ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ হামলা | |
---|---|
নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসবাদের অংশ | |
স্থান | ক্রাইস্টচার্চ, ক্যানটারবারি, নিউজিল্যান্ড |
স্থানাংক | ৪৩°৩১′৫৮″ দক্ষিণ ১৭২°৩৬′৪২″ পূর্ব / ৪৩.৫৩২৯° দক্ষিণ ১৭২.৬১১৮° পূর্ব |
তারিখ | ১৫ মার্চ ২০১৯ ১৩:৪০ (নিউজিল্যান্ড মান সময়; ইউটিসি+১৩) |
লক্ষ্য | মুসলিম |
হামলার ধরন | গণ গুলিবর্ষন, সন্ত্রাসী হামলা[১] |
ব্যবহৃত অস্ত্র | দুটি আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, দুটি শটগান, এক বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল, অবিস্ফোরিত গাড়ী বোমা |
নিহত | ৫০
|
আহত | ৫০ |
সন্দেহভাজন হামলাকারী | ব্রেন্টন ট্যারেন্ট |
কারণ |
|
ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ হামলা হল ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ শুক্রবার জুম্মার নামাজ চলাকালে আল নূর মসজিদ এবং ক্রাইস্টচার্চে লিনউড ইসলামিক সেন্টারে সংগঠিত সন্ত্রাসী গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা।[৬] এই গুলিবর্ষণ নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী হামলা। এতে প্রায় ৫০ জন নিহত হয় ও কমপক্ষে ৫০ জনের মত গুরুতরভাবে আহত হয়। অভিযুক্ত অপরাধী, অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যার অভিযোগ আনা হয়।[৭] সন্দেহভাজন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক সরাসরি ব্যবহার করে আক্রমণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেন।[৮]
২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ তারিখে নিউজিল্যান্ড স্থানীয় সময় দুপুর ১:৪০ মিনিটে ক্রাইস্টচার্চের উপকূলীয় অঞ্চল রিকার্ক্টন-এর আল নূর মসজিদে প্রথম হামলা করা হয় এবং পরবর্তীতে লিনউড ইসলামিক সেন্টারে হামলা করা হয়।[৯][১০][১১] প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, হামলার সূত্রপাত "একাধিক থেকে একযোগে আক্রমণ করা হয়"।[১২] কিন্তু পরবর্তীতে একজন সন্দেহভাজনকে উভয় মসজিদে "পরিকল্পিতভাবে" হত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।[১৩][১৪]
নিউজিল্যান্ড স্থানীয় সময় দুপুর ১:৪০ এর কাছাকাছি ডিন্স এভিনিউ, রিকার্ট্টন-এর আল নূর মসজিদে একটি বিশাল অস্ত্র সজ্জিত বন্দুকধারী জুম্মার নামাজ আদায় করার সময়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। বন্দুকধারী ফেসবুক সরাসরি ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে টানা ১৭ মিনিট ধরে আক্রমণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে এবং গাড়ি চালিয়ে লক্ষ্যস্থল পর্যন্ত না পৌছানো পর্যন্ত তা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে।[১৫] গণমাধ্যেমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি ২৮-বছর-বয়সী অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত যিনি নব্য নাৎসি প্রতীক ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়। [১৬]
লিনউড ইসলামিক সেন্টারে দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়, যেটি আল নূর মসজিদ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার (৩.১ মাইল) দূরত্বে অবস্থিত।[১৭][১৮] সেখানেও ৭জন নিহত হন।
এই হামলার সন্দেহভাজন হচ্ছেন ২৮ বছর বয়সী ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট (Brenton Harrison Tarrant)। প্রথমদিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এটি একটি একাধিক ব্যক্তির দ্বারা একই সাথে কয়েকটি স্থানে ঘটা হামলা।[১৯] কিন্তু পরের কেবল মাত্র একজন মাত্র সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়।[২০][২১] হামলার পর ১ম জরুরি ডাক (ইমারজেন্সি কল) এর ৩৬ মিনিট পর দুজন "গ্রাম্য সম্প্রদায়" পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার করেন।[২২][২৩][২৪][২৫] তার গাড়ি ধাওয়া করা হয়, এরপর ব্রগহাম স্ট্রিটের একটি রাস্তার বাঁকের বিরুদ্ধে তার গাড়িকে আঘাত করা হয় ও তাকে গান পয়েন্টে রেখে গ্রেফতার করা হয়।[২৬][২৭] নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ব্রেন্টন ট্যারান্ট আরও হামলার পরিকল্পনা করেছিল।[২৮]
হামলার সময় ট্যারান্ট নিউজিল্যান্ডে ডুনেডিন এর এন্ডারসনস বে তে বাস করছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময় ধরে ট্যারান্ট নিউ সাউদ ওয়েলসের গ্রাফটনে একজন ব্যক্তিগত শরীরচর্চা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।[২৯] ২০১২ সাল জুড়ে তিনি এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। তুরস্ক ও বুলগেরিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ট্যারান্টের ভ্রমণ নিয়ে তদন্ত করছে।[৩০][৩১] ইউরোপ জুড়ে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঘটা বিভিন্ন জঙ্গি হামলা নিয়ে তিনি আবিষ্ট ছিলেন।[৩২] তিনি এই হামলার দুই বছর আগে থেকেই হামলাটির পরিকল্পনা করছিলেন, এবং হামলাটির তিন মাস পূর্বে তিনি তার লক্ষ্যস্থানকে নির্বাচন করেন।[৩২] নিরাপত্তা কর্মকর্তাগণ সন্দেহ করছেন যে তিনি আক্রমণ করার দুই বছর আগে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণ করার সময় অতি-দক্ষিণপন্থী সংস্থাগুলোর সংস্পর্শে এসেছিলেন।[৩৩]
আরডার্ন বলেন, ট্যারান্ট ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে একটি বন্দুক লাইসেন্স গ্রহণ করেন, এবং এর পরের মাস থেকেই অস্ত্র কিনতে শুরু করে। পুলিস ঘটনাস্থলে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করে, এগুলোর মধ্যে ছিল দুটো সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র, দুটো শটগান এবং একটিই লেভার-একশন আগ্নেয়াস্ত্র।[৩৪] তার ব্যবহৃত বন্দুক ও ম্যাগাজিনগুলোতে বিভিন্ন মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যকার ঐতিহাসিক সংঘাত বা যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নানান ঐতিহাসিক ঘটনা, ব্যক্তি এবং প্রসঙ্গ সাদা কালিতে লেখা ছিল। সেই সাথে অস্ত্রের গায়ে সাম্প্রতিক ইসলামী জঙ্গি হামলার শিকারদের নাম ও জসুয়া এস্তেবানেজ ও লুকা ট্রাইনি এর মত অতি-দক্ষিণপন্থী হামলাকারীদের নামও লেখা ছিল।[৩৫]
ডেভিড টিপন নামে একজন অস্ত্র-অধিকার আন্দোলনকারী এবং নিউজিল্যান্ডে ২০টি অস্ত্রের দোকানের মালিক ব্রেন্টন ট্যারান্টকে অস্ত্র ও গুলি বিক্রি করেছিল। হামলার পর তিনি একটি গণমাধ্যম সম্মেলনে তার বিক্রির জন্য কোনরকম দায় গ্রহণ করেন নি, এবং আরও বৃহৎ বিতর্কে জড়াতে চান না বলেছেন।[৩৬]
অস্ত্র ছাড়াও পুলিস দুটো ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো নিউজিল্যান্ড প্রতিরক্ষা বাহিনী নিষ্ক্রীয় করেছে।[৩৭] হামলাকারীর কাছে কোন এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস পাওয়া যায়নি।[৩৮]
ইসলামভীতি |
---|
নিয়ে ধারাবাহিকের অংশ |
হামলার আগে, আল নুর মসজিদের আক্রমণকারী ট্যারান্ট 8chan এর ইমেজ বোর্ডে এই হামলার ব্যাপারে উল্লেখ করে "ব্যাপক প্রতিস্থাপন" ("The Great Replacement") শিরোনামে একটি ৭৩ পৃষ্ঠার ইস্তাহার পোস্ট করেন।[৩৯][৪০][৪১][৪২][৪৩] "ব্যাপক প্রতিস্থাপন" হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও এর ফরাসী প্রকরণের একটি সূত্র। হামলার ৯ মিনিট পূর্বে ট্যারান্ট ৩০ জনেরও বেশি গ্রাহকের কাছে তার ইস্তাহারটি ইমেইল করেছিল, যাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অফিস এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম অন্তর্ভূক্ত।[৪৪] তিনি হামলার ঠিক আগ মূহুর্তেই টুইটার ও 8chan এ তার ইস্তাহারের সূত্র পোস্ট করেন।[৪৫][৪৬] ইস্তাহারে বলা হয়, প্রায় দুই বছর আগে তিনি এরকম হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন, এবং এই হামলার তিন মাস আগেই তিনি ক্রাইস্টচার্চকে তার হামলার লক্ষ্যস্থানকে নির্বাচিত করেন।[৪৭] তিনি বলেন, মুসলিমদেরকে হত্যার লক্ষ্য বানাবার কারণ ছিল তাদের উপর প্রতিশোধ। আর এই প্রতিশোধ হচ্ছে "১৩০০ বছর ধরে মুসলিমদের পাশ্চাত্যে ও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে নেয়া প্রতিশোধ।"[৪৮]
ইস্তাহারে বলা হয়, তিনি আগে একজন সাম্যবাদী, নৈরাজ্যবাদী এবং উদারবাদী ছিলেন। কিন্তু "বর্ণবাদী" দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন, এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি পরিবেশ-ফ্যাসিবাদী হন।[৪৯][৫০][৫১] তিনি নিজেকে নাৎসী লেবেল দিতে অস্বীকার করেন, কিন্তু দ্য আমেরিকান কনজারভেটিভ ম্যাগাজিন বলছে তার আদর্শ জাতীয় সমাজতন্ত্রের সাথে মেলে। এছাড়া তার ইস্তাহারে নব্য-নাৎসি প্রতীক কালো সূর্য ও ওডিনের ক্রুশ বারবার দেখানো হয়।[৫২] তিনি ধনতন্ত্রকে ঘৃণা করতেন এবং চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আদর্শ বলে মনে করতেন।
এই ইস্তাহারে বিভিন্ন মুসলিম-বিরোধী এবং অভিবাসন-বিরোধী অনুভূতির প্রকাশ পাওয়া যায়। সেই সাথে এখানে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কটূক্তি, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী অলঙ্করণ, এবং "শ্বেতাঙ্গ জাতির রক্ষার জন্য" "রাষ্ট্রে আক্রমণকারী" মুসলিমদের হত্যা করার আহ্বানও ছিল।[৫৩][৫৪][৫৫] তিনি নিজেকে একজন জাতিগত জাতীয়তাবাদী হিসেবে দাবি করেন।[৫৪][৫৬][৫৭] এছাড়াও তিনি বলেন রোমানি বা জিপসি, ভারতীয়, তুর্কী ও সেমিটীয় জনগোষ্ঠীর মত অ-ইউরোপীয়গণ "তার ভূমিতে আক্রমণ করছে" বলে উল্লেখ করেন। তিনি ভারত, চীন, তুরস্ক থেকেও ভবিষ্যতে আক্রমণ আসবে বলে সতর্ক করে দেন।[৫৩][৫৪][৫৫][৫৭] তিনি বলতেন, কেবল ইউরোপকে একতাবদ্ধ করার জন্যই খ্রিস্টধর্মের মূল্য রয়েছে। ট্যারান্ট পাশ্চাত্য সমাজের নৈতিক স্খলনের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।[৫৮] এই ইস্তাহারে উচ্চ মর্যাদার দক্ষিণপন্থী ব্যক্তিত্বের উল্লেখ করা হয়, ইন্টারনেট মিম দেখানো হয়,[৫৯] এবং সেইসাথে জনগণকে তাদের এই হামলাকে সমর্থন করতে এবং এনিয়ে আরও বেশি মিম তৈরি করতে উৎসাহিত করা হয়।[৬০] এগুলোর সাথে সাথে তার সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দর্শকদেরকে তার আক্রমণে উৎফুল্ল হতে দেখা গিয়েছিল, সেখান থেকে ধারণা লাভ করা যায় যে এই আক্রমণটি ইন্টারনেট ট্রোল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। হামলাকারীর অস্ত্র নির্বাচনের বিচার এর দ্বারাও এই ধারণাটি সমর্থিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিতর্ককে আরও শক্তিশালী করবে, এবং সেখানে গৃহযুদ্ধ ঘটাবে।[৬১][৬২][৬৩][৬৪] তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী পৃথকীকরণকে ফিরিয়ে আনাকে সমর্থন করেন। এই ইস্তাহারটি দুটি নব্য-নাৎসি চিহ্ন দিয়ে শেষ করা হয়।[৬৫] ট্যারান্ট এই ইস্তাহারটির শেষ করেন একটা অন্তিম বাক্য দিয়ে, যা ছিল "বিদায়, ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুক, ভালহালায় আমি তোমাদের সাথে মিলিত হব।"[৪২]
এই ইস্তেহারে, ট্যারান্ট বলেন যে তিনি একজন "প্রকৃত ফ্যাসিবাদী" এবং স্যার অসওয়াল্ড মোসলেকে তিনি আদর্শ বলে মনে করেন। এবং তিনি লন্ডনেরমেয়র সাদিক খান, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ও তুর্কি রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানকে হত্যার আহ্বান করেন।[৬৬][৬৭] ট্যারান্ট নিজেকে "পুনরাবির্ভূত নাইটস টেম্পলার" ("Reborn Knights Templer) এবং "কাবাব অপসারক" ("kebab removalist") হিসেবে উল্লেখ করেন, এগুলো একটি ইন্টারনেট মিম থেকে পাওয়া শব্দগুচ্ছ। সেই মিমটা ছিল বসনীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে বসনীয় সার্ব সেনার বসনিয়ার গণহত্যা নিয়ে নিয়ে।[৫৫][৬৮] তিনি তার ইস্তাহারে আলবেনীয় ও সার্বদের মধ্যকার কসোভো সংঘাত এর কথা উল্লেখ করেন। কসোভো যুদ্ধের সময় ন্যাটো সদস্যভূক্ত ইউরোপের দেশগুলো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলবেনিও মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে খ্রিস্টান সার্বদের উপর বোমা বর্ষণ করেছিল - এই ব্যাপারটিকে তিনি অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চই দুর্বল হয়ে গেছে, কারণ দেশটি এই পরিস্থিতিকে বাঁধা দিতে পারে না, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো এর সেনারা মুসলিমদের পক্ষ নেয় ও যেসব খ্রিস্টান ইউরোপীয়রা ইউরোপ থেকে "ইসলামী দখলকারীদেরকে" তাড়াতে চায়, তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করে।[৫৩]
এই হামলার প্রেরণা এসেছে ইউরোপে ইসলামী জঙ্গিবাদের ফলে ইউরোপীয় নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে।[৪০] বিশেষ করে, ট্যারান্ট তার ইস্তাহারে বারবার ২০১৭ স্টকহোম ট্রাক হামলার শিকার এবা একারলান্ড এর হত্যার প্রতিশোধের কথা বারবার উল্লেখ করেন।[৪০] তিনি এও উল্লেখ করেন যে, তার এই হামলাটি হল পূর্বে সংঘটিত ইউরোপে ইসলামী আক্রমণের প্রতিশোধ। তিনি অন্যান্য অভিবাসীদের তুলনায় মুসলিমদের অধিক জন্মহারকেও ইউরোপের জন্য একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন। তিনি বলেন, "ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং পরিসংখ্যানগতভাবে... মুসলিমরা পাশ্চাত্য সমাজের আক্রমণকারীদের মধ্যে সব থেকে বেশি ঘৃণ্য গোষ্ঠী। তাদের উপর হামলায় সব থেকে বেশি পরিমাণে সমর্থন আসা উচিৎ। এছাড়াও তারা শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে একটি, তাদের জন্মহার অনেক বেশি, তাদের দলীয় সংঘবদ্ধতা এবং জয় করার ইচ্ছাও অনেক বেশি।"[৬৯] তার অস্ত্রগুলোতে বিভিন্ন মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যকার ঐতিহাসিক সংঘাত বা যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নানান ঐতিহাসিক ঘটনা, ব্যক্তি এবং প্রসঙ্গ সাদা কালিতে লেখা ছিল।
হামলাকারীর টুইটার একাউন্টটিকে বাতিল করা হয়েছে, সেটায় আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি ছিল, সেই সাথে সেখানে নব্য-নাৎসি চিহ্ন কালো সূর্য এবং চৌদ্দ শব্দ পাওয়া যায়। ইস্তাহারটিতেও চৌদ্দ শব্দ পাওয়া গেছে। সেই সাথে তার টুইটার একাউন্টে পাশ্চাত্য সমাজে ইসলামি জঙ্গি হামলার শিকারদের সম্পর্কেও লেখা ছিল।[৭০]
এই ইস্তাহারটি শুরু হয় ডিলান থমাস এর কবিতা "Do not go gentle into that good night" কবিতাটি দিয়ে।[৭১] হামলাকারী এখানে বিশ্বের অনেক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের মধ্যে তিনি সমর্থন করেন এরকম মতাদর্শের রাজনীতিবিদদের[৭২][৭৩][৭৪][৭৫] থেকে শুরু করে তিনি সমর্থন করেন এমন কাজ করা সন্ত্রাসবাদীদের নাম পর্যন্ত ছিল।[৭৬] বিশেষ করে তিনি নরওয়ে এর সন্ত্রাসবাদী এন্ডার্স ব্রেইভিক এর নাম ছিল। ব্রেন্টন ট্যারান্ট তার ইস্তেহারে বলেন, তিনি ২০১১ সালের নরওয়েতে একই রকম হামলার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন যা সংঘটিত হয়েছিল নরওয়েতে এন্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক এর দ্বারা। তিনি ব্রেইভিক এর সাথে সল্প সময়ের জন্য সাক্ষাত করেন বলেও দাবি করেন।[৭৭][৭৮] তিনি বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের, যাদের সাথে তিনি দ্বিমত, তাদের গুপ্তহত্যা করারও ডাক দেন।[৬৬]
এই ইস্তাহারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এর উল্লেখ করা হয়। সেক্ষেত্রে ব্রেন্টন লেখেন, একজন "নীতি নির্ধারক ও নেতা" হিসেবে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করেন না, বরং "তিনি নব্য জাগ্রত শ্বেতাঙ্গ পরিচয় এবং সাধারণ উদ্দেশ্যের প্রতীক" সেকারণে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। ইস্তাহারে এন্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক, লুকা ট্রাইনি, ডিলান রুফ, এন্টন লান্ডিন পেটারসন, এবং ড্যারেন অসবোর্ন এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। বলা হয়, তারা "জাতিগত ও সাংস্কৃতিক গণহত্যা"এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন"।
ইস্তাহারটি বিশ্লেষণ করেছেন এমন কিছু কিছু সাংবাদিক বলছেন, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নিয়ে বা ধর্মের লোক নিয়ে ট্রোল করা ও আলোচনা সৃষ্টি করার জন্য একটি জঙ্গি হামলার সাথে এই ইস্তাহারটি পেশ করা হয়। প্রস্তাব করা হয়, এই ইস্তাহারের ভেতরের মিমগুলোকে (যেমন নেভি সিল কপিপেস্টা যেখানে "৩০০ এর বেশি লোককে হত্যা করা" এর মত অর্জনের তালিকা করা হয়) গণমাধ্যম ভূলভাবে ব্যাখ্যা করেছে।[৭২][৭৩][৭৯] একজন তদন্তকারী মনে করছেন যে, "এই ইস্তাহারটি গণমাধ্যমের জন্য একটি ফাঁদ। আর এই ফাঁদটা সাংবাদিকদের জন্য পাতা হয়েছে যাতে তারা তার এই ভয়ঙ্কর অপরাধটির অর্থ খোঁজার জন্য পড়ে থাকে। তারা মনে করছে যে, তার এই ইস্তাহারে কোন সত্য আছে, হামলাকারীর মৌলবাদী হবার পেছনের কোন মূল্যবান সূত্র আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে প্রচুর পরিমাণে আজেবাজে কথাবার্তা বা শিটপোস্ট ছাড়া আর কিছুই নেই।"[৮০] যেমন, আক্রমণের ঠিক আগে হামলাকারী বলেন, "মনে রেখো বন্ধুরা, PewDiePie এ সাবস্ক্রাইব করো"। এটি একটি মিম যেখানে জনপ্রিয় সুইডিশ ইউটিউব ব্যক্তিত্ব ফিলিক্স শেলবার্গ (Felix Kjellberg) এর কথা উল্লেখ করা হয়, যিনি পিউডিপাই ছদ্মনামে ভিডিও তৈরি ও প্রদান করেন।[৮১][৮২][৮৩] শেললবার্গ টুইটারে লেখেন, "হামলাকারী লোকটি আমার নাম উচ্চারণ করায় আমি চরমমাত্রায় অস্বস্তি বোধ করছি"। আর সেই সাথে তিনি এই হামলার শিকারদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।[৮২] সামাজিক গণমাধ্যমে শেলবার্গের এক কোটির মত অনুসরণকারী থাকায়, তার কথা বলার ফলে এই হামলা আরও বেশি নজর কাড়তে সক্ষম হয়।[৭২] সাংবাদিকগণ মনে করছেন, তার ইস্তাহারে মতাদর্শিক সমালোচনা করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখও গণমাধ্যমকে আগ্রহী করে তোলা ও তার বিষয়ে বেশি করে সংবাদ প্রচারণার জন্যই। সেই সাথে এই হামলার দোষ আংশিকভাবে সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের চাপিয়ে দেওয়াটাও তাদের নাম উল্লেখের কারণ হতে পারে।[৭২][৭৩]
১৬ মার্চে তাকে ক্রাইস্টচার্চ জেলা আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তার উপর খুনের অভিযোগ আনা হয়, এবং তার জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।[৮৪] কোর্টে হাজির করার সময় তিনি গণমাধ্যমের দিকে তাকিয়ে আসেন এবং একটি ওকে চিহ্ন দেন।[৮৫] শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং অনলাইন বর্ণবাদীগণ এই চিহ্নটিকে গ্রহণ করেছে, এবং একে তারা শ্বেত ক্ষমতা চিহ্ন (White Power symbol) বলে থাকেন।[৮৬][৮৭] ব্রেন্টন আত্মপক্ষ সমর্থন করেন নি।[৮৪] তার মামলাটিকে উচ্চ আদালতে প্রেরণ করা হয়, এবং তাকে ৫ এপ্রিল, ২০১৯ এ সেখানে হাজিরা দিতে হবে।[৮৬]
হামলার দিনে পুলিস কর্মকর্তাগণ বলেন, চারজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।[৮৮][৮৯][৯০] হামলার দুই দিন পর পুলিস কমিশনার মাইক বুশ বলেন, প্রধান সন্দেহভাজন ছাড়া বাকি তিনজনকে হামলার সাথে সম্পর্কিত হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়নি, এবং তারা হামলার সাথে সম্পর্কিত নন। পুলিস একটি গাড়িতে অস্ত্র উদ্ধার করে সেই গাড়িতে ভ্রমণরত একজন নারী ও পুরুষকে গ্রেফতার করেছিল।[৯১] সেই নারীকে কোন অভিযোগ ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়, এবং সেই পুরুষকে অস্ত্র অপরাধের কারণে অভিযুক্ত করা হয়।[৯২] একজন ১৮ বছর বয়সীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যিনি "সেই স্থানের বাচ্চাদেরকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্র ধারণ করেছিলেন" বলে দাবি করেছেন। তাকে ১৮ মার্চ, ২০১৯ এ আদালতে হাজির করা হবে।[৯৩]
এছাড়া একজন ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তি দাবি করেন যে, তিনি তার স্কুল পড়ুয়া ১৩ বছর বয়সী শ্যালককে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য পাপানুই উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ক্যামোফ্লেজ পোশাক পরেছিলেন, যেটা পরা তার অভ্যাস ছিল। তিনি এও বলেন যে পুলিস তার এরকম বিশৃঙ্খল ব্যবহারের জন্য মৌখিকভাবে সতর্ক করে।[৯৪]
নাগরিকত্ব | মৃত্যু |
---|---|
পাকিস্তান | ৬ |
সোমালিয়া | ৪ |
মিশর | ৩ |
বাংলাদেশ | ৫ |
জর্দান | ৩ |
আফগানিস্তান | ২ |
ভারত | ২ |
সিরিয়া | ১ |
ইন্দোনেশিয়া | ১ |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ১ |
অজানা | ২২ |
মোট* | ৫০ |
বর্বোরচিত এই নৃশংস হামলায় ৫০ জন নিহত হয় - যার মধ্যে থেকে ৪২ জন আল নূর মসজিদে, ৭ জন লিনউড ইসলামিক সেন্টারে[১০] এবং ১ জন ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে মারা যান।[৯৭] হামলার সন্ধ্যায় ৯.০০ টার দিকে বন্দুকযুদ্ধে আহত ৪৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে থেকে ২০ জন গুরুতরতরভাবে আহত অবস্থায় ছিলেন।[১০]
A bomb disposal team was called in to dismantle explosive devices found in a stopped car.
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; update-15
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি|data=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
Further afield, Felix Kjellberg, a YouTube celebrity from Sweden who goes by “PewDiePie” and flirts openly with Nazi symbolism, distanced himself from the violence after the man who live-streamed his rampage asked viewers to “subscribe to PewDiePie.”