ক্লারা গঞ্জালেজ | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ক্লারা গঞ্জালেজ কারিলো ১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ |
মৃত্যু | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ পানামা সিটি, পানামা | (বয়স ৯১)
জাতীয়তা | পানামানীয় |
অন্যান্য নাম | ক্লারা গঞ্জালেজ কারিলো ডে বেহরিঙ্গার |
পেশা | আইনজীবী, ডেপুটি, শিক্ষাবিদ, নারীবাদী |
কর্মজীবন | ১৯২১-১৯৬৪ |
পরিচিতির কারণ | প্রথম পানামানীয় মহিলা হিসেবে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন |
ক্লারা গঞ্জালেজ কারিলো (স্পেনীয়: Clara González; জন্ম: ১১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮ - মৃত্যু: ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০) চিরিকুই প্রদেশের রেমেডায়োস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট পানামানীয় নারীবাদী, ডেপুটি, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী ছিলেন। তার অন্যতম পরিচয় হচ্ছে প্রথম পানামানীয় মহিলা হিসেবে ১৯২২ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তিনি ন্যাশনাল ফেমিনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নিপীড়িত নারীদেরকে সচেতনতা গড়ার লক্ষ্যে ও রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ গড়তে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে প্রথম মহিলা হিসেবে আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। আইনসভায় দায়িত্ব পালন করেন। তার আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলেই অবশেষে ১৯৪৬ সালে মহিলাদের দাসত্বমোচন ঘটে। এছাড়াও প্রথম পানামানীয় মহিলা হিসেবে জুভেনিল কোর্টের বিচারক মনোনীত হন। তিনি জুভেনিল কোডের খসড়া প্রণয়নে সহায়তা করেন। চাপালা জুভেনিল রিফর্মেটরি প্রতিষ্ঠা করেন।
ক্লারা গঞ্জালেস ক্যামিলো ১১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮ তারিখে পানামা প্রজাতন্ত্রের চিরিকুই প্রদেশের রেমেডায়োস এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ডেভিড গঞ্জালেস ও মাতা বাসিলা কারিলো সাঞ্চেজ স্পেন থেকে অভিবাসিত হন। শিশু অবস্থায় তিনি তার পরিবারের সাথে কোস্টারিকায় বসবাস করেন। সেখানে ১৯০০ থেকে ১৯০৪ সালে পর্যন্ত তারা নির্বাসনে ছিলেন।[১] ১৯১৮ সালে এস্কুলা নরম্যাল থেকে শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৯ সালে ইস্কুলা ন্যাশিওনাল ডা ডেরেচোতে (জাতীয় আইন বিদ্যালয়) ভর্তি হন।[২] আইন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তিনি ইস্কুলা ম্যানুয়াল হোস হার্তাদোয় শিক্ষা দিতেন।[১] ১৯২২ সালে প্রথম পানামানীয় মহিলা হিসেবে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তবে আইনচর্চা করা থেকে তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল। তার স্নাতক অভিসন্দর্ভ ছিল ‘লা মুজার আন্তে এল ডেরেচো পানামেনো’ (পানামানীয় আইনে মহিলা)।[২] মহিলাদের বৈধতাদান ও মর্যাদা দানের লক্ষ্যে অন্যতম শুরুর দিককার গবেষণা কর্ম ছিল। এর উপর ভিত্তি করেই সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। রাষ্ট্রপতি বেলিসারিও পোরাস সরকারকে সংবিধান পরিবর্তনের অনুরোধ করা হয়। অবশেষে ১৯২৫ সালে পরিবর্তন করার পরই গঞ্জালেসকে আইনচর্চার অনুমতি দেয়া হয়।[১]
রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নারীবাদী আন্দোলনকে সংগঠিত ও বেগবান করতে গঞ্জালেস নেতৃত্ব দেন। সারা সোতিলো, এলিদা ক্যাম্পোদোনিকো ডে ক্রেস্পো, রোজা নাভাস-সহ অন্যান্য নারীনেত্রীকে নিয়ে ১৯২৩ সালে ন্যাশনাল ফেমিনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৪ সালে দলটি বৈধ সংগঠনের মর্যাদা লাভ করে।[১] এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছিল যে, এ দলটি ‘ইস্কুলা ডা কালচারা ফেমেনিনা’ গঠন করেছে মূলতঃ মহিলারা রাজনীতির কোনকিছুই জানতো না এ ধারনাকে পাল্টে দেবার জন্য। বিদ্যালয়টিতে পৌরনীতি, ইতিহাস, রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয়ে পাঠদান করানো হতো যাতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান নিয়ে পেশাদারী ও সামাজিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে।[২]
১৯২৭ সালে বৃত্তি পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন।[১] সেখানে গঞ্জালেস নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ও ১৯২৯ সালে আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এরফলে প্রথম লাতিন আমেরিকান মহিলা হিসেবে এ সম্মাননায় অভিষিক্ত হন।[২] ১৯৩০ সালে পানামায় ফিরে আসেন ও অধ্যাপক হিসেবে জাতীয় ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। সেখানে তিনি অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। এসময়ে ন্যাশনাল ফেমিনিস্ট পার্টির পুণর্জাগরণের চেষ্টা চালান। ১৯৩৭ সালে পর্যন্ত ইনস্টিটিউটে শিক্ষাদান করেন তিনি। পানামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্ন থেকেই নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং অপরাধতত্ত্ব, পারিবারিক আইন ও জুভেনিল জাস্টিস বিষয়ে পড়াশোনা করান।[১]
১৯৪১ সালে রাষ্ট্রপতি আর্নালফো আরিয়াস পদত্যাগ করলে রাজনৈতিক পরিবেশে গঞ্জালেজ জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সময়কালে তিনি বয়ষ্কদের পপুলার কালচার সেন্টারের প্রধান হন। ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন পুরঃপ্রকৌশলী চার্লস এ. বেহরিঙ্গার-কে বিয়ে করেন।[১] ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৪৪ তারিখে ইউনিয়ন ন্যাশিওনাল ডে মুজেরেস (জাতীয় মহিলা দল) গঠন করেন। লিবারেল রিনিওয়াল পার্টির পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও ১৯৪৫ সালের আইন পরিষদের ডেপুটি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ ও ১৯৪৬ সালের মধ্যে তিনি শ্রম, সামাজিক ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ভোটের অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে সমতা আনয়ণে প্রস্তাব পেশ করেন যা ১৯৪৬ সালে আইনে পরিণত হয়েছিল। [২]
প্রথম পানামানীয় মহিলা হিসেবে জুভেনিল কোর্টের বিচারক হিসেবে মনোনীত হন।[২] ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জুভেনিল কোর্টের দায়িত্ব পালন করেন। তবে, স্বামীর অনুরোধে কর্মজীবন থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন।[২] এরপর তিনি স্ব-পরিবারে ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিম কভিনা এলাকায় বসবাস করতে থাকেন। ১৯৬৬ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন ও পরিবারের দেখাশোনায় মাঝে-মধ্যে ভ্রমণ বাদে বাকী সময়টুকু পানামাতেই অবস্থান করতে থাকেন।[১]
উরুর জটিলতা নিরসনকল্পে অস্ত্রোপচারের পর ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে পানামা সিটিতে ক্লারা গঞ্জালেসের দেহাবসান ঘটে।[১]
পানামার পাবলিক প্রসিকিউশন্স স্কুল তার নামে নামাঙ্কিত হয়েছে।[৩] মহিলাদের জন্য সংগ্রাম বা মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে নির্বাসিত বৈধ পেশাজীবীদের সংগঠন জাতীয় আইনজীবী ইউনিয়ন বার্ষিকভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান করে থাকে।