ক্যাম্পাস (ইংরেজি: Campus) বলতে সাধারণতঃ বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় কিংবা অন্য যে-কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবস্থিত খোলা কিংবা পরিবেষ্টনকারী একখণ্ড ভূমিবিশেষ। বাংলা একাডেমীর অভিধানমাফিক এর বাংলা অর্থ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এলাকা। সচরাচর এতে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের জন্যেই গ্রন্থাগার, শ্রেণীকক্ষ, গবেষণাগার, উদ্যান, ক্যাফেটেরিয়া, আবাসিক হল বা ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ ইত্যাদি স্থায়ী সম্পত্তি থাকতে পারে। শুরুতে ক্যাম্পাস শব্দটি ভবনের মাঝামাঝি ঘাষযুক্ত উন্মুক্ত ভূ-খণ্ডকে নির্দেশ করতো। পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরো এলাকাকে ক্যাম্পাস হিসেবে পরিগণনা করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং সম্পর্কবিহীন ভবন - উভয়ই ক্যাম্পাসের সাথে জড়িত।[২] বর্তমানে ক্যাম্পাসের সংজ্ঞা পরিবর্তিত রূপ ধারণ করেছে যা যে-কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ভবনের সম্মিলন স্থলকে বুঝায়।
ক্যাম্পাস শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ফিল্ড থেকে। অষ্টাদশ শতকে মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৭৭৫ সালে কলেজ অব নিউ জার্সি (বর্তমান - প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়)-এর মাঠের জন্য প্রথমবারের মতো শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল।[৩] পরবর্তীকালে অন্যান্য আমেরিকান কলেজগুলো তাদের নিজেদের মাঠের জন্যও ক্যাম্পাস শব্দের ব্যবহার করতে শুরু করে। কিন্তু ক্যাম্পাস বলতে কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠকেই বুঝায় না। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের সমগ্র এলাকা ক্যাম্পাস, মাঠ কিংবা উঠান হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। এছাড়াও, হাসপাতাল কিংবা ক্ষেত-খামারের বিস্তৃত জমিও ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিতি পেয়ে থাকে।
ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও ক্যাম্পাস শব্দের পরিচিতি রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহরাঞ্চলে এর শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটাচ্ছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ না থাকায় মনোনীত স্থানে শাখা প্রতিষ্ঠা করেছিল। নতুন শিক্ষায়তনিক কেন্দ্র হিসেবে অনেকক্ষেত্রে সেগুলো বিশ্বের শিক্ষাঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে দ্য বিউটি অব দ্য ক্যাম্পাস অব দি ইউনিভার্সিটি শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। সেখানে তিনি ছাত্র এবং শিক্ষক উভয়কেই কঠোর পরিশ্রমী হতে বলেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
বিংশ শতাব্দীতে এসে ক্যাম্পাস শব্দের ভাবগত অর্থ আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ১৯৫০-এর দশকে পুরনো অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যায় ও সাধারণভাবে অর্থ প্রকাশ পেয়েছে। কখনো কখনো কোন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ভবনও ক্যাম্পাসরূপে পরিচিত হয়েছে। তন্মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের অনুরূপ ওয়াশিংটনের রেডমন্ডেও মাইক্রোসফট ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। জরুরী সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের সেবার পরিধিকে বিভাজন ঘটিয়ে, বিভিন্ন এলাকায় বিশেষায়িত বিভাগগুলোকে ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।