ক্লজ ফন স্টফেনবার্গ | |
---|---|
জন্ম | ক্লজ ফিলিপ মারিয়া শেঙ্ক ১৫ নভেম্বর ১৯০৭ |
মৃত্যু | ২১ জুলাই ১৯৪৪ | (বয়স ৩৬)
মৃত্যুর কারণ | ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড |
জাতীয়তা | জার্মান |
পরিচিতির কারণ | ২০ জুলাই রূপরেখা সমন্বয়কারী |
আদি নিবাস | আল্বস্টাট, জার্মানি |
দাম্পত্য সঙ্গী | নিনা শেঙ্ক গ্রাফিন ফন স্টফেনবার্গ |
সন্তান | জিএম বার্থলড মারিয়া শেঙ্ক গ্রাফ ফন স্টফেনবার্গ, হেইমারেন শেঙ্ক গ্রাফ ফন স্টফেনবার্গ, ফ্রাঞ্জ-লাদিগ শেঙ্ক গ্রাফ ফন স্টফেনবার্গ, ভ্যালেরি ইদা হাবার্টা ক্যারোলিন অ্যানা মারিয়া শেঙ্ক গ্রাফিন ফন স্টফেনবার্গ, কনস্টাঞ্জ শেঙ্ক গ্রাফিন ফন স্টফেনবার্গ |
পিতা-মাতা | আলফ্রেড শেঙ্ক গ্রাফ ফন স্টফেনবার্গ, ক্যারোলিন শেঙ্ক গ্রাফিন ফন স্টফেনবার্গ |
ক্লজ ফিলিপ মারিয়া শেঙ্ক গ্রাফ ফন স্টফেনবার্গ (জার্মান: [ˈklaʊs ˈʃɛŋk ˈɡʁaːf fɔn ˈʃtaʊfənbɛɐ̯k]) (জন্ম: ১৫ নভেম্বর, ১৯০৭ - মৃত্যু: ২১ জুলাই, ১৯৪৪) জেটিনজেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত জার্মান সামরিক কর্মকর্তা ও ক্যাথলিক অভিজাত সম্প্রদায়ভূক্ত ব্যক্তি ছিলেন।[১] ১৯৪৪ সালে ২০ জুলাই রূপরেখা অনুযায়ী জার্মান স্বৈরশাসক আডলফ হিটলারকে হত্যাসহ নাজি জার্মানি থেকে নাজি পার্টিকে উচ্ছেদের ব্যর্থ পরিকল্পনার অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয় সদস্য ছিলেন ক্লজ ফন স্টফেনবার্গ।
হেনিং ফন ট্রেস্কো ও হ্যান্স অস্টারের সাথে তিনিও জার্মানির একীভূত সামরিক বাহিনীতে অবস্থান করে জার্মানিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রদের অন্যতম ছিলেন। অপারেশন ভালকিরি নামে পরিচিত এ আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে তাকে ২১ জুলাই, ১৯৪৪ তারিখে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়।[২]
যৌবনে তিনি ও তার ভাইয়েরা জার্মান স্কাউট সংস্থা ‘নিউফাদফাইন্ডার’ ও জার্মান যুব আন্দোলনের সদস্য ছিলেন।[৩][৪][৫][৬] তারা যত্ন সহকারে শিক্ষা লাভ করেন ও সাহিত্যের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে সামরিক জীবনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে ব্যামবার্গের ১৭তম ক্যাভালরি রেজিম্যান্টে যোগ দেন।
১৯৩০ সালে লেফট্যানেন্ট পদে কমিশনড হন। বার্লিন-মোয়াবিটের ক্রিগসাকাদেমিতে আধুনিক অস্ত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় আধুনিক যুদ্ধকালীন সময়ে মালামাল পরিবহনে ঘোড়ার ব্যবহারের দিকে ধাবিত হন। তার রেজিম্যান্টটি জেনারেল এরিখ হোপনারের রেজিম্যান্টের অংশ ছিল।
নাজি পার্টির জাতীয়তাবাদী ধারণার কিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করলেও এর ধ্যান-ধারণা থেকে বিচ্যুতির দিকে নজর পড়ে তার। ফলে তিনি কখনও পার্টির সদস্য হননি। এছাড়াও স্টফেনবার্গ ক্যাথলিক ধর্মচর্চা অব্যাহত রাখেন। হিটলারের নীতিকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতেন না। পাশাপাশি ইহুদিদের উপর নিপীড়ন ক্যাথলিক নীতি ও বিচারের বিপক্ষে স্টফেনবার্গের অবস্থান ছিল। [৭][৮]
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্টফেনবার্গ ও তার রেজিম্যান্ট পোল্যান্ড আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। তিনি পোল্যান্ড অধিগ্রহণে তিনি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন ও নাজি রাজত্ব কায়েমে অংশ নেন। এছাড়াও জার্মান সমৃদ্ধি অর্জনে পোলীয়দের দাসশ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করেন।[৯]
কিন্তু তার কাকা নিকোলাস গ্রাফ ফন আক্সকাল-গাইলেনব্যান্ড হিটলারের শাসন আমলের বিরুদ্ধাচরণ করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে তাকে আমন্ত্রণ জানান। পোল্যান্ড আক্রমণের পরপরই তিনি তা বুঝতে আরম্ভ করেন। তৎকালীন সুপ্রিম সেনা কমান্ডার ওয়ালদার ফন ব্রচিতশ হিটলারের বিপক্ষে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণে তাকে আদেশ করলেই তিনি ঐ সময়ে তা অস্বীকার করেন।
১৯৪০ সালে স্টফেনবার্গের দলটি ৬ষ্ঠ প্যাঞ্জার ডিভিশনের সাথে যুক্ত হয়। স্টাফ অফিসার হিসেবে পোল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সের যুদ্ধে তিনি কর্মকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এরফলে তিনি আয়রন ক্রস ফার্স্ট ক্লাস পদকে ভূষিত হন। অন্যান্যদের ন্যায় স্টফেনবার্গও সেনা সফলতায় উজ্জ্বীবিত হন।
এরপর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হন। কিন্তু জার্মান অধিগ্রহণে স্ল্যাভ ও ইহুদিদের প্রতি নিষ্ঠুরতম নীতির সাথে একমত পোষণ করেননি। তার নিজস্ব অনুরোধে পরবর্তীতে তিনি উত্তর আফ্রিকায় সেনা দলের সাথে যোগ দনে। সেখানেও প্যাঞ্জার ডিভিশনের স্টাফ অফিসার ছিলেন। ঐ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। এপ্রিল, ১৯৪৩ সালে বাম চোখ ক্ষতিগ্রস্তসহ ডান হাত ও বামহাতে দুইটি আঙ্গুল হারান তিনি।[১০] আহত অবস্থা থেকে উত্তোরণ শেষে স্টফেনবার্গ হিটলারকে খতম করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নকল্পে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। কর্নেল পদে উত্তোরণের পর জুলাই, ১৯৪৪ সালে তার এ সুযোগ ঘটে। রিজার্ভ আর্মি কমান্ডের চিফ অব স্টাফরূপে হিটলারের সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের সুযোগ লাভ করেন। ২০ জুলাই, ১৯৪৪ তারিখে দুইবার প্রচেষ্টার পর রাস্টেনবার্গে হিটলারের সদর দফতরে বোমা রাখতে সফল হন। কিন্তু তার এ প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরিকল্পনামাফিক বার্লিনে অভুত্থান ব্যর্থ হয় ও স্টফেনবার্গ ও তার কিছুসংখ্যক অনুসারীকে ঐ রাতেই ধরা হয়। পরদিন তাদেরকে হত্যা করা হয়।