বংশাণুবিজ্ঞানের আলোচনায় কিম্ভূতকিমাকার জীব বা সংক্ষেপে কিম্ভূত জীব বলতে একের অধিক স্বতন্ত্র বংশাণুরূপবিশিষ্ট (জিনোটাইপ) কোষ নিয়ে গঠিত একটি জীবকে বোঝায়। প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বারা দুই বা ততোধিক নিষিক্ত ডিম্বাণু বা ভ্রূণাণু থেকে উদ্ভূত একক জীবকে বোঝায়, যেটি বিভিন্ন রক্তের শ্রেণীবিশিষ্ট রক্তকোষসমূহ ও বহিঃরূপে (ফিনোটাইপ) একাধিক সুক্ষ্ম প্রকারভেদের অধিকারী হতে পারে এবং যদি ভ্রূণাণুগুলি বিপরীত লিঙ্গের হয়, তাহলে জীবটি একই সাথে পুং ও স্ত্রী জননাঙ্গের অধিকারী হতে পারে[১] (এটি আন্তঃলৈঙ্গিকতা সৃষ্টিকারী অনেকগুলি ঘটনার মধ্যে একটি)। কিম্ভূতকিমাকার প্রাণীগুলি একাধিক নিষিক্ত ডিম্বাণুর সংযোগসাধনের ফলে উৎপন্ন হয়। তবে এর বিপরীতে কিম্ভূতকিমাকার উদ্ভিদের ক্ষেত্রে একই ভ্রূণাণু থেকে স্বতন্ত্র প্রকারের দেহকলা উদ্ভূত হতে পারে, এবং প্রায়শই স্বাভাবিক কোষবিভাজনের সময় পরিব্যক্তির কারণে এই পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। সাধারণত বংশাণুগত কিম্ভূতকিমাকার জীবগুলি অপরিকল্পিত তদারকির সময় দৃষ্ট হয় না, তবে বংশপরিচয় প্রমাণ করার প্রক্রিয়াতে এগুলি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[২]
ইংরেজি পরিভাষায় কিম্ভূতকিমাকার জীবকে "(জেনেটিক) কিমিরা" বা "(জেনেটিক) কাইমিরা" (ইংরেজি: (Genetic) Chimera) কিংবা জেনেটিক কিমেরিজম (ইংরেজি: Genetic Chimerism) বলা হয়ে থাকে। ইংরেজি "কিমিরা" পরিভাষাটি গ্রিক পুরাণের অগ্নি উদগীরণকারী কিম্ভূতকিমাকার এক দানব খিমাইরার (অংশত সিংহ, অংশত ছাগল, অংশত সাপ) নাম থেকে নেওয়া হয়েছে।
কিম্ভূতকিমাকার জীবগুলির সাথে পচ্চিকারি জীব (মোজাইক) এবং সংকর জীবের (হাইব্রিড) পার্থক্য আছে। পচ্চিকারি জীবগুলিতে একটিমাত্র ভ্রূণাণু থেকে বংশাণুগতভাবে ভিন্ন ভিন্ন কোষসমষ্টি পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে সংকর জীবগুলিতে দুইটি ভিন্ন প্রজাতির বংশাণুবিনিময়ের ফলে সৃষ্ট বংশাণুগতভাবে একই প্রকারের কোষসমষ্টি পরিলক্ষিত হয়।
বংশাণুগতভাবে কিম্ভূতকিমাকার প্রাণীদের মধ্যে দ্বিশুক্রাণুজাত কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী, যমজ কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী, কিম্ভূতকিমাকার অণুপ্রাণী, অপুংজাত (বা অনিষেকজাত) কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী, পুংজাত কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী, ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন প্রকারগুলি উল্লেখ্য।