ওজন | ১০৫.৬ ক্যারেট (২১.৬ গ্রাম) |
---|---|
রঙ বা বর্ণ | বর্ণহীন, শ্বেত শুভ্র |
মূল দেশ | ভারত |
মূল খনি | কোল্লুর খনি , গুন্টুর জেলা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত[১] |
আবিষ্কারের সময় | ত্রয়োদশ শতাব্দী |
মূল মালিক | কাকাতিয়া রাজবংশ (১১৬৩-১৩২৩) |
বর্তমান মালিক | ব্রিটিশ রাজ পরিবার [২] |
কোহিনূর (বাংলা উচ্চারণ: [kohɪnur]; অনুবাদ. "আলোর পাহাড়") বা কোহ-ই-নূর হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কাটা হীরা, যার ওজন প্রায় ১০৮.৯৩ ক্যারেট। বর্তমানে এটি ব্রিটিশ রাণীর মুকুটে শোভা পাচ্ছে। এটি বিভিন্ন রাজা বাদশাহ ও শাসকের হাত ঘুরে এখন স্থান পেয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে।
এর ইতিহাসের সূচনা ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে। ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনূর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল এবং পরবর্তীকালে তা মোগল সম্রাটদের হাতে আসে এবং সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ূর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করে। মোগল সাম্রাজ্য যখন বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন নাদির শাহকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জ্বল দিন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে। কিন্তু তাকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। কৌশলে তিনি মোগলদের কাছ থেকে কোহিনূর উদ্ধার করে নিয়ে যান ইরানে। কোহিনূর নামটিও নাদির শাহের দেয়া। নাদির শাহ নিহত হবার পর কোহিনূর আসে আফগানিস্তান সম্রাট হুমায়ুনের পুত্রের কাছে।
পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিং আফগান শাসকের নিকট থেকে কোহিনূর হীরা পেয়েছিলেন। তিনি তা উইল করে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে দিয়ে যান।
দ্বিতীয় ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধের পর শিখদের হারিয়ে ব্রিটিশরা শিখ সাম্রাজ্য দখল করে। তার জন্য লর্ড ডালহৌসি লাহৌরের শেষ চুক্তি তৈরি করেন। সেই চুক্তিতেই কোহিনূর সহ মহারাজার যাবতীয় সম্পদ ইংরেজদের রাজ্য ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়াকে সমর্পণের কথা বলা হয়েছিল।
উত্তরসূরি দলীপ সিংহ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে এ’টি তুলে দেন। শেষ পর্যন্ত সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে তুলে দেন রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে। ১০৮.৯৩ ক্যারেট ওজনবিশিষ্ট কোহিনূর প্রথমে রাণী ভিক্টোরিয়া ব্যবহার করতেন তার হাতে। এরপর সেটি স্থান পায় ব্রিটিশ মুকূটে।
১৮৫০-এ দলীপ সিংহ ছিলেন নাবালক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নাবালক রাজাকে চাপ দিয়ে কোহিনূর নেওয়া হয় এবং সেই যুক্তিতেই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার সময় এবং তার পরে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও বর্তমান মহারাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময় কোহিনূর প্রত্যর্পণের দাবি তুলেছে ভারত। কিন্তু চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে তা খারিজ করে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
কোহিনূরের মালিকানা নিয়ে আশির দশকেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত এর সত্ত্ব দাবি করেছিল। তবে ব্রিটিশ সরকার সব দাবিই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এসকল দাবী অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে।
কথিত আছে, কোহিনূর নামক এই হীরাটি "অভিশপ্ত"। প্রতিবারই এই হীরাটির মালিকরা কোনো না কোনো কারণে করুণ পরিণতির শিকার হয়েছিলেন। এর কারণ হিসাবে এই অভিশাপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই হীরাটির মালিকানা প্রাপ্তির পর তৎকালীন রাণী ভিক্টোরিয়া একটি আইন জারির মাধ্যমে এটা ঘোষণা করেছিলেন যে শুধুমাত্র রাজপরিবারের রাণীরাই এই হীরাটি তাদের মুকুটে ব্যবহার করতে পারবেন, রাজারা নয়। কারণ ব্রিটিশদের হাতে আসার পূর্বে এই হীরাটির সকল মালিকরাই ছিল রাজা না হয় সম্রাট, তথাকথিত অভিশাপের শিকার তারাই হয়েছিল বলে মনে করা হয়।