লেখক | ডেভিড মিশেল |
---|---|
মূল শিরোনাম | Cloud Atlas |
প্রচ্ছদ শিল্পী | ই. এস. অ্যালেন |
দেশ | যুক্তরাজ্য |
ভাষা | ইংরেজি |
বিষয় | উপন্যাস |
ধরন | বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নাটক রূপকথা |
প্রকাশিত | ২০০৪ (স্কেপ্টার) |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রণ (হার্ডব্যাক & পেপারব্যাক) |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৫৪৪ (প্রথম সংস্করণ, হার্ডব্যাক) |
আইএসবিএন | ০-৩৪০-৮২২৭৭-৫ (প্রথম সংস্করণ, হার্ডব্যাক) {{ISBNT}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: অবৈধ অক্ষর |
ওসিএলসি | ৫৩৮২১৭১৬ |
823/.92 22 | |
এলসি শ্রেণী | PR6063.I785 C58 2004b |
পূর্ববর্তী বই | নাম্বার৯ড্রিম |
পরবর্তী বই | ব্ল্যাক সোয়ান গ্রিন |
ক্লাউড অ্যাটলাস (ইংরেজি: Cloud Atlas) ইংরেজ ঔপন্যাসিক ডেভিড মিশেল রচিত একটি ব্যতিক্রমী কাঠামোর উপন্যাস। গ্রন্থটি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে প্রকাশনা সংস্থা "স্কেপ্টার" কর্তৃক প্রকাশিত হয়। ৫৪৪ পৃষ্ঠার এই সুপরিসর উপন্যাস ছয়টি পৃথক কাহিনীর সমবায়ে গঠিত যার প্রতিটি পাঠককে দেয় উত্তুঙ্গ শ্বাসরূদ্ধকর অভিজ্ঞতা; সবশেষে প্রতিটি কাহিনীর আগ্রহসঞ্চারী সন্নিপাত পাঠকের হৃদয়ে সৃষ্টি করে গভীর তৃপ্তি। লেখকের বৈশিষ্ট্য হলো ছয়টি গল্পের প্রতিটিই ভিন্ন ভিন্ন কালে, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে স্থাপিত; এমনকী প্রতিটির জন্য লেখক ভিন্ন ভাষা-ভঙ্গী অবলম্বন করে নতুন এক স্বাদ সৃষ্টি করেছেন।[১] এই উপন্যাসটি ২০০৪-এ বুকার পুরস্কার-এর জন্য মনোনয়ন লাভ করেছিল। এটি লেখকের তৃতীয় উপন্যাস। [২]
উপন্যাসটিতে মোট ৬ টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলির শিরোনাম হল,-
এই গল্পে অ্যাডাম ইউইং নামে এক আমেরিকান নোটারীর সমুদ্রযাত্রার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গল্পের সুত্রপাত চ্যাথাম দ্বীপে শুরু হয়, সেখানে ড: হেনরী গুস নামে একজন লন্ডন বাসী ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাডাম ইউইংয়ের আলাপ হয়। তারপর তারা দুজনেই একই জাহাজে, (জাহাজটির নাম প্রফেটেস) সমুদ্রযাত্রায় বের হয়। প্রফেটেসে অ্যাডামের থাকার ঘরে অতুয়া নামে চ্যাথাম দ্বীপবাসী একজন মোরিওরি দাস লুকিয়ে থাকে এবং অ্যাডামের কাছে আত্মপ্রকাশ করে জাহাজে আশ্রয় প্রার্থনা করে। ড: হেনরী গুস সম্পত্তী হাতানোর জন্য অ্যাডামকে সামান্য শারীরিক অসুস্থতার জন্য ভুল ওযুধ দিয়ে মারার চেষ্টা করে এবং অতুয়া শেষে হেনরী গুসের চাল বুঝতে পারে ও অ্যাডামকে বাঁচায়।
এতে রবার্ট ফ্রবিশার নামে একজন তরুণ অনামী ব্রিটিশ সঙ্গীতকার, তার সঙ্গী রুফুস সিক্সস্মিথ-কে বেশ কিছু চিঠি লিখে জানায় সে কীভাবে বেলজিয়ামের জিডেলগ্হেমে ভিভিয়ান আইরস নামে প্রখ্যাত ইংলিশ সঙ্গীতকার-এর কাছে সহকারী হিসাবে কাজ করতে যায়। কাহিনীকাল ১৯৩১ সাল। ওখানে গিয়ে রবার্ট ফ্রবিশার প্রথমে ভিভিয়ান আইরসের স্ত্রী মিসেস "জোকাস্টা" ক্রমলিঙ্কের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। পরবর্তীকালে রবার্ট ফ্রবিশার ভিভিয়ান আইরসের কন্যা এভার প্রেমে পড়ে। ভিভিয়ান আইরসের সঙ্গে তাঁর সঙ্গীত রচনায় নিজের অবদানের স্বীকৃতি নিয়ে বাদানুবাদে রবার্ট ফ্রবিশার সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং নিজের একটি সঙ্গীত রচনার পর আত্মহত্যা করে।
একটি চিঠিতে রবার্ট ফ্রবিশার উল্লেখ করে যে, সে তার জিডেলগ্হেমের ঘরে একটি অর্ধখন্ডিত বই পায়, যাতে অ্যাডাম ইউইং নামে একজন সান ফ্রান্সিসকো বাসী নোটারীর সিডনী থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাত্রার বর্ণনা রয়েছে, এবং সে ওই যাত্রার সময়কাল ১৮৪৯ বা ১৮৫০ সাল বলে মনে করে।
এই গল্পে লুইসা রে নামে একজন সাংবাদিক রহস্য উদ্ঘাটন করে কীভাবে হাইড্রা জিরো নামে পারমাণবিক চুল্লী, যা কিনা সোয়াননেকে দ্বীপে অবস্থিত এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ, জোড় করে শুধুমাত্র মুনাফা লাভের জন্য সিবোর্ড পাওয়ার ইনক দ্বারা চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লুইসা রের বাবাও সাহসী সাংবাদিক ছিলেন এবং রুফুস সিক্সস্মিথ তাঁর কথা জানতেন। সেই সুত্রে সে লুইসা রেকে হাইড্রা জিরোর সত্যতা জানান। রুফুস সিক্সস্মিথই হাইড্রা জিরোর পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং বুঝেছিলেন চুল্লীটি কতটা দুর্ঘটনাপ্রবণ এবং ওটা চালু করার বিরোধী ছিলেন। বিল স্মোক একজন পেশাদার খুনী, সে লয়েড হুকস, যে এনার্জী সেক্রেটারী ছিল, তার হয়ে কাজ করত। বিল স্মোক সিবোর্ড পাওয়ার ইনকের সিইও আলবার্টো গ্রিমাল্ডীর প্লেনে বোম রেখে তাকে হত্যা করে এবং এর ফলে লয়েড হুকস সিবোর্ড পাওয়ার ইনকের সিইও হয়ে যায়। রুফুস সিক্সস্মিথকেও বিল স্মোক খুন করে এবং লুইসা রেকে হত্যা করার চেষ্টা করে। জো নেপিয়ের, যে সিবোর্ডের রক্ষী হিসাবে কাজ করত, লুইসা রের বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল, সে লুইসা রেকে বাঁচায় ও বিল স্মোককে হত্যা করে।
লুইসা রে যে ঘরে রুফুস সিক্সস্মিথ খুন হন সেই ঘর থেকে রবার্ট ফ্রবিশারের লেখা কিছু চিঠি পায় এবং সেগুলো পড়ে ওগুলোর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে।
টিমোথি ক্যাভেনডিস একজন বই সম্পাদক, সে ডারমট "ডাস্টার" হগিন্সের একটি বই "নাকল সান্ডউইচ" প্রকাশ করে। ডারমট তার একজন পুস্তক সমালোচককে ব্যালকনি থেকে ছুঁড়ে ফেলে মেরে ফেলে। এই ঘটনার ফলে ডারমটের বই বিক্রী বেড়ে যায় ও টিমোথির আয় বাড়ে। কিন্তু টিমোথির ঋণ এত ছিল যে সব মুনাফা শেষ হয়ে যায়। এদিকে ডারমট জেলে চলে যাওয়ায় তার মারকুটে ভাইরা টিমোথির কাছে টাকা দাবি করে। ওদের কাছ থেকে পালানোর জন্য টিমোথি তার নিজের ভাইয়ের কাছে সাহায্য চায়। টিমোথির ভাই ডেনহোম আগে থেকে টিমোথির উপর রেগে ছিল তার স্রী জর্জেটের সঙ্গে টিমোথির পুরানো গোপন সম্পর্ক নিয়ে। ডেনহোম টিমোথিকে চালাকি করে একটি কঠোর বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। টিমোথি কীভাবে সেখান থেকে পালায় অন্যান্য কিছু সঙ্গীদের নিয়ে সেটাই এই গল্পে বলা হয়েছে।
টিমোথি বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার আগে "অর্ধ-জীবন - একটি লুইসা রে রহস্য" নামে একটি বই-এর অর্ধেক পান্ডুলিপি পায়, যেটা একজন লেখিকা তাকে পাঠায় বই হিসাবে প্রকাশের আশায়। পান্ডুলিপিটা ভুলবশত: টিমোথি বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যায় এবং ওখানে ঘটনাসমুহ চলাকালীন পড়ে এবং গল্পটার প্রতি আকর্ষিত হয়।
সনমি-451 একজন ফ্যাব্রিকান্ট, যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বারা জঠরপাত্রে জন্ম নেয় এবং পাপা সঙ্গ নামক রেস্তোরাতে দাসী হিসেবে কাজ করে। সনমি-৪৫১ পাপা সঙ্গ থেকে মিস্টার চ্যাঙ্গ নামে একজনের সাথে পালিয়ে ত্যামোসান বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। বুম-সুক কিম নামে এক পিএইচ. ডির ছাত্রের তত্ত্বাবধানে প্রথমে তাকে রাখায় হয়, তার পর তাকে হায়-জু ইমের সঙ্গে রাখা হয়। হায়-জু তাকে জানায় য়ে বুম-সুক কিম-র পিএইচ. ডি থিসিসের অংশ হিসেবে পাপা সঙ্গের কর্মীদের খাবারে একধরনের ফর্মুলা মেশানো হয় যার ফলে সনমি-৪৫১ ও তার বান্ধবী ইউনা~৯৩৯-র মানসিক উত্তরণ হয় এবং সনমি-৪৫১, শুদ্ধরক্ত, অর্থাং স্বাভাবিক মানুযের মতো ভাবতে শেখে। পরে হায়-জু তাকে জানায় সে নিজে আসলে একজন ইউনিয়নের লোক, যারা ইউন্যানিমিটি গোষ্ঠীর বিরোধী। ইউন্যানিমিটির লোকেরা কোম্পানিবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চাইত, এবং ইউনিয়ন গোষ্ঠী তার বিরোধিতা করত বলে ইউনিয়নের লোকেদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হত। হায়-জু সনমি-৪৫১-কে দেখায় কীভাবে তাদের মতো ফ্যাব্রিকান্টদের খুন করে তাদের মাংসই ফেনা বানিয়ে তাদেরই, পাপা সঙ্গের কর্মীদের, খাওয়ানো হয়। এসব জানার পর সনমি-৪৫১ ইচ্ছে করে ইউন্যানিমিটির হাতে ধরা দেয় এবং তাদেরই মাধ্যমে নিজের লেখা কয়েক দফা ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে যার মাধ্যমে সে মনে করে পরবর্তীকালে বিপ্লব আসবে। পুরো ঘটনাটা সনমি-৪৫১ এবং একজন আর্কিভিস্টের কথোপকথন হিসেবে দেখানো হয়েছে যা ওরিসন নামে যন্ত্রে সংরক্ষিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন হায়-জু সনমি-৪৫১ কে বহু বছর আগেকার একটি সিনেমা দেখায় যার নাম "টিমোথি ক্যাভেনডিসের ভয়ানক অগ্নিপরীক্ষা"। সনমির সিনেমাটি ভীষন ভালো লাগে এবং সুখের অনুভূতি পায় এবং আর্কিভিস্টের কাছে সিনেমাটির শেষ দেখার শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে।
এ গল্পের মুখ্য চরিত্র হল জ্যাকরি, একজন উপত্যকাবাসী, ও মেরোনিম, একজন প্রিসিয়েন্ট। মেরোনিম জানায় যে পুরান কালে মানুষ সভ্যতার চুড়ান্তে পৌঁছালেও অতিরিক্ত ক্ষীদে মেটানোর জন্য বর্বর জাতিতে পরিনত হয় এবং পরিবেশ অত্যন্ত দূষিত হয়ে ওঠে। "চরম পতন"-এর সময় কিছু তার মতো মানুষ প্রিসিয়েন্স-এ অবতরণ করে। ৫ দশক পরে প্রিসিয়েন্টরা আবার খুঁজে বেড়ায় যদি পৃথিবীতে এখনও কোন সভ্যতা বেঁচে থাকে। কিন্তু তারা একমাত্র "নয় উপত্যকা", যেখানে জ্যাকরি বাস করত, সেখানই কিছু মানুষের সন্ধান পায়। মেরোনিম জ্যাকরির সাহায্যে পুরানো সময়ের জ্যোতির্বিদের পর্যবেক্ষণকেন্দ্র খুঁজে বার করে, যেখানে জ্যাকরিরা মনে করত "পুরানো জর্জী" নামে এক ভৌতিক জীব বাস করত। "নয় উপত্যকা"-তে কোনা নামে এক বর্বর জাতিও বাস করত, তারা জ্যাকরির ছোটবেলায় তার বাবাকে খুন করে ও জ্যাকরির ভাইকে বন্দী করে নিয়ে যায়। কোনারা পরবর্তীকালে জ্যাকরির পুরো গ্রামে আক্রমণ চালায় ও সবাইকে বন্দী বানায় বা খুন করে। মেরোনিম জ্যাকরিকে কোনাদের হাতে পরা থেকে বাঁচায় এবং নিজের সঙ্গে প্রিসিয়েন্সে নিয়ে যায়।
জ্যাকরিরা সনমি নামে দেবতার আরাধনা করত। জ্যাকরি মেরোনিমের কাছে থাকা একরকম যন্ত্রে একটি মেয়ের ছবি দেখতে পায়। মেরোনিম জানায় যে ওটা সনমিরই ছবি। সে বলে যে সনমি একজন দু:খী বিকৃতজন্মা মানুষ ছিল, তাকে শুদ্ধরক্তরা হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুর পরই তাঁর আদর্শ শুদ্ধরক্ত ও বিকৃতজন্মা সব মানুষের চিন্তাধারায় প্রবেশ করে। মেরোনিম জানায় সনমির জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে পড়াশুনা করছিল বলে তার ওরিসন যন্ত্রে সনমির ছবি রাখা ছিল।
উপন্যাসটির ৬ টি গল্প ৬ টি অালাদা ধরনের ইংরাজী ভাষাশৈলীতে লেখা। এছাড়া গল্পগুলো নিম্নলিখিত ক্রমে সাজানো। তবে ষষ্ঠ "শ্লুশার মোড় এবং পরবর্তী যা কিছু" অন্য পাঁচটির ন্যায় খণ্ডিত নয়।
উপন্যাসটির উপর ভিত্তি করে ক্লাউড অ্যাটলাস নামেই একটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন ওয়াচৌস্কি ভ্রাতৃদ্বয় নামে যুগ্ম চলচ্চিত্রকার। উপন্যাসটির সঙ্গে চলচ্চিত্রের গল্পের কিছু কিছু পার্থক্য রয়েছে; তবে চলচ্চিত্রের গল্পও ডেভিড মিশেলের সঙ্গে অালোচনা করেই বানানো হয়েছে।