উসমান খাঁন লোহানী | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বাংলায় আফগান দলপতি | |||||||||
রাজত্ব | ১৫৯৩-১৬১২ | ||||||||
পূর্বসূরি | খাজা সুলাইমান | ||||||||
উত্তরসূরি | খাজা ওয়ালী | ||||||||
বোকাইনগর (ময়মনসিংহ) | |||||||||
রাজত্ব | ১৫৯৯-১৬০৯ | ||||||||
পূর্বসূরি | মুঘল সাম্রাজ্য | ||||||||
উত্তরসূরি | মুঘল সাম্রাজ্য | ||||||||
উসমানগড় ও তরফ (দক্ষিণ সিলেট) | |||||||||
রাজত্ব | ১৬০৯-১৬১২ | ||||||||
পূর্বসূরি | সুবিদ নারায়ণ | ||||||||
উত্তরসূরি | মুবারিজ খান | ||||||||
জন্ম | خواجه عثمان خان لوحاني | ||||||||
মৃত্যু | ১২ মার্চ ১৬১২ দৌলম্বপুর | ||||||||
সমাধি | ১২ মার্চ ১৬১২ উহার (পতনঊষার) | ||||||||
বংশধর | মুমরিজ খান | ||||||||
| |||||||||
রাজবংশ | মিয়াখেল (লোহানী/নোহানী) | ||||||||
পিতা | ঈসা খান নোহানী মিয়াখেল | ||||||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম | ||||||||
পেশা | যোদ্ধা, বারো ভূঁইয়াদের নেতা[১] |
খাজা উসমান খাঁন লোহানী (পশতু: خواجه عثمان خان لوحاني মৃত্যু ১২ মার্চ ১৬১২), খাজা ওসমান নামেই সমধিক পরিচিত, ছিলেন উত্তর-পূর্ব বাংলার একজন পাঠান সর্দার এবং যোদ্ধা। বারো ভূঁইয়াদের একজন হিসেবে তিনি উত্তর বঙ্গের বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ সিলেটে জমিদারি করেন।[২] তিনি ছিলেন মানসিংহ এবং মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বাংলার সর্বশেষ আফগান সর্দার ও শাসক। তার পরাজয়ের ফলে বাকী সকল পাঠানকে আত্মসমর্পণ করতে হয় এবং সিলেট অঞ্চলটি সুবাহ বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৩] তাকে বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে রোমান্টিক ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয়।[৪][৫][৬][৭] বাহারিস্তান-ই-গায়বী, তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী এবং আকবরনামার মতো বিখ্যাত গ্রন্থে তার জীবনী রয়েছে।
উসমানের পিতার নাম খাজা ঈসা খান মিয়াখেল। তার অপর চার ভাই: সুলায়মান, ওয়ালি, মালহি ও ইব্রাহিম। উসমানের চাচা কুতলু খান লোহানী ছিলেন বাংলার সুলতান সুলায়মান খান কররানী কর্তৃক নিয়োজিত পুরীর গভর্নর।[৬] তৎকালীন পূর্ব ভারতে বসবাসকারী পাঠানদের সম্প্রদায়টি ছোট হলেও দিল্লী সালতানাত ও শাহী বাংলায় তারা বেশ প্রভাবশালী ছিল।[৮] বেশিরভাগ পাঠান মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং সুলতানাতের পতনেল পর তারা বারো ভূঁইয়াদের সমর্থন করতে শুরু করেন।[৯] ১৫৯০ সালে কুতলু খাঁ'র মৃত্যুর পরে নাসির খান লোহানী মুঘলদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় এই অঞ্চলেল পাঠানদের মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।
নাসির দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরের মাথায় মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে বিহারের তৎকালীন গভর্নর মানসিংহ তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এতে নাসির পরাজিত হন। পরবর্তীতে, মানসিংহ বাংলা সুবাহর সুবাহদার হিসেবে দায়িত্ব পান এবং পাঠানদের প্রভাব দুর্বল করার চেষ্টা শুরু করেন।[১০] এদিকে, খাজা সুলায়মান ওড়িশায় সিং-দের হাতে নিহত হলে উসমান আফগানদের নেতা হিসাবে অধিষ্ঠিত হন। এরপর মানসিংহ ও উসমানের মধ্যে একটি চুক্তি হয় যাতে, উসমান উড়িষ্যা ছেড়ে চলে গেলে তাকে বাংলার ফতেহাবাদে জায়গীর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল।[১১] প্রথমদিকে, মানসিংহ তাতে রাজি হয়েছিলেন। যার ফলে উসমান, তার চার ভাই এবং অন্যান্য পাঠানরা বাংলায় পাড়ি জমাতে শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মানসিংহ যখন বুঝতে পারলেন যে, ঈসা খানের মোগলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে বাংলায় বিদ্রোহীদের প্রভাব ক্রমবর্ধমান; তখনই তিনি পাঠানদের বাংলায় গমন ঠেকাতে জায়গীর বাতিলের নির্দেশ দেন। মানসিংহের এই হঠকারিতায় উসমান বেশ রাগান্বিত হন এবং দক্ষিণবঙ্গ আক্রমণ করেন ও সাতগাঁও দুর্গ দখল করেন। তারপর, ১৫৯৩ সালে উসমান পূর্ব দিকে অভিযান চালিয়ে ভুশনা পর্যন্ত চলে যান যেখানে তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি চাঁদ ইবনে কেদার রায়কে পরাজিত করেন। এখানে, তিনি ভাটি অঞ্চলের শাসক ঈসা খানের সাথে একটি জোট গঠন করেন, যার নেতৃবৃন্দ পরবর্তীতে বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিতি পায়।[৭] কথিত আছে, মানসিংহ হতে লুকিয়ে থাকতে উসমান একবার দক্ষিণ সিলেটের গয়ঘর মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন।[১২]
ঈসা খাঁর সাথে কাজ করে, উসমান বৃহত্তর ময়মনসিংহ জয় করেন। তিনি তার রাজধানী গৌরীপুরে বোকাইনগর দুর্গ শহরটি তৈরি করতে সক্ষম হন এবং এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব বাংলার উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৩] অল্প সময়ের জন্য পাঠানরা উত্তর ওড়িশায় ফিরে আসে। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পরে, ১৫৯৯ সালে উসমান বোকাইনগর দুর্গ পুনর্নির্মাণ করে একে ২০,০০০ সৈন্যের একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করতে সক্ষম হন।[১৪] উসমান হাসানপুর এবং এগারোসিন্দুরে আরও দুটি দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ব্রহ্মপুত্র নদী ছিল পশ্চিমের মুঘল অঞ্চল এবং উসমানের অঞ্চলের মাঝে সীমারেখা।[৭]
১৫৯৬ সালে উসমান শ্রীপুরের চাঁদ রায়কে পরাজিত করেন।[৩] তারপর, ১৬০২ সালে উসমান ব্রহ্মপুত্র অতিক্রম করে ও মুঘল থানাদার আলাপসিংহ, সজওয়াল খান ও বাজ বাহাদুর কালমাকদেরকে হারিয়ে দেন। পরাজিত মুঘল থানাদাররা ভাওয়ালের দিকে পালিয়ে যায়।[১৫] মানসিংহ এই খবরটি পাওয়া মাত্রই উসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীরনগর থেকে বানার নদী অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিলেন।[১৬] বানার নদীর তীরে অনুষ্ঠিত এই যুদ্ধে উসমানের অনেক অস্ত্র ও সংস্থান লুট করা হয়েছিল এবং পাশাপাশি অনেক পাঠানের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল।[১৭] ঈসা খানের মৃত্যুর পর তার পুত্র মুসা খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। বিদ্রোহীদের পরিকল্পনা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ চালিয়ে ভাটি অঞ্চলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা।[১৮]
১৬০৬ সালে মুসা খান বাংলার সুবাহদার ইসলাম খাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করলে উসমান তৎক্ষণাত সাম্রাজ্যের পরবর্তী লক্ষ্য হয়ে ওঠেন। একই বছরের অক্টোবরে, ইসলাম খাঁ আবদুল ওয়াহিদ এবং শেখ কামাল বায়েজিদকে জাহাঙ্গীরনগর থেকে হাসানপুর পর্যন্ত একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে পদযাত্রা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাসানপুর ছিল উসমানের রাজধানী বোকাইনগরের ঠিক উত্তরেই। হাসানপুরে থেকে মোগল সেনাবাহিনী বোকাইনগরে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে খন্দক এবং দুর্গ তৈরি করেছিল। যুদ্ধে উসমানের সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং পাশ্ববর্তী তাজপুরে তার পাঠান মিত্র নাসির এবং দরিয়া খান ইসলাম খাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের অধীনস্থ অনেক পাঠান যোদ্ধা এসে উসমানের দলে যোগ দিলেও অনেক পাঠান তাদের নেতাদের অনুসরণ করে মুঘলদের সমর্থন জানায়। কিন্তু, এভাবে মিত্রদের পাশে না পাওয়ায় উসমানের শক্তি যথেষ্ট হ্রাস পায়। তাই তিনি ২০০ জনেরও বেশি পাঠানকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সিলেট অঞ্চল ছিল বাংলায় আফগানদের সবচেয়ে শক্ত ঘাটি। উসমান সেখানে অনেক আফগান নেতাদের সঙ্গে জোট গঠন করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: বানিয়াচংয়ের আনোয়ার খান, সিলেটের দ্বিতীয় বায়েজীদ কররানী এবং মাহমুদ খান।[১৯] ১৬১১ সালের ৭ ডিসেম্বর বোকাইনগর মুঘল সাম্রাজ্যের দখলে আসে।[৬] তবে মুসা খানের মৃত্যুর পর পরই বানিয়াচংয়ের আনোয়ার খান জাহাঙ্গীরনগরে মুঘলদের সাথে দেখা করে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তখন তিনি তাদের তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি যতদিন বানিয়াচংয়ে কর্তৃত্ব করতে পারবেন, ততদিন তিনি উসমানের বিরুদ্ধে মুঘলদের সহায়তা করবেন।
উসমান তরফ পৌঁছেছিলেন যেখানে তিনি তার পুত্র মুমরিজ এবং ভাই মালহীকে তরফএ অবস্থান করার জন্য নিযুক্ত করেন। আর উসমানের ভাই খাজা ওয়ালি দায়িত্ব পান বাহুবলের গিরিপালের পাদদেশে পুটিয়া (পুটিজুরি) নামক একটি পাহাড়ী দুর্গের। এরপরে উসমান তার অভিযান অব্যাহত রাখেন এবং ইটা রাজ্যে পৌঁছে তিনি সেখানকার রাজা সুবিদ নারায়ণেকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। এরপরে তিনি কমলগঞ্জের উহারে তার নতুন রাজধানী স্থাপন করেন এবং দক্ষিণ সিলেটের নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সক্ষম হন।[২০] তার রাজ্যটি উসমানগড় (উহার) নামে পরিচিত ছিল ও তরফ (হবিগঞ্জ) জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বলা হয়ে থাকে, মণিপুর আক্রমণ করার জন্য তরফ থেকে একটি বাহিনী কাছাড়ে প্রেরণ করা হয়েছিল।[২১]
ইসলাম খাঁ উসমানকে পরাজিত করার অভিযানের জন্য একটি বিশাল সেনাবাহিনী প্রস্তুত করেছিলেন। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর সমগ্র উপমহাদেশ থেকে সৈন্য ও অফিসার সরবরাহ করেছিলেন এবং দাক্ষিণাত্যের সুজাত খান চিশতিকে সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন।[২২] যুদ্ধ শুরুর আগে সুজাত উসমানকে মুঘল সাম্রাজ্যের কাছে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। উসমান এই বার্তার জবাবে বলেছিলেন যে, অদৃষ্টের বহু ঘাতপ্রতিঘাতের পর সমগ্র দেশ মুগলের কর্তৃত্বে ছেড়ে দিয়ে তিনি দেশের এক নিভৃত কোণে আশ্রয় নিয়েছেন যেখানে তিনি শান্তিতে বসবাস করতে চান। আর এখন যদি তারা তাকে সেখান থেকেও বিতাড়িত করতে বদ্ধপরিকর হয়ে থাকে তাহলে তাঁর জন্য আর একবার রণক্ষেত্রে তাঁর ভাগ্যের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না।[৬]
সুবাদার ইসলাম খাঁ বানিয়াচংয়ের আনোয়ার খানকে উসমানের বিরুদ্ধে একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বিশ্বস্ত মনে করেননি। তাই তার পরিবর্তে তিনি ইসলাম কুলি খানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এতে আনোয়ার রাগে ক্রুদ্ধ হয়ে জাহাঙ্গীরনগর থেকে এগারোসিন্দুরে রওনা হন। তিনি হাসানপুরে উসমানের সমর্থনে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুসা খাঁর ভাই মাহমুদ খান এবং ভাওয়ালের বাহাদুর গাজীর সাথে নতুন পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু, তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল এবং সকল বিদ্রোহী নেতাকে কারাবন্দি করা হয়েছিল।[২৩]
তবে, ইসলাম খাঁ বাংলায় আফগান শক্তির ইতি টানতে আগ্রহী ছিলেন এবং তাই তিনি যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি তার নিজের ৫০০ অশ্বারোহী, ৪,০০০ বন্দুকধারী এবং বিপুল সংখ্যক ঘোড়া এবং হাতি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।[২৪] সরাইলের জমিদার সোনাগাজী যুদ্ধজাহাজ সরবরাহ করেছিলেন এবং ইহতিমাম খান একটি রাজকীয় বাহিনী সরবরাহ করেছিলেন। শেখ আচ্ছা এবং ইফতিখার খান তুর্কমেনকে ডান ও বাম অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৬১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মোঘল সেনাবাহিনী মালহী (উসমানের ভাই) এবং মুমরিজ (উসমানের পুত্র) দ্বারা শাসিত তরফের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পরেই উহারের দিকে পিছিয়ে যান। আর, খাজা ওয়ালী আগত সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার আগেই তার পার্বত্য দুর্গ ত্যাগ করেছিলেন।[৬]
মালি, মুমরিজ ও ওয়ালীর আগমনের পরে উসমানও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। তিনি তার ২০০০ অশ্বারোহী, ৫,০০০ পদাতিক এবং ৪০টি হাতি প্রস্তুত করেছিলেন। উসমান তার টিউপ-ও-টুফাং স্টাইল আর্টিলারিটির জন্য বিখ্যাত ছিলেন।[২৫] তিনি ওয়ালীকে ১০০০ জন অশ্বারোহী, ২০০০ জন পদাতিক এবং ৩০টি যুদ্ধ-হাতি দিয়ে বাম দিকের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। আর শেরে ময়দানকে ৭০০ জন অশ্বারোহী, ১০০০ জন পদাতিক এবং ২০টি হাতি নিয়ে ডানদিকের দায়ভার অর্পণ করেছিলেন।[৭]
১৬১২ সালের মার্চ মাসে উভয় সেনাবাহিনী নিকটবর্তী দৌলম্বপুর গ্রামে মিলিত হয়। সেখানে একটি জলাভূমির তীরে যুদ্ধ শুরু হয়।[২৬] যুদ্ধের শুরুতেই মুঘল বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ইফতিখার খান তুর্কমেন এবং শেখ আচ্ছা উভয়কেই হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের বাহিনীকে প্রচণ্ড পরাজিত করা হয়েছিল। সুজাত খানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীও পরাজিত হয়েছিল। তবে সুজাত পালিয়ে বন্দিত্ব এড়াতে সক্ষম হন।[৬]
মুঘলদের পরাজয় যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই ইফতিখার খানের অনুগত সৈনিক শেখ আবদুল জলিল তার ঘোড়ায় চড়ে উসমানের দিকে যাত্রা করেছিলেন। আবদুল জলিল উসমানের দিকে লক্ষ্য করে তীর ছোড়েন। তীরটি তীরটি তার বাম চোখ ভেদ করে মাথার মগজে ঢুকে যায়। উসমান তীরটি বের করতে গিয়ে তার ডান চোখটিও বের হয়ে আসে। অন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে তিনে এক হস্তী-আরোহীকে সুজাত খানকে খুঁজে বের করে আক্রমণ করার জন্য ইশারা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই উসমান বাকশক্তি হারান এবং তারপর পর মারা যান।[৭]
উসমানকে পাঠানরা উহারে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং দুটি পাহাড়ের মাঝখানে অজ্ঞাত স্থানে তাকে দাফন করা হয়। তবে, উসমানের প্রাসাদের বাইরেও একটি ভুয়া সমাধি তৈরি করা হয়েছিল।[২৭]
আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সারতে আফগানরা ৪৯টি হাতি এবং রত্নালঙ্কার মুঘল সম্রাটকে উপহার দেয়।[২৮] মুঘলরাও উসমানের আত্মীয়-স্বজন এবং আত্মসমর্পণকারী আফগানদের সম্মানিত করে। এছাড়াও, এ বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে একটি ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল।[২৯]
১৯৮৫ সাল থেকে স্থানীয়রা উসমানের স্মরণে মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলার নাম উসমানগড় রাখার প্রস্তাব করে আসছে। এই উপজেলার জন্য প্রস্তাব বর্তমানে উহারের উসমানের দুর্গটি দুটি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে: শ্রীশূর্য এবং উসমানগড়। দুপি স্থানই কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নে অবস্থিত।[৫] দাবিটি বাস্তবায়িত হলে উসমানগড় উপজেলাটি ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত হবে:
এছাড়াও, খাজা উসমানের নামানুসারে মৌলভীবাজারের ঐতিহাসিক গয়ঘর মসজিদের নাম গয়ঘর খোজার মসজিদ রাখা হয়।[১২]
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী রাজা সুবিদ নারায়ণ |
উসমানগড়ের শাসক ১৬১০-১৬১২ |
উত্তরসূরী মুবারিজ খান |