খুঁড়ুলে পেঁচা Athene brama | |
---|---|
জোড়া খুঁড়ুলে পেঁচা, ভারত | |
A. b. indica, উত্তরপ্রদেশ, ভারতে | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Strigiformes |
পরিবার: | Strigidae |
গণ: | Athene |
প্রজাতি: | A. brama |
দ্বিপদী নাম | |
Athene brama (টেমিঙ্ক, ১৮২১) | |
প্রতিশব্দ | |
Carine brama |
খুঁড়ুলে পেঁচা (Athene brama) (ইংরেজি: Spotted Owlet), খোঁড়লে পেঁচা বা কোটরে পেঁচা স্ট্রিগিডি (Strigidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ক্ষুদ্রকায় এক প্রজাতির পেঁচা।[৩] সাধারণত গাছের কোটরে বা খোঁড়লে এরা বাসা করে বলেই এদের এমন নাম, তবে দালান-কোঠার ফাঁক-ফোকরেও বাসা করতে দেখা যায়। মানব বসতি বা কৃষিভূমির আশেপাশে এদের সাধারণ আবাস, শহরেও এরা নিজেদের রপ্ত করে নিয়েছে। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. খুঁড়ুলে পেঁচাকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।[১]
খুঁড়ুলে পেঁচার আবাস মূলত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। ঠিক করে বললে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও লাওস। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলেও এদের দেখা যায়।[২] এ প্রজাতিটি শ্রীলঙ্কায় নেই, তবে পক প্রণালীর আশেপাশে শ্রীলঙ্কার উপকূলে এদের দেখা যায়।
নাদুস-নুদুস দেখতে এ ছোট পেঁচার চোখের চারিদিক ও গলা সাদা। চোখের তারা ফ্যাকাশে থেকে সোনালি হলুদ। শরীরের তুলনায় মুখ ছোট। পিঠের দিক গাঢ় বাদামী, তার উপর বহু সাদা ফোঁটা থাকে। মাথার উপরের ফোঁটাগুলো ছোট আকারের। সাদাটে পেটের দিকে আনুভূমিক বাদামী রেখা দেখা যায়। বাদামী লেজে চিকন সাদা বলয়। ঠোঁট সবুজ, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলদে-সবুজ। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে অভিন্ন। দৈর্ঘ্যে কমবেশি ২৩ সেন্টিমিটার।[৩]
জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং এক জোড়া একই জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। মাঝেমাঝে পারিবারিক দলেও থাকে। গোধূলি এবং কাকডাকা ভোরে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। সন্ধ্যায় বেশ জোরের সাথে প্রজাতি আপেক্ষিক ডাক চিকিক-চিকিক-চিকিক ইত্যাদি শব্দ করে তাদের কাজ শুরু করে। খুঁড়ুলে পেঁচা নিশাচর। রাতভর শিকার করে। প্রত্যেকটি জোড়ার নির্দিষ্ট বসতি সীমানার (territory) পরিচিত গাছের ফোকর, বড় ডালের গোড়ার আবডাল, অব্যবহৃত বাড়িঘর, দালান-কোঠার ফাঁক-ফোকরে দিন কাটায়, তবে সুযোগ পেলে দিনে দু’-একবার রোদ পোহায় ও শত্রু পর্যবেক্ষণ করে। বাদলা দিনের সকালে বা বিকালে খাবার ধরার জন্য বের হতে পারে। এরা দিনের প্রহরে দু’-একবার ডাকলেও রাতের প্রায় সব প্রহরেই ডাকে এবং অনেকসময় অন্য পাখিদের সাথেও যোগ দিয়ে ডাকতে পারে।[৩][৪]
দিনের বেলায় এ পেঁচার দর্শন পেলে ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা উঁচু-নিচু করলে ওরাও সুন্দর ভঙ্গিতে ওদের মাথা উঁচু-নিচু করে। গ্রামের কিশোরদের কাছে এটি এক মজার খেলা। মূলত দর্শনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এরা এমনটা করে।[৪]
খুঁড়ুলে পেঁচা মাংসাশী শিকারী পাখি। ইঁদুর আর ছুঁচো এদের প্রধান শিকার।[৩] এছাড়া খাদ্য তালিকায় আছে উড়ন্ত পোকা, টিকটিকি, বাদুড়, ছোট পাখি ও ছোট স্তন্যপায়ী। এরা মূলত ঠোঁট দিয়ে শিকার করে, ঠোঁট দিয়ে শিকারের ঘাড় ভেঙে দেয়। নখ মৃত শিকার ধরার কাজে ব্যবহার করে। পুরো শিকার একবারে গিলে খায়। শিকারের হজম না হওয়া অংশ, যেমন হাড় ও লোম এরা দলা আকারে উগরে দেয়, ইংরেজিতে একে পেলেট বলে।[৫]
এদের প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। প্রজনন মৌসুমে ছোট মাথা এবং চকচকে লেজ দেখে স্ত্রী পেঁচাকে চেনা যায়। এদের বাসা বাঁধার উপাদানগুলোর মধ্যে থাকে শুকনো পাতা, পালক ও খড়কুটো। একসঙ্গে তিন থেকে চারটি ডিম দেয় কোটরে পেঁচা। গোলাকার ডিমগুলো হয় সাদা রঙের। ২৫ দিনে ডিম ফোটে। ৩০ দিনে ছানাদের গায়ে পালক গজায়।[৪]