খালিদ শেখ মোহাম্মাদ | |
---|---|
জন্ম | বেলুচিস্তান, পাকিস্তান/কুয়েত[১][২][৩] | ১ মার্চ ১৯৬৪ অথবা ১৪ এপ্রিল ১৯৬৫
ধরা | ১ মার্চ, ২০০৩ রাওয়ালপিন্ডি,পাকিস্তান |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তানি[১][২][৪] |
আটক | গুয়ানতানামো কারাগার |
আইএসএন | ১০০২৪ |
অবস্থা | বন্দী |
সন্তান | ২ |
আত্মীয় | রামজী ইউসুফ (ভাগিনা) |
খালিদ শেখ মোহাম্মদ হলেন একজন পাকিস্তানি ইসলামপন্থী জিহাদি, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরে সন্ত্রাস- সম্পর্কিত একটি অভিযোগের অধীনে বন্দী আছেন। তিনি শেখ বানান নামেও পরিচিত। এছাড়া তিনি প্রায় ৫০ টি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়।[৫][৬] ৯/১১ কমিশনের রিপোর্টে তাকে ৯/১১ হামলার প্রধান স্থপতি হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।[৭] তিনি ১৯৬৪ সালের ১লা মার্চ বা ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ মোহাম্মদ আল-কায়েদার একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত আল-কায়েদার প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এবং পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সম্মিলিত অভিযানে ২০০৩ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে মোহাম্মদকে আটক করা হয়। বন্দী হওয়ার পরপরই তাকে প্রথমে আফগানিস্তানে, তারপর পোল্যান্ডে অবস্থিত সিআইএয়ের গোপন কারাগারে পাঠানো হয় এবং সেখানে তাকে মার্কিন কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদ করে।[৮] ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সামরিক হেফাজতে তাকে গুয়ানতানামো বে ডিটেনশন ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়।
২০০৭ সালের মার্চে গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসাবাদের পর শেখ মোহাম্মদ ১১ সেপ্টেম্বর হামলার মূল পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন। এছাড়াও রিচার্ড রিড জুতা বোমা হামলা, ইন্দোনেশিয়ার বালি নাইটক্লাবে বোমা হামলা, ১৯৯৩ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বোমা হামলা, ড্যানিয়েল পার্ল হত্যাসহ বানচাল হয়ে যাওয়া অন্যান্য হামলার অপরাধও স্বীকার করেন।[৯][১০] ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুয়ানতানামো বে ডিটেনশন ক্যাম্পে একটি মার্কিন সামরিক কমিশন তাকে যুদ্ধাপরাধ ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল।[৯] এরপর দীর্ঘদিন তিনি জেলে ছিলেন।[১১] ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট একজন সামরিক বিচারক শেখ মোহাম্মদের মৃত্যুদণ্ডের বিচারের জন্য ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন।[১২] কিন্তু ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কোভিড-19 মহামারীর কারণে তার বিচার স্থগিত করা হয়।[১৩] পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পুনরায় তার বিচার শুরু হয়।[১৪]
সরকারি নথি অনুসারে খালিদ শেখের জন্ম ১৪ এপ্রিল, ১৯৬৫ বা ১ মার্চ, ১৯৬৪। তার জন্মস্থান বেলুচিস্তান (পাকিস্তান) বা কুয়েতে।[১][১৫][১৬] তার পিতা শেখ মোহাম্মদ আলী দৌস্তিন বেলুচি ছিলেন একজন সাধারণ দেওবন্দী ধর্মপ্রচারক।[১৭] তার পিতা ১৯৬০-এর দশকে বেলুচিস্তান থেকে পরিবারকে কুয়েতে স্থানান্তরিত করেন।[১৮] তার মা ছিলেন হালেমা মোহাম্মদ।[১৭] খালিদ শেখ হলেন রামজি ইউসেফের মামা, যিনি ১৯৯৩ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। খালিদ বেলুচি, উর্দু, আরবি ও ইংরেজিতে সাবলীল কথাবার্তা বলতে পারেন।[১৯]
মার্কিন ফেডারেল নথি অনুসারে, ১৯৮২ সালে তিনি আবদুর রসুল সায়াফের বক্তৃতা শুনেন, যেখানে তিনি সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানান।[১] ১৬ বছর বয়সে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন।[২০] ১৯৮৩ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর খালিদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে উত্তর ক্যারোলিনার মুরফ্রিসবোরোতে চোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এর পরে তিনি উত্তর ক্যারোলিনা কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন এবং ১৯৮৬ সালে সেখান থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স (BS) ডিগ্রি লাভ করেন।[১][২১]
এর পরের বছর তিনি পাকিস্তানের পেশোয়ার যান এবং শেখ আবদুল্লাহ আজম কর্তৃল পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগদান করেন। তারপর তিনি সায়াফের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসলামিক ইউনিয়ন ফর দ্য লিবারেশন অফ আফগানিস্তানের আল-বুনিয়ান আল-মারসুস পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।১৯৯২ সালে তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠিপত্র ক্লাসের মাধ্যমে ইসলামি সংস্কৃতি ও ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[১] ১৯৯৩ সালে তিনি বিয়ে করেন এবং পরিবারকে কাতারে নিয়ে গিয়ে কাতারের বিদ্যুৎ ও পানি মন্ত্রণালয়ে প্রকৌশলী হিসাবে কাজ নেন।[১] সেই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ শুরু করেন। ইউনাইটেড স্টেটস ৯/১১ কমিশন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি খালিদের শত্রুতা সেখানকার একজন ছাত্র হিসাবে অভিজ্ঞতা থেকে নয়, বরং ইসরায়েলের পক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সাথে তার সহিংস মতবিরোধ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।"[২২]
১৯৯৪ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৯৫ সালের শুরুভাগে খালিদ ফিলিপাইনে অবস্থান করেন। তিনি সেখানে আব্দুল মজিদ বা সালেম আলি উপনাম ব্যবহার করে নিজেকে সৌদি বা কাতারি প্লাইউড রপ্তানিকারক হিসাবে পরিচয় দেন।[২৩][২৪]
খালিদ শেখ ১৯৯৪ সালে তার ভাগ্নে রামজি ইউসুফের সাথে বোজিঙ্কা চক্রান্তে কাজ করার জন্য ফিলিপাইনে যান। তারা ম্যানিলা-ভিত্তিক ১২টি বাণিজ্যিক বিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উড়ন্ত রুটের মধ্যে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। ৯/১১ কমিশনের রিপোর্টে বলা হয় যে, "এই প্রথমবার খালিদ শেখ একটি জঙ্গি কর্মকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনায় অংশ নেন।"[২৫] বোজিঙ্কার পরিকল্পনার সারাংশ হল, একটি সেসনা বিমান ভাড়া বা ক্রয় করে এটিকে বিস্ফোরক দিয়ে ভর্তি করে সিআইএ সদর দফতরে ক্র্যাশ ল্যান্ড করানো।১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে ইউসুফ ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট 434-তে একটি বোমার পরীক্ষায় করেন, যা মার্কিন বিমানে স্থাপন করা প্রতিটি বোমায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলির মাত্র দশ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষার ফলে ফিলিপাইন থেকে জাপান গামী একটি ফ্লাইটে একজন জাপানি নাগরিকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সে বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ইউসুফকে আটক করা হয়। অপারেশন বোজিঙ্কায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে নিউইয়র্কের একটি জেলা আদালতে খালিদ শেখ মোহাম্মদকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।[২৬][২৭]
বোজিঙ্কা চক্রান্ত আবিষ্কৃত হওয়ার পর খালিদ শেখ কাতারে ফিরে এসে দেশটির বিদ্যুৎ ও পানি মন্ত্রণালয়ে একজন প্রকল্প প্রকৌশলী হিসাবে তার চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী জিহাদি সম্প্রদায়ের কার্যক্রম দেখার জন্য সুদান, ইয়েমেন, মালয়েশিয়া ও ব্রাজিলে ভ্রমণ করেন। যদিও কোনো প্রমাণ তাকে সেই অবস্থানগুলির মধ্যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করেনি। সুদানে তার সফরে তিনি বিন লাদেনের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেন। তখন বিন লাদেন সেখানে বসবাস করছিলেন। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাতারি সরকারকে খালিদ শেখকে গ্রেপ্তার করতে বললে তিনি আফগানিস্তানে পালিয়ে যান। সেই বছরের শেষের দিকে তিনি সেখানে বসতি স্থাপনকারী বিন লাদেনের সাথে কাজের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
বিন লাদেন ও তার সহকর্মীরা এই সময়ে তাদের সকল কার্যক্রম আফগানিস্তানে স্থানান্তরিত করে। ১৯৯৬ সালে মাঝামাঝি সময়ে উসমার অপারেশনাল প্রধান মোহাম্মদ আতেফ তোরাবোরাতে বিন লাদেন ও শেখ মোহাম্মদের মাঝে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। সেই বৈঠকে শেখ মোহাম্মদ একটি গভীর পরিকল্পনার রূপরেখা দেন। তা হল ২০০১ সালে বিমান হাইজ্যাকিং এবং তা দিয়ে টুইন টাওয়ারে হামলা।[২৮] বিন লাদেন তখন তাকে আল-কায়েদার পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ১৯৯৮1998 সালে নাইরোবি ও দারুসসালামে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার পর ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে খালিদ শেখ এই ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, তিনি মনে করেন যে, এমন হামলা সামনে বড় ধরনের হামলা ঠেকিয়ে দিতে আমেরিকাকে সাহায্য করবে।[২৯]
১৯৯৭ সালে খালিদ শেখ তার পরিবারকে ইরান থেকে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যান।[৩০] সে বছরই তিনি নিজের বিশেষ আগ্রহের স্থান চেচনিয়ায় মুজাহিদিন নেতা ইবন আল-খাত্তাবের সাথে যোগদানের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। চেচনিয়া যেতে না-পেরে তিনি আফগানিস্তানে ফিরে আসেন এবং শেষ পর্যন্ত কান্দাহারে গিয়ে আল-কায়েদার পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগদানের জন্য বিন লাদেনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। অবশেষে তিনি আল কায়েদার মিডিয়া কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হন।[৩০]
শেখ খালিদ আল-কায়েদার নেতৃত্বের কাছে যে প্রথম হাইজ্যাকিং পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেছিলেন, তাতে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় উপকূলে বেশ কয়েকটি বিমান হাইজ্যাক করে লক্ষ্যবস্তুর দিকে উড্ডয়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বোজিঙ্কা চক্রান্ত (উপরে দেখুন) নামে পরিচিত একটি পূর্বের ব্যর্থ প্লট থেকে তার এই পরিকল্পনাটি উদ্ভূত হয়েছিল। বিন লাদেন খালিদের প্রস্তাবিত কিছু সম্ভাব্য লক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন (যেমন: লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউএস ব্যাংক টাওয়ার)।[৩১] কারণ তিনি আক্রমণগুলিকে সহজ করতে চেয়েছিলেন।[৩২]
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে বা ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে বিন লাদেন খালিদকে প্লট সংগঠিত করার জন্য অনুমোদন দেন।[২৯] ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে খালিদ শেখ ওসামা বিন লাদেন ও তার অপারেশনাল প্রধান মোহাম্মদ আতেফের সাথে বৈঠক করেন।[২৯] বলা হয়, বিন লাদেন এই চক্রান্তের নেতৃত্ব দেন এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।[২৯] তিনি প্রধান হাইজ্যাকার হিসাবে মোহাম্মদ আত্তাকে বেছে নেওয়াসহ অন্যান্য অংশগ্রহণকারী নির্বাচনের সাথে জড়িত ছিলেন।[৩৩] খালিদ শেখ অপারেশনাল সহায়তা প্রদান করেন; যেমন: লক্ষ্য নির্বাচন এবং হাইজ্যাকারদের জন্য ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা।[২৯] আতেফ ছিনতাইকারীদের যাবতীয় নির্দেশনা দেন।[৩৪]
আত্তাকে মিশনের নেতা নির্বাচিত করার পর তিনি লক্ষ্যগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিন লাদেনের সাথে দেখা করেন। তাদের লক্ষ্যগুলি ছিল: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যা মার্কিন অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করে; পেন্টাগন, যা মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেড কোয়ার্টার এবং মার্কিন ক্যাপিটল বিল্ডিং, যা ইসরাইলের সমর্থনে মার্কিন নীতির উৎস। হোয়াইট হাউসও তালিকায় ছিল, কারণ বিন লাদেন এটিকে তাদের রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে এটির উপরও আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। কোনো পাইলট যদি তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে সে তিনি যেন বিমানটি বিধ্বস্ত করেন।[৩৫]
ফিলিপ জেলিকোর সাক্ষ্য অনুসারে বিন লাদেন ইসরায়েলকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং দলগুলিকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করার জন্যে আক্রমণের তারিখটি আরো পেছাতে চেয়েছিলেন। তার ভাষায়:
বিন লাদেন খালিদকে বলেন যে, এটি কেবল বিমানগুলিকে নামিয়ে দেওয়া এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাই যথেষ্ট নয়। তিনি যুক্তি দেন যে, পাইলটরা সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত না হলে এবং ছিনতাইকারী দলগুলি বড় না হলে অপারেশন সফল হবে না।[৩৬]
২০০১ সালে আল জাজিরার সাংবাদিক ইয়োসরি ফৌদার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে শেখ মোহাম্মদ স্বীকার করেন যে, তিনি এবং রামজি বিন শায়বা "পবিত্র মঙ্গলবার অপারেশন" এর সাথে জড়িত ছিলেন।[৩৭] 'পবিত্র মঙ্গলবার অপারেশন' ছিল ৯/১১ হামলার কোড নাম এবং হামলাগুলি আসলে মঙ্গলবারে সংঘটিত হয়েছিল৷[৩৮] খালিদ শেখ অবশ্য তার ব্যক্তিগত প্রতিনিধির মাধ্যমে এই দাবির বিরোধিতা করে বলেন, "আমি আল জাজিরার প্রতিবেদককে কখনো বলিনি যে,আমি আল-কায়েদার সামরিক কমিটির প্রধান"।[৩৯] ২০০২ সালের এপ্রিলে আল জাজিরার সংবাদদাতা ইয়োসরি ফৌদা খালিদ এবং রামজি বিন শায়বার সাথে একটি সাক্ষাত্কারে ৯/১১ হামলার প্রস্তুতির বর্ণনায় বলেন যে, তারা প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু অবশেষে আপাতত পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তু ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে।[৪০]
গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ রোহান গুনারত্নের সাথে সিএনএনের একটি সাক্ষাত্কার অনুসারে, ড্যানিয়েল পার্ল করাচিতে সক্রিয় আল কায়েদা নেটওয়ার্কের সন্ধানে যাচ্ছিলেন এবং খালিদ শেখ মোহাম্মদের নির্দেশেই ড্যানিয়েল পার্লকে হত্যা করা হয়েছিল।[৪১] ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিন রিপোর্ট করে যে, খালিদ শেখ সিআইএ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে হত্যা করেছেন।[৪২] ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ পেন্টাগন জানায় যে, খালিদ হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।[৪৩] বিবৃতিতে খালিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়,"আমি আমার আশীর্বাদকৃত ডান হাত দিয়ে পাকিস্তানের করাচি শহরে মার্কিন ইহুদি ড্যানিয়েল পার্লের মাথা কেটে ফেলেছি। যারা নিশ্চিত করতে চান তাদের জন্য, ইন্টারনেটে আমার ছবি তার মাথা ধরে আছে।[৪৪] এই স্বীকারোক্তি নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকার করানো হয় এবং খালিদ সেই সময়ে আরো অনেক অপরাধের কথা স্বীকার করেন।[৯][১০]
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ২০১১ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসারে, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন শিরার মিল ব্যবহার করে তা নির্ধারণ করে যে, পার্ল হত্যার ভিডিওতে অপরাধী সম্ভবত খালিদই ছিলেন।[৪৫] জলপীড়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বীকারোক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেডারেল কর্মকর্তারা তাদের মামলাকে শক্তিশালী করতে এই ফরেনসিক প্রমাণ ব্যবহার করেছেন।[৪৬]
২০০২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সদস্যরা করাচিতে একটি অভিযানের সময় শেখ মোহাম্মদকে হত্যা বা বন্দী করার দাবি করে, যার ফলে রামজি বিন শায়বা ধরা পড়েন। পাকিস্তানের এই দাবি মিথ্যা ছিল।[৪৭] ২০০৩ সালের ১ মার্চ আইএসআই পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে খালিদকে গ্রেফতার করে।[৪৮] ২০১২ সাল থেকে তিনি মার্কিন হেফাজতে রয়েছেন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে খালিদ শেখকে আফগানিস্তানের সিআইএয়ের সল্ট পিট কারাগারে রাখা হয়েছিল। সেখানে তার ওপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। তাকে থাপ্পড় মারা হয়; মুখ চেপে ধরা হয়; স্ট্রেস পজিশনে রাখা হয়; স্থায়ী ঘুমের বঞ্চনায় রাখা হয় এবং শরীরে জল ঢেলে দেওয়া হয়।[৪৯]
২০০৩ সালে খালিদকে পোল্যান্ডের একটি গোপন সিআইএ কারাগারে বা ব্ল্যাক সাইটে বন্দী করে রাখা হয় এবং সেখানে সিআইএ তাকে ১৮৩ বার জলপীড়ন করে।[৮] এরপর তাকে রোমানিয়ার আরেকটি গোপন সিআইএ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।[৫০]
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন সরকার ঘোষণা করে যে, তারা খালিদকে গোপন সিআইএ কারাগার বা ব্ল্যাক সাইট থেকে গুয়ানতানামো বে ডিটেনশন ক্যাম্পে সামরিক হেফাজতে নিয়ে গেছে।[৫১] রেড ক্রস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং খালিদ শেখ বিবেচনা করেম যে, জলপীড়নসহ জিজ্ঞাসাবাদের অন্য কঠোর কৌশলগুলি নির্যাতনের সমান।[৫২][৫৩] তিনি কিছু সময়ের জন্য ঘুমের বঞ্চনার শিকারও ছিলেন। বেশিরভাগ সময় তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।[৫৪] পরবর্তী প্রতিবেদন অনুসারে, খালিদ প্রথমে আমেরিকীয় জিজ্ঞাসাবাদকারীদের বলেছিলেন যে, তাকে একজন আইনজীবী না দেওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। তবে মার্কিনীরা এটা প্রত্যাখ্যান করে। তিনি দাবি করেন যে, 'জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নগ্ন রাখা হয়েছিল এবং তাকে অস্বাভাবিক সংখ্যক মহিলা হ্যান্ডলার দ্বারা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল'।[৫৫]
২০০৪ সালের ১২ অক্টোবর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্ট করে যে,খালিদ শেখসহ ১১ জন সন্দেহভাজন জর্ডানের একটি আধা-গোপন কারাগারে "নিখোঁজ " হয়ে গেছে এবং সিআইএর নির্দেশে সেখানে তাদের নির্যাতন করা হতে পারে।[৫৬][৫৭] সে সময় জর্ডান ও আমেরিকীয় কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।[৫৮][৫৯][৬০] ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিআইএ পরিচালক মাইকেল হেইডেন একটি সিনেট কমিটিকে বলেছিলেন যে, তার এজেন্টরা খালিদ শেখে উপর জলপীড়ন করেছিল।[৬১] ২০০৯ সালে প্রকাশিত ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের একটি মেমোতে বলা হয়েছে যে, খালিদ শেখ ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ১৮৩ বার জলপীড়নের শিকার হয়েছেন।[৬২]
২০০৬ সালের অক্টোবরে খালিদ শেখ রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির একজন প্রতিনিধির কাছে জলপীড়নসহ আটক অবস্থায় তার সাথে করা দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের বর্ণনা দেন। খালিদ বলেন যে, দুর্ব্যবহার বন্ধ করার জন্য তিনি জিজ্ঞাসবাদকারীদের মর্জি মাফিক অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।[৬৩] রেড ক্রসের সাথে ২০০৬ সালের সাক্ষাৎকারে খালিদ তার আটকের তৃতীয় স্থানে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম মাসে পাঁচটি ভিন্ন সেশনে ওয়াটারবোর্ডে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছিলেন।[৬৩][৬৪][৬৫] ২০০৮ সালের মার্চ মাসে গুয়ানতানামোতে চার বছর বন্দী থাকার পর খালিদ ১১ সেপ্টেম্বরে মাস্টারমাইন্ডিংয়ের কথা স্বীকার করেন।[৬৬] এছাড়া রিচার্ড রিড জুতা বোমা হামলা, আটলান্টিক মহাসাগরের উপর একটি বিমান উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা, ইন্দোনেশিয়ার বালি নাইটক্লাবে বোমা হামলা, ১৯৯৩ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা হামলাসজ বিভিন্ন ব্যর্থ হামলার কথা স্বীকার করেন।[৬৭] ৯/১১ সম্পর্কে বলেন, "আমি অপারেশনে A থেকে Z পর্যন্ত জড়িত ছিলাম"।[৬৮]
খালিদ শেখ মোহাম্মদকে গ্রেফতার করার সময় জব্দ করা একটি কম্পিউটারে হার্ড ড্রাইভে নিম্নলিখিতগুলি বিষয়গুলো ছিল:
শুনানিতে খালিদ শেখ মোহাম্মদ বলেছিলেন যে, কম্পিউটারটি তার নয়। এটি মুস্তফা আহমাদ আল-হাওসাভির। তাদের দুই জনকে একসাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[৬৯]
২০০৮ সালের জুনে নিউইয়র্কটাইমসের একটি নিবন্ধে নামহীন সিআইএ অফিসারদের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করা হয় যে, খালিদকে ওয়ারশ থেকে প্রায় ১০০ মাইল উত্তরে সিজাইমানি বিমানবন্দরের কাছে পোল্যান্ডের একটি ব্ল্যাক সাইট বা গোপন স্থানে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাকে জলপীড়নের অধীনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।[৭০] ২০১১ সালের এপ্রিলে ব্রিটিশ সংবাদপত্র টেলিগ্রাফ বলে যে, তারা খালিদের গুয়ানতানামো বে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ফাঁস হওয়া একটি নথি পেয়েছে। নথিতে খালিদ শেখকে উদ্ধৃত করে বলা হয় যে, যদি ওসামা বিন লাদেনকে গ্রেফতার হন বা তাকে হত্যা করা হয়, তাহলে আল-কায়েদার একটি স্লিপার সেল ইউরোপের একটি "গোপন স্থানে" একটি "গণবিধ্বংসী অস্ত্রের" বিস্ফোরণ ঘটাবে এবং একটি পারমাণবিক নরকের ঝড় হবে।[৭১][৭২][৭৩][৭৪][৭৫][৭৬]
উচ্চমূল্যের বন্দীদের একজন মজিদ খানের পিতা আলি খান ২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল একটি হলফনামা প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয় যে, জিজ্ঞাসাবাদকারীরা খালিদ শেখ মোহাম্মদের ৬ ও ৮ বছর বয়সী শিশুদের অপমানজনক জিজ্ঞাসাবাদের শিকার করেছে।[৭৭][৭৮]
২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেন যে, সিআইএ সারা বিশ্বেে বিভিন্ন গোপন কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য "উচ্চ মূল্যের বন্দিদের" ধরে রেখেছে।[৭৯] তিনি আরও বলেন যে, খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ ১৪ জন সিনিয়র বন্দীকে গুয়ানতানামো কারাগারে সিআইএ হেফাজত থেকে সামরিক হেফাজতে স্থানান্তর করা হচ্ছে এবং এই ১৪ বন্দী এখন গুয়ানতানামো সামরিক কমিশনের সামনে অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার আশা করতে পারে।[৮০] ২০০৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি ভাষণে বুশ বলেন:
২০০৮ সালের মার্চ মাসে খালিদ শেখ মোহাম্মদ গুয়ানতানামো বেতে রুদ্ধদ্বার শুনানির আগে সাক্ষ্য দেন। পেন্টাগন কর্তৃক প্রকাশিত শুনানির প্রতিলিপি অনুসারে তিনি বলেছিলেন, "আমি A থেকে Z পর্যন্ত ৯/১১ অপারেশনের জন্য দায়ী ছিলাম। প্রতিলিপিগুলি তাকে আরো স্বীকার করে দেখায়:
২০০৭ সালের ১৫ মার্চ বিবিসি নিউজ রিপোর্ট করে যে, "তার সাক্ষ্যের প্রতিলিপি আরবি থেকে অনুবাদ করা হয়েছিল এবং প্রকাশের আগে সংবেদনশীল গোয়েন্দা তথ্য মুছে ফেলার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা সম্পাদনা করা হয়েছিল। একজন বিচারকের প্রশ্নে দেখা গেছে, খালিদ শেখ মোহাম্মদ মার্কিন হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।" প্রতিরক্ষা বিভাগের ট্রান্সক্রিপ্টে খালিদ শেখ বলেন যে, তার বিবৃতি চাপের মধ্যে দেওয়া হয়নি, তবে খালিদ এবং মানবাধিকার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। সিআইএ কর্মকর্তারা এর আগে এবিসি নিউজকে বলেছিলেন যে, "কথোপকথন শুরু করার আগে খালিদ শেখ জলপীড়নের অধীনে সবচেয়ে বেশি আড়াই মিনিট যাবত স্থায়ী ছিলেন"।[৮২] আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, এতে তার সব বক্তব্য কলঙ্কিত হতে পারে। মিথ্যা স্বীকারোক্তিতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক সাইকিয়াট্রিস্ট মাইকেল ওয়েলনার সাক্ষ্যের প্রতিলিপি থেকে পর্যবেক্ষণ করেন যে, তার পরিবার সম্পর্কে তার উদ্বেগ খালিদকে সহযোগিতা চাওয়ার ক্ষেত্রে আগের যে কোনো রিপোর্ট করা দুর্ব্যবহারের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী হতে পারে।[৮৩]
জিজ্ঞাসাবাদে খালিদ এও স্বীকার করেন যে, তিনি ১৯৯৩ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার অপারেশনের জন্য দায়ী। যেটিতে ছয়জন নিহত এবং ১,০০০ জনের বেশি আহত হয়েছিল। তিনি হামলার পরিকল্পনা করেননি, তবে এটিকে সমর্থন করেছিলেন।[৮৪]
খালিদ শেখ অন্তত ৩১টি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন:[৮৫]
খালিদ গুয়ানতানামোতে পৌঁছানোর পর এফবিআই এবং সামরিক জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একটি দল তার কাছ থেকে একই স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করেছিল, যা সিআইএ ৯/১১ প্লট সম্পর্কে পেয়েছিল। ২০০৮ সাল নাগাদ বুশ প্রশাসন বিশ্বাস করেছিল যে, এই তথাকথিত "ক্লিন টিম" খালিদ এবং অন্যদেরকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ সংকলন করেছে।[৮৬] ২০০৭ সালের ৯ আগস্ট প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর ঘোষণা করেছিল যে, সিআইয়ের গোপন সাইট থেকে গুয়ানতানামোতে স্থানান্তরিত উচ্চ মূল্যের বন্দীদের মধ্যে চৌদ্দ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে "শত্রু যোদ্ধা" হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।[৮৭] যদিও বিচারক পিটার ব্রাউনব্যাক এবং কিথ জে. অলরেড দুই মাস আগে রায় দিয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র "অবৈধ শত্রু যোদ্ধা" সামরিক কমিশনের মুখোমুখি হতে পারে। প্রতিরক্ষা বিভাগ বাছাইকারীকে মওকুফ করে এবং বলে যে, চৌদ্দ জনের সবাই এখন গুয়ানতানামো সামরিক কমিশনের সামনে অভিযোগের মুখোমুখি হতে পারে।[৮৮][৮৯]
২০০৮ সালের ৯ মার্চ আহমেদ ওমর সাঈদ শেখের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলের পক্ষে খালিদ শেখের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দেন।[৯০][৯১] আহমেদ ওমর সাঈদ শেখকে (তিনি শেখ ওমর নামেও পরিচিত) ড্যানিয়েল পার্লকে হত্যার দায়ে পাকিস্তানের একটি আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ওমরের আইনজীবীরা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তারা একটি আপিলে খালিদ শেখের স্বীকারোক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন। তারা সবসময় স্বীকার করেছেন যে, ওমর পার্লের হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছিল, কিন্তু খালিদই প্রকৃত খুনি।[৯১]
২০০৯ সালে ফরাসি সরকার ২০০২ সালে তিউনিশিয়ার দ্বীপ জারবাতে জিবায় বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে খালিদ শেখ মোহাম্মদের অনুপস্থিতিতে বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।সেই হামলায় ১৪ জার্মান পর্যটক, পাঁচজন তিউনেশীয় এবং দুইজন ফরাসি নাগরিক নিহত হয়েছিল। তারা তাকে আটক জার্মান নাগরিক ক্রিশ্চিয়ান গ্যাঙ্কজারস্কি ও তিউনেশীয় নাগরিল ওয়ালিদ নাওয়ারের সাথে চার্জ করার ইচ্ছা করেছিলেন।[৯২] পরবর্তীতে ফরাসি বিচারকরা খালিদ শেখ মোহাম্মদের মামলাকে গ্যাঙ্কজারস্কি এবং নাওয়ারের থেকে আলাদা করে পরবর্তী তারিখে আলাদাভাবে বিচার করার সিদ্ধান্ত নেন।[৯৩]
২০০৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সামরিক কমিশন সিস্টেমের অধীনে ৯/১১ হামলার জন্য খালিদ শেখ, রামজি বিন শায়বা, মুস্তফা আহমেদ আল-হাওসাভি, আলী আবদ আল-আজিজ আলী ও ওয়ালিদ বিন আত্তাশকে অভিযুক্ত করে। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩,০০০ লোককে হত্যা এবং বিমান ছিনতাইয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান, বেসামরিক বস্তুর উপর আক্রমণ করা, ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর শারীরিক আঘাত এবং যুদ্ধের আইন লঙ্ঘন করে সম্পত্তি ধ্বংস করার অভিযোগ আনস হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে সামনে রেখে আসামীদের দ্বারা সংঘটিত ১৬৯টি প্রকাশ্য কর্মের তালিকা তৈরি করা হয়।[৯৪][৯৪][৯৫]
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসসহ সকল মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং মার্কিন সামরিক প্রতিরক্ষা আইনজীবীরা ন্যায্য বিচারের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবের জন্য সামরিক কমিশনগুলির সমালোচনা করেছেন। মামলাটি আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলছে। ২০১৯ সালের আগস্টে বিচারক ডব্লিউ শেন কোহেন দ্বারা বিচারের তারিখটি ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারী নির্ধারণ করা হয়েছিল।[৯৬][৯৭][৯৮][৯৯][১০০] কিন্তু কোভিড ১৯ মহামারির কারণে তারিখটি পিছিয়ে যায়।[১৩] ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বরে খালিদ শেখের বিচার পুনরায় শুরু হয়।[১৪]
২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, আটক ব্যক্তিদের তাদের আটককে চ্যালেঞ্জ করার জন্য হেবিয়াস কর্পাসের অধীনে আবেদন করার জন্য মার্কিন ফেডারেল আদালতে প্রবেশের অধিকার রয়েছে এবং ২০০৫ সালের বন্দি চিকিৎসা আইন ও ২০০৬ সালের সামরিক কমিশন আইন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আদালতের উদ্বেগ মোকাবেলার জন্য ২০০৯ সালে কংগ্রেস কর্তৃক একটি সংশোধিত সামরিক কমিশন আইন পাস করা হয়েছিল। ২০১৯ সালরে জুলাই মাসে আদালতে জমা দেওয়া একটি চিঠিতে খালিদ শেখ ৯/১১ হামলার শিকার এবং তাদের পরিবারকে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে তাদের মামলায় সাহায্য করার ইচ্ছার কথা জানান। হামলার মাস্টারমাইন্ড তার সহযোগিতার বিনিময়ে তার মৃত্যুদণ্ড বাতিলের দাবি জানিয়েছে বলে জানা যায়।[১০১] 31 জুলাই, 2024-এ, খালিদ শেখ মোহাম্মদ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দণ্ডের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের বিচার এড়িয়ে যান।
২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর খালিদ শেখ মোহাম্মদ ও আম্মার আল বেলুচির ছবি ইন্টারনেট, মার্কিন ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।[১০২][১০৩][১০৪] গুয়ানতানামো বন্দিদের ছবি তোলা ও বিতরণের ওপর ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। গুয়ানতানামোতে আসা সাংবাদিক ও ভিআইপিদের বন্দীদের মুখ দেখা যায় এমন কোনো ছবি তোলার অনুমতি নেই। সাংবাদিকরা খালিদ শেখ মোহাম্মদের মতো 'উচ্চ মূল্যের বন্দিদের দেখতে কেবল আদালতের কক্ষে দেখতে পাবেন এবং সেখানে ক্যামেরার অনুমতি নেই।
২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর স্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী গবেষকরা জিহাদি ওয়েবসাইটে খালিদ শেখ মোহাম্মদ ও তার ভাগ্নে আম্মার আল বালুচির নতুন ছবি খুঁজে পান। ক্যারল রোজেনবার্গের মতে দ্য মিয়ামি হেরাল্ডে লিখেছেন: "ছবিগুলি জুলাই মাসে তোলা হয়েছিল। রেড ক্রসের মুখপাত্র বার্নার্ড ব্যারেট বলেছেন, জেল ক্যাম্পের কর্মীদের সাথে একটি চুক্তির অধীনে এটি তোলা হয়, যা রেড ক্রস প্রতিনিধিদের বন্দীদের ছবি তুলতে এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে ছবি পাঠাতে দেয়।[১০২]
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে খালিদ শেখের লেখা ৩৬ পৃষ্ঠার একটি "অহিংসা ইশতেহার" মার্কিন সরকার কর্তৃক প্রকাশ করা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল "গুয়ানতানামোতে সামরিক কমিশনের ক্রুসেডারদের কাছে খালিদ শেখ মোহাম্মদের বক্তব্য।[১০৫] এতে লেখক পশ্চিমাদের ইসলাম অনুসরণের যুক্তি ব্যাখ্যা করার জন্য সাংস্কৃতিক সমালোচনা, ধর্মতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক রেফারেন্স ব্যবহার করেন। নোটগুলিতে তিনজন পশ্চিমা লেখকের আটটি বই এবং ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরের আদ্যক্ষর রয়েছে।[১০৬]
খালিদ শেখ মোহাম্মদ আল-কায়েদার কথিত দুই সদস্য জাকারিয়া মুসাবী এবং সেলিম হামদানের বিচারে সাক্ষী হিসেবে অংশ নেন। লস এঞ্জেলেস টাইমসের রিপোর্টার রিচার্ড সেরানো লিখেন:
"২০০৬ সালে তথাকথিত ২০তম হাইজ্যাকার জাকারিয়া মুসাবির হত্যার বিচারে তার জিজ্ঞাসাবাদের সারাংশ উচ্চস্বরে পড়া হয় এবং মুসাবি মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পান। দুই বছর পর একটি মিলিটারি কমিশন ট্রায়াল বা ট্রাইব্যুনালে মোহাম্মদের বিভিন্ন বিবৃতি পড়া হয়, যার ফলে ওসামা বিন লাদেনের চালক সেলিম হামদানকে গুয়ান্তানামো বে থেকে মুক্তি দেওয়া হয়"।[১০৭] সুলাইমান আবু গাইসের একজন অ্যাটর্নি স্ট্যানলি কোহেন খালিদ শেখের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, যাকে তারা আবু গাইসের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করার জন্য "জীবিত সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি" বলে বর্ণনা করেছিলেন। শেখ মোহাম্মদ তার অ্যাটর্নি ডেভিড নেভিনের মাধ্যমে বিশেষ শর্তে সাক্ষাৎকার নিতে সম্মত হন।"[১০৭][১০৮]
খালিদ শেখ আবু গাইসকে একজন "ধার্মিক মানুষ" ও "স্পেলবাইন্ডিং স্পিকার" বলে অভিহিত করেছিলেন।তিনি তার জ্ঞান অনুসারে আল-কায়েদার অভিযানে কোনো সামরিক ভূমিকা পালন করেননি এবং তার কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল না। মোহাম্মদ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, পশ্চিমা পররাষ্ট্র নীতি ভণ্ডামি করেছে। কারঙ এটি সোভিয়েত যুদ্ধে মুজাহিদিনদের উত্থানের অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া তখন থেকে মুজাহিদিনদের "সন্ত্রাসী" বা "বিদেশী যোদ্ধা" হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তিনি আরো দাবি করেন যে, তালেবানের ইসলামী শাসন ১৯৯০ এর দশকে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করেছিল।[১০৯] ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ লুইস এ. কাপলান রায় দিয়েছিলেন যে, মোহাম্মদের বক্তব্য বা সাক্ষ্য আবু গাইসের বিচারের সাথে প্রাসঙ্গিক ছিল না, তাই তা অগ্রহণযোগ্য।[১১০]
ক্রাইম ডকুমেন্টারি সিরিজ মুগশটস 'KSM's Confessins' শিরোনামে একটি পর্ব প্রকাশ করে, যা খালিদ শেখ মোহাম্মদকে পাকিস্তান থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত চিহ্নিত করে।[১১১][১১২]
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
Mohammed is believed to have been born in either 1964 or 1965 in Kuwait into a family originally from the Pakistani province of Baluchistan
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
A senior al-Qaeda commander claimed that the terrorist group has hidden a nuclear bomb in Europe which will be detonated if Bin-Laden is ever caught or assassinated. The US authorities uncovered numerous attempts by al-Qaeda to obtain nuclear materials and feared that terrorists have already bought uranium. Sheikh Mohammed told interrogators that al-Qaeda would unleash a 'nuclear hellstorm'.
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
mirror