সহস্রাব্দ: | |
---|---|
শতাব্দী: |
খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দটি খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রাচীন নিকট প্রাচ্য তে, এটি মধ্যম ব্রোঞ্জ যুগ থেকে অন্ত ব্রোঞ্জ যুগে রূপান্তরকে চিহ্নিত করে। প্রাচীন নিকট প্রাচ্য সংস্কৃতিগুলি ঐতিহাসিক যুগের মধ্যেই আছে: সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে মিশরের মধ্য রাজত্ব (পুনর্মিলনের সময়কাল) এবং ব্যাবিলনিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এই সময় বর্ণমালা বিকাশ লাভ করেছিল। সহস্রাব্দের কেন্দ্রে, একটি নতুন দশার উদ্ভব হয়েছিল। যেটি ছিল মিনোয়ান গ্রীকদের এজিয়ান সাগরের ওপর আধিপত্য এবং হিট্টাইট সাম্রাজ্যের উত্থান। সহস্রাব্দের শেষে দেখা গিয়েছিল ব্রোঞ্জ যুগের পতন হয়ে লৌহ যুগে রূপান্তর।
পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলগুলি তখনও প্রাগৈতিহাসিক যুগে ছিল। পানপাত্র সংস্কৃতি, ইউরোপে ব্রোঞ্জ যুগ নিয়ে এসেছিল, সম্ভবত ইন্দো-ইউরোপীয় অভিপ্রয়াণ এর সাথে যুক্ত। ইন্দো-ইরানীয় অভিপ্রয়াণ ইরানীয় মালভূমি তে পৌঁছেছিল এবং ভারতীয় উপমহাদেশে (বৈদিক ভারতে) রথের ব্যবহার প্রচারিত হয়েছিল।
এই সময় মেসো-আমেরিকা প্রাক-ধ্রুপদি (ওলমেক) যুগে প্রবেশ করে। উত্তর আমেরিকা এই সময় অন্ত প্রত্নতত্ত্ব পর্যায়ে ছিল। সামুদ্রিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে, অস্ট্রোনেশীয়দের অভিপ্রয়াণ মাইক্রোনেশিয়া পৌঁছেছিল। সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় বান্টু সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল।
বিশ্ব জনসংখ্যা অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং সম্ভবত প্রথমবারের জন্য ১০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল[১]
ব্রোঞ্জ যুগ |
---|
↑ নিওলিথিক |
নিকট প্রাচ্য (৩৩০০-১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ভারত (৩০০০-১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ইউরোপ (২৩০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
চীন (২০০০-৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) কোরিয়া (৮০০-৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) |
↓লৌহ যুগ |
খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের (ব্যাবিলন ইত্যাদি) ঘটনার জন্য তারিখের যথাযথতা এবং সমাধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য দয়া করে প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের কালানুক্রম এর নিবন্ধটি দেখুন।
সহস্রাব্দের শেষে যে অরাজক পরিস্থিতি ছিল তা থেকে পুনরুত্থান করতে প্রচুর শক্তি ব্যয় হয়ে যাওয়ায়, তৎকালীন সর্বাধিক শক্তিশালী সভ্যতা, মিশর এবং মেসোপটেমিয়া খুব সাধারণ লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। মিশরের মধ্য রাজত্বে ফারাওয়েরা এবং তাঁদের সমসাময়িক ইমোরাইট উৎসের ব্যাবিলনের রাজারা, অতিরিক্ত অত্যাচার ছাড়াই সুশাসন বলবৎ করেছিলেন। তাঁরা মার্জিত শিল্প এবং স্থাপত্যের প্রতি আনুকূল্য দেখাতেন। আরও পূর্ব দিকে, সিন্ধু সভ্যতা পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সম্ভবত তীব্র, ধ্বংসাত্মক বন্যার ফলে এমন কিছু ঘটেছিল।
মিশর এবং ব্যাবিলনিয়ার সামরিক কৌশলগুলি তখনও পদাতিক সৈন্য ও তাদের সরঞ্জাম গাধার উপর পরিবহনের উপর ভিত্তি করে ছিল। দুর্বল অর্থনীতি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অসুবিধা এই দুইয়ে মিলে, তাদের পরিস্থিতি ছিল ভঙ্গুর। বাহ্যিক শক্তির চাপের মধ্যে দিয়ে তারা চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছিল।
সহস্রাব্দের মাঝামাঝির প্রায় এক শতাব্দী আগে, ইন্দো-ইউরোপীয় আক্রমণকারীদের দল মধ্য এশিয়ার সমতল থেকে এসেছিল এবং পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল। তারা দ্রুতগতিসম্পন্ন দু'চক্রযুক্ত ঘোড়া চালিত রথে চলাফেরা করত, সমতল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই ঘোড়ায় টানা রথ শস্ত্রের একটি ব্যবস্থা হিসেবে বিকশিত হয়েছিল। ধ্রুপদী সভ্যতায় যুদ্ধের এই সরঞ্জামটির কথা জানা ছিল না। মিশর এবং ব্যাবিলনিয়ার পদাতিক সৈন্যরা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে পারেনি: ১৬৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হিক্সোসরা নীলনদের ব-দ্বীপঅঞ্চল এবং ১৫৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হিট্টাইটরা মেসোপটেমিয়ায় ঝড় তুলে দিয়েছিল।
আঞ্চলিক অধিবাসীরা নতুন কৌশলগুলির সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়েছিল, এবং এই পরিবর্তনের ফলে একটি নতুন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদিও খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তি আধিপত্যের জন্য নিরলসভাবে প্রতিযোগিতা করছিল, তবুও অনেক অগ্রগতি ঘটেছিল: আড়ম্বরপূর্ণ স্থাপত্য, পোশাকের নতুন ধরন, মৃত্তিকা ফলকের উপর স্বতন্ত্র কূটনৈতিক চিঠিপত্র, অর্থনৈতিক বিনিময়ে নবায়ন ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এবং মিশরের নতুন রাজত্ব মূল বৃহৎ শক্তির ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সময়ের বৃহৎ রাজ্যুগুলির মধ্যে, কেবলমাত্র ব্যাবিলন যুদ্ধে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিল। মূলত এটি বিশ্বের ধর্মীয় এবং বৌদ্ধিক রাজধানী হিসাবে তার নতুন অবস্থানের কারণে যুদ্ধ পরিহার করেছিল।
ব্রোঞ্জ যুগ সভ্যতার শেষদিকে, এই যুগের সমস্ত সামাজিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শিত হয়েছিল: নিম্ন স্তরের নগরায়ন, মন্দির বা রাজপ্রাসাদগুলিকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট শহর, কৃষক ও কারিগরদের মত নিরক্ষর জনগণের সাথে কঠোর শ্রেণী বিচ্ছেদ এবং একটি শক্তিশালী সামরিক অভিজাত শ্রেণী, লেখার এবং শিক্ষার জ্ঞান একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু লিপিকার শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত, এবং সুস্পষ্ট অভিজাত জীবন।
খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শেষের কাছাকাছি, ঘোড়ার পিঠে চড়ে বর্বরদের নতুন আক্রমণ ব্রোঞ্জ যুগকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল, এরপর বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তনের তরঙ্গের মধ্য দিয়ে নূতন সময়ের সূচনা চিহ্নিত হয়েছিল। এছাড়াও এই পরিবর্তনগুলিতে অবদান রেখেছিল সামুদ্রিক জনগণ, ভূমধ্যসাগরীয় জাহাজ আক্রমণকারী হানাদারেরা।
এই সময়কালে নামে পরিচিত বেশিরভাগ লোকই ছিলেন রাজা বা সম্রাট:
একটি ব্যতিক্রম হতে পারে সিনুহে, যে খ্রিষ্টপূর্ব বিংশ শতাব্দীতে একটি মিশরীয় গল্পের নায়ক, যদিও সাধারণ ঐকমত্য তাকে একটি কাল্পনিক চরিত্র হিসাবে বিবেচনা করে।
ইউরোপ সেই সময় পুরোপুরি প্রাগৈতিহাসিক যুগের মধ্যে ছিল; ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ দ্বিতীয় সহস্রাব্দের গোড়ার দিকে ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশ করেছিল।
সাহারার গঠন সম্পূর্ণ হয়েছিল। শুষ্ক সাহারা থেকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার নব্যপ্রস্তরযুগ শুরু হয়েছিল, তা পশ্চিম এবং পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে, যাজকবাদ এবং লোহার ধাতুবিদ্যা বান্টু অভিবাসনের মাধ্যমে মধ্য আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
মিশরীয় ভাষার ইতিহাসে, প্রথম সহস্রাব্দের প্রথম দিকে প্রাচীন মিশরীয় থেকে মধ্য মিশরীয় তে রূপান্তর দেখা গেছে। প্রাচীন মিশরীয় ভাষার সর্বাধিক ব্যবহৃত লিখিত রূপ হিসাবে প্রায়শই (ভুলভাবে) শুধুমাত্র "হায়ারোগ্লিফ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
প্রাচীনতম প্রত্যয়িত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা, হিট্টাইট ভাষা, খ্রিষ্টপূর্ব ১৬শ শতাব্দীতে কিউনিফর্মে প্রথম উপস্থাপিত হয়েছিল (অ্যানিট্টা অক্ষর), এরপর খ্রিষ্টপূর্ব ১৩শ শতাব্দীতে এটি অদৃশ্য হয়ে যায়। হিট্টাইট ভাষা ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার বিলুপ্ত আনাতোলীয় শাখার সর্বাধিক জ্ঞাত এবং সর্বাধিক অধ্যয়নিত ভাষা।
প্রথম উত্তর-পশ্চিম সেমেটিক ভাষা, উগারিটিক, খ্রিষ্টপূর্ব ১৪শ শতাব্দীতে প্রত্যয়িত। মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ থেকে তৈরি প্রথম সম্পূর্ণ স্বরবিষয়ক লিপি প্রাক-সিনেটিক লিপি, খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দের মধ্যে ফিনিশীয় লিপি হয়ে উঠছিল। ফিনিশীয় বর্ণমালাটি ফিনিশীয় সামুদ্রিক ব্যবসায়ীরা ভূমধ্যসাগর জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং বিশ্বের অন্যতম বহুল ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছিল, এবং এটি কার্যত সমস্ত বর্ণমালা লেখার পদ্ধতির উৎস। ফিনিশীয় ভাষা প্রথম কনান ভাষায়, কনান অঞ্চলের প্রাচীন লোকদের দ্বারা কথিত উত্তর-পশ্চিম সেমেটিক ভাষা: ইস্রায়েলীয়, ফিনিশীয়, ইমোরাইটীয়, অ্যামোনীয়, মোয়াবীয় এবং ইডোমাইটীয়
মাইসিনিয়ান গ্রিক, যেটি গ্রিক ভাষার প্রাচীনতম প্রমাণিত রূপ, সেটি মাইসিনিয়ান যুগে, গ্রীক মূল ভূখণ্ড, ক্রিট এবং সাইপ্রাসে ব্যবহৃত হত।