একটি মার্কিন বিমান থেকে সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে
ক্লাস্টার বোমা হলো একটি বিস্ফোরক অস্ত্র যা একটি বড় বোমার মধ্যে বহু ক্ষুদ্র বোমা ধারণ করে গঠিত হয়। এই বোমা যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন এর ভেতরের ক্ষুদ্র বোমাগুলি বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি৷ সাধন করে। একটি একক ক্লাস্টার বোমা প্রায় ২০০ থেকে ৫০০টি ক্ষুদ্র বোমা ধারণ করতে পারে।[১]
১৯৬০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৮,০০০ থেকে ২৩,০০০ মানুষ ক্লাস্টার বোমার প্রভাবে প্রাণ হারিয়েছে।[২][৩] যদিও এই অস্ত্রের ব্যবহার যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিকভাবে অনেকটা কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এটি বেসামরিক জনগণের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করে, কারণ বিস্ফোরিত না হওয়া ক্ষুদ্র বোমাগুলি পরবর্তীতে মাইন হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ২০০৮ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ক্লাস্টার মিউনিশন কনভেনশন গৃহীত হয়, যার অধিনে বর্তমানে শতাধিক দেশ ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।[৪]
ক্লাস্টার বোমার আবিষ্কারের ইতিহাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শুরু হয়।[৫] ১৯৪৩ সালে জার্মানি প্রথম ক্লাস্টার বোমা তৈরি করে, যা "এসডি-২" বা "বাটারফ্লাই বোমা" নামে পরিচিত এবং "বাটারফ্লাই বোমা" নামে সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিতি লাভ করে।[৬] এই বোমাগুলি ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে জার্মানির আক্রমণের সময় ব্যবহৃত হয়।[৭] এক সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নও ক্লাস্টার বোমা তৈরি শুরু করে এবং জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।[৮]
শীতল যুদ্ধের সময়, ক্লাস্টার বোমার উন্নয়ন ও ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০-১৯৫৩) এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৫-১৯৭৫) চলাকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে। ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়ায় মার্কিন বাহিনী লক্ষ লক্ষ ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে।[৯][১০]
ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে "সেন্সর ফিউজড ওয়েপন" এবং "বিএলইউ-২৬" প্রভৃতি ক্লাস্টার বোমা ব্যবহৃত হয়।[১১][১২] সোভিয়েত ইউনিয়নও এই সময়ে বিভিন্ন ধরণের ক্লাস্টার বোমা তৈরি করে, যা আফগানিস্তান যুদ্ধের (১৯৭৯-১৯৮৯) সময় ব্যবহৃত হয়।[১৩]
ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন ও ব্যবহারের ইতিহাসে প্রযুক্তিগত উন্নয়নও লক্ষ্যণীয়। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আরও কার্যকর এবং শক্তিশালী ক্লাস্টার বোমা তৈরি করা হয়।[৩] এই সময়ে, বিভিন্ন দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, এবং চীনও ক্লাস্টার বোমা উৎপাদন শুরু করে।[১৪][১৫]
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, সোভিয়েত সেনারা রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক শহরে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে। এর জবাবে জার্মানি প্রায় ১,০০০টি "বাটারফ্লাই বোমা" ব্রিটেনের গ্রিমসবিত শহরে নিক্ষেপ করে।
১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে, স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন সেনারা কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে অতিমাত্রায় ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে। দ্যা মনিটরের তথ্যমতে, ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে মার্কিন সেনারা ভিয়েতনামে প্রায় ৪১,৪৩,১৩০ টন ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে। রেড ক্রসের মতে লাওসে প্রায় ৮০ মিলিয়ন অবিস্ফোরিত ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল, যেগুলো পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বিস্ফোরিত হয় এবং বছরে গড়ে ৩০০ এর অধিক প্রাণহানি ঘটায়।[১৬]
ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরণ
দক্ষিণ কোরিয়ার নাইটমেয়ার রেঞ্জে একটি ক্লাস্টার বোমা ফেলার পরের দৃশ্য
১৯৬০ সালের দিকে একটি সারিন ভর্তি মার্কিন বোমা
একটি মার্কিন ভিয়েতনাম যুগের ব্লু-৩ ক্লাস্টার বোমলেট
১৯৩৯-১৯৪০ সালের শীতকালীন যুদ্ধের সময়, সোভিয়েত ইউনিয়ন আরআরএবি-৩ নামিয়ে দেয়, যার ডাকনাম মোলোটভ ব্রেড বাস্কেট, যেটি ফিনল্যান্ডে আগুনের বোমা বিক্ষিপ্ত করে।
↑"Convention on Cluster Munition Website"। The Convention on Cluster Munition। Geneva (Switzerland)। ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২। ২০০৮-০৬-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১, ২০২২।