খড়ম একপ্রকার কাঠের পাদুকা।[১] হিন্দি "খড়ৌঙ" শব্দটি থেকে বাংলায় "খড়ম" শব্দটির উৎপত্তি।[২][৩] সংস্কৃতে খড়ম "পাদুকা" নামে পরিচিত। হিন্দুধর্মে খড়মের ব্যবহার সুপ্রচলিত। হিন্দুরা খড়মকে দেবতা ও শ্রদ্ধেয় সাধুসন্তদের পদচিহ্নের প্রতীকও মনে করেন।[৪] হিন্দুধর্মের পাশাপাশি জৈনধর্মেও ভিক্ষাজীবী সন্ন্যাসী ও সাধুসন্তেরা খড়ম ব্যবহার করে থাকেন। হিন্দুদের মহাকাব্য রামায়ণে খড়মের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।[৫][৬][৭]
একখণ্ড কাঠ পায়ের মাপে কেটে খড়ম তৈরি করা হয়। সম্মুখভাগে একটি বর্তুলাকার কাঠের গুটি বসিয়ে দেয়া হয় যা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও পাশের আঙ্গুলটি দিয়ে আঁকড়ে ধরা হয়। বর্তমানে পা আটকে রাখার জন্য কাঠের গুটির পরিবর্তে রাবার খণ্ড ব্যবহার করা হয়। চামড়া, রেকসিন, প্লাষ্টিক, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি জুতা (পাদুকা) মানুষের পায়ে শোভা বর্ধন করতো।
বাংলাদেশে খড়মের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। ১৩০৩ সালে বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও পীর হজরত শাহজালাল (রহ:) সুদূর তুরস্ক থেকে সিলেটে এসেছিলেন খড়ম পায়ে দিয়ে। তার ব্যবহৃত খড়ম এখনো তার সমাধিস্থল সংলগ্ন স্থাপনায় রক্ষিত আছে। কিছুকাল আগেও খড়মের শব্দে গৃহস্থরা বুঝতে পারতের তাদের বাড়িতে কেউ আসছেন।
প্রাচীন কালে খড়মের উদ্ভব। এক সময় দেবতার তুষ্টির জন্য পাদুকা পূজার প্রচলন ছিল। খড়ম পায়ে হাঁটা সহজ নয়। এছাড়াও খড়ম পায়ে হাঁটার সময় চটাশ্ চটশ্ বেশ শব্দ হয়। বাংলাদেশের নিম্নোদ্ধৃত লোকজ ছড়াটিতে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে:
হরম বিবি খড়ম পায়
খটটাইয়া হাঁইটা যায়
হাঁটতে গিয়া হরম বিবি
ধুম্মুড় কইরা আছাড় খায়
আছাড় খাইয়া হরম বিবি
ফিরা ফিরা পিছন চায় ....