কুম্মাত্তিকালি বা কুম্মত্তি কালী হল কেরালার বিখ্যাত রঙিন মুখোশ-নৃত্য, এটি ত্রিশূর জেলা, পালঘাট জেলা এবং দক্ষিণ মালাবারের কিছু অংশে প্রচলিত। ওনামের উৎসব চলাকালীন, কুম্মাত্তিকালি শিল্পীরা ঘরে ঘরে যায়, ছোট ছোট উপহার সংগ্রহ করে এবং মনোরঞ্জন করে থাকে। ওনাম চলাকালীন ত্রিশূর জেলায় কুম্মাত্তি নৃত্য প্রচুর দেখা যায়। কেরালার পালঘাট জেলার[১] ভদ্রকালী মন্দিরে কুমাত্তিকালির আদি বা মূল রূপটি দেখা যায়।
পোশাক হল কুম্মাত্তিকালির একটি আকর্ষণীয় বিষয়।[২] নৃত্যশিল্পীরা কৃষ্ণ,নারদ, কিরাত, দারিকা বা শিকারিদের মুখ আঁকা রঙিন কাঠের মুখোশ পরিধান করে। এই মুখোশগুলি সাধারণত স্যাফ্রোফাইট, কাঁঠাল গাছ, ছাতিম (অ্যালস্টোনিয়া স্কলারিস), হগ পাম গাছ বা কোরাল গাছ দিয়ে তৈরি হয়।[৩]
নৃত্যশিল্পীরা ঘাসের বিনুনি দিয়ে বোনা স্কার্ট পরে। কিছু কিছু ব্যক্তি আরও ঝোপঝেড়ে চেহারার জন্য তাদের পুরো শরীর ঘাসের গুচ্ছ দিয়ে আবৃত করে। বাহ্যিকভবে 'টাল্লা' লাগিয়ে তাদের মুখোশের আবরণটি আরও আনন্দদায়ক করা হয়, এটি লাগিয়ে দন্তবিহীন অবয়ব দেওয়া হয়। নৃত্যশিল্পীরা 'কুম্মাত্তিকালি' নামক অবশিষ্ট কৃষি পণ্যের দীর্ঘ লাঠি হাতে ধরে রাখে এবং তা নিপুণভাবে পরিচালনা করে; এ থেকেই এই নাচের নামটি পাওয়া যায়। তাদের নৃত্য শৈব পুরাকথার সাথে সম্পর্কিত। এই দলের সামনে একজন 'ঠাম্মা' (বৃদ্ধ মহিলা) লাঠির সাহায্যে হাঁটে। ঠাম্মা প্রতিটি জীব এবং সমস্ত কিছুর মায়ের প্রতীক বহন করে।
কুম্মাত্তিকালি নৃ্ত্যশিল্পীরাও দর্শনীয়, তারা ঘরে ঘরে ঘুরে গুড়, চাল বা স্বল্প পরিমাণে নগদ সংগ্রহ করে। দর্শকেরা, বিশেষত বাচ্চারা তাদের অভিনয়ে প্রচুর আনন্দ পায়।
নাচের গতির জন্য ছন্দ সরবরাহ করা হয় ওনাভিল্লু নামক একটি ধনুকের গুনে কম্পন দিয়ে। সুপারি গাছের কাঠ ধনুক তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় এবং গুনে বাঁশের কাঠি দিয়ে আঘাত করে কম্পন তৈরি করা হয়।[৪]
কুম্মাত্তিকালির রচনার বিষয়বস্তুগুলো বেশিরভাগই রামায়ণ, দারিকা বধম ও শিবের গল্প এবং মনজান নয়রে পাট্টুর মতো লোককাহিনী থেকে নেওয়া হয়।
এটি লক্ষণীয় যে, কেরালার লোকশিল্পকে দুটি বিস্তৃত শ্রেণিতে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে -ধর্মীয় আচারবাদী এবং আচারবিহীন। আচারবাদকে আরও বিভক্ত করা যায় - ভক্তিমূলক এবং যাদুবিদ্যার শিল্প আকৃতি। কোনও নির্দিষ্ট দেবদেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য ভক্তিমূলক নৃত্য পরিবেশিত হয়। থেইয়াম, থিররা, পুথানথিরা, কন্যারকালি, কুম্মাত্তিকালি ইত্যাদি কয়েকটি ভক্তিমূলক শিল্পের রূপ।