আবিষ্কার[২] | |
---|---|
আবিষ্কারের তারিখ | ২ ফেব্রুয়ারি ২০১১[১] |
আবিষ্কারের পদ্ধতি | আবর্তন (কেপলার মিশন)[১] |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | .১০৬ AU (১,৫৯,০০,০০০ কিমি) |
কক্ষীয় পর্যায়কাল | ১৩.০২৫০২[৩] দি |
নতি | ৮৯[৩] |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
গড় ব্যাসার্ধ | ৩.১৫ (± .৩০)[২] আর🜨 |
ভর | ১৩.৫+৪.৮ −৬.১[২] M🜨 |
গড় ঘনত্ব | ২.৩ +১.৩ −১.১[২] গ্রা সেমি−৩ |
তাপমাত্রা | ৮৩৩ K (৫৬০ °সে; ১,০৪০ °ফা)[৩] |
কেপলার-১১সি হলো একটি বহির্গ্রহ যা সূর্য-সদৃশ তারা কেপলার-১১-এর কক্ষপথে কেপলার মহাকাশযান কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছে। কেপলার নাসা কর্তৃক পরিচালিত একটি টেলিস্কোপ যা পৃথিবী সদৃশ গ্রহ খোঁজার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি তার মাতৃ তারার দ্বিতীয় গ্রহ এবং পাতলা হাইড্রোজেন-হিলিয়ামের আবহাওয়া নিয়ে প্রায় একটি মহাসাগরীয় গ্রহ।[১] কেপলার-১১সি তারাটি কেপলার-১১ তারাকে প্রতি ১০ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে এবং এর আনুমানিক ঘনত্ব বিশুদ্ধ পানির প্রায় দ্বিগুণ। এর আনুমানিক ভর পৃথিবীর তুলনায় প্রায় তেরগুন এবং ব্যাসার্ধ পৃথিবীর প্রায় তিনগুন। আরও পাঁচটি গ্রহসহ কেপলার-১১সি প্রথম আবিষ্কৃত গ্রহমণ্ডল যার তিনের অধিক আবর্তনকারী গ্রহ রয়েছে। তারামণ্ডলটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ঘনসন্নিবেশিত ও সমতল মন্ডল।[৪] এটি আমাদের সৌরজগৎ থেকে সিগনাস তারামণ্ডলে অবস্থিত। কেপলার-১১-এর অন্যান্য গ্রহসহ ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কেপলার-১১সি আবিস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়, এবং একদিন পর নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
কেপলার-১১সি নামের দুটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশটি তার আবর্তনকারী তারা কেপলার-১১ থেকে নেয়া হয়েছে। কেপলার-১১সি আর অন্য সব গ্রহসমূহের সাথে একত্রে আবিষ্কার হওয়ার কারণে দূরত্ব অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে, কেপলার-১১সি নামের পরে তাই "সি" যুক্ত করার কারণ আবিষ্কৃত ছয়টি গ্রহের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী (কেপলার-১১বি সবচেয়ে অন্তর্বর্তী) গ্রহ। মাতৃ তারা, কেপলার-১১-এর নামকরণ করা হয়েছিল কেপলার উপগ্রহের নামানুসারে, যা ছিল নাসা পরিচালিত একটি দূরবীক্ষণ যা শিলাময় গ্রহ খোঁজার জন্য ব্যবহৃত হয়, এজন্য পৃথিবী প্রেক্ষিতে মহাকাশীয় বস্তুর আবর্তনের কারণে অথবা অতিক্রমনের কারণে সৃষ্ট তারার আলোর সামান্য তারতম্য পরিমাপ করে থাকে।[৫] উপগ্রহটি কেপলার-১১-কে সম্ভাব্য আবর্তনের কেন্দ্র হিসেবে শনাক্ত করেছিল এবং কেওআই-১৫৭ নামকরণ করেছিল।[৩] আরও পর্যবেক্ষণ করার পর, কেপলার-১১সি-এর অস্তিত্ব, কেপলার-১১বি এবং কেপলার-১১সি-এর কক্ষপথের অনুরনন পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত করা হয়।[২] ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক সম্মেলনের মাধ্যমে আরও পাঁচটি গ্রহসহ কেপলার-১১ আবিস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি আবিস্কারটি নেচার পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।[১] কেপলার-১১ প্রথম আবিষ্কৃত গ্রহমণ্ডল যার তিনের অধিক আবর্তনকারী গ্রহ রয়েছে।[৪]
হ্যাল দূরবীক্ষণ, ক্যালিফোর্নিয়ার সি.ডোনাল্ড স্যন দূরবীক্ষণ; অ্যারিজোনার এমএমটি, ডব্লিওআইওয়াইএন এবং টিলিঙ্ঘাস্ট দূরবীক্ষণ; হাওয়াইয়ের ডব্লিউ এম কেক মানমন্দির; টেক্সাসের হবি–এবারলে দূরবীক্ষণ এবং হার্লান জে স্মিথ দূরবীক্ষণ; কানারি দ্বীপপুঞ্জের নরডিক অপটিক্যাল দূরবীক্ষণের মাধ্যমে এর পরবর্তী পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছিল।[৪]
কেপলার-১১সি, এর মাতৃ তারা কেপলার-১১ একটি জি-টাইপ তারা যা ২০০০ আলোকবর্ষ দূরে[৪] সিগনাস তারামণ্ডলে অবস্থিত। যার ভর ০.৯৫ Msun এবং পরিধি ১.১ Rsun.,ধাতবতা [Fe/H] = ০, এর পৃষ্ঠের কার্যকরী তাপমাত্রা ৫৬৮০ (± ১০০) কেলভিন, কেপলার-১১ এর ব্যাসার্ধ, ভর ও তাপমাত্রা প্রায় সূর্যের অনুরূপ। কেপলার-১১-এর বয়স সূর্যের চেয়ে বেশি, আনুমানিক ৮ (± ২) বিলিয়ন বছর।[৬] (সূর্য প্রায় .৪.৬ বিলিয়ন বছর বয়সী)[৭] কেপলার-১১সি সহ, কেপলার-১১ তারাটি কেপলার-১১বি, কেপলার-১১ডি, কেপলার-১১ই, কেপলার-১১এফ, এবং কেপলার-১১জি-এর মাতৃ তারা। প্রথম পাঁচটি গ্রহগুলোর কক্ষপথ খুব সহজেই বুধ গ্রহের কক্ষপথে এটে যাবে, শুধু কেপলার-১১জি গ্রহ এর চেয়ে বেশি দূরত্ব থেকে কেপলার-১১ তারাকে পরিক্রমন করে থাকে।[১]
তারাটির আপাত মান ১৪.২। কেপলার-১১ তারাটি খালি চোখে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নয়।[৩]
কেপলার-১১সি-এর আনুমানিক ভর ১৩.৫ ME এবং ৩.১৫ RE, যা একে পৃথিবীর চেয়ে ১৩.৫ গুন বেশি ভরবিশিষ্ট ও ৩.১৫ গুন বেশি প্রশস্ততা দিয়েছে। নেপচুন গ্রহ এর তুলনায় পৃথিবীর চেয়ে ৩.৯ গুন বেশি প্রশস্ত।[৮] ২.৩ গ্রাম/সেমি৩ ঘনত্বের কারণে, কেপলার-১১সি ০°সে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানির ভরের চেয়ে দ্বিগুণ ভরবিশিষ্ট; এটা সূর্যের যে কোন গ্যাসীয় দৈত্যদের চেয়ে ঘন, কিন্তু তার যে কোন পাথুরে গ্রহ এর চেয়ে কম ঘন। এর ঘনত্ব বামনগ্রহ প্লুটোর কাছাকাছি।[৯] তারার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে, গ্রহের সুস্থিতি তাপমাত্রা ৮৩৩ কেলভিন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় তিনগুণ উত্তপ্ত। এটা .১০৬ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক থেকে প্রতি ১৩.০২৫০২ দিনে কেপলার-১১-এর কক্ষপথে পরিক্রমন করে; এটা কেপলার-১১-এর দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহ। সে তুলনায় বুধ গ্রহ, ০.৩৮৭ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক দূরত্বে থেকে প্রতি ৮৭.৯৭ দিনে কক্ষপথ পরিক্রমন করে থাকে।[১০] কেপলার-১১সি এর কক্ষপথের নতি ৮৯°, যা প্রায় পৃথিবী প্রান্তের থেকে দেখার মতন।[৩]
কেপলার দলের মতে কেপলার-১১বি এবং কেপলার-১১সি-এর গঠন সম্ভবত বেশিরভাগ জলীয় এর সাথে একটি পাতলা হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম বায়ুমন্ডলে পূর্ণ। ব্যবস্থার বহির্গ্রহগুলোর তুলনায়, এর সম্ভবত বৃহৎ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের বায়ুমন্ডল রয়েছে, কেপলার-১১সি এর অবস্থান তার নক্ষত্রের নৈকট্যের কারণে এই বায়ুমন্ডলের বেশিরভাগই উড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, গঠন এবং বিবর্তন গণনা ইঙ্গিত করে যে কেপলার-১১সি হাইড্রোজেন খামের ৫০% (ভর দ্বারা) এটি গঠনের পরে সংগৃহীত হয়েছিল।[১১] কেপলার-১১বি ব্যাসার্ধ দ্বারা এই ব্যবস্থার গ্রহগুলি প্রাক্তন পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং প্রচুর পরিমাণে H2O ধারণ করেছে বলে এই ধারণাটিকে সমর্থন করে, যা শুধুমাত্র একটি পাতলা গ্যাসীয় খামের উপস্থিতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে, যেহেতু হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম আলোক-বাষ্পীভবন বন্ধের কারণে গ্রহের সাথে আবদ্ধ ব্যবস্থার বয়স পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না, তাই সবচেয়ে সম্ভাব্য বিকল্প হল এর পৃষ্ঠ থেকে উৎপন্ন বাষ্প বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি।[১১]
নাসার মতে কেপলার-১১বি আরও ছয়টি গ্রহ সহ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ঘন সন্নিবেশিত ও সমতল মন্ডল।[১] কেপলার-১১বি এবং কেপলার-১১সি কক্ষপথে কেপলার-১১-এর সাথে একটি শক্তিশালী কক্ষপথের অনুরণন রয়েছে, গ্রহগুলো মহাকর্ষীয় টানে কক্ষপথে স্থির থাকার অনুপাত ৫:৪।[২] গঠনের সময় কক্ষপথ স্থানান্তর থেকে কক্ষপথীয় অনুরণন দেখা দিতে পারে।[১১] একটি অনিশ্চিত কক্ষপথীয় কনফিগারেশনের কারণে কেপলার-১১সি শেষ পর্যন্ত বি-এর সাথে সংঘর্ষের ঝুঁকিতে থাকতে পারে যেখানে একটি নিরপেক্ষ অনুরণন উত্থিত হতে পারে এবং গ্রহ বি-এর কক্ষপথ বিপজ্জনকভাবে কেন্দ্রাপসারী হয়ে উঠতে পারে।[১২]