খলিল আল-ওয়াজির | |
---|---|
![]() কৌশল প্রণয়নরত খলিল আল-ওয়াজির | |
ডাকনাম | আবু জিহাদ |
জন্ম | রামলা, মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন | ১০ অক্টোবর ১৯৩৫
মৃত্যু | এপ্রিল ১৬, ১৯৮৮ তিউনিস, তিউনিসিয়া | (বয়স ৫২)
আনুগত্য | ফাতাহ/প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন |
সেবা/ | আল-আসিফা |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | কারামার যুদ্ধ কালো সেপ্টেম্বর বৈরুত অবরোধ প্রথম ইন্তিফাদা |
সম্পর্ক | ইন্তিসার আল-ওয়াজির (স্ত্রী) |
খলিল ইবরাহিম আল-ওয়াজির[note ১] (আরবি: خليل إبراهيم الوزير, কুনিয়াত আবু জিহাদ (أبو جهاد—"সংগ্রামের পিতা") নামেও পরিচিত[note ২] ; ১০ অক্টোবর ১৯৩৫ – ১৬ এপ্রিল ১৯৮৮) একজন ফিলিস্তিনি নেতা এবং ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদি দল ফাতাহর সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ফাতাহর সামরিক কর্মকাণ্ডে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। তিনি সংগঠনের সামরিক শাখা আল-আসিফার কমান্ডার ছিলেন।
১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় আল-ওয়াজির সপরিবারে রামলা থেকে নির্বাসিত হয়। এরপর তিনি গাজায় একটি ক্ষুদ্র ফেদাইন দলের নেতৃত্ব প্রদান শুরু করেন। ১৯৬০ এর দশকে ফাতাহর জন্য তিনি কমিউনিস্ট শাসকগোষ্ঠী ও তৃতীয় বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। আলজেরিয়ায় তিনি ফাতাহর প্রথম ব্যুরো চালু করেন। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদেরকে অস্ত্র ও সহায়তা সরবরাহ করে ১৯৭০-৭১ সালের কালো সেপ্টেম্বরের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জর্ডানের সেনাবাহিনীর কাছে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) পরাজয়ের পর তিনি লেবাননে পিএলওর সাথে যোগ দেন।
১৯৮২ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে আক্রমণের পূর্বে ও আক্রমণের সময় তিনি ইসরায়েলের ভেতরে বেশ কয়েকটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। আগ্রাসী ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে তিনি বৈরুতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছিলেন। তবে ইসরায়েলি সেনারা জয়ী হয় এবং অন্যান্য ফাতাহ নেতৃবৃন্দসহ খলিল আল-ওয়াজির লেবানন থেকে বহিস্কৃত হন। দুই বছর আম্মানে থাকার পর ১৯৮৬ সালে তিনি তিউনিসে নির্বাসিত হন। এখান থেকে তিনি ফিলিস্তিনের তরুণ কমিটিগুলি সংগঠিত করতে শুরু করেন। প্রথম ইন্তিফাদার সময় এরা ফিলিস্তিনি শক্তির মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৮৮ সালের ১৬ এপ্রিল তিউনিসে ইসরায়েলি কমান্ডোরা তাকে হত্যা করে।
খলিল আল-ওয়াজির ১৯৩৫ সালে মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইনের রামলায় একটি সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইবরাহিম আল-ওয়াজির শহরের একজন মুদি দোকানদার ছিলেন।[১][২] ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় আরো ৫০,০০০-৭০,০০০ ফিলিস্তিনিসহ তার পরিবার উদ্বাস্তু হয়।[৩] তারা গাজার বুরেইজ উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেন। খলিল আল-ওয়াজির এখানে ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।[৪] উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় গাজা উপত্যকা ও সিনাই উপদ্বীপের ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানে হামলার জন্য তিনি ফেদাইনদের একটি ছোট দল সংগঠিত করতে শুরু করেন।[১]
১৯৫৪ সালে গাজায় ইয়াসির আরাফাতের সাথে তার সাক্ষাত হয়। পরবর্তীতে তিনি আরাফাতের ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন। গাজায় থাকাকালীন সময় খলিল মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হন।[৫] মিশরে এই সংগঠন নিষিদ্ধ ছিল তাই এর ফলে তাকে কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল।[৬] মুক্তি পাওয়ার কয়েকমাস পরে ১৯৫৬ তিনি কায়রোতে সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন।[২] আলেক্সান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি স্থাপত্যবিদ্যার উপরও পড়াশোনা করেছেন।[৭] তবে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেননি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তৎপরতার জন্য ১৯৫৭ সালে খলিল পুনরায় বন্দী হয়ে সৌদি আরবে নির্বাসিত হন। সেখানে তিনি স্কুল শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।[১] ১৯৫৯ সালে কুয়েতে যাওয়ার পরও তিনি শিক্ষকতায় ছিলেন।[৬]
কুয়েতে থাকাকালীন সময়ে খলিল আল-ওয়াজির আরাফাতসহ মিশরে সাক্ষাতলাভ করা অন্যান্য নির্বাসিত ফিলিস্তিনি সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করেন। ১৯৫৯-৬০ সালের মধ্যে তারা মিলে ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদি গেরিলা ও রাজনৈতিক সংগঠন ফাতাহ গঠন করেন।[৮] নবগঠিত সংগঠনের মাসিক পত্রিকা ফিলাস্তিনুনা, নিদা আল-হায়াত ("আমাদের ফিলিস্তিন, জীবনের দিকে আহ্বান") সম্পাদনার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বৈরুত চলে আসেন।[৮]
আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ বেন বেল্লা কর্তৃক ইয়াসির আরাফাত ও ফারুক কাদুমিসহ অন্যান্য ফাতাহ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল আলজেরিয়ায় আমন্ত্রিত হওয়ার পর ১৯৬২ সালে তিনি আলজেরিয়ায় স্থায়ী হন। আলজিয়ার্সে তিনি ফাতাহর দপ্তর ও সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেন। ১৯৬৪ সালে বেইজিঙে প্রেরিত আলজেরীয়-ফাতাহ প্রতিনিধি দলে তিনিও সদস্য ছিলেন।[৯] সফরের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ চীনের অন্যান্য নেতাদের কাছে ফাতাহর চিন্তাধারা তুলে ধরেন।[১০] এর মাধ্যমে চীনের সাথে ফাতাহর সুসম্পর্ক তৈরী হয়। পাশাপাশি তিনি পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও সফর করেন। উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েত কঙের সাথে তিনি সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।[৯] গেরিলা যোগ্যতা ও অস্ত্র সরবরাহকারী জাতিসমূহের সাথে তার যোগাযোগের কারণে তাকে যোদ্ধা সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ফাতাহর সামরিক শাখা আল-আসিফা গঠন করেছিলেন।[১১] আলজিয়ার্সে অবস্থানের সময় তিনি আবু আলি ইয়াদকে দলে নেন। আবু আলি তার ডেপুটি হয়েছিলেন এবং তিনি সিরিয়া ও জর্ডানে আল-আসিফার অন্যতম উচ্চপদস্থ কমান্ডার ছিলেন।[১২]
১৯৬৫ সালে খলিল আল-ওয়াজির ও ফাতাহ নেতৃবৃন্দ দামেস্কে স্থায়ী হন। এখানে প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ব্যাপক সংখ্যক সদস্যদের কাছে থেকে সুবিধা আদায় তাদের উদ্দেশ্য ছিল। সিরিয়াপন্থি ফিলিস্তিনি নেতা ইউসুফ উরাবিকে তিন তলা থেকে ফেলে হত্যার ঘটনার পর ১৯৬৬ সালের ৯ মে খলিল আল-ওয়াজির ও ইয়াসির আরাফাতকে সিরিয়ার আসাদের প্রতি অনুগত পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা ফাতাহকে উরাবির দলের সাথে ঐক্যবদ্ধ করতে বা ফাতাহ নেতাদের মধ্যে আরাফাতের বিপক্ষের বিরুদ্ধে উরাবির সমর্থন আদায় করতে চাইছিলেন। বাকবিতন্ডা শুরু হওয়ার পর এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এর পূর্বেই খলিল ও আরাফাত এই স্থান ত্যাগ করেছিলেন। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আবুরিশের মতে উরাবি ও আসাদ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং ঘটনা তদন্তের জন্য আসাদ একটি প্যানেলকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এই প্যানেল আরাফাত ও খলিলকে দোষী সাব্যস্ত করলেও রাষ্ট্রপতির ডেপুটি মহাসচিব সালাহ জাদিদ তাদের ক্ষমা করে দেন।[৮]
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধে আরব জোটের পরাজয়ের পর যুদ্ধ অংশ নেয়া বা অংশগ্রহণকারী আরব রাষ্ট্রসমূহ থেকে সহায়তা পাওয়া ফিলিস্তিনি গেরিলা সংগঠনগুলি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন হারায়। এর ফলে পিএলও এর মধ্যে ফাতাহ প্রধান অংশ হয়ে উঠে। তারা ফিলিস্তিনের জাতীয় কাউন্সিলের ১০৫টি আসনের মধ্যে ৩৩টি আসন লাভ করে। কোনো গেরিলা দলকে প্রদত্ত আসনের মধ্যে এই সংখ্যা সর্ববৃহৎ ছিল। এর ফলে খলিল আল-ওয়াজিরের অবস্থান দৃঢ় হয়। ১৯৬৮ সালের মার্চে কারামার যুদ্ধের সময় ফাতাহ যোদ্ধাদের মধ্যে তিনি ও সালাহ খালাফ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন। সামরিক কৌশলপ্রণেতা হিসেবে যোগ্যতা বৃদ্ধিতে এই ভূমিকা তাকে সহায়তা করেছে।[১৩] পাশাপাশি তাকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে গেরিলা হামলা চালানোর দায়িত্ব দেয়া হয়।[১][১১]
জর্ডানে কালো সেপ্টেম্বরের সময় জিরাশ ও আজলুনের অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদেরকে খলিল আল-ওয়াজির অস্ত্র ও সহায়তা প্রেরণ করেছেন।[১৪] কিন্তু ঘটনার ফলাফল জর্ডানের অনুকূলে চলে যায়। আরাফাতসহ কয়েক হাজার ফাতাহ যোদ্ধা লেবাননে পিছু হটার পর তিনি বাদশাহ হুসাইন ও পিএলও'র প্রধান সংগঠকের মধ্যে সমঝোতার আলোচনা করেছেন।[১৫] এরপর অন্যান্য পিএলও নেতাদের সাথে তিনি বৈরুতে আসেন।[১৪]
লেবানিজ গৃহযুদ্ধে খলিল আল-ওয়াজির প্রধান ভূমিকা রাখেননি। তিনি এসময় সংঘর্ষে পিএলও'র প্রধান মিত্র লেবানিজ জাতীয় আন্দোলন সংগঠনে নিয়োজিত ছিলেন।[১৪] লেবানিজ রণাঙ্গনে তেল আল-জাতার শিবিরের পতনের সময় উদ্ধার তৎপরতা সংগঠিত না করার কারণে তিনি নিজেকে দোষারোপ করেছিলেন।[১৬]
লেবাননে অবস্থানকালে উচ্চপর্যায়ের অপারেশন পরিচালনার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত ছিল। ১৯৭৫ সালে সাভোয় অপারেশন তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন বলে কথিত আছে। এই অপারেশনের সময় আটজন ফাতাহ যোদ্ধা তেল আভিভের সাভোয় হোটেলে হামলা চালিয়ে অনেককে জিম্মি করে।[১৭] ১৯৭৮ সালে উপকূলীয় সড়কে হত্যার ঘটনায় তার পরিকল্পিত। এই হামলায় ছয়জন ফাতাহ যোদ্ধা একটি বাস ছিনতাই করে ৩৫ জন ইসরায়েলিকে হত্যা করে।[১৮]
১৯৮২ সালে ইসরায়েল কর্তৃক বৈরুত অবরোধের সময় পিএলও'র বামপন্থি নেতারা এবং সালাহ খালাফের সাথে তার মতানৈক্য হয়। তিনি পিএলওকে বৈরুত ত্যাগের প্রস্তাব দেন। তবে তিনি ও তার সহকারী আবু আল-ওয়ালিদ বৈরুতের প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে পিএলও যোদ্ধাদেরকে সরাসরি সহায়তা করেছেন।[১৯] পিএলও বাহিনী পরাজিত হয়ে লেবানন থেকে নির্বাসিত হয়। অধিকাংশ নেতা তিউনিসে চলে যান। তবে খলিলসহ ২৬৪ জন অন্যান্য পিএলও সদস্যকে জর্ডানে বাদশাহ হুসাইন আশ্রয় দিয়েছিলেন।[১০][২০]
১৯৮২ সালে লেবাননের যুদ্ধে ফিলিস্তিনি শক্তির পরাজয়ের পর খলিল আল-ওয়াজির ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ফাতাহর শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। সেই বছর তিনি তরুণ কমিটিগুলিকে অর্থায়ন শুরু করেন। এসব সংগঠন ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর প্রথম ইন্তিফাদা শুরু করেছিল।
ইন্তিফাদা ছিল পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান।[২১] ১৯৮৬ সালের ৭ জুন ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার এক বছর পূর্বে তিনি আম্মান থেকে বাগদাদে নির্বাসিত হন। বাদশাহ হুসাইন ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত নিয়ে জর্ডান ও পিএলও’র যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার অবসান ঘোষণার পর তিনি তিউনিসিয়া চলে যান।[১০]
প্রথম ইন্তিফাদার সময় পিএলও অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানের চেষ্টা করে। আরাফাত তাকে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের দায়িত্ব দেন। স্থানীয় অবস্থা সম্পর্কে খলিলের ভালো জ্ঞান ছিল। নির্বাসিত অবস্থায় তিনি অভ্যুত্থানে অর্থনৈতিক সহায়তা ও কৌশলগত সমর্থন প্রদান করেছেন।[২১]
১৯৮৮ সালের ১৬ এপ্রিল তিউনিসে নিজ বাড়িতে খলিল আল-ওয়াজির নিহত হন। খুব কাছ থেকে তাকে কয়েকবার গুলি করা হয়েছিল। এসময় তার স্ত্রী ও পুত্র নিদাল উপস্থিত ছিলেন।[২১] একটি ইসরায়েলি কমান্ডো দল তাকে হত্যা করে। তারা মোসাদের সহায়তায় ইসরায়েল থেকে নৌকাযোগে এবং লেবানিজ জেলেদের আইডি ব্যবহার করে এখানে পৌছে বলে জানা যায়। পিএলও এলাকায় ঢোকার জন্য এই জেলেদের অপহরণ করা হয়েছিল।[২২] ইসরায়েল তার বিরুদ্ধে ইন্তিফাদার সময় সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ আনে।[২১] ২১ এপ্রিল দামেস্কের ইয়ারমুক উদ্বাস্তু শিবিরে তাকে দাফন করা হয়।[১০] তার জানাজায় ইয়াসির আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।[২১]
১৯৯৭ সালে মারিভ পত্রিকায় তার হত্যাকাণ্ডের উপর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয় যে এহুদ বারাক একটি মিসাইল বোট থেকে খলিলের হত্যাকাণ্ড তদারককারী কমান্ড সেন্টারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল এই বিষয়ে সরকারিভাবে দায় স্বীকার করেনি। সরকারের মুখপত্র মোশে ফোগেল এবং বারাক উভয়ে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এই রিপোর্ট অনুসারে তৎকালীন ডেপুটি সামরিক প্রধান এহুদ বারাক মোসাদসহ অন্যান্য সামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রণীত পরিকল্পনার সমন্বয় করেছিলেন। হত্যার পূর্বে মোসাদের গুপ্তচররা কয়েকমাস যাবত খলিলের বাড়িতে নজরদারি করে।[২৩] ২১ এপ্রিল ওয়াশিংটন পোস্টে জানায় যে ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা তার হত্যাকাণ্ডে অনুমোদন দেয় এবং মোসাদ ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে পরিকল্পনার সমন্বয় করা হয়।[১০]
২০১৩ সালে ইসরায়েল বেসরকারিভাবে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে। ইসরায়েলি সাংবাদিক রোনেন বার্গমেনকে দেয়া হামলায় নেতৃত্ব দেয়া নাহুম লেভের সাক্ষাতকারে একথা জানানো হয়। এই সাক্ষাতকারে লেভ অপারেশনের বিস্তারিত বিবরণ বার্গমেনকে জানিয়েছিলেন।[২৪]
যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ডকে "রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড" বলে নিন্দা জানায়।[২৫] জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ৬১১ নম্বর প্রস্তাবে ইসরায়েলের নাম উল্লেখ না করে এই ঘটনাকে তিউনিসিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার উপর আগ্রাসন বলে নিন্দা জানায়।[২৬]
১৯৬২ সালে খলিল আল-ওয়াজিরের সাথে ইন্তিসার আল-ওয়াজিরের বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে পুত্র হলেন জিহাদ, বাসিম, নিদাল ও কন্যা হলেন ইমান ও হানান।[২৭] ইসরায়েল ও পিএলও'র মধ্যে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইন্তিসার ও তার সন্তানেরা গাজা ফিরে আসেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রথম নারী মন্ত্রী হন।[২৮]