কৃষ্ণকুমার কুন্নথ | |
---|---|
![]() | |
প্রাথমিক তথ্য | |
উপনাম | কেকে, কে.কে. |
জন্ম | দিল্লি, ভারত | ২৪ আগস্ট ১৯৬৮
মৃত্যু | ৩১ মে ২০২২ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৫৩)
ধরন | নেপথ্য সঙ্গীত, ইন্ডিপপ, রক |
পেশা | নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার |
বাদ্যযন্ত্র | কণ্ঠ |
কার্যকাল | ১৯৯৬—২০২২ |
ওয়েবসাইট | themesmerizer |
কৃষ্ণকুমার কুন্নথ (মালয়ালম: കൃഷ്ണകുമാർ കുന്നത്ത്; ২৩ আগস্ট ১৯৬৮ — ৩১ মে ২০২২) একজন ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, যিনি কেকে নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি হিন্দি, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম, মারাঠি, ওড়িয়া, বাংলা ভাষা, বাংলা ও গুজরাটি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন।[১] তিনি ভারতীয় সঙ্গীত ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ট গায়কদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন। [২]
কেকে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার সঙ্গীত জীবন শুরু করেন এবং এ আর রহমানের সুরে গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি হাম দিল দে চুকে সনম (১৯৯৯)-এর "তড়প তড়প কে", হমরাজ (২০০২)-এর "বরদস্ত নহিঁ কার সকতা", দস (২০০৫)-এর "দস বাহানে", ওম শান্তি ওম (২০০৭)-এর "আঁখোঁ মেঁ তেরি", জান্নাত (২০০৮)-এর "জারা সা" এবং বাচনা অ্যায় হাসিনো (২০০৮)-এর "খোদা জানে" গানের জন্য ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং "খোদা জানে" গানের জন্য একটি স্ক্রিন পুরস্কার লাভ করেন।
কৃষ্ণকুমার কুন্নথ ১৯৬৮ সালের ২৩শে আগস্ট নতুন দিল্লিতে এক হিন্দু মালয়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতামাতা হলেন সি. এস. মেনন এবং কুন্নথ কনকবল্লি।[৩] তিনি নতুন দিল্লিতে বেড়ে ওঠেন।[৪] তিনি দিল্লির মাউন্ট সেন্ট ম্যারিস স্কুল পড়াশোনা করেন,[৫] এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।[৬] তিনি ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত ক্রিকেট দলের সমর্থনে "জোশ অব ইন্ডিয়া" গানে কণ্ঠ দেন।[৭] গানটির ভিডিওতে ক্রিকেট দলের সদস্যদের দেখা যায়।
কেকে ১৯৯১ সালে জ্যোতিকে বিয়ে করেন।[৮] তার পুত্র নকুল কৃষ্ণ কুন্নথ তার অ্যালবাম হামসফর-এর "মাস্তি" গানে তার সাথে দ্বৈত কণ্ঠ দেন।[৯] কেকে'র এক কন্যাও রয়েছে।[১০]
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কিরোরি মাল কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর কেকে আট মাস একটি হোটেলের বিপণন নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন। কয়েক বছর পর, ১৯৯৪ সালে তিনি মুম্বইয়ে পাড়ি জমান।[৮] সে বছর তিনি সঙ্গীত জগতে তাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য লুইস ব্যাংকস, রঞ্জিত বরোত ও লেসলি লুইসকে ডেমো টেপ দেন। ইউটিভি তাকে সুযোগ দেয় এবং তিনি সান্তোজেন সুইটিং বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেন।[৯] চার বছরে তিনি ১১টি ভাষায় প্রায় ৩,৫০০ টি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেন।[৫] মুম্বইয়ে তাকে গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি লেসলি লুইসকে তার উপদেষ্টা বলে গণ্য করেন।[৮] কেকে এরপর এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় কাদল দেসম (১৯৯৬)-এর "কাল্লুরি সালে" ও "হ্যালো ডক্টর" এবং মিনসর কনবু (১৯৯৭)-এর "স্ট্রবেরি কান্নে" গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।[১১]
কেকে'র বলিউডে অভিষেক ঘটে হাম দিল দে চুকে সনম (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের "তড়প তড়প কে ইস দিল সে" গান দিয়ে। এই গানের আগে তিনি গুলজারের মাচিস (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের "ছোড় আয়ে হাম" গানের অংশবিশেষে কণ্ঠ দেন। তিনি "তড়প তড়প কে ইস দিল সে" গানকে তার কর্মজীবনের বাঁকবদল বলে মনে করেন। এই গানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১২]
তিনি হিমেশ রেশামিয়ার সুরায়োজনে হমরাজ (২০০২) চলচ্চিত্রের "বরদস্ত নহিঁ কর সকতা" গানে কণ্ঠ দিয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০০৩ সালে তিনি বিশাল-শেখরের সঙ্গীত পরিচালনায় ঝংকার বিটস চলচ্চিত্রের চারটি গানে কণ্ঠ দেন। এরপর তিনি এম এম ক্রিমের সুরায়োজনে জিসম চলচ্চিত্রের "আওয়ারাপন বানজারাপন" গানে কণ্ঠ দেন। তিনি ঝংকার বিটস-এর "তু আশিকি হ্যায়" ও জিসম-এর "আওয়ারাপন বানজারাপন" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১৩] এছাড়া এই বছর তিনি কাল হো না হো চলচ্চিত্রের "ইট্স দ্য টাইম টু ডিস্কো" এবং তেরে নাম চলচ্চিত্রের "ও জানা" গানে কণ্ঠ দেন।
২০০৪ সালে তিনি আনু মালিকের সুরে ম্যাঁয় হুঁ না চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। সেগুলো হল বসুন্ধরা দাসের সাথে "চলে জ্যায়সে হাওয়ায়ে", অলকা ইয়াগনিকের সাথে "ইয়ে ফিজায়েঁ" এবং শ্রেয়া ঘোষাল, আনু মালিক ও সুনিধি চৌহানের সাথে "গোরি গোরি"। ২০০৫ সালে হিমেশ রেশামিয়ার সুরে আশিক বানায়া আপনে চলচ্চিত্রের "দিলনাশিঁ দিলনাশিঁ" গানটি হিট হয়। একই বছর দস চলচ্চিত্রের "দস বাহানে" গানে কণ্ঠ দিয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে তার তৃতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১৩]
২০০৬ সালে প্রীতম চক্রবর্তীর সুরে গ্যাংস্টার: অ্যা লাভ স্টোরি চলচ্চিত্রের "তুহি মেরি সব হ্যায়" ও "ইয়া আলি" গানে কণ্ঠ দেন। "তুহি মেরি সব হ্যায়" গানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে আইফা পুরস্কার, জি সিনে পুরস্কার ও স্ক্রিন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি সাজিদ-ওয়াজিদের সঙ্গীত পরিচালনায় দ্য কিলার চলচ্চিত্রের "ও সনম" ও "তেরি ইয়াদোঁ মেঁ" গানে শ্রেয়া ঘোষালের সাথে দ্বৈত কণ্ঠ দেন। এছাড়া তার গাওয়া আপ কি খাতির চলচ্চিত্রের "আই লাভ ইউ ফর হোয়াট ইউ আর", অক্সর চলচ্চিত্রের "সোনিয়ে", ও লামহে চলচ্চিত্রের "মুঝে প্যায়ার হ্যায়" গানগুলো হিট হয়।
২০০৭ সালে তিনি ওম শান্তি ওম (২০০৭)-এর "আঁখোঁ মেঁ তেরি" গানে কণ্ঠ দেন। এই গানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে তার চতুর্থ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি প্রীতম চক্রবর্তীর সুরে ভুল ভুলাইয়া চলচ্চিত্রের "লাবোঁ কো", "আল্লাহ হাফিজ" ও "সাজদা" এবং লাইফ ইন অ্যা... মেট্রো চলচ্চিত্রের "আলবিদা" ও "ও মেরি জাঁ" গানে কণ্ঠ দেন। ২০০৮ সালে বাচনা অ্যায় হাসিনো চলচ্চিত্রের "খোদা জানে" গানে কণ্ঠ দিয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর তিনি জান্নাত চলচ্চিত্রের "জারা সা" ও "হাঁ তু হ্যায়" গানে কণ্ঠ দেন। এই বছর "খোদা জানে" ও "জারা সা" গানের জন্য তিনি আরও দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১৩]
কেকে ২০১০ সালে রাজেশ রোশনের সুরে কাইটস চলচ্চিত্রে "জিন্দগি দো পাল কি" ও "দিল কিউঁ অ্যায় মেরা" গানে কণ্ঠ দেন। প্রথম গানটির জন্য তিনি জি সিনে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১৪] এছাড়া তিনি প্রীতমের সুরে ক্রুক চলচ্চিত্রের "মেরে বিনা", খট্টা মিঠা চলচ্চিত্রের "সাজদে" এবং ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বই চলচ্চিত্রের "আই অ্যাম ইন লাভ" গানে কণ্ঠ দেন।
২০১১ সালে তিনি রেডি চলচ্চিত্রে তুলসী কুমারের সাথে "হামকো প্যায়ার হুয়া" দ্বৈত গানে অংশ নেন। ২০১২ সালে তিনি প্রীতমের সুরে জান্নাত ২ চলচ্চিত্রের "জান্নাতে কাহাঁ" ও "তুঝে সোচতা হুঁ" গানে কণ্ঠ দেন। এছাড়া আর্কো প্রভু মুখার্জির সুরে জিসম ২-এর "আভি আভি", সোহেল সেনের সুরে টাইগার জিন্দা হ্যায় চলচ্চিত্রের "লাপাতা", জিৎ গাঙ্গুলীর সুরে রাজ থ্রিডি চলচ্চিত্রের "রাফতা রাফতা" গানে কণ্ঠ দেন।
কেকে সঙ্গীতশিল্পী কিশোর কুমার ও সঙ্গীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মণের দ্বারা প্রভাবিত। কেকের প্রিয় আন্তর্জাতিক সঙ্গীতশিল্পী হলেন মাইকেল জ্যাকসন, বিলি জোয়েল, ব্রায়ান অ্যাডামস। কেকে কখনো সঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক তালিম গ্রহণ করেননি।[১৫]
কলকাতার নজরুল মঞ্চের একটি কনসার্টে গান গেয়ে নিজের এসপ্ল্যানেডের হোটেলে ফেরামাত্র তার অবস্থা সঙ্কটময় হয়ে যায় এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ৩১ মে ২০২২ তারিখে তার মৃত্যু হয়।[১৬]
বছর | পুরস্কার | ভাষা | বিভাগ | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
২০০৫ | হাব পুরস্কার | তামিল | শ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক- পুরুষ | বিজয়ী |
২০১০ | ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ | কন্নড় | শ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক- পুরুষ | বিজয়ী |
২০১২ | ঈনম-স্বরালয় বর্ষসেরা গায়ক পুরস্কার | মালায়ালাম | বছরের সেরা গায়ক | বিজয়ী |
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | |||
২০০০ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "তড়প তড়প কে" (হাম দিল দে চুকে সানাম)[১৭] | মনোনীত |
২০০৩ | "বরদস্ত না কর সকতা" (হমরাজ)[১৮] | ||
২০০৬ | "দস বাহানে" (দস)[১৩] | ||
২০০৮ | "আঁখো মেঁ তেরি" (ওম শান্তি ওম)[১৩] | ||
২০০৯ | "জারা সা" (জান্নাত)[১৩] | ||
"খোদা জানে" (বাচনা অ্যায় হাসিনো)[১৯] | |||
স্ক্রিন পুরস্কার | |||
২০০৭ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "তু হি মেরি সব হ্যায়" (গ্যাংস্টার)[১৩] | মনোনীত |
২০০৯ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "খোদা জানে" (বাচনা অ্যায় হাসিনো)[২০] | বিজয়ী |
জি সিনে পুরস্কার | |||
২০০৭ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "তু হি মেরি সব হ্যায়" (গ্যাংস্টার)[১৩] | মনোনীত |
২০১১ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "জিন্দগি দো পাল কি" (কাইটস)[২১] | মনোনীত |
আইফা পুরস্কার | |||
২০০৪ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "তু আশিকি হ্যায়" (ঝংকার বিটস)[১৩] | মনোনীত |
২০০৬ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "দস বাহানে" (দস)[১৩] | |
২০০৭ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "তু হি মেরি সব হ্যায়" (গ্যাংস্টার)[১৩] | |
২০০৮ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "আঁখো মে তেরি" (ওম শান্তি ওম)[১৩] | |
২০০৯ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "খোদা জানে" (বাচনা অ্যায় হাসিনো)[১৩] | |
প্রডিউসার্স গিল্ড চলচ্চিত্র পুরস্কার | |||
২০০৮ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "আঁখো মে তেরি" (ওম শান্তি ওম)[১৩] | মনোনীত |
২০০৯ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "খোদা জানে" (বাচনা অ্যায় হাসিনো)[১৩] | |
২০১১ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "সাজদে" (খট্টা মিঠা)[২২] | |
গিমা পুরস্কার | |||
২০১১ | শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | "জিন্দগি দো পাল কি" (কাইটস)[২৩] | মনোনীত |