গ্রামীণ এলাকায় অপ্রচলিত উপাদান গ্রহণ করা হয়েছে।
২. হামগিয়ং-ডো (উচ্চ উত্তর-পূর্ব): সমুদ্রের কাছাকাছি থাকার কারণে, এই বিশেষ অঞ্চলের লোকেরা তাদের কিমচির মৌসুমে তাজা মাছ এবং ওয়েস্টার ব্যবহার করে।
৩. হোয়াংহে-ডো (মধ্যপশ্চিম): হোয়াংহে-ডোতে কিমচির স্বাদ মসৃণ নয় কিন্তু অত্যন্ত মশলাদার নয়। রেড চিলি ফ্লেক্স ব্যবহার করা হয় না বলে এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কিমচির রঙ কম। হোয়াংহে-ডো-এর জন্য সাধারণ কিমচিকে বলা হয় হোবাকজি (호박지)। এটি কুমড়া (বুন্দি) দিয়ে তৈরি করা হয়।
৪. গিঅংগি-ডো (হোয়াংহে-ডো এর নিম্ন মধ্যপশ্চিম)।
৫. ছুংছং-ডো (গিঅংগি-ডো আর জিওল্লা-ডু এর মাঝখানে): গাঁজনযুক্ত মাছ ব্যবহার করার পরিবর্তে, এই অঞ্চলের লোকেরা সুস্বাদু কিমচি তৈরি করতে লবণ এবং গাঁজনে নির্ভর করে। ছুংছং-ডোতে কিমচির সবচেয়ে বেশি প্রজাতি রয়েছে।
৬. গ্যাংওন-ডো (দক্ষিণ কোরিয়া)/ কাংওন-ডো (উত্তর কোরিয়া) (মধ্যপশ্চিম): গ্যাংওয়ান-ডোতে, কিমচি দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। কোরিয়ার অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের মতো, এই এলাকার কিমচিতে খুব বেশি লবণযুক্ত মাছ নেই।
৭. জিওল্লা-ডু (নিম্ন দক্ষিণ-পশ্চিম): লবণাক্ত হলুদ করভিনা এবং লবণাক্ত বাটার ফিশ এই অঞ্চলে কিমচির জন্য বিভিন্ন মশলা তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
৮. গিয়ংসাং-ডো (নিম্ন দক্ষিণ-পূর্ব): এই অঞ্চলের রন্ধনপ্রণালী লবণাক্ত এবং মশলাদার। সবচেয়ে সাধারণ মশলা উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে মায়োলচিজিওট (멸치젓) যা একটি উজ্জ্বল এবং সুস্বাদু স্বাদ তৈরি করে।
৯. বিদেশী দেশ: বিশ্বের কিছু জায়গায় মানুষ কখনও কখনও পশ্চিমা বাঁধাকপি এবং ব্রোকলির মতো অন্যান্য বিকল্প উপাদান দিয়ে কিমচি তৈরি করে।[৯৭][৯৮]
বিভিন্ন ধরনের কিমচি ঐতিহ্যগতভাবে বছরের বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হত, বিভিন্ন শাকসবজি কখন মৌসুমে ছিল এবং হিমায়নের যুগের আগে গরম এবং ঠান্ডা ঋতুর সুবিধা নেওয়ার উপর ভিত্তি করে। যদিও আধুনিক রেফ্রিজারেশনের আবির্ভাব – যার মধ্যে কিমচি রেফ্রিজারেটরগুলি বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের সাথে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে বিভিন্ন জাতের কিমচিকে ফারমেন্টেশনের বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বোত্তম তাপমাত্রায় রাখা যায় – এই ঋতুকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে, কোরিয়ানরা ঐতিহ্যগত ঋতু পছন্দ অনুযায়ী কিমচি খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছে।[৯৯]
শীতকালে দীর্ঘ সময় ধরে জিমজাং কিমচি (김장김치) খাওয়ার পর, কিমচি তৈরিতে তাজা পাত্র ভেষজ এবং শাকসবজি ব্যবহার করা হত। এই ধরনের কিমচি গাঁজন করা হয় না বা এমনকি দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয় না কিন্তু তাজা খাওয়া হয়।
ইয়েওলমু মূলা এবং শসা হল গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি যা কিমচি, ইওলমু-কিমচি (열무김치) হিসাবে তৈরি করা হয় যা বেশ কয়েকটি কামড়ে খাওয়া হয়। ব্রাইন্ড মাছ বা শেলফিশ যোগ করা যেতে পারে, এবং তাজা মাটির শুকনো মরিচ প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।
বেচু কিমচি তৈরি করা হয় মিশ্রিত স্টাফিং উপকরণ দিয়ে, যাকে বলা হয় সোক (আক্ষরিক অর্থে ভিতরে), নোনা করা পাতার স্তরের মধ্যে, পুরো নাপা বাঁধাকপি। সোক (속) এর উপাদানগুলি অঞ্চল এবং আবহাওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
সাধারণত, ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে বেচু কিমচি একটি শক্তিশালী নোনতা স্বাদ ধারণ করত, যার আগে প্রচুর পরিমাণে মায়োলচিজিওট বা স্যুজিওট ব্যবহার করা হত।
গোগুমাসুন কিমচি মিষ্টি আলুর ডালপালা দিয়ে তৈরি করা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে, শীতকালে সবচেয়ে বড় ধরনের কিমচি পাওয়া যেত। দীর্ঘ শীতের মাসগুলির প্রস্তুতির জন্য, অনেক ধরনের কিমজাং কিমচি (김장 김치) শীতের শুরুতে প্রস্তুত করা হয় এবং বড় কিমচি পাত্রে মাটিতে সংরক্ষণ করা হয়।আজ, অনেক শহরের বাসিন্দা আধুনিক কিমচি রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করেন যা কিমজাং কিমচি সংরক্ষণ করতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সরবরাহ করে।নভেম্বর এবং ডিসেম্বর ঐতিহ্যগতভাবে যখন লোকেরা কিমচি তৈরি করতে শুরু করে; মহিলারা প্রায়ই শীতের কিমচি প্রস্তুতিতে সাহায্য করার জন্য একে অপরের বাড়িতে একত্রিত হন।[৪৪] মূলা, পার্সলে, পাইন বাদাম, নাশপাতি, চেস্টনাট, টুকরো টুকরো লাল মরিচ, মান্না লাইচেন (কোরিয়ান: 석이 버섯; RR: seogi beoseot), রসুন এবং আদার পাতলা স্ট্রিপ দিয়ে ভরা লবণাক্ত বায়েচু দিয়ে "বায়েচু কিমচি" তৈরি করা হয়।
২০০৪ সালে উদ্ভিজ্জ সংরক্ষণ সম্পর্কিত একটি বইয়ে বলা হয়েছে যে কোরিয়ান পরিবারগুলিতে সবচেয়ে প্রস্তুত ধরনের কিমচি থেকে কম প্রস্তুত ধরনের কিমচি পর্যন্ত তৈরির অগ্রাধিকার ছিল: বেচু কিমচি, সবচেয়ে প্রস্তুত ধরনের কিমচি, কক্কডুগি, ডংচিমি এবং তারপরে চোঙ্গাক কিমচি। বইটিতে বলা হয়েছে যে বায়েচু কিমচি বাজারজাত কিমচির সত্তর শতাংশের বেশি এবং মূলা কিমচি বাজারজাত কিমচির প্রায় বিশ শতাংশ নিয়ে গঠিত।[১০০]
কিমচি একটি ঐতিহ্যবাহী সাইড ডিশ হিসাবে পরিচিত কারণ এটি প্রায় সবসময়ই বেশিরভাগ কোরিয়ান পরিবারে এবং রেস্তোরাঁয় অন্যান্য খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়। কিমচি শুধু বা সাদা বা ব্রাউন চালের সাথে খাওয়া যেতে পারে, তবে এটি পোরিজ, স্যুপ এবং রাইস কেক সহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেসিপিতেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিমচি স্ট্যু (김치찌개), কিমচি প্যানকেক (김치전), কিমচি স্যুপ (김칫국), এবং কিমচিউপ্চিউক (김치볶음밥), এর মতো অনেক ডেরিভেটিভ খাবারেরও ভিত্তি।
আর্মি বেস স্টু (부대찌개) স্প্যাম, সসেজ এবং কিমচি দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি কোরিয়ান যুদ্ধের পরে এমন উপাদানগুলির সাথে উদ্ভূত হয়েছিল যা সেনাবাহিনী থেকে ছিন্ন করা হবে।
কিমচি বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে তৈরি[১০১] এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকা সত্ত্বেও ডায়েটারি ফাইবারের উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে। কিমচিতে ব্যবহৃত সবজি ভিটামিন এ, থায়ামিন (বি১), রিবোফ্লাভিন (বি২), ক্যালসিয়াম এবং আয়রন গ্রহণে অবদান রাখে।[১০২][১০৩]
খাদ্যগুণ | প্রতি ১০০ গ্রামে | পুষ্টিগুণ | প্রতি ১০০ গ্রামে |
---|---|---|---|
খাদ্যশক্তি | ৩২ | বাষ্প | ৮৮.৪ গ্রা |
মোট প্রোটিন | ২.০ গ্রা | মোট লিপিড | ০.৬ গ্রা |
মোট শর্করা | ১.৩ গ্রা | মোট ক্রূড ফাইবার | ১.২ গ্রা |
অশোধিত ছাই | ০.৫ গ্রা | ক্যালসিয়াম | ৪৫ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২৮ মিলিগ্রাম | ভিটামিন A | ৪৯২ আই ইউ |
ভিটামিন B1 | ০.০৩ মিলিগ্রাম | ভিটামিন B2 | ০.০৬ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ২.১ মিলিগ্রাম | ভিটামিন C | ২১ মিলিগ্রাম |
সন্ধানের (ফারমেনটেশনের)
সময় (সপ্তাহ) |
ক্যারোটিন (μg% বর্ণনা প্রয়োজন) | ভিটামিন B1
(μg%) |
ভিটামিন B2
(μg%) |
ভিটামিন B12
(μg%) |
নিয়াসিন
(μg%) |
ভিটামিন C
(μg%) |
---|---|---|---|---|---|---|
০ | ৪৯.৫a | ৪১.৭ | ৬৬ | ০.১৭ | ৭৪০ | ২৮.৯ |
১ | ৪৪.০ (৩৫.৪) b | ৪১.৬ (৪০.১) | ৪৭ (৫৪) | ০.০৯ (০.০৯) | ৭৮১ (৭৪৭) | ২৫.০ (২৫.৩) |
২ | ৩২.০ (৩০.৪) | ৭০.৯ (৬১.৯) | ১১০ (৯৯) | ০.১৯ (০.২০) | ৯২৮ (৮৬১) | ২৭.৮ (২৮.৫) |
৩ | ২৬.৬ (২৬.৯) | ৭৯.১ (৮৭.৫) | ২৩০ (১৫৭) | ০.২৫ (০.৩৩) | ৯০১ (৭৯২) | ২৩.৬ (২২.৩) |
৪ | ২১.০ (২৫.৩) | ৬২.৭ (৭০.৮) | ৩৫ (৯৫) | ০.২০ (০.২৬) | ৫৯১ (৫২৫) | ১৬.৭ (১৬.০) |
৫ | ২৪.২ (২০.১) | ৫৩.৩ (৪৯.১) | ৪০ (৩৭) | ০.১০ (০.১৬) | ১১.১৬ (১১.০) | |
a প্রাকৃতিক উপায়ে ফারমেনটড বেচু কিমচি
b চারটি কিমচির গড় পরিমান; সাধারণ কিমচি +৩টি অন্য ধরনের স্টার্টার ইনোকুলেটেড কিমচি | ||||||
তথ্যসূত্র: হুই এট অল. (২০০৫) যে লি এট অল. সাইট করেছেন (১৯৬০)[১০৫] |
উপাদান | বেচু-কিমচি | কাকতুগি | গাত-কিমচি | পা-কিমচি | বেক-কিমচি | ইয়লমু-কিমচি | দংচিমি-কিমচি | নাবাক-কিমচি |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ক্যালোরি (কিলোক্যালোরি) | ১৮ | ৩৩ | ৪১ | ৫২ | ৮ | ৩৮ | ১১ | ৯ |
বাষ্প (%) | ৯০.৮ | ৮৮.৪ | ৮৩.২ | ৮০.৭ | ৯৫.৭ | ৮৪.৫ | ৯৪.২ | ৯৫.১ |
মোট প্রোটিন (গ্রা) | ২ | ১.৬ | ৩.৯ | ৩.৪ | ০.৭ | ৩.১ | ০.৭ | ০.৮ |
মোট লিপিড (গ্রা) | ০.৫ | ০.৩ | ০.৯ | ০.৮ | ০.১ | ০.৬ | ০.১ | ০.১ |
অশোধিত ছাই (গ্রা) | ২.৮ | ২.৩ | ৩.৫ | ৩.৩ | ১.৫ | ৩.২ | ২ | ১.৫ |
কার্বোহাইড্রেট (গ্রা) | ৩.৯ | ৭.৪ | ৮.৫ | ১১.৮ | ২ | ৮.৬ | ৩ | ২.৫ |
ডায়েটারি ফাইবার (গ্রা) | ৩ | ২.৮ | ৪ | ৫.১ | ১.৪ | ৩.৩ | ০.৮ | ১.৫ |
তথ্যসূত্র: তামাং (২০১৫) যে লি সাইট করেছেন (২০০৬)[১০৬] |
ভিটামিন | বেচু-কিমচি | কাকতুগি | গাত-কিমচি | পা-কিমচি | বেক-কিমচি | ইয়লমু-কিমচি | দংচিমি-কিমচি | নাবাক-কিমচি |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভিটামিন A (RE) | ৪৮ | ৩৮ | ৩৯০ | ৩৫২ | ৯ | ৫৯৫ | ১৫ | ৭৭ |
ভিটামিন A (β-ক্যারোটিন) (গ্রা) | ২৯০ | ২২৬ | ২৩৪২ | ২১০৯ | ৫৩ | ৩৫৭৩ | ৮৮ | ৪৬০ |
ভিটামিন B1 (মিলিগ্রাম) | ০.০৬ | ০.১৪ | ০.১৫ | ০.১৪ | ০.০৩ | ০.১৫ | ০.০২ | ০.০৩ |
ভিটামিন B2 (মিলিগ্রাম) | ০.০৬ | ০.০৫ | ০.১৪ | ০.১৪ | ০.০২ | ০.২৯ | ০.০২ | ০.০৬ |
নি্য়াসিন (মিলিগ্রাম) | ০.৮ | ০.৫ | ১.৩ | ০.৯ | ০.৩ | ০.৬ | ০.২ | ০.৫ |
ভিটামিন C (মিলিগ্রাম) | ১৪ | ১৯ | ৪৮ | ১৯ | ১০ | ২৮ | ৯ | ১০ |
ভিটামিন B6 (মিলিগ্রাম) | ০.১৯ | ০.১৩ | ||||||
ফোলিক অ্যাসিড (μg) | ৪৩.৩ | ৫৮.৯ | ৭৪.৮ | |||||
ভিটামিন E (মিলিগ্রাম) | ০.৭ | ০.২ | ১.৩ | |||||
পাওয়া যায়নি: ভিটামিন (রেটিনল), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন B12, ভিটামিন K | ||||||||
তথ্যসূত্র: তামাং (২০১৫) যে লি সাইট করেছেন (২০০৬)[১০৬] |
২০০৩ সালের একটি পত্র অনু্যায়ী দক্ষিণ কোরিয়ানরা প্রতি মানুষ পিছু বছরে ১৮ কেজি (৪০lbs) কিমচি আহার করে।[৪০] অনেকে কোরিয়ান চমককে এই খাদ্যগ্রহণের পিছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।[৩৭] ০১৫-র একটি বই ২০১১-র একটি সূত্রকে সাইট করেছে, যেখানে বলা আছে পূর্ণবয়স্ক কোরিয়ানরা দিনে ৫০ গ্রাম (০.১১ lb) থেকে ২০০ গ্রাম (০.৪৪ lb) গ্রহণ করে।[১০৬]
২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রায় $১২৯ মিলিয়ন ব্যয় করে ২৫৭,০০০ মেট্রিক টন বিদেশি কিমচি কেনার জন্য, ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী কোরিয়া কাসটমস্ সারভিস অনুযায়ী ১১গুনের বেশি রপ্তানি হয়।[১০৭] দক্ষিণ কোরিয়া প্রতি বছর ১.৮৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কিমচি অথবা ৩৬.১ কেজি প্রতি মানুয পিছু গ্রহণ করে।[১০৮] এটি, এই দেশ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি করে মূলত চিন থেকে এবং $৪৭.৩ মিলিয়ন কিমচি বাণিজ্যে ঘাটতি ঘটায়।[১০৯]
বছর | পরিমাণ (টন) | মূল্য (হাজার ইউ এস ডলার) | |||
---|---|---|---|---|---|
রপ্তানি | আমদানি | রপ্তানি | আমদানি | অবশিষ্ট | |
২০২০ | ৩৯,৭৪৮ | ২৮১,১৮৭ | ১৪৪,৫১১ | ১৫২,৪২৬ | -৭,৯১৫ |
২০১৯ | ২৯,৬২৮ | ৩০৬,০৫০ | ১০৪,৯৯২ | ১৩০,৯১১ | -২৫,৯১৯ |
২০১৮ | ২৮,১৯৭ | ২৯০,৭৪২ | ৯৭,৪৫৬ | ১৩৮,২১৫ | -৪০,৭৫৯ |
২০১৭ | ২৪,৩১১ | ২৭৫,৬৩১ | ৮১,৩৯৩ | ১২৮,৬৭৯ | -৪৭,২৮৬ |
২০১৬ | ২৩,৪৯০ | ২৫৩,৪৩২ | ৭৮,৯০০ | ১২১,৪৮৫ | -৪২,৫৮৫ |
২০১৫ | ২৩,১১১ | ২২৪,১২৪ | ৭৩,৫৪৩ | ১১৩,২৩৭ | -৩৯,৬৯৪ |
২০১৪ | ২৪,৭৪২ | ২১২,৯৩৮ | ৮৪,০৩৩ | ১০৪,৩৯৬ | -২০,৩৬৩ |
২০১৩ | ২৫,৬৩১ | ২২০,২১৮ | ৮৯২৭৭ | ১১৭,৪৩১ | -২৮,১৫৪ |
২০১২ | ২৭,৬৬৪ | ২১৮,৮৪৫ | ১০৬,৬০৮ | ১১০,৮৪২ | -৪,২৩৪ |
২০১১ | ২৭,৪২৯ | ২৩০,০৭৮ | ১০৪,৫৭৭ | ১২০,৮৭৪ | -১৬,২৯৭ |
২০১০ | ২৯,৬৭২ | ১৯২,৯৩৬ | ৯৮,৩৬০ | ১০২,০১৯ | -৩,৬৫৯ |
কিমচির ব্যবসায়িক উৎপাদনের জন্য, কানাডিয়ান ফুড ইনস্পেকশন এজেন্সির কিছু নিয়ম আছে। সর্বশেয স্তরের উৎপাদনের pH অবশ্যই ৪.২ থেকে ৪.৫ এর মধ্যে হতে হবে।[১১১] দাইকন ও নাপা বাঁধাকপি সহ কোনো কম আ্যসিডিটি উপকরণ যার pH 4.6 er বেশি, কোনোভাবেই এমন অবস্থায় রাখা যাবে না যাতে অবাঞ্ছিত অণুজীবের বৃদ্ধি ঘটতে পারে এবং বিযয়টি নিশ্চিত করার জন্য, দরকারে পদ্ধতিটির একটি লিখিতভাবে চিত্রিতকরণের প্রয়োজন হতে পারে।[১১১] এই নিয়মমাফিক নকশাতে, সরঞ্জামের ও পণ্যের বন্ধ্যাত্ব নিয়ন্ত্রণের সকল ধাপ এবং জীবাণুমুক্তকরণের ধাপের উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।[১১১]
長安앳 겨 디히 싀오 고
|শিরোনাম=
at position 2 (সাহায্য)