গঙ্গাদেবী, যিনি গঙ্গাম্বিকা নামেও পরিচিত ছিলেন, তিনি বর্তমান ভারতের বিজয়নগর সাম্রাজ্যের চতুর্দশ শতকের রাজকুমারী এবং সংস্কৃত ভাষার কবি ছিলেন। তিনি বিজয়নগরের রাজা কুমার কাম্পানার পত্নী ছিলেন। কুমার ছিলেন প্রথম বুক্কা রায়ের (আনুমানিক ১৩৬০ এর দশক - ১৩৭০ এর দশক) পুত্র।[১] তিনি ১৩৬১ খ্রিস্টাব্দে মাদুরাইয়ের শম্বুভারায় এবং সুলতানকে জয় করেন এবং এর মাধ্যমে সমগ্র তামিল দেশকে রামেশ্বরম পর্যন্ত বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন।[২] গঙ্গাদেবী এই যুদ্ধের পর তাঁর স্বামীর বিজয়গাথা বর্ণনা করে সংস্কৃত ভাষায় একটি কবিতা লিখেছিলেন, যার নাম মধুরা বিজয়ম। বইয়ের শুরুতে কবিদের প্রশস্তি করে, তিনি তেলুগু ভাষী সংস্কৃত কবি যেমন অগস্ত্য, গঙ্গাধর এবং বিশ্বনাথকে যথেষ্ট প্রাধান্য দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে সর্বশেষ জন ছিলেন তাঁর গুরু। তাঁর বিশেষ প্রশস্তি ছিল কবি তিক্কায়ার উদ্দেশ্যে,- “যাঁর কবিতা চাঁদের আলোর মতো, চকোর পাখির মতো তৃষ্ণার্ত কবিরা মুগ্ধতায় মাতাল”। এই তিক্কায়া হলেন বিখ্যাত তিক্কন সোমায়াজি, যিনি তেলুগু মহাভারতের আঠারোটি পার্বণের মধ্যে পনেরটির লেখক। এটি স্পষ্ট যে বিশ্বনাথের শিষ্য এবং তিক্কানা সোমায়াজির কবিতার অনুরাগী গঙ্গাদেবী ছিলেন একজন তেলুগু রাজকন্যা।[২]
গঙ্গাদেবী ছিলেন সুশিক্ষিত এবং মেধাবী নারী। তাঁকে তেলুগু রাজকন্যা বলে মনে করা হয়। তিনি কবি ছিলেন। তিনি তাঁর স্বামী কুমার কাম্পান্নার দক্ষিণ অভিযানের সময় তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন।[২] লেখালেখির পাশাপাশি, তিনি তাঁর স্বামীর সাথে যুদ্ধ যাত্রা করেছিলেন এবং অন্যান্য মহিলাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন৷[৩]
"মধুরা বিজয়ম" এর শুরুতে, গঙ্গাদেবী তেলুগু-ভাষী অঞ্চলের বেশ কিছু সংস্কৃত কবির প্রশংসা করেন, এবং বিশেষ করে তিনি প্রশংসা করেছিলেন তিক্কায়ার। ইনি ছিলেন "অন্ধ্র মহাভারতমের" লেখক তিক্কন। এটি তাঁর তেলুগু বংশের একটি শক্তিশালী প্রমাণ বলে মনে করা হয়।[৪]
গঙ্গাদেবী মাদুরাইয়ে মুসলিমদের উপর তাঁর স্বামীর বিজয়ের কাহিনী একটি কবিতার আকারে বর্ণনা করেছেন।[৩] নয়টি অধ্যায় সম্বলিত এই কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম ছিল মধুরা বিজয়ম, যার অর্থ "মাদুরাইয়ের বিজয়"। এটি বীরকাম্পরায় চরিত্রম নামেও পরিচিত।[৩][৫][৬] এটি যুদ্ধে তাঁর স্বামীর বীরত্বপূর্ণ গাথার এক বর্ণনা।
মধুরা বিজয়ম একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য, এটিতে তামিল দেশে কুমার কাম্পানার বিজয় বর্ণনা করে হয়েছে। বিজয়নগর আদি ইতিহাসের উৎস বই হিসেবে এর মূল্যায়ন সহজে করা যায় না। কবি হিসেবে গঙ্গাদেবী উচ্চ মর্যাদার অধিকারী; তিনি সম্ভবত দক্ষিণ ভারতের নারী লেখকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ যিনি সংস্কৃতকে অভিব্যক্তির প্রকাশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।[২]
এই বইয়ের নথি আবিষ্কারের পর, শ্রীরঙ্গমের শ্রী কৃষ্ণমাচার্য এর একটি তামিল সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন এবং তারপরে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫০ সালে একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেছিল।[৩]