কিয়াম (আরবি: قيام, "দাঁড়ানো/সোজা হওয়া") নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নামাজ দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবিরের মাধ্যমে ("আল্লাহু আকবর" বলে) শুরু হয় এবং সুস্থ মানুষের জন্যে নামাজের বড় অংশই দাঁড়িয়ে পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছু নামাজের পুরো অংশই দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়, যেমন: জানাজার নামাজ।
নামাজ প্রসঙ্গে কুরআনের কিছু স্থানে "আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো" বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে।
আপনার নামাজ (পড়ার অভ্যাসকে) কঠোরভাবে রক্ষা করুন, বিশেষ করে নামাজের মধ্যম অবস্থা; এবং আল্লাহর সামনে (মনের) একনিষ্ঠতার সঙ্গে দাঁড়ান।
— কুরআন, (২:২৩৮)
নামাজের একটি সাধারণ একক বা চক্রকে রাকাত বলা হয়, যেটি দাঁড়িয়ে থাকা (কিয়াম) ও তাকবির বলার মাধ্যমে শুরু হয়, যা হলো الله أَڪْبَر (অনুবাদ "আল্লাহু-আক্বার্", অর্থ "আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ")। আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক তথা একত্রে বা কাছাকাছি না রেখে হাতগুলো কাঁধের সমান বা কানের উপর পর্যন্ত তোলা হয়।[১][২] এই অবস্থাতে কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করা হয়।[১]
ইতিদাল হলো রুকু থেকে সোজা হয়ে দ্বিতীয়বার দাঁড়ানো। পিঠ সোজা রাখা হয় এবং বলা হয় سمع الله لمن حمده (অনুবাদ "সামি' আল্লাহু লিমান্ হামিদাহ্", অর্থ "আল্লাহ শোনেন এবং যে তাঁর প্রশংসা করেন তাঁকে সাড়া দেন")।[১][২] উপরন্তু, এই অবস্থায় আল্লাহর বহু প্রশংসাসূচক বাক্যের মধ্যে কিছু বলা হয় যেমন, ربنا لك الحمد (অনুবাদ "রাব্বানা ওয়া লাকাল্-হাম্দ্", অর্থ "হে আমাদের প্রভু! আর সকল প্রশংসা [কেবল] আপনার জন্য")।[২] আবার তাকবির বলা হয় এবং প্রার্থনাকারী প্রণতি করতে চলে যায়।[২]
পাঁচটি দৈনিক নামাজ, সুন্নাত নামাজ (ঐচ্ছিক নামাজ/অতিরিক্ত নামাজ) এবং অন্যান্য বেশিরভাগ নামাজে কিয়াম একটি অংশ।
জানাজার নামাজ পুরোটাই কিয়ামের সাথে আদায় করতে হয়, যেটি হলো ইসলামি শেষকৃত্য সংবলিত প্রার্থনার অংশ।
নামাজের সময় অধিকাংশ কুরআন তিলাওয়াত (পাঠ) কিয়ামরত অবস্থায় করা হয়। কুরআনের প্রথম সূরা আল-ফাতিহা কিয়ামরত অবস্থায় পড়া আবশ্যক।[১][২] সহীহ মুসলিমের বর্ণনামতে, আবু হুরাইরা উদ্ধৃত করেছেন যে নবি (সা) বলেন,
উপরন্তু, কুরআন থেকে অন্য যেকোনো সূরা প্রথম বা দ্বিতীয় রাকআতে ইচ্ছানুযায়ী পাঠ করা হয়।[১][২]
কিয়ামের সময় কোথায় হাত রাখা হয় তা নিয়ে বিভিন্ন ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখার মধ্যে ভিন্নতা বিদ্যমান।[৩] এই মতপার্থক্যসমূহ কাবদ-সাদল বিবাদে প্রকাশ পেয়েছে। বেশ কিছু হাদিস সুন্নিদের মাঝে ইঙ্গিত করে যে বাধ্যতামূলক না হলে কাবদ (হাত গুটিয়ে বা হাত বেঁধে প্রার্থনা করা) বাঞ্ছনীয়; যাইহোক, সাদল (হাত দুই পাশে ঝুলিয়ে রাখা) এখনও অনেক মালিকিদের নিকট পছন্দনীয়।[৪] অন্যান্য সুন্নি কর্মপদ্ধতির প্রভাবের কারণে উত্তর নাইজেরিয়ার মতো মালিকি কর্মপদ্ধতি-অনুশীলনকারী এলাকায় বিতর্কটি প্রধানত বিদ্যমান।[৫][৬]
হানাফিদের জন্য, পুরুষেরা নাভির নিচে হাত রাখে। মহিলারা তাঁদের বুকে হাত রাখে।
সুন্নিদের মাঝে এই বিষয়টি পুরোপুরি স্বতন্ত্র (তবে শিয়া ও ইবাদি মুসলিমদের অনুরূপ) যে অনেক মালিকি উরুতে বা দুই পাশে তাঁদের হাত ঝুলিয়ে রাখে। মদিনাতে নবির আমলের কিছু প্রজন্ম পরের নামাজ পড়ার পদ্ধতির মাঝে এই প্রথা অনুসরণকারীরা এর ভিত্তি খুঁজে পান, যেমনটি মালিক ইবন আনাস লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তাঁর দ্বারা সহিহ (খাঁটি) হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। "ইমাম মালিকের মতে হাত না বেঁধে নামাজ পড়া উচিত, তিনি ফরজ নামাজে হাত বাঁধাকে অবাঞ্ছনীয় এবং নফল নামাজে অনুমোদিত মনে করেন।"[৭] যাইহোক, এই প্রথা সর্বজনীন নয়, উদাহরণস্বরূপ, মালিকি পন্ডিত কাজী আয়াজ, তাঁর কাওয়াইদ আল-ইসলাম গ্রন্থে মতামত দিয়েছেন যে, এই অনুশীলনটি "কোনো খাঁটি হাদিস দ্বারা সমর্থিত নয়"।[৮][৯]
শাফিঈরা হাত নাভির উপরে ও বুকের নিচে বাঁধে।
হানবালিরা হানাফিদের মতো নাভির নিচেও হাত রাখতে পারে, বা শাফিঈদের মতো উপরেও রাখতে পারে।
অধিকাংশ সালাফি ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখে, তবে সালাফিরা কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, তাই বিভিন্ন সালাফিরা হানবালি, হানাফ, শাফিঈ এবং মালিকিদের পথ অনুসরণ করতে পারে। সালাফি লেখক মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানীর মতে, বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর রাখা উচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
দ্বাদশী শিয়ারা তাঁদের হাত উরুতে বা উভয় পাশে ঝুলিয়ে রাখে।
জায়েদিরা তাঁদের হাত উরুতে বা উভয় পাশে ঝুলিয়ে রাখে।
শিয়া মুসলিম ও মালিকি সুন্নিদের মতোই ইবাদিরা তাঁদের হাত উরুতে বা পাশে ঝুলিয়ে রাখে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নামাজে দাঁড়ানোর সময় কাতার বা সারি সোজা করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে।[১০] উদাহরণস্বরূপ, সাহাবি আনাস বর্ণনা করেন যে মুহাম্মাদ বলেছেন: "তোমরা সারিতে একসাথে দাঁড়াও, একে অপরকে কাছে রাখো এবং ঘাড়ের সাথে ঘাড় লাগিয়ে দাঁড়াও। যাঁর (আল্লাহর) হাতে আমার জীবন, তাঁর শপথ, আমি ছোট মেষশাবকদের মতো শয়তানকে ফাঁকগুলির মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে দেখি।"[১১][১২]
একইভাবে, আবু উমামাহ বর্ণনা করেন যে মুহাম্মাদ বলেছেন: "আপনার সারি সোজা করুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান, আপনার ভাইয়ের প্রতি নরম হোন এবং ফাঁকা স্থান পূরণ করুন, কারণ শয়তান ছোট মেষশাবকদের মতো ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে।"[১২][১৩]
আল-শাওকানি উপরের হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন যে "কাঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর" নির্দেশের অর্থ হলো: "শরীরের অঙ্গগুলিকে একে অপরের সাথে সারিবদ্ধ করা যাতে প্রার্থনারত প্রত্যেক ব্যক্তির কাঁধগুলি অন্যের কাঁধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এভাবে কাঁধ এবং ঘাড় সারিবদ্ধ করা হবে।"[১২][১৪]