কেভিন মিটনিক

কেভিন মিটনিক
২০০৮ সালে কেভিন মিটনিক
জন্ম৬ আগস্ট, ১৯৬৩
মৃত্যু১৬ জুলাই ২০২৩(2023-07-16) (বয়স ৫৯)
মৃত্যুর কারণঅগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার
জাতীয়তাআমেরিকান
অন্যান্য নামদ্য কনডোর
পেশাসিক্যুরিটি কনসালটেন্ট
লেখক
প্রতিষ্ঠানমিটনিক সিক্যুরিটি কনসাল্টিং
পরিচিতির কারণহ্যাকিং
অপরাধের শাস্তি১৯৮৮: এক বছরের জেল [১] ১৯৯৯: ৪৬ মাসের জেল এবং ৩ বছরের প্রবেশন
ওয়েবসাইটmitnicksecurity.com

কেভিন ডেভিড মিটনিক (জন্ম: ৬ আগস্ট, ১৯৬৩) একজন আমেরিকান কম্পিউটার নিরাপত্তা কনসালট্যান্ট, লেখক, সাজাপ্রাপ্ত সাইবার অপরাধী এবং হ্যাকার। তাকে বিভিন্ন সময় কম্পিউটার এবং যোগাযোগ-সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যখন মিটনিক পুলিশের হাতে ধরা পড়েন, তখন তিনিই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার-সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হ্যাকার[][] ইকুয়েডরের ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিটনিককে নির্বাচনের সমস্ত তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘নেট লকের’ কম্পিউটার সিস্টেমের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।[] কেভিন মিটনিককে বলা হয় ‘ফাদার অফ অল হ্যাকার’। তার বিচিত্র জীবনকে ভিত্তি করে দুটি চলচ্চিত্রও তৈরী হয়।

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

মিটনিকের জন্ম লস এঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সেখানে তিনি মনরো উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।[] এছাড়া তিনি লস এঞ্জেলেস পিয়ার্সি কলেজ ইউএসসি-তেও নথিভুক্ত ছিলেন।[] তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার ছাত্র ছিলেন। কিছুদিন তিনি ‘স্টিফেন এস. ওয়াইস’ নামে একটি মন্দিরে রিসিপশনিস্টের কাজও করেন।[] বর্তমানে তিনি নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘মিটনিক সিক্যুরিটি কনসাল্টিং ফার্ম’ এর একজন সিক্যুরিটি কনসালটেন্ট, যাদের কাজ কোন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ত্রুটি খুজে বের করা এবং ঠিক করে দেওয়া।

হ্যাকিং

[সম্পাদনা]

মাত্র ১২ বছর বয়সে হ্যাকিং এর ভূবনে পদার্পণ করেন মিটনিক। তার হ্যাকিং জীবন শুরু হয় ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ ব্যবহার করে লস এঞ্জেলসের বাসে পাঞ্চ কার্ড হ্যাকিং এর মাধ্যমে। যাতে অনায়েসে ফ্রী রাইড করা যেত।[][] প্রথমে টুকটাক হ্যাকিং করলেও কার্যকরভাবে হ্যাকিং শুরু করেন ১৯৮৩ সালের দিকে। সে সময়ে তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইন্টারনেটে বন্ধুর কাছ থেকে ফোন নাম্বার পেয়ে আরপানেটে অ্যাকসেস পেয়ে যায় মিটনিক আর আরপানেট যেহেতু মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি নেটওয়ার্ক ছিল সেহেতু মন্ত্রনালয়ের সকল স্পর্শকাতর ফাইল দেখার সুযোগ পেয়ে যান কেভিন মিটনিক।

এরপর মটোরোলা, নকিয়া, ফুজিৎসুর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার হ্যাক করেছিলেন।[][] তার হ্যাকিং বিদ্যার জন্য তাকে গ্লেন কেজ উপাধি দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার, দোষী সাব্যস্ত এবং শাস্তি

[সম্পাদনা]

এফবিআই ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিটনিককে তার রালেগ, নর্থ ক্যারোলাইনার এপার্টমেন্ট থেকে গ্রেফতার করে।[] তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়েছিলো তা হল, লস এঞ্জেলেসের বাস সিস্টেম হ্যাকিং করে ফ্রী ভ্রমণ, ডিআসি সিস্টেম হ্যাকিং যার কারণে তাদের ১৬০০০০ ডলার ক্ষতি হয়েছিলো, মটোরোলা, নকিয়া, ফুজিৎসুর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম হ্যাকিং, এফবিআই এর সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের চেষ্টা, আইবিএম এর মাইক্রোকম্পিউটার প্রকল্পে আক্রমণ ইত্যাদি এছাড়া শত শত নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা, ফ্রী কল করার হ্যাকিং, বিভিন্ন মেইল সিস্টেম হ্যাকিং চেষ্টার শত শত অভিযোগ ছিল তবে তা প্রমাণ করা যায় নি।

১৯৮৮ সালে ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট সিস্টেম (ডিইসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট হ্যাক করায় তিনি এক বছর জেল খাটেন। তবে তখন হ্যাকার না ভেবে চুরির মামলায় তাকে আসামী করা হয়। এরপর আর একটি হ্যাকিং এর ঘটনাতে তার এরেস্ট ওয়ারেন্টি ইস্যু হলে সে প্রায় আড়াই বছর পালাতক থাকেন। তাকে শাস্তি হিসেবে তার ৫ বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয় এবং ২০০০ সালে কেভিন মুক্তি পান, তবে শর্ত ২০০৩ সালের আগে তিনি কোনো কম্পিউটার, সেল ফোন এবং ইন্টারনেটযুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিকিউরিটি কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

কেভিন মিটনিক ১৬ জুলাই, ২০২৩ তারিখে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ৫৯ বছর বয়সে পিটসবার্গ, পেনসিলভানিয়া হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর সময়, তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার স্ত্রী তার প্রথম সন্তানের সাথে গর্ভবতী ছিলেন। [][][][১০][১১]

মিডিয়া

[সম্পাদনা]

মিটনিকের জীবনী নিয়ে ২০০০ সালে তৈরি হয় সিনেমা ‘ট্রেকডাউন’।[১২]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Kevin Mitnick sentenced to nearly four years in prison; computer hacker ordered to pay restitution to victim companies whose systems were compromised" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। United States Attorney's Office, Central District of California। আগস্ট ৯, ১৯৯৯। সেপ্টেম্বর ২৬, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৩, ২০১৩ 
  2. "প্রথম আলো"। ৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৪ 
  3. নির্বাচনের নিরাপত্তায় হ্যাকার মিটনিক প্রথম আলো[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Mitnick, Kevin (২০১১)। Ghost in the Wires: My Adventures as the World's Most Wanted Hacker। Little, Brown and Company। আইএসবিএন 0-316-03770-2 
  5. Greene, Thomas C. (জানুয়ারি ১৩, ২০০৩)। "Chapter One: Kevin Mitnick's story"। The Register। ২০১২-০৯-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-১৩ 
  6. "Fugitive computer hacker arrested in North Carolina" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। United States Department of Justice। ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৯৯৫। জুন ২৯, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৩, ২০১৩ 
  7. "Kevin Mitnick, hacker and fugitive turned security consultant, dies at 59"দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  8. "Kevin Mitnick, Once the 'Most Wanted Computer Outlaw,' Dies at 59"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  9. "Kevin David Mitnick"dignitymemorial.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  10. "Famed Hacker Kevin Mitnick Dead at 59"securityweek.com (ইংরেজি ভাষায়)। SecurityWeek News। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  11. "Famed US hacker Kevin Mitnick dies"দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  12. Skeet Ulrich, Russell Wong (২০০৪)। Track Down (DVD)। Dimension Studios। 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]