ক্যাথরিন গ্রাহাম | |
---|---|
ইংরেজি: Katharine Graham | |
![]() ১৯৭৫ সালে গ্রাহাম | |
জন্ম | ক্যাথরিন মেয়ার ১৬ জুন ১৯১৭ |
মৃত্যু | ১৭ জুলাই ২০০১ বোয়েজ, আইডাহো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৮৪)
সমাধি | ওক হিল সেমেটারি ওয়াশিংটন, ডি.সি., মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
শিক্ষা | ভাসার কলেজ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় (বিএ) |
পেশা | সংবাদপত্র প্রকাশক |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফিলিপ গ্রাহাম (বি. ১৯৪০; মৃ. ১৯৬৩) |
সন্তান | ৪, ল্যালি ও ডোনাল্ড-সহ |
পিতা-মাতা | ইউজিন মেয়ার অ্যাগনেস ই. মেয়ার |
পরিবার | ফ্লোরেন্স মেয়ার (বোন) মার্ক ইউজিন মেয়ার (পিতামহ) জোসেফ নিউমার্ক (প্র-পিতামহ) |
ক্যাথরিন মেয়ার গ্রাহাম (ইংরেজি: Katharine Meyer Graham; ১৬ জুন ১৯১৭ - ১৭ জুলাই ২০০১) একজন মার্কিন সংবাদপত্র প্রকাশক ছিলেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তার পারিবারিক সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পরিচালনা করতেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগের অন্যতম কারণ ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সময়কালে তিনি এই পত্রিকার সভাপতি ছিলেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রধান মার্কিন সংবাদপত্রের প্রথম নারী প্রকাশক ছিলেন এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের বোর্ড কর্তৃক নির্বাচিত প্রথম নারী ছিলেন।
১৯৮৮ সালে তিনি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফেলো নির্বাচিত হন।[১] তার স্মৃতিকথা পারসোনাল হিস্ট্রি ১৯৯৮ সালে জীবনী বা আত্মজীবনীতে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে। ২০০২ সালে তাকে মরণোত্তর প্রেসিডেনশল মেডেল অব ফ্রিডমে ভূষিত করা হয়।[২]
ক্যাথরিন মেয়ার ১৯১৭ সালের ১৬ই জুন নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক ধন্যাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা অ্যাগনেস ই. মেয়ার ও পিতা ইউজিন মেয়ার।[৩] তার পিতা আলসাটিয়ান ইহুদি বংশোদ্ভূত ও তার মাতা লুথেরান যার পিতামাতা জার্মান অভিবাসী ছিলেন।[৪][৫][৬][৭] তার পিতা একজন অর্থলগ্নিকারী ছিলেন ও পরে ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান হন। তার পিতামহ মার্ক ইউজিন মেয়ার ও প্র-পিতামহ র্যাবাই ইউসেফ নিউমার্ক। তার ফুফু ফ্লোরেস্ন মেয়ার ব্লুমেন্থাল প্রিক্স ব্লুমেন্থাল প্রতিষ্ঠা করেন।[৮] তার পিতা ১৯৩৩ সালে এক দেউলিয়া অকশন থেকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ক্রয় করেন। তার মাতা বোহেমিয়ান বুদ্ধিজীবী, শিল্প-প্রেমী, ও রিপাবলিকান পার্টির রাজনৈতিক সক্রিয়কর্মী ছিলেন। তার সাথে অগুস্ত রোদ্যাঁ, মারি ক্যুরি, টমাস মান, আলবার্ট আইনস্টাইন, এলিনর রুজাভেল্ট, জন ডিউই[৯] ও সল আলিন্স্কির বন্ধুত্ব ছিল।[১০][১১]
ক্যাথরিনের শৈশব কাটে ক্যালিফোর্নিয়ার আলামেদায়।[১২] তার চার ভাইবোনের সাথে তাকে লুথেরান হিসেবে ব্যাপ্তিষ্ম করা হয়, কিন্তু তারা এপিস্কোপাল গির্জায় প্রার্থনা করতেন।[১৩] তার ভাইবোনেরা হলেন ফ্লোরেন্স, ইউজিন থ্রি (বিল), রুথ ও এলিজাবেথ (বিস) মেয়ার।[১৪] তার বড় বোন ফ্লোরেন্স মেয়ার সফল আলোকচিত্রী এবং অভিনেতা অস্কার হোমল্কার স্ত্রী ছিলেন।
শৈশবে ক্যাথরিন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মন্টেসরি স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে দ্য পটোম্যাক স্কুলে ভর্তি হন।[১৪] পরে তিনি দ্য মাদেইরা স্কুলে পড়াশোনা করেন, যে স্কুলের নতুন ভার্জিনিয়া ক্যাম্পাসের জন্য তার পিতা জমি দান করেছিলেন।[১৫] এরপর তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় রূপ নেওয়ার পূর্বের ভাসার কলেজে পড়াশোনা করেন।
স্নাতক সম্পন্ন করার পর মেয়ার স্বল্প সময় সান ফ্রান্সিস্কোর একটি সংবাদপত্রে কাজ করেন, সেখানে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের পাশাপাশি হোয়ার্ফ কর্মীদের একটি বড় ধর্মঘটের সংবাদ করেন। মেয়ার ১৯৩৮ সাল থেকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ কাজ শুরু করেন।
ইউজিন মেয়ার দ্য পোস্ট তার জামাতা ফিলিপ গ্রাহামকে হস্তান্তর করলে ইউজিন ১৯৪৬ সালে এই সংবাদপত্রের প্রকাশক হন।[১৬] ক্যাথরিন তার আত্মজীবনী পারসোনাল হিস্ট্রি-তে তার পিতা তাকে দ্য পোস্ট তাকে না দিয়ে ফিলিপকে দেওয়ায় তিনি কতটা অসম্মানিত বোধ করেছিলেন সে সম্পর্কে লিখেন, "আমার পিতা আমার স্বামীর কথা ভেবেছিলেন কিন্তু আমার কথা ভাবেননি এটা আমাকে কষ্ট দিলেও তা আমাকে তৃপ্তি দিয়েছিল।"[১৪] তার পিতা ইউজিন মেয়ার পরবর্তীকালে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান হন, কিন্তু ছয় মাস পরই সেই পদ ত্যাগ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত ওয়াশিংটন পোস্ট কোম্পানির প্রধান ছিলেন। এই সময়ে ফিলিপ গ্রাহাম এই পদ গ্রহণ করেন এবং কোম্পানিটি টেলিভিশন স্টেশন ও নিউজউইক পত্রিকা ক্রয়ের মধ্য দিয়ে আরও বিস্তৃতি লাভ করে।[১৭]
ফিলিপ গ্রাহামের আত্মহত্যার পর ক্যাথরিন কোম্পানি ও দ্য পোস্ট-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সভাপতি পদ অধিকার করেন এবং ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সংবাদপত্রটির ডি ফ্যাক্টো প্রকাশক হন।[১৮] তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশক পদ লাভ করেন এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বোর্ডের চেয়ারওম্যান ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৭২ সালে প্রথম নারী ফরচুন ৫০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।[১৯][২০]
গ্রাহাম বেঞ্জামিন ব্র্যাডলিকে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ওয়ারেন বাফেটকে তাকে আর্থিক পরামর্শ প্রদানের জন্য যুক্ত করেন। বাফেট কোম্পানির বড় শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠেন। গ্রাহামের পুত্র ডোনাল্ড ১৯৭৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই সংবাদপত্রের প্রকাশক ছিলেন।[২১]
গ্রাহাম দ্য পোস্ট-এর ইতিহাসের কঠিন সময়ে এর সভাপতিত্ব করেন। দ্য পোস্ট ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যার ফলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
গ্রাহাম ও সম্পাদক ব্র্যাডলি পেন্টাগন পেপার্সের বিষয়বস্তু প্রকাশের সময় প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যখন পোস্ট-এর প্রতিবেদক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইন ব্র্যাডলির কাছে ওয়াটারগেটের গল্প নিয়ে আসেন, গ্রাহাম তাদের তদন্তকারী প্রতিবেদনের সমর্থন দেন এবং ব্র্যাডলি ওয়াটারগেট সম্পর্কিত ঘটনাবলি প্রকাশ করতে থাকেন, যখন অল্প কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছিল।
১৯৪০ সালের ৫ জুন মেয়ার হার্ভার্ড ল স্কুলের স্নাতক ও সুপ্রিম আদালতের বিচারক ফেলিক্স ফ্রাঙ্কফুর্টারের কেরানি ফিলিপ গ্রাহামকে বিয়ে করেন।[১৩] তাদের এক কন্যা ল্যালি মরিস ওয়েমাউথ ও তিনি পুত্র ডোনাল্ড এডওয়ার্ড গ্রাহাম (জন্ম ১৯৪৫), উইলিয়াম ওয়েলশ গ্রাহাম (১৯৪৮-২০১৭) ও স্টিফেন মেয়ার গ্রাহাম (জন্ম ১৯৫২)।[২২] উইলিয়াম ২০১৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর ৬৯ বছর বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে তার বাড়িতে আত্মহত্যা করেন।[২৩]
টেমপ্লেট:আইডাব্লিউএমএফ পুরস্কার টেমপ্লেট:পুলিৎজার পুরস্কার জীবনী বা আত্মজীবনীকার ১৯৭৬-২০০০