ক্যামেরা বা আলোকচিত্রগ্রাহী যন্ত্র (ইংরেজি: Camera বা Photographic camera) আলোকচিত্র (ফটোগ্রাফ) গ্রহণ ও ধারণের যন্ত্র। দৃশ্যমান স্থির বা গতিশীল ঘটনা ধরে রাখার জন্য এটি ব্যবহার হয়।[১] ক্যামেরা চিত্র রেকর্ড করতে ব্যবহৃত একটি অপটিক্যাল যন্ত্র। প্রাথমিক পর্যায়ে, ক্যামেরায় একটি ছোট গর্ত ( অ্যাপারচার ) দিয়ে সিল করা বাক্স (ক্যামেরার শরীর বা বডি) দেওয়া হয় । এতে ক্যামেরাতে এটি হালকা সংবেদনশীল পৃষ্ঠার (সাধারণত আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্ম বা ডিজিটাল সেন্সর ) উপর একটি চিত্র ক্যাপচার করতে দেয়। কীভাবে আলোক-সংবেদনশীল পৃষ্ঠের উপরে আলো পড়বে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্যামেরার বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। লেন্স ক্যামেরায় প্রবেশকারী আলোকে আলোকপাত করে এবং অ্যাপারচারের আকারটি বেশি বা কম আলো ক্যামেরায় আসতে দিতে প্রশস্ত বা সংকীর্ণ করা যায়। এতে শাটার প্রক্রিয়াটি ফটো সংবেদনশীল পৃষ্ঠটি আলোর সংস্পর্শে আসার সময় নির্ধারণ করে। স্থির চিত্র, গতিশীল চিত্র, শব্দসহ চিত্র, রঙ্গিন চিত্র প্রভৃতি এর দ্বারা গ্রহণ করা সম্ভব। ক্যামেরা নামটি লাতিন পদগুচ্ছ কামেরা ওবস্কিউরা থেকে এসেছে, যার অর্থ "অন্ধকার প্রকোষ্ঠ"।[২]
অতীতে আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্ম অর্থাৎ আলোকসংবেদী পর্দায় চিত্রের নেগেটিভ বা ঋণাত্মক ছাপ সংগৃহীত হত। এই ঋণাত্মক চিত্রটিকে পজিটিভ বা ধনাত্মক করার জন্যে আলোকচিত্রের উন্নতিসাধন ("ডেভেলপ") করতে হত। এখন আলোক ডায়োড (ফটোডায়োড) ও সিসিডি-যুক্ত ডিজিটাল ক্যামেরার আবির্ভাবের কারণে আলোকচিত্র গ্রহণ ও ধারণের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
স্থির ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত ক্যামেরা। ক্যামেরা যখন আবিষ্কার হয় তখন থেকেই স্টিল ক্যামেরাই ক্যামেরা নামে চলে আসছে, ভিডিও ক্যামেরা আসার পর এর স্থির বা স্টিল নামটি যোগ হয়। আধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরাগুলো একই সঙ্গে স্টিল চিত্র ও ভিডিও ধারণ এই দুই ধরনের কাজই করতে পারে।
শুরুর দিকে মানুষের অবয়ব, বিভিন্ন শখের বস্তু, ইমারত ও নৈসর্গিক দৃশ্যকে ধরে রাখার জন্য নানা উপায়ে চেষ্টা চালানো হতো। এক পর্যায়ে শুরু হয় কলম ও রঙ-তুলির ব্যবহার। তারপর কাপড়, কাগজ ও পাথরের ওপর ছবি আঁকার প্রচলন শুরু হতে থাকে। স্মৃতি রক্ষার্থে মানুষের ছবি, ইতিহাসখ্যাত ইমারত, ঐতিহাসিক বিভিন্ন দৃশ্য ও শখের বস্তুকে কলম অথবা রঙ-তুলির সাহায্যে ক্যানভাসে ধরে রাখার চেষ্টা চালায় মানুষ। এভাবে ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে বড় বড় চিত্রকর, যারা সৃষ্টি করেন ইতিহাসখ্যাত চিত্রকর্ম। এরপর মানুষ ভাবতে থাকে ছবির বিষয়টিকে কীভাবে আধুনিকতার সংস্পর্শে আনা যায়। অর্থাৎ কীভাবে খুব সহজে নিখুঁত ছবি তোলা যায়। চলতে থাকে গবেষণা। আবিষ্কৃত হয় ছবি তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। এরই ধারাবাহিকতায় চলে আসে ক্যামেরা তত্ত্বটি। ১০২১ সালে ইরাকের এক বিজ্ঞানী ইবন-আল-হাইতাম আলোক বিজ্ঞানের ওপর সাত খণ্ডের একটি বই লিখেছিলেন আরবি ভাষায়, এর নাম ছিল কিতাব আল মানাজির। সেখান থেকে ক্যামেরার উদ্ভাবনের প্রথম সূত্রপাত। ১৫০০ শতাব্দীতে এসে চিত্রকরের একটি দল তাদের আঁকা ছবিগুলোকে একাধিক কপি করার জন্য ক্যামেরা তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। এর ধারাবাহিকতায় ১৫৬০ সালে রোলামো কারদানো নামের জার্মানির একজন বিজ্ঞানী ক্যামেরাতে প্রথম লেন্স সংযোজন করেন। তখন ক্যামেরায় এই লেন্স ব্যবহার করে শুধু ছবি আঁকা হতো। তখনও আবিষ্কৃত ওই ক্যামেরা দিয়ে কোনো প্রকার ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই ক্যামেরাকে সফল রূপ দিতে সময় লেগেছিল আরও অনেক বছর।
ক্যামেরার ইতিহাসে একটি মাইলফলক ছিল ১৮২৬ সাল। ওই সালেই প্রথমবারের মতো আলোকচিত্র ধারণের কাজটি করেন জোসেপ নাইসপোর নিপস। এরপরই বিশ্বব্যাপী ক্যামেরার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দ্রুতবেগে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৮৮৫ সালে জর্জ ইস্টম্যান তার প্রথম ক্যামেরা ‘কোড’-এর জন্য পেপার ফিল্ম উৎপাদন করেন। বাণিজ্যিকভাবে এটাই ছিল বিক্রির জন্য তৈরি প্রথম ক্যামেরা। এর ঠিক এক বছর পরে পেপার ফিল্মের পরিবর্তে সেলুলয়েড ফিল্মের ব্যবহার চালু হয় ক্যামেরায়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকানো নয়। ১৯৪৮ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয় পোলারয়েড ক্যামেরা, যা দ্বারা মাত্র এক মিনিটে ছবিকে নেগেটিভ ইমেজ থেকে পজিটিভ ইমেজে রূপান্তর করা সম্ভব হয়। দীর্ঘ ২৫ বছর অ্যানালগ ক্যামেরার রাজত্ব চলার পর ১৯৭৫ সালে কোডাকের স্টিভেন স্যাসোন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন। এভাবেই আজ ক্যামেরা মানুষের হাতের মুঠোয়।
The camera obscura looms large in traditional historical accounts of photography's invention.