ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | টমাস গডফ্রে ইভান্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ফিঞ্চলে, মিডলসেক্স, ইংল্যান্ড | ১৮ আগস্ট ১৯২০|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৩ মে ১৯৯৯ নর্দাম্পটন, নর্দাম্পটনশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৮)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | গডার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি লেগ ব্রেক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৩১৫) | ১৭ আগস্ট ১৯৪৬ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২০ জুন ১৯৫৯ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩৯ - ১৯৬৭ | কেন্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৯ আগস্ট ২০১৭ |
টমাস গডফ্রে ইভান্স, (ইংরেজি: Godfrey Evans; জন্ম: ১৮ আগস্ট, ১৯২০ - মৃত্যু: ৩ মে, ১৯৯৯) মিডলসেক্সের ফিঞ্চলে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯ সময়কালের মধ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ‘গডার্স’ ডাকনামে পরিচিত গডফ্রে ইভান্স। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার সম্বন্ধে উইজডেন মন্তব্য করে যে, নিঃসন্দেহে তিনি ক্রিকেট খেলার সর্বশ্রেষ্ঠ উইকেট-রক্ষক ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে ৯১ টেস্টে অংশ নিয়ে ২১৯টি ডিসমিসাল ঘটান। এছাড়াও, সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০৬৬টি ডিসমিসাল ঘটিয়েছেন। প্রথম উইকেট-রক্ষক হিসেবে ২০০ টেস্ট ডিসমিসাল, প্রথম ইংরেজ ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০ রান ও ১০০ ডিসমিসাল এবং ২০০০ রান ও ২০০ ডিসমিসাল ঘটিয়েছেন। ১৯৫১ সালে তিনি উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন।
কিশোর অবস্থাতেই গডফ্রে ইভান্স সর্বক্রীড়ায় পারদর্শী ছিলেন। ক্যান্টারবারির কেন্ট কলেজে অধ্যয়নকালীন ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবেও তার সুনাম ছিল। শৌখিন ও পেশাদারী পর্যায়ের খেলাগুলোর সবকটিতেই জয়ী হন। তবে, ১৭ বছর বয়সে কেন্ট কর্তৃপক্ষ তাকে ক্রিকেট ও মুষ্টিযুদ্ধ - এ দুটির যে-কোন একটিকে বেছে নিতে বলেন।[১] ১৯৩৭ সালে ডোভারে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেন ও মাঝে-মধ্যেই স্কোরবোর্ড পরিচালনা করতেন। তন্মধ্যে, কেন্ট মাত্র ৭১ মিনিটে ২১৯ রানের সংগ্রহটি উল্লেখযোগ্য ছিল যাতে গ্লুচেস্টারশায়ার পরাজিত হয়েছিল।[২]
২২ জুলাই, ১৯৩৯ তারিখে কেন্টের পক্ষে অভিষেক ঘটে তার। ব্ল্যাকহিথে সারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তিনি মাত্র ৮ রান তুলেন। তাস্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রয়্যাল আর্মি সার্ভিস কোরে যোগ দেন। বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবন বিঘ্নিত হলেও যুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ সালের প্রথম মৌসুমেই দূর্দান্ত সূচনা করেন। ফলশ্রুতিতে টেস্ট দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[৩]
১৯৪৬ সালে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে ইভান্সের টেস্ট অভিষেক ঘটে। ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে পল গিবের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে, বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ টেস্টে তিনি ব্যাট হাতে কিংবা কোন আউটের সাথে জড়িত হতে পারেননি।[৪]
১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। প্রথম টেস্টে গিবের অংশগ্রহণের পর মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ পান ইভান্স। প্রথম ইনিংসে ৬৫৯/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। ১৭৩ ওভারের ইংরেজ বোলিং আক্রমণে ইভান্স কোন বাই রান দেননি।[৫] উইজডেনের ভাষায় তিনি উইকেট-রক্ষণে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। অ্যাডিলেডের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দল ৩৬৫ রান তুললেও কোন বাই রান দেননি। ১,০০০ রানের পর অ্যাশেজ টেস্টে প্রথম বাই রান দেন তিনি।[৬] অ্যাডিলেডের চতুর্থ টেস্টের নবম উইকেট জুটিতে ডেনিস কম্পটনের সাথে মূল্যবান জুটি গড়েন। ২৫৫/৮ তুলে ইংল্যান্ড সমূহ পরাজয়ের মুখোমুখি হলে ইভান্স রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় ১৩৩ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে অপরাজিত থাকেন ১০* রানে। এরফলে কম্পটন খেলায় দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার সুযোগ পান ও হ্যামন্ডের ইনিংস ঘোষণার সুযোগ এনে দেয়। ইভান্স তার প্রথম রানের জন্য ৯৭ মিনিট অপেক্ষা করেন ও টেস্ট রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে জিওফ অ্যালট তার এ রেকর্ড ভঙ্গ করেন।[৭]
অ্যাশেজ সিরিজের পর নিউজিল্যান্ডে স্বল্পকালের জন্য ইংল্যান্ড দল আসে। একমাত্র টেস্টটি বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়। তবে, ওতাগো দলের বিপক্ষে এমসিসি দলের প্রস্তুতিমূলক খেলায় ইভান্স তার প্রথম প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি করে বসেন। জ্যাক ইকিনের সাথে ১৭০ রানের জুটি গড়লেও তিনিই করেন ১০১ রান।[৮]
১৯৪৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ইংল্যান্ড সফরে আসে। পাঁচ টেস্টের সিরিজে সবকটি টেস্টে অংশ নেন। ৪১.৮০ গড়ে ২০৯ রান তোলার পাশাপাশি ১৪টি ডিসমিসাল ঘটান।[৯] ট্রেন্ট ব্রিজের প্রথম টেস্টে ১৪ চারের মারে ৭৪ রানের প্রথম অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। ওভালের পঞ্চম টেস্টে ৪৫ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইনিংস ডিক্লেয়ারের জন্য দ্রুতগতিতে ২৯ মিনিটে অপরাজিত ৩৯* রান তুলেন।[১০]
জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায় ইংল্যান্ড দল। প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক হিসেবে চার টেস্টের প্রত্যেকটিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৮.২৮ গড়ে ১২৮ রানের পাশাপাশি সাতটি ডিসমিসাল ঘটান।[১১] সিরিজে তার অবদান সম্পর্কে উইজডেন মন্তব্য করে যে, দর্শনীয় উইকেট-রক্ষণে স্থানীয় দর্শকেরা বেশ আনন্দ লাভ করলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি খুব কমই সাফল্য লাভ করেছেন।[১২]
১৯৪৮ সালের অ্যাশেজ সিরিজে আরও একবার তার সপ্রতিভ অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। ২৬.৮৫ গড়ে ১৮৮ রান করেন এবং ১২টি ডিসমিসালে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন।[১১] সিরিজে তার উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল দুইটি স্ট্যাম্পিং হাতছাড়া করা, যাতে অস্ট্রেলিয়া দল সফলভাবে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমর্থ হয়। হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে ৪০৪ রান তুলে নতুন রেকর্ড জন্ম দেয় অস্ট্রেলিয়া দল। ৩২ রানে থাকাবস্থায় আর্থার মরিসকে প্রথম সুযোগ দেন যিনি পরবর্তীতে ১৮২ রান তুলেন। দ্বিতীয় সুযোগটি আসে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে ১০৮ রানের মাথায় স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করা। পরবর্তীতে ব্র্যাডম্যান ১৭৩* রানে অপরাজিত থাকেন।[১৩]
ধারাবাহিকভাবে ২২ টেস্ট খেলার পর ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাকে বাদ দেয়া হয় যা ঐ সময়কার উইকেট-রক্ষক হিসেবে রেকর্ড ছিল।[১৪] প্রথম তিন টেস্টে অংশ নিলেও পাঁচ ইনিংসে ৪৯ রান রান তোলায় শেষ দুই টেস্টে বিলি গ্রিফিথকে দলে রাখা হয়। তবে, ১৯৪৯ সালে নিজ দেশে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্য তাকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। চার টেস্টে গড়া সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে ড্র হয়। চার ইনিংসে তিনি ৬১ রান তুলেন ও ১২ ডিসমিসাল ঘটান।[১১]
১৯৫০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইংল্যান্ডে আসে। ওল্ড ট্রাফোর্ডের প্রথম টেস্টে ইভান্স তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৮৮/৫ থাকাবস্থায় তিনি মাঠে নামেন। ট্রেভর বেইলি'র সাথে জুটি গড়ে ইনিংসকে দাঁড় করান। তারা উভয়েই ১৬১ রানের জুটি গড়েন। ১৭ চারের সহযোগিতায় ১০৪ রান তুলেন। উইজডেন এ সেঞ্চুরিকে শক্তভাবে কোন সুযোগ না দিয়ে অস্বীকার করে দাঁড় করান।[১৫] তৃতীয় টেস্টে অর্ধ-শতক করেন। ৮৩ বলে তিনি ৬৮ রান তুলেন। দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর উইকেট-রক্ষণে এগিয়ে আসেন ও কেবলমাত্র দুইটি বাই রান দেন। তাস্বত্ত্বেও প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ৫৫৮ রান তুলে। খেলায় ইংল্যান্ড ১০ উইকেটে পরাজিত হয় যা উপর্যুপরি দ্বিতীয় পরাজয় ছিল।[১৬] বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাতের কারণে চতুর্থ টেস্টে খেলতে পারেননি। তার পরিবর্তে আর্থার ম্যাকইনটায়ার মাঠে নামেন এবং ৪ ও ০ রান তুললে ইংল্যান্ড ইনিংসের ব্যবধানে পরাজিত হবার পাশাপাশি ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত হয়।[১৭]
ইভান্স বড় মাপের উইকেট-রক্ষক ছিলেন। এ সফরেই তিনি বিশ্বের অবিসংবাদিত উইকেট-রক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডে ডন টলনের পর তাঁর তুলনায় অন্য উইকেট-রক্ষককে আর দেখিনি। কিন্তু সেদিন পার হয়েছে। ইভান্স বর্তমানে বিশ্বের সেরা উইকেট-রক্ষক। – বিল ও’রিলি[১৮]
১৯৫০-৫১ মৌসুমে ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সফরের জন্য রাখা হলেও ম্যাকইনটায়ারকে প্রথম একাদশে প্রথম টেস্টের জন্য ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় রাখা হয়। ব্রিসবেন টেস্টে ইভান্স দর্শনীয় ক্যাচ নেন। প্রথমটি অ্যালেক বেডসারের বলে নীল হার্ভে লেগ গ্ল্যান্স করলে তিনি দ্রুততার সাথে লেগ সাইডে নিয়ে নেন। নেভিল কারদাসের অভিমত, তিনি এমনভাবে ক্যাচ নিয়েছেন যেন খুবই সহজ ছিল বিষয়টি।[১৯] দ্বিতীয় ডিসমিসালটি ফ্রেডি ব্রাউনের বলে স্যাম লক্সটন কাট করতে চাইলে ইভান্সের গ্লাভসে লেগে সামনে চলে যায় ও মাঠে স্পর্শ করার ইঞ্চি খানেক উঁচু থেকে ডাইভের মাধ্যমে লুফে নেন তিনি।[২০] মেলবোর্নের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে সংগৃহীত ১৯৪ রানের জবাবে ইংল্যান্ড ১২৬/৭ করাবস্থায় নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯ রান তুলে দলকে এগিয়ে দেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড ১৭৯ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছুতে পারেনি।[২১] অস্ট্রেলিয়া পরবর্তী দুই টেস্টে জয় পেয়ে মেলবোর্নে পঞ্চম ও সর্বশেষ টেস্টে জয় পেয়ে হোয়াইটওয়াশের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু ইংল্যান্ড আট উইকেটের জয় তুলে তাদের স্বপ্নে জল ঢেলে দেয়। চতুদর্শবারের চেষ্টার পর ইভান্স প্রথমবারের মতো অ্যাশেজ টেস্টে বিজয়ী দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান।[২২] এছাড়াও, বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে প্রথমবারের মতো ২৬তম টেস্টে পরাজিত হয় অস্ট্রেলিয়া দল।[২৩]
এ সফরের পর দুই টেস্ট খেলার জন্য নিউজিল্যান্ড গমন করে ইংল্যান্ড দল। ইভান্স উভয় খেলায় অংশ নেন। তবে, ওয়েলিংটনের দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের ১৮৯ রানের মধ্যে তিনি ৩০টি বাই রান দেন।[২৪] এটিই যে-কোন টেস্ট ইনিংসে তিনি সবচেয়ে বেশি বাই রান দেন।[২৫]
১৯৫১ সালের শুরুতে ইভান্সকে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত করা হয়। ১৯৫০ সালের সাফল্যের প্রেক্ষিতে তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তার সাথে অন্য চার হচ্ছেন - সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিজয়ী সদস্য সনি রামাদিন, আল্ফ ভ্যালেন্টাইন, এভারটন উইকস ও ফ্রাঙ্ক ওরেল।[২৬]
১৯৫১ সালে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনিও অত্যন্ত দূর্বলমানের খেলা প্রদর্শন করেছেন। ফলশ্রুতিতে সিরিজের সর্বশেষ দুই টেস্টে দল থেকে বাদ পড়েন। প্রথম তিন টেস্টে তিনি মাত্র সাত রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তার স্বভাবজাত মানের সাথে একেবারেই বেমানান ছিল তার উইকেট-রক্ষণ। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯১ রান তুললেও তিনি ১৩ বাই দেন।[২৭]
ঐ বছরের শীতকালে এমসিসি এ দল ভারত সফরে যায় ও ইভান্সকে দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তিনি এ সফরের যেতে অস্বীকার করেন। এরফলে পরবর্তী পাঁচ বছর দল থেকে বাদ পড়েন বলে ধারণা করা হয়।
পরের বছর ১৯৫২ সালে ইভান্স ভারতের বিপক্ষে খেলেন। নিজ দেশে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে লিডসে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ইভান্স ৯৭ মিনিট ব্যাটিং করে ৬৬ রান তুলেন। যখন তিনি ব্যাটিংয়ে নামেন তখন ভারতের ২৯৩ রানের জবাবে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১৮২/৫। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই ভারতের সংগ্রহ ০/৪ হলে ইংল্যান্ড সাত উইকেটে জয়লাভে সক্ষম হয়।[২৮] লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে ইভান্স ব্যাট ও গ্লাভস হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ভারতের প্রথম ইনিংসে ইভান্স স্লিপের দিকে চলে যাওয়া বলে চমৎকার স্ট্যাম্পিং করেন।[২৯] এ আউটের মাধ্যমেই ইভান্স শততম টেস্টে পদার্পণ করেন যা ইংল্যান্ডে উইকেট-রক্ষক হিসেবে প্রথম। বার্ট ওল্ডফিল্ডের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকেন।[৩০] জবাবে ইংল্যান্ডের ইনিংসে ইভান্স তার দ্বিতীয় টেস্ট শতক করেন। ১৬ বাউন্ডারি সহযোগে ১৩৫ মিনিটে ১০৪ রান তুলেন। তার রান তোলার গড় খুবই দ্রুততর ছিল যা ঐ অধিবেশনে প্রায় ১০০ রানের কাছাকাছি। মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বেই তিনি অপরাজিত ৯৮ রানে ছিলেন। ষষ্ঠ উইকেটে টম গ্রেভেনি'র সাথে জুটি গড়ে দ্রুতলয়ে দলকে ৩০২ রানের ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনু মানকড়ের ১৮৪ রান স্বত্ত্বেও ইংল্যান্ড আট উইকেটে জয় পায়।[৩১]
ওল্ড ট্রাফোর্ডের তৃতীয় টেস্টেও ইভান্স তার ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় ইনিংসেও ৫০ রানের কোটা অতিক্রম করেন। এবারেও তিনি দ্রুতলয়ে রান তুলেন ৭৮ মিনিটে ৭১ রান। অন্যান্য ইংরেজ ব্যাটসম্যানেরা মাত্র ৮৪ রান তুলেন। ভারতকে ৫৮ ও ৮২ রানে গুটিয়ে দিয়ে খেলা ও সিরিজ জয় করে ইংল্যান্ড দল।[৩২] ওভালের চতুর্থ টেস্টে বৃষ্টিবিঘ্নিত হওয়ায় টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়। ৬০.৫০ গড়ে ইভান্স ২৪২ রান তুলেন ও আটটি ডিসমিসাল ঘটান।[১১]
১৯৫৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে ট্রেভর বেইলি'র বোলিংয়ে দুইটি ক্যাচ নেন। ফলশ্রুতিতে অস্ট্রেলিয়া ২৩৭/৩ থেকে ২৪৭ রানে অল-আউট হয়। ইংল্যান্ডের ইনিংসে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি আট রান তোলেন। তবে, শেষ দুই দিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[৩৩] লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টও ড্র হয়। চূড়ান্ত দিন ২০/৩ নিয়ে ইংল্যান্ড খেলা শুরু করে। তবে, দিনে তারা আরও চার উইকেট খরচ করলে ড্রয়ে পরিণত হয়। খেলা শেষ হবার পঁয়ষট্টি মিনিট পূর্বে ষষ্ঠ উইকেটের পতনের পর ইভান্স মাঠে নামেন। ফ্রেডি ব্রাউনকে সাথে নিয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলেন ও ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।[৩৪]
ওল্ড ট্রাফোর্ডের তৃতীয় টেস্টও একই ধারায় অগ্রসর হয়। চতুর্থ দিনে বৃষ্টি নামলে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। তবে, ইভান্সের জন্য খেলাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে তিনি তিনটি ডিসমিসাল ঘটান। তবে, শুরুর দিকে নীল হার্ভে ও অ্যালান ডেভিডসনের সুযোগ হাতছাড়া করেন।[৩৫] ৫২ রানে থাকাবস্থায় হার্ভে তার সংগ্রহকে ১২২-এ নিয়ে যান।[১৯] ইংল্যান্ডে ইনিংসে ইভান্স ৩৯ মিনিটে অপরাজিত ৪৪ রান তুলেন খুবই দ্রুতলয়ে। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি তিনটি ডিসমিসাল ঘটান ও ৩৫/৮-এ নিয়ে যান।[৩৬] লিডসে আরও বৃষ্টি নামে ও ইংল্যান্ড প্রতিরক্ষামূলক ব্যাটিংয়ে অগ্রসর হয় ও সিরিজের চতুর্থ ড্রয়ে নিয়ে যায়। ১০৯.৪ ওভার ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড মাত্র ১৬৭ রান তুলে। তন্মধ্যে ইভান্স ৯০ মিনিটে তুলেন ২৫ রান। এ ইনিংসে তিনজন ইংরেজ খেলোয়াড় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তন্মধ্যে তৃতীয়জন ছিলেন বেইলি। ইভান্সের সাথে ধাক্কা লেগে তার হাঁটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ৯৯ রানে পিছিয়ে থেকে ইংল্যান্ড দল ১৭৭.৩ ওভার খরচ করে ২৭৫ রান যোগ করে। চূড়ান্ত দিন বেইলি চার ঘণ্টার অধিক সময় ক্রিজে অবস্থান করে বিদায় নেন। এক ঘণ্টা ও পঞ্চান্ন মিনিট সময় পেয়ে অস্ট্রেলিয়া ১৭৭ রানে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামে। তবে ৩০ রানের পার্থক্য নিয়ে খেলাটি শেষ হয়।[৩৭]
চার ড্রয়ের পর পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে ওভালে সিরিজ নির্ধারণী খেলায় অগ্রসর হয়। সিরিজে পঞ্চমবারের মতো টসে জয়লাভ করে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নামে ও ২৭৫ রান তুলে। ইভান্স চার ক্যাচ নেয়। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩১ রানে এগিয়ে যায়। ইভান্স ২৮ রান তুলেন। রে লিন্ডওয়ালের ওভারে দুইবার হুকে চারের মার মারেন তিনি।[৩৮] তৃতীয় দিনে ইংল্যান্ড খেলার নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। টনি লক ও জিম লেকারের স্পিনের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানেরা ও ১৬২ রানে গুটিয়ে যায়। ইংল্যান্ড আট উইকেটে জয়ের পাশাপাশি ১৯৩৪ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে অ্যাশেজ সিরিজও করায়ত্ত্ব করে। ইভান্স এ সিরিজে ১১৭ রান তুলেন ২৩.৪০ গড়ে ও ১৬ ডিসমিসাল ঘটান।[১১]
১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায়। প্রথম দুই টেস্টে পরাজিত হলেও তৃতীয় ও পঞ্চম টেস্টে জয় পেয়ে ইংল্যান্ড দল ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্রয়ে সক্ষমতা দেখায়।[৩৯] আঘাতের কারণে ইভান্স চতুর্থ টেস্ট খেলতে পারেননি ও ডিক স্পুনার তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। তবে, পঞ্চম টেস্টে খেলতে নেমে ইভান্স তার খেলোয়াড়ী জীবনের দীর্ঘতম ইনিংস উপহার দেন। ১৪২ মিনিট মাঠে থেকে ২৮ রান তুলেন তিনি। লেন হাটনের সাথে জুটি করেন ১০৮ রানের। হাটনের দ্বি-শতরানের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড এগিয়ে যায়।[৪০] এ সিরিজে ইভান্স ৭২ রান করেন ১২.০০ গড়ে ও ছয়টি ডিসমিসাল ঘটান।[১১]
১৯৫৪ সালে পাকিস্তান দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। দুই বছর পূর্বেকার সদস্যদের নিয়ে ওভালের চূড়ান্ত টেস্টে জয়ী হয়ে বিস্ময় উপহার দেয় ও সিরিজ ড্র করেছিল দলটি।[৪১] ভেজা গ্রীষ্মের চার টেস্টে সবকটিই বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়। ইভান্স প্রথম ও তৃতীয় টেস্টে যথাক্রমে ২৫ ও ৩১ রানের সর্বোচ্চ রানগুলো সংগ্রহ করেন। উভয় টেস্টই ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। চতুর্থ টেস্টে ট্রেভর বেইলিকে বাদ দিয়ে ছয় নম্বরে তাকে ব্যাটিংয়ে নামানো হয় ও পাঁচজন বোলিংয়ে অভিজ্ঞদের রাখা হয়। কিন্তু মাত্র ১৬৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইংল্যান্ড দল ব্যর্থ হয়। উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, ইংল্যান্ড তাদের নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের উপর নির্ভরশীলতা এখনো প্রমাণিত হয়নি।[৪২] ইভান্স উভয় ইনিংসে ০ ও ৩ রান তুললেও তিনটি ক্যাচ নেন ও ডিসমিসালের দিক দিয়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। আব্দুল কারদারের ক্যাচ নিয়ে টেস্টে তিনি ১৩১তম ডিসমিসাল ঘটান যা বার্ট ওল্ডফিল্ডের গড়া পূর্বেকার ১৩০ ডিসমিসাল ম্লান হয়ে যায়।[৪২][৪৩]
১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফরে যান ইভান্স। সৌরস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া প্রথম টেস্টে অংশ নিতে পারেননি তিনি। ফলশ্রুতিতে, তার বিকল্প হিসেবে দলে রাখা কিথ অ্যান্ড্রু’র টেস্ট অভিষেক ঘটে।[৪৪] দ্বিতীয় টেস্টে দলে ফিরলেও ব্যাট হাতে তিনি কেবলমাত্র তিন ও চার রান তুলেছিলেন।[৪৫] মেলবোর্নের তৃতীয় টেস্টে কিছু মূল্যবান রান সংগ্রহ করেন। প্রথম ইনিংসে ২০ রান করেন ও ষষ্ঠ উইকেটে কলিন কাউড্রের সাথে ৫৪ রানের জুটি গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২২ রান। খেলায় তিনি পাঁচটি ক্যাচ নেন। তন্মধ্যে, লেগ সাইডে নীল হার্ভের ক্যাচটি স্মরণীয় ছিল যাতে অস্ট্রেলিয়ার সংগৃহীত ৭৭/২ থেকে ১১১ রানে অল-আউট হয়ে যায়।[৪৬] নেভিল কারদাস ক্যাচটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, হার্ভে সকালের অধিবেশনে ফ্রাঙ্ক টাইসনের সপ্তম বলে আলতো ছোঁয়ায় এক প্রান্তে প্রেরণের চেষ্টা চালালে ইভান্স সর্বশক্তি দিয়ে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্লাভসে নিয়ে নেন।[১৯] চতুর্থ টেস্টে ইভান্স সিরিজে তার সর্বোচ্চ রান তুলেন ৩৭ রান যা ৩৬ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে। ট্রেভর বেইলির সাথে ৫১ রানের জুটি গড়েন। খেলায় উপর্যুপরি দ্বিতীয়বারের মতো ১১১ রান দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দল সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। খেলায় ইংল্যান্ডের জয়ে লক্ষ্যমাত্রা ৯০ রানের। ইভান্স যখন মাঠে নামেন তথকন ইংল্যান্ডের দরকার পড়ে মাত্র চার রানের। বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় এনে দেন ও অ্যাশেজ অক্ষত রাখেন।[৪৭] পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টটি প্রবল বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়। নিউ সাউথ ওয়েলসের ঐ ভারি বৃষ্টিপাতে হান্টার ভ্যালিতে বন্যার সূত্রপাত ঘটায়।[৪৮] চতুর্থ দিনের পূর্ব পর্যন্ত খেলা না হওয়ায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। ইংল্যান্ডের ইনিংসটিতে ইভান্স ১০ রান তুলেন ও দুই ক্যাচ নেন।[৪৯]
চার টেস্টে অংশ নিয়ে ইভান্স ১০২ রান তুলেন ও ১৩ ক্যাচ নেন।[১১] উইজডেন ইভান্সের উচ্ছসিত প্রশংসা করে। মন্তব্য করে যে, সর্বদাই তিনি উজ্জ্বীবনী শক্তি হিসেবে গরমের মধ্যে অংশ নিয়েছেন। তিনি দলের উদ্দীপনা যোগান বিশেষ করে বোলারদেরকে।[৫০]
অ্যাশেজের পর নিউজিল্যান্ডে দুই টেস্টের সিরিজে খেলতে যান। তবে সফরে ইভান্স ব্যাট হাতে দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। উভয় টেস্টেই শূন্য রান তুলেন।[৫১] টেস্টের বিরতীতে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায়ও তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। সেখানেও তিনি এক রান ও শূন্য রানের দেখা পান।[৫২]
১৯৫৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ টেস্টের সিরিজে খেলতে আসে। প্রথম তিন খেলায় অংশ নিলেও শেষ দুই টেস্টে আঘাতের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। ট্রেন্ট ব্রিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড দল ইনিংসের ব্যবধানে জয় পায়। ইংল্যান্ডের ইনিংসে ১২ রান ও দুই ক্যাচ নিয়ে অবদান রাখেন। তন্মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাচটি তার ১৫০তম টেস্ট ডিসমিসাল ছিল।[৫৩] লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে সাতটি ডিসমিসাল নেন যা তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের রেকর্ড ছিল।[৫৪] ১৭১ রানে পিছিয়ে থেকে ইংল্যান্ড দল জয় পায়। তৃতীয় টেস্ট চলাকালে ইভান্সের ডানহাতের কনিষ্ঠায় দুই জায়গায় ফাটল ধরে।[৫৫] তার অনুপস্থিতিতে টম গ্রাভেনি উইকেট-রক্ষণে সহায়তা করেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে হাতে প্লাস্টার নিয়েও এগারো নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন ও সাত বাউন্ডারি সহযোগে ৩৬ রান তুলেন।[৫৬] এরফলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ থেকে ১৪৫-এ নিয়ে যান। তবে, সফরকারী দল তিন উইকেট হাতে রেখেই জয়ের সন্ধান পায়।[৫৭]
অস্ট্রেলিয়া ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায়। ইভান্সের উপস্থিতিতে ইংল্যান্ড দল ২-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়লাভে সক্ষম হয়।[৫৮] ১৯.১৬ গড়ে ১১৫ রান তুলেন তিনি। তবে, সাত ইনিংসের তিনটিতেই শূন্য রান পান।[৫৯] ওল্ড ট্রাফোর্ডের চতুর্থ টেস্টে তার সর্বোচ্চ রান আসে ৪৭। ২৯ মিনিটের ঐ ইনিংসটিতে পাঁচটি চার ও দুইটি ছক্কা ছিল। খেলায় জয়লাভ করে অ্যাশেজ অক্ষত রাখতে সমর্থ হয় ইংল্যান্ড দল। এতে জিম লেকারের ১৯ উইকেট লাভের অবিস্মরণীয় অবদান ছিল।[৬০] সিরিজে নয়টি ডিসমিসাল লাভ করলেও দ্বিতীয় টেস্টেই ইভান্স করেছিলেন সাতটি।[৫৯]
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। সিরিজের পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই অংশ নেন ও সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে ড্র হয়।[৬১] দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৬২ রান তুলেন। ষষ্ঠ উইকেটে কলিন কাউড্রের সাথে ৯৩ রানের জুটি গড়েন যা খেলায় ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল।[৬২] ১৯৫২ সালের পর এটিই ইভান্সের পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস ছিল।[১১] চার রানের সময় তিনি ২,০০০ টেস্ট রানে পৌঁছেন।[৬৩] লেস অ্যামিসের পর দ্বিতীয় উইকেট-রক্ষক হিসেবে এ মাইলফলকে পৌঁছেন তিনি।[৬৪] ২-১ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে থাকা স্বত্ত্বেও পোর্ট এলিজাবেথের বিতর্কিত চূড়ান্ত টেস্টে পরাজয়বরণ করে ইংল্যান্ড দল। মাত্র তিন মাস পূর্বে পুণনির্মিত পিচটি বেশ ধীরগতির ছিল ও বল বেশ নিচের দিকে চলে যেতো বলে উইজডেন মন্তব্য করে।[৬৫] খেলায় রান তোলার হার ছিল মাত্র ১.৪০ যা টেস্টের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।[৬৬] দ্বিতীয় ইনিংসে ইভান্স তুলেন ২১ রান। কিন্তু সফরকারী দল তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার ৫৮ রান পূর্বেই ইনিংস গুটিয়ে ফেলে। খেলায় তিনি ছয় ক্যাচ নেন ও কঠিন পরিবেশেও তিনি মাত্র একটি বাই রান দেন। উইজডেন মন্তব্য করে যে, অসাধারণ ব্যক্তির অসাধারণ অবদান ছিল এখানে।[৬৫] সিরিজে ইভান্স সর্বমোট ২০ ডিসমিসাল ঘটান, যা তার খেলোয়াড়ী জীবনের রেকর্ড।[১১]
১৯৫৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলার জন্য ইংল্যান্ডে আসে। তবে ইংল্যান্ড একচ্ছত্র প্রভাববিস্তার করে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী হয় যার সবকটিই ইনিংসের ব্যবধানে ছিল। ড্র হওয়া দুইটি খেলায়ও তারা ভালো অবস্থানে ছিল।[৬৭] পাঁচ টেস্টের সবগুলোতেই ইভান্সের উপস্থিতি ছিল। ২০১ রানের পাশাপাশি ১৫ ডিসমিসাল ঘটান তিনি।[১১] লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে ১১৫ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে তিনি ৮২ রান তুলেন। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে কলিন কাউড্রের সাথে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১১৫ মিনিটে ১৭৪ রান সংগ্রহ করেন।[৬৮] ঐ উইকেট জুটিতে এটি ইংল্যান্ডের রেকর্ড জুটিরূপে স্বীকৃত[৬৯] ও ইভান্সের খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ।[৭০] হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে তিনি কোন বাই রান দেননি। কোলি স্মিথের ক্যাচ নিয়ে তিনি ২০০তম টেস্ট ডিসমিসাল ঘটান ও প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এ মাইলফলক স্পর্শ করতে সক্ষমতা দেখান।[৭১]
১৯৫৮ সালে নিউজিল্যান্ড ইংল্যান্ড সফরে আসে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল পাঁচ টেস্টের সিরিজটিতে ৪-০ ব্যবধানে জয় পায়। তন্মধ্যে তিনটিতেই ইনিংসের ব্যবধানে ছিল।[৭২] ইভান্স দলে থাকলেও ব্যাটিং অত্যন্ত দূর্বলতার পরিচয় দেন। ৫.৬০ গড়ে মাত্র ২৮ রান তুলেন।[১১] তবে, সিরিজের পঞ্চম টেস্টে ওভালে অংশ নিয়ে ৮৬তম টেস্টে অংশ নেন ও ওয়ালি হ্যামন্ডের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।[৭৩]
আইসিসি টেস্ট খেলোয়াড় ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে তিনি তার সর্বোচ্চ রেটিং করেন ৪৪২ যা ২১ জুলাই, ১৯৫২ তারিখে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে। ৯ জানুয়ারি, ১৯৫১ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত র্যাঙ্কিং করেন ২৪তম।[৭৪]
ব্যাটিং[৭৫] | ফিল্ডিং[৭৬] | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
প্রতিপক্ষ | খেলা | রান | গড় | সর্বোচ্চ | ১০০/৫০ | ক্যাচ | স্ট্যাম্পিং |
অস্ট্রেলিয়া | ৩১ | ৭৮৩ | ১৭.৭৯ | ৫০ | ০/১ | ৬৪ | ১২ |
ভারত | ৭ | ৩১৫ | ৫২.৫০ | ১০৪ | ১/৩ | ৭ | ৫ |
নিউজিল্যান্ড | ১৪ | ১৪২ | ১০.৯২ | ২৭ | ০/০ | ২২ | ৬ |
পাকিস্তান | ৪ | ৬৩ | ১২.৬০ | ৩১ | ০/০ | ৬ | ১ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ১৯ | ৫১১ | ১৮.২৫ | ৭৪ | ০/২ | ৪৬ | ১৩ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ১৬ | ৬২৫ | ২৭.১৭ | ১০৪ | ১/২ | ২৮ | ৯ |
সর্বমোট | ৯১ | ২,৪৩৯ | ২০.৪৯ | ১০৪ | ২/৮ | ১৭৩ | ৪৬ |
১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে চতুর্থবারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। তবে, এ সফরটি দলসহ তার ব্যর্থতায় ভরপুর ছিল। পূর্ববর্তী তিন সিরিজে জয়ী হওয়ায় সিরিজে ইংল্যান্ড শ্রেয়তর থাকলেও ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়।[৭৭] সিরিজের তিন টেস্টে অংশ নেন ও হাতের আঙ্গুলে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় চতুর্থ টেস্টে অংশ নিতে পারেননি। আঘাতের কারণে পঞ্চম টেস্টেও তার অনুপস্থিতি ছিল। ছয় ইনিংসে তিনি মাত্র ২৭ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে চারটিতে মাত্র চার রান তুলেন।[৭৮] উইজডেন মন্তব্য করে যে, বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের মধ্যে ইভান্সও একজন ছিলেন যিনি তার দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন।[৭৭]
১৯৫৯ সালে ভারত দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। অ্যাশেজ সিরিজে পরাজয়ের পর নিজ দেশে এটিই প্রথম টেস্ট সিরিজ ছিল। অ্যাশেজে পরাজয়বরণের পর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় দল থেকে বাদ পড়েন।[৭৯] তবে, ইভান্স দলে থেকে যান। গ্রীষ্মের প্রথম টেস্টে দল নির্বাচকমণ্ডলীর আস্থার যথার্থতা তুলে ধরেন ও বল প্রতি রান তুলে ৭৩ সংগ্রহ করেন। তার ঐ ইনিংসে ১২ বাউন্ডারির মার ছিল। তবে, লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে সোয়া ঘণ্টার ব্যবধানে টমি গ্রীনহো'র বলে চারবার স্ট্যাম্পিং করতে ব্যর্থ হন।[৮০] তবে, অন্যান্য বিষয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন ও কোন বাই রান খেলায় দেননি।[৮১] দলের পুণর্গঠনকল্পে পরের টেস্টে তাকে বাদ দেয়া হয়।[৮২] তার টেস্ট ক্যাপ নম্বর ছিল ৩১৫।[৮৩]
পেশাদারী ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর হাম্পশায়ারের হিল ব্রো এলাকায় জলি ড্রোভার পাব নামীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অগ্রসর হন। ‘বিহাইন্ড দ্য স্ট্যাম্পস’ (১৯৫১) ও ‘দ্য গ্লাভস আর অফ’ (১৯৬০) নামের দুইটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন।[২][৮৪] ঐ প্রতিষ্ঠানটি ক্রিকেটবিষয়ক চিত্র দিয়ে সাজানো ছিল ও ইভান্স সর্বদাই তার ক্রিকেট জীবন নিয়ে আলোচনায় মত্ত থাকতেন।[৮৫] ক্রিকেটবোদ্ধা হিসেবে ল্যাডব্রুকস জুয়ারীদের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৮১ সালে হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের বিপরীতে ১:৫০০ অনুপাতে বাজীর প্রস্তাব রাখেন। তবে, ইয়ান বোথাম ও বব উইলিসের অসামান্য অবদানের প্রেক্ষিতে ২২৭ রানে ফলো অনে পড়েও ইংল্যান্ড দল অবিস্মরণীয় জয় পায়।
‘আউটসাইড এজ’ শিরোনামের টেলিভিশন অনুষ্ঠানের একটি পর্বে ইভান্স অংশ নেন।
৩ মে, ১৯৯৯ তারিখে ৭৮ বছর বয়সে গডফ্রে ইভান্সের দেহাবসান ঘটে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। অ্যাঞ্জেলা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ও কন্যা আবিগেইলকে রেখে যান।[২]