ক্যালরি শক্তির একটি একক, পুষ্টিবিজ্ঞানে যার বহুল ব্যবহার রয়েছে। [১]
ঐতিহাসিক কারণে ক্যালরির দুইটি একক বহুল প্রচলিত। "ক্ষুদ্র ক্যালরি" বা গ্রাম ক্যালরি (সচরাচর যাকে ক্যাল বলে উল্লেখ করা হয়) বলতে বুঝায় ১ গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১ ডিগ্রি কেলভিন বৃদ্ধি করতে ব্যয়িত তাপশক্তি।[২][৩] আবার, ১ কিলোগ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১ কেলভিন বৃদ্ধি করতে ব্যয়িত শক্তি "বড় ক্যালরি", খাদ্য ক্যালরি বা কিলোক্যালরি নামে পরিচিত। [৪] পুষ্টিবিজ্ঞানে বড় ক্যালরিকে সাধারণত ক্যালরি বলেই সম্বোধন করা হয়। বড় ক্যালরি ও ছোট ক্যালরির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের জন্য প্রথমোক্ত ক্যালরিকে ইংরেজিতে লেখার সময় প্রায়ই বড় হাতের C অক্ষরটি ব্যবহার করা হয়। [৫] অধিকাংশ দেশে শিল্পায়িত খাদ্যপণ্যে কিলোক্যালরি বা খাদ্যক্যালরিতে পুষ্টিমান (প্রতি পরিবেশনে) লেখার নিয়ম রয়েছে।
ক্যালরির সাথে মেট্রিক একক ও এসআই এককের সম্পর্ক রয়েছে। বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে এককটি সেকেলে পরিগণিত হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো ক্যালরি এককের ব্যবহার রয়েছে। [১] শক্তির এসআই একক হলো জুল ; এক ক্যালরি (ছোট) ৪.১৮৪ জুলের সমান, আবার এক কিলোক্যালরি (বড়) ৪১৮৪ জুলের সমান।
নিকোলাস ক্লিমেন্ট ১৮১৯-১৮২৪ সালে প্রদত্ত ভাষণগুলোতে তাপশক্তির একক হিসেবে ক্যালরির প্রবর্তন করেন। এটি ছিল মূলত বড় ক্যালরি, বা আধুনিক কিলোক্যালরি। [৬] ১৮৪১ ও ১৮৬৭ সালে যথাক্রমে ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি অভিধানে ক্যালরি শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হয়। লাতিন ক্যালর (Calor) শব্দ থেকে এর উৎপত্তি, যার অর্থ তাপ।
রসায়নবিদ পিয়েরে আঁতোয়া ফ্যাব্রে ও পদার্থবিজ্ঞানী জোহান টি সিলবারম্যান ক্ষুদ্র ক্যালরি বা আধুনিক ক্যালরি এককের প্রবর্তন করেন। ১৮৭৯ সালে মার্সেলিন বার্থেলোট গ্রাম ক্যালরি ও কিলোগ্রাম ক্যালরির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করেন। এছাড়াও তিনি বড় ক্যালরি বা কিলোগ্রাম ক্যালরির আদ্যক্ষর সর্বদা বড় হাতের হরফে লেখার নীতি প্রবর্তন করেন।
ওয়েসলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলবার অলিন অ্যাটওয়াটার সর্বপ্রথম ১৮৮৭ সালে পুষ্টিবিজ্ঞানে "ক্যালরি" শব্দের ব্যবহার করেন।[১]
১৮৯৬ সালে সিজিএস একক ক্যালরির ব্যবহার শুরু হয়। তবে শক্তির পূর্ব-প্রচলিত একক আর্গ তখনো বহাল ছিল (বিজ্ঞানী ক্লসিয়াস ১৮৬৪ সালে আর্গ এককের ধারণা প্রদান করেন। তখন এর নাম ছিল এর্গন। ১৮৮২ সালে আর্গ এককের আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু হয়।)।
১৯২৮ সালের দিকে ক্যালরির ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ছোট ক্যালরি ও বড় ক্যালরির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে বড় হাতের অক্ষর ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ১৯৪৮ সালে আন্তর্জাতিক পরিমাপ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যালরির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়।[৭]
একসময় ক্যালরিকে ইংরেজিতে "Calory" লেখা হত। তবে বর্তমানে এর প্রচলন নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা কিলোক্যালরি এককটিই ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। তবে শারীরতত্ত্ববিদরা কিলোজুল এককটিই ব্যবহার করে থাকেন। অন্যান্য দেশে অবশ্য কিলোজুল এককটিই অধিক ব্যবহৃত হয়। [৮] যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য মোড়কীকরণ আইনে কিলোক্যালরি এককের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। খাদ্যপণ্যের মোড়কে কিলোজুল একক ব্যবহার করা গেলেও উক্ত মোড়কে কিলোক্যালরি একক অবশ্যই থাকতে হবে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আইন সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে খাদ্যপণ্যের মোড়কে কিলোক্যালরি একক ব্যবহার করা গেলেও কিলোজুল একক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।