মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কুয়েতে নারী স্বাধীনতা সব চেয়ে বেশি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপের প্রতিবেদনে আরব দেশগুলোর মধ্যে কুয়েত প্রথম হয়েছিল।[১][২] ২০১৩ সালে শতকরা ৫৩% মহিলাই শ্রমজীবী ছিলেন।[৩] কুয়েতের কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় কুয়েতি নারীর সংখ্যা বেশি।[৪]
তেল আবিষ্কারের পর থেকে কুয়েতি নারীরা অনেক ধরনের পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। তাদের দাপ্তরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মতৎপরতার এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা ১৯৬০ এর দশকে শুরু হয়েছিল এবং এখনো চলছে। ১৯৫০ এর দশকে শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পায়।
সপ্তদশ শতাব্দি থেকে ১৯৫০ এর দশকে তেল আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কুয়েতের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল সামুদ্রিক বাণিজ্যের উপর। পুরষরা যখন সমুদ্র যাত্রায় বেরুতো, কুয়েতি নারীরা তখন গৃহস্থালী ও পারিবারিক কর্মকাণ্ড এবং আর্থিক দিক নিয়ন্ত্রণ করত। সেকালে সামর্থ্যবান পরিবারসমূহের বাড়িতে একটি আঙিনা এবং একটি হারেম থাকত, নারীদের অধিকাংশ সময় এই আঙিনা এবং হারেমেই কাটত। সেসব ঘরের কাঠামোতে উচু দরজা জানালা ছিল, যাতে নারীরা বাইরের সাধারণ পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে থাকে। জনসম্মূখে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল সীমিত। যাই হোক, নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলারা অবশ্য কিছুটা বাইরে বেরুতেন, তারা সুক (বাজার) এ যেতেন দিনমজুর হিসাবে পানি তোলা, কাপড় ধোঁয়া ইত্যাদি কাজ করার জন্য। কুয়েতি মেয়েরা ১৯১৬ সালে ধর্মগ্রন্থ শিখতে শুরু করে, যখন প্রথম কুরআন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে অনেক নারীই ধর্মীয় প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯২৬ সালে প্রথম বেসরকারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, এটিতে লেখা, পড়া এবং নক্শি কাজ শেখানো হত। গণ বিদ্যালয় ১৯৩৭ সালে শুরু হলেও সেখানে কিছু সময়ের জন্য কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো, কিন্তু ১৯৪০ এর দশকে অনেক কুয়েতি মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ১৯৫৬ সালে একদল নারী পড়াশুনার জন্য তাদের বিদেশে যাওয়ার অধিকার আদায়ের জন্য তাদের আবায়া (এক ধরনের বিশেষ পোশাক, যা আরব মুসলিম নারীরা পরিধান করে।) পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছিল।
কর্মক্ষেত্রে কুয়েতি নারীদের অংশগ্রহণ জিসিসির (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল) আঞ্চলিক গড়ের তুলনায় অনেক বেশি,[৫] উপসাগরীয় অঞ্চলে কর্মজীবী নারী নাগরিকের সংখ্যা কুয়েতে সবচেয়ে বেশি।[৪][৫] কুয়েতে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।[৪]
২০১৩ সালে ৫৩% কুয়েতি নারী কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করত।.[৩] কুয়েতের কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ মেনা (মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা) গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।[৩]
কুয়েতে ১৯৭১ সালে নারীদের ভোটাধিকারের প্রচারণা শুরু হয়, যখন নুরিয়া আল-সাদ্দানির নেতৃত্বাধীন একটা দল সংসদে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার অনুমোদনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করে। প্রস্তাবনাটি প্রত্যাখ্যাত হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নারীরা তাদের ভোটাধিকারের জন্যে জোরালো প্রচারণা চালায়; তারা প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করে এবংনির্বাচনী ময়দানে নারীদের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করার কারণে ২০০০ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে অনেক নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। ২০০৪ সালে নারীরা তাদের ভোটাধিকারের জন্য সংসদের ভিতরে বিক্ষোভ করে, এবং এর এক বছর পরে একই দাবিতে কুয়েতের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৯ সালে আমির শেখ জাবের আল-সাবাহ সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর নারীদের ভোটাধিকার অনুমোদন করে অধ্যাদেশ জারি করেন, যদিও দুই মাস পর নতুন সংসদে মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে এই অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যায়।[৬] কুয়েতি নারীরা ২০০৫ সালের মে মাসে প্রথম ভোট দেওয়ার অধিকার পায়। নারীরা ২০০৬ সালের জুনে প্রথম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, ঐ নির্বাচনে ২৮ জন নারী প্রার্থীও ছিলেন, যদিও তাদের কেউই বিজয়ী হতে পারেন নি। কুয়েতি নারীরা এর চার বছর পর পুরোপুরি তাদের রাজনৈতিক অধিকার পায়, চারজন নারী সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। নির্বাচিত নারীরা হলেন মাসুমা আল মুবারাক (প্রথম কুয়েতি নারী মন্ত্রী), আসিল আল আওদ্বি, রোলা দাশতি এবং সালওয়া আল জাসসার।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; wef
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; gend
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; gnw
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; ilo
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি