গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ইতিহাস-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে চীনের মূল ভূখন্ডের ইতিহাস, যখন চীনের গৃহযুদ্ধে চীনা সমাজতান্ত্রিক দল (সি.পি.সি. বা "কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না") বিজয় লাভ করে এবং মাও সেতুং, বেইজিংয়ের তিয়েনআমেন চত্ত্বরে গণচীনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। "গণচীন" এর পরবর্তী কয়েক দশকব্যপী চীন নামটির সাথে সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তবে এটি চীনের নবীনতম শাসকগোষ্ঠী মাত্র। তাদের উত্তরসূরি ছিল চীন প্রজাতন্ত্র (আর.ও.সি.) এবং এর পূর্বে হাজার হাজার বছরের চীন রাজবংশসমূহের ইতিহাস।
চীনা গৃহযুদ্ধ ও ১৯৪৯ সালের চীনা বিপ্লবে জেনারিলিসিমো চিয়াং কাই-শেক এর কুওমিনতাং বাহিনীর বিরুদ্ধে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বাধীন চীনা সমাজতান্ত্রিক দল জয়লাভ করে। পরাজিত চিয়াং কাই-শেক তাইওয়ানে পলায়ন করেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর মাও গণচীনের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। মাওয়ের লক্ষ্য ছিল প্রচলিত ভূমি মালিকানা আইনকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত করা। চীনে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা উচ্চবংশীয় জমিদারী প্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং তার পরিবর্তে দরিদ্র ও বর্গাচাষীদের মধ্যে ভূমি মালিকানা পুনর্বন্টিত হয়, যাতে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত হয়। ১০ লক্ষাধিক জমিদারকে হত্যা করা হয়।[১] চীনের উত্তরাঞ্চলে ঝ্যাংঝুয়াংকুং এলাকায় এই "সংস্কারকর্মের" প্রভাব অত্যধিক পরিলক্ষিত হয়। এস্থানে বহু "জমিদার" ও "ধনী কৃষক" তাদের সমস্ত জমিজমা হারায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের হত্যা করা হয় অথবা তারা প্রাণভয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। পূর্বে ভূমিহীন চাষীগণ ভূমিপ্রাপ্ত হয়, যা এই জমিদার শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেয়। এর ফলে, চীনের গ্রামাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ "মধ্যমশ্রেণীর কৃষকে" পরিণত হয়, এবং তাদের মালিকানায় সকল কৃষিভূমির ৯০.৮ শতাংশ চলে আসে।[২] মাও "শ্রেণী বৈষম্যের" অন্তর্নিহিত তাত্পর্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন, এবং ১৯৫৩ সালে তিনি প্রাক্তন জমিদার ও বণিকদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের এক নতুন অভিযান সংগঠিত করেন, বহু প্রভাবশালী জমিদারকে হত্যা করা হয়। সারা দেশে মাদকের চোরাচালান এমনকি সকল বৈদেশিক বিনিয়োগকে প্রায় পূর্ণরূপে উত্খাত করা হয়।
মাও বিশ্বাস করতেন সমাজতন্ত্র একসময় অপরাপর সকল মতাদর্শের ওপর জয়লাভ করবে। তিনি দেশব্যপী সোভিয়েত কায়দায় "৫ বছরব্যপী কর্মসূচী" গ্রহণ করেন, যা ছিল কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ১৯৫৮ সালে তিনি একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যার নাম ছিল "সম্মুখগামী মহা-অগ্রযাত্রা" ("Great Leap Forward")। এই উদ্যোগের আওতায় চীনের গ্রামাঞ্চলসমূহে শুরু হয় যৌথ খামার পদ্ধতিতে কৃষিকাজ। মাও নির্দেশ দেন সমবায় পদ্ধতিতে পরিচালিত লোহা-বিগলন চুল্লী স্থাপন করতে যার দ্বারা ইস্পাতের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তবে এই উদ্যোগের ফলে বহু কৃষককে ক্ষেতক্ষামার থেকে সরিয়ে ইস্পাত উৎপাদনে নিযুক্ত করা হয়, ফলে শস্যক্ষেত্রে ফসল গোলাভরা করার সময় লোকবলের অভাব দেখা দেয় এবং বহু ফসল সময়মত না কাটার কারণে তা ক্ষেতেই বিনষ্ট হয়। তদুপরি অপেশাদারী কায়দায় উৎপন্ন এসব ইস্পাত ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুপযোগী। একপর্যায়ে মাও একটি ইস্পাত কারখানা পরিদর্শন করে বুঝতে পারেন যে, মানসম্মত ইস্পাত উৎপাদন শুধুমাত্র কারখানাতেই সম্ভব। তবুও তিনি তাঁর সমবায় লোহা উৎপাদন কর্মসূচি বাতিল করেননি, তাঁর আশঙ্কা ছিল এতে করে কৃষক-শ্রমিকদের মনোবল ভেঙে পড়তে পারে, যা হবে তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি "সম্মুখগামি মহা অগ্রযাত্রা"-র জন্যে হুমকিস্বরূপ।
চীনে মাওবাদী কর্মকান্ডে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তাতে প্রায় ৪ কোটি থেকে ৭ কোটি জনগণের প্রাণহানি হয়।[৩] এসকল মাওবাদী কর্মসূচির অন্তর্গত ছিল "সম্মুখগামী মহা অগ্রযাত্রা", ১৯৫৭-১৯৫৮ সালের "ডানপন্থী-বিরোধী অভিযান",[৪] এবং "সাংস্কৃতিক বিপ্লব"। হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক শ্রমের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়। মাও কর্তৃক সংগঠিত ভূমি সংস্কার কর্মসূচির ফলশ্রুতিতে কয়েক পর্যায়ে বৃহদাকারে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যাতে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ১৯৬১ সালের শেষ ভাগে অপুষ্টিজনিত কারণে চীনের জন্মহার প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়।[৫] "পুনঃ শিক্ষাদান কর্মসূচি" অভিযান চালিয়ে, মাওবাদী চিন্তাধারার বিরোধীদের ধরপাকড় ও হত্যা করা হয়।[৬] "সম্মুখগামী মহাযাত্রায়" মাও এর ব্যর্থতায় চীনা সরকারে তাঁর প্রভাব দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা লিউ শাওচি ও দেং জিয়াওপিং এর ওপর অর্পিত হয়।
একটি সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শকে প্রয়োগ করা, চীনা সমাজের "পুরনো উপাদান"সমূহকে দূরীভূত করা এবং একই সাথে তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার লক্ষ্য নিয়ে মাও সে তুং ১৯৬৬ সালের মে মাসে শুরু করেন তাঁর "সাংস্কৃতিক বিপ্লব"। চীনের জনগণের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর এই অভিযান সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে। চীনা লাল ফৌজ প্রতিটি সড়কে বিচরণ করতে থাকে এবং জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায়, নিরীহ নাগরিকদের বিপ্লব-বিরোধী তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে স্থবির হয়ে পড়ে। জনগণের নিত্যকার জীবন হয়ে দাঁড়ায় চেঁচিয়ে স্লোগান দেয়া এবং মাও-এর উক্তি বুলিয়ে বেড়ানো। বহু স্বনামধন্য নেতৃবৃন্দকে "পুঁজিবাদীত্বের পথগামী" বলে দল থেকে বহিস্কার করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন লিউ এবং দেং। ১৯৭৬ সালে মাও-এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলতে থাকে।
মাও সমর্থকদের দাবী, মাও-এর শাসনামলে চীন এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মত ঐক্যবদ্ধ ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে সংগঠিত হতে পেরেছে, এবং এ সময়ে চীনের অবকাঠামো, শিল্পখাত, চিকিত্সাব্যবস্থা, শিক্ষা, প্রভৃতির প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে (১৯৪৯ সালে চীনের কেবল ২০% জনগণ লিখতে-পড়তে পারত, ত্রিশ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫.৫%-এ),[৭] এসকল কারণে চীনের একজন সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রার মান গড়পড়তায় উন্নতি লাভ করেছে। মাওবাদীরা আরো দাবি করে, যে "সম্মুখগামী মহা পদক্ষেপ" ও "সাংস্কৃতিক বিপ্লবের" ন্যায় অভিযানসমূহ চীনের উন্নতি-অগ্রগতির জন্যে অপরিহার্য ছিল এবং এদের দ্বারা চীনের সংস্কৃতিকে "বিশুদ্ধীকরণ" করা হয়। অন্যান্যরা[৮] দাবি করে, যদিও উভয় অভিযানই চীনের অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে, তারা পেছনে ফেলে যায় একটি "পরিষ্কার খাতা" বা "ক্লীন শ্লেট", যাতে করে নতুন করে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুরু করা যায়। মাও সমর্থকগণ তাঁর অভিযানে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত পরিসংখ্যানকে এই বলে নাকচ করে দেয় যে, মৃত্যুর কারণ ছিল মূলতঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ এবং চিয়াং কাই-শেকের শাসনামলে সৃষ্ট রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফলস্বরূপ।
মাও সেতুং-এর মৃত্যুর পর চীনের ক্ষমতা নিয়ে "চারনেতার দল", হুয়া কুওফেং এবং কালক্রমে তেং শিয়াওফিংয়ের (বানানভেদে দেং জিয়াওপিং) মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। ১৯৮০ সালের মধ্যে দেং নিজেকে চীনের নেতৃবৃন্দের শীর্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। একাদশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩য় অধিবেশনে, দেং চীনকে নতুন এক "অর্থনৈতিক সংস্কার ও মুক্তচিন্তার" (改革开放 গাইগে কাইফাং) পথে যাত্রা করান। তাঁর গৃহীত নীতি অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের যৌথ মালিকানা প্রথার বিলুপ্তিকরণ করা হয়, অতঃপর শিল্পক্ষেত্রের সংস্কারে শিল্পখাতের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথীল করা হয়। ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৪র্থ অধিবেশনে গত ৩০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের একটি "প্রাথমিক পর্যালোচনা" করে একটি নথি পেশ করা হয়। এ অধিবেশনে, পার্টির সহ-সভাপতি ইয়ে জিয়ানয়িং "সাংস্কৃতিক বিপ্লব"কে একটি "ভয়াবহ বিপর্যয়" এবং "১৯৪৯ সালের পর থেকে সমাজতন্ত্রের স্বার্থের জন্যে সবচেয়ে গুরুতর বিপত্তি" বলে আখ্যা দেন।[৯] সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে চীনা সরকার কর্তৃক নিন্দা জ্ঞাপনের চূড়ান্ত ফলাফলস্বরূপ, "চীনা সমাজতান্ত্রিক দলের একাদশ কেন্দ্রীয় কমিটি" তাদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল, "গণচীনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমাদের পার্টির ইতিহাসের কতিপয় প্রশ্ন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত"। উক্ত বিবৃতিতে এই বক্তব্য দেয়া হয় যে, "কমরেড মাও সেতুং একজন মহান মার্ক্সবাদী এবং শ্রমজীবী মানুষের একজন বিপ্লবী নেতা, কুশলী ও তাত্ত্বিক ছিলেন। একথা সত্য যে, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তিনি কিছু গুরুতর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তবে, যদি তাঁর কর্মকান্ডকে পূর্ণ আঙ্গিকে দেখা হয়, তবে তাঁর ভুলত্রুটি থেকে চীনা বিপ্লবে তাঁর অবদান অনেকাংশে বেশি। তাঁর কীর্তিসমূহ মুখ্য এবং তাঁর ভুলত্রুটিসমূহ গৌণ।"[১০]
মাও এর কীর্তি সম্পর্কে দেং একটি বিখ্যাত উক্ত প্রবাদস্বরূপ গণ্য হয়, তা হল, "৭ ভাগ উত্তম, ৩ ভাগ মন্দ" এবং এ উক্তির দ্বারা তিনি মাওকে সম্পূর্ণরূপে নিন্দা জানানো থেকে বিরত থাকেন। দেং কয়েকটি "বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল" প্রতিষ্ঠা করেন যাতে বিশেষ সরকারি হস্তক্ষেপ ও কড়া বিধিনিষেধ ছাড়াই বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া হয়, যা ছিল অনেকাংশেই পুঁজিবাদী সমাজের অনুরূপ। দেং হালকা শিল্পসমূহকে ভারি শিল্পোন্নয়নের প্রথম ধাপ স্বরূপ বলে আখ্যায়িত করেন।
তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের সমর্থকগণ তাঁর শাসনামলে ভোক্তা ও রপ্তানি খাতের উন্নয়নের দিকে নির্দেশ করেন। তাঁর আমলে চীনে একটি শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব হয়, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল। এছাড়া তাঁর আমলে জীবনযাপনের মানের ব্যাপক উন্নতি হয়, যার একটি সূচক হল মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের (জি.ডি.পি.) ব্যাপক বৃদ্ধি। এছাড়া ভোক্তা কর্তৃক ব্যয়বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জনসাধারণের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ছিল তেং শিয়াওফিংয়ের সরকারের কয়েকটি অর্জন।
যদিও ১৯৮০-এর দশকে চীনে জীবনযাপনের মানে ব্যাপক উন্নতি ও স্বস্তি আসে, তবুও দেং এর সংস্কার কর্মসূচি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ছিল না। কট্টরপন্থীরা দেং-এর এই সমালোচনা করে যে, তিনি চীনকে আবারো সামাজিক অমঙ্গলের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, চীনা জনগণের মধ্যে বস্তুবাদী মানসিকতার বিস্তার ঘটিয়েছেন। অপরদিকে উদারপন্থীরা দেং সরকারের এই সমালোচনা করে যে, তিনি অতিরিক্ত ও অপরিমিতভাবে রাজনৈতিক সংস্কারে লিপ্ত হয়েছেন। উদারপন্থী সংগঠনসমূহ কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কায়দায় আন্দোলন ও বিক্ষোভ সংগঠিত করে। ১৯৮৯ সালে উদারপন্থী নেতা হু ইয়াওবাং-এর মৃত্যুতে এসকল আন্দোলন বিস্ফোরণের আকার ধারণ করে, এবং রজাধানীর তিয়েনআমেন চত্ত্বরের বিখ্যাত বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিক্ষোভের প্রত্যুত্তরে চীনা সরকার মার্শাল আইন জারি করে এবং কার্ফিউ জারি করে। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে সেনা ও ট্যাংক মোতায়েন করা হয়। পশ্চিমা বিশ্ব ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রধানমন্ত্রী লি পেং-এর নেতৃত্বাধীন চীনা সরকারের সাথে তাদের সকল সম্পর্ক সাময়িকভাবে ছিন্ন করে, যা ছিল সামরিক কার্ফিউ এবং রক্তক্ষয়ী দমন অভিযান পরিচালনার প্রত্যক্ষ কারণ।
চীনে ও বাইরের বিশ্বে, দেং-এর অর্থনৈতিক সংস্কারের সমালোচকগণ এই দাবি করেন যে, তাঁর সংস্কারে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে; তদুপরি পরিবেশ দূষণ, দূর্নীতি, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, অকার্যকর সরকারি প্রতিষ্ঠান, চীনে ভিনদেশীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ প্রভৃতির জন্যে সমালোচগণ দেং সরকারকে দায়ী করেন। তাঁদের মতে, দরিদ্র জনগণকে একটি নৈরাশ্যজনক নিম্নশ্রেণীতে পরিণত করা হয়েছে এবং সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়াও, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মত কতিপয় রাজনৈতিক উদ্যোগকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা হয়েছে বলে সমালোচকদের দাবি। উভয়পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গী সত্ত্বেও মাও এর গ্রহণযোগ্যতা বর্তমান সময়ে কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। মাও এবং মাও সংক্রান্ত চিত্রকর্ম প্রভৃতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিভিন্ন প্রমোদসামগ্রী, লকেট ইত্যাদিতে চিত্রিত হচ্ছে। তথাপি, আশির দশকে চীনে শুরু হওয়া আধুনিকীকরণ ও বাজারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সংস্কারসমূহ এখনো মৌলিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। এমনকি চীনা অর্থনৈতিক সংস্কারের সমালোচকগণও চান না যে, চীনের গত দুই দশক ধরে হওয়া উন্নয়নসমূহ পরিত্যক্ত হোক, বরং তাঁরা আশা করেন এসকল সংস্কারের ত্রুটি মোচন ও কতিপয় সামাজিক সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
১৯৭৯ সালে চীনা সরকার চীনের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে "এক সন্তান নীতি" গ্রহণ করে। এই বহুল সমালোচিত পদক্ষেপে শিশু দারিদ্র্য অনেকাংশে দূরীভূত হয়। বর্তমানে সরকার এই আইন শিথীল করে দুটি সন্তান গ্রহণের অনুমতি প্রদান করার পরিকল্পনা করছে, এখনো চীনের মূল ভূখন্ডের এক-তৃতীয়াংশ জনগণের ওপর এই আইন বহাল রয়েছে।[১১][১২]
সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ এর নেতৃত্ব দেশটি একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়, এবং সিংগাপুরের এই উত্থান চীনের সমাজতান্ত্রিক নেতৃত্বকেও প্রভাবিত করে। লি কুয়ানের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্যিক উদ্যোগ এবং মতবিরোধকে সূক্ষ্মভাবে প্রতিহত করা। তাঁর অনুপ্রেরণায় তেং শিয়াওফিংয়ের নেতৃত্বে চীনেও অনুরূপ কর্মসূচি গৃহীত হয়। সিংগাপুরের বাণিজ্যিক কর্মসূচিকে পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণ লাভের জন্যে ২২,০০০ চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেদেশে পাঠানো হয়।[১৩]
তিয়ানআমেনের ঘটনার পর দেং জিয়াওপিং লোকচক্ষুর অন্তরালে গা ঢাকা দেন। তাঁর পর, ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় তৃতীয় প্রজন্মের নেতৃবৃন্দের কাছে, যদিও চূড়ান্ত ক্ষমতা নিজেদের কব্জাতেই রাখেন শীর্ষ নেতারা। তৃতীয় প্রজন্মের নেতৃত্ব দেন জিয়াং জেমিন, যাঁকে এ প্রজন্মের "মধ্যমণি" বলে গণ্য করা হয়। নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেখা পায়। জিয়াং-এর সামষ্টিক অর্থনীতির সংস্কারের মাধ্যমে দেং এর স্বপ্ন, "চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের" পথে দেশ আরেক ধাপ অগ্রসর হয়। তবে, জিয়াং-এর শসানামলে একই সাথে সামাজিক দূর্নীতির হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। অলাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে এবং এদের স্থলে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে, এর ফলে বেকারত্বের হার বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। অপর্যাপ্ত সমাজ কল্যাণ ব্যবস্থাটি এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। জিয়াং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নসমূহে গুরুত্বারোপ করেন, এর মধ্যে ছিল মহাকাশ অভিযান কর্মসূচি। বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা মেটাতে সরকার নির্মাণ করে "ত্রি-গিরিসংকট বাঁধ", যা একই সাথে প্রশংসিত ও সমালোচিত হয়। এসকল কর্মসূচিতে ব্যাপক হারে পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, দ্রুত মরুকরণের ফলে রাজধানী বেইজিং-এ ঘনঘন ধূলিঝড় দেখা যেতে থাকে।
নব্বইয়ের দশকে চীন দুটি প্রাক্তন প্রদেশের কর্তৃত্ব ফিরে পায়। ১৯৯৭ সালে, যুক্তরাজ্য কাছ থেকে হংকং-এর কর্তৃত্ব চীনের নিকট হস্তান্তর করে এবং ১৯৯৯ সালে পর্তুগাল তাদের কাছে ম্যাকাও প্রদেশটি ফিরিয়ে দেয়। তবে হংকং ও ম্যাকাও অনেকাংশেই নিজেদের শাসনক্ষমতা বজায় রাখে, তাদের অর্থনীতি, সামাজিক ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে।
জিয়াং ও যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেস্ট বিল ক্লিনটন পরস্পরের রাষ্ট্রে সফরে আসেন, তথাপি, এ দশকের সমাপ্তিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১৯৯৯ সালের ৭ই মে, কসোভো যুদ্ধের সময়, মার্কিন বিমানবাহিনী বেলগ্রেডে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে বোমাবর্ষণ করে। মার্কিন সরকার দাবি করে যে, ভুল বার্তা ও ত্রুটিপূর্ণ লক্ষ্য-নির্ধারণের ভিত্তিতে এই বোমাহামলাটি পরিচালিত হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে কক্স-রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, চীন যুক্তরাষ্ট্রের অতি গোপনীয় সামরিক তথ্য চুরি করে নিচ্ছে।
২০০১ সালে, চীনের হাইনান প্রদেশের কাছে আন্তর্জাতির জলসীমানায়, একটি চীনা জঙ্গীবিমানের সাথে একটি মার্কিন গোয়েন্দা-বিমানের সংঘর্ষ হয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ চীনা জনগণের ক্ষোভকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন আবারো গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে, যখন ১৯৯৯ সালে চীনা সরকার "ফালুন গং" নামক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গোষ্ঠীর প্রকাশ্য আচার-অনুষ্ঠানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। উক্ত ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুসারীগণ রাজধানীর ঝংনানহাই প্রাসাদের সম্মুখে নীরব প্রতিবাদে সমবেত হন এবং চীনা নেতৃবৃন্দের সাথে সংলাপের প্রস্তাব জানান। কিন্তু জিয়াং এই প্রতিবাদকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের জন্যে হুমকি স্বরূপ বলে মনে করেন এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীটিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, রাষ্ট্রায়ত্ব প্রচারমাধ্যম এই ধর্মীয় গোষ্ঠীটিকে পাপাচারী উগ্রপন্থী হিসেবে প্রচার করতে থাকে।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী ঝু রোংজির অর্থনৈতিক নীতিমালা এশীয় অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও চীনা অর্থনীতিকে সজীব রাখতে সহায়তা করে। গড় বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৮ শতাংশে, যা ১৯৯৮ সালের ইয়াংজি নদীর বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কারণে পিছিয়ে পড়েছিল। কয়েক দশকব্যপী আলোচনার পর চীন অবশেষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-কে তাদের বাজারে প্রবেশের অনুমতি দেয়। জীবনযাপনের মানের উন্নতি হয়। তবে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থানের সাথে সাথে শহুরে ও গ্রাম্য জনগণের আয়-বৈষম্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। চীনের উপকূলবর্তী পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের পশ্চাদ্ভূমির মধ্যকার আয়-বৈষম্যও ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে সরকার "পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন"-এর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে "চিংহাই-তিব্বত রেলসড়ক"-এর ন্যায় উচ্চাভিলাষী প্রকল্পসমূহ গ্রহণ করা হয়। শিক্ষাখাতের ব্যয়ভার পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় অধিক হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী ঝু রোংজির দূর্নীতি-দমন অভিযানে বহু কর্মকর্তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়, তবুও দূর্নীতি নিরসনে ব্যর্থ হয় সরকার।
একবিংশ শতাব্দীতে হু চিনথাও-এর নেতৃত্বে চীনের নতুন প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা গ্রহণের পর, তাঁরা প্রথম যে সমস্যাটির সম্মুখীন হন, তা হল জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যার মূলকেন্দ্র ছিল সার্স (SARS) রোগ। ধারণা করা হয়, এই রোগটির উত্পত্তি হয় চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ থেকে। "সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে" চীনের অবস্থান তাদেরকে কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী করে তোলে। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নকে সরকার তার মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, ফলে তাদের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দশকের ঘরে চলে আসে। নিজের ক্ষমতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হু জিনতাও সাংহাই-দলের সভাপতি চেন লিয়াংইউ-সহ তাঁর অপরাপর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে একে দূর্নীতি-দমনের নামে অপসারণ করতে থাকেন। এবং এককালের শক্তিশালী সাংহাই দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। হু-ওয়েন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি "সমাজতান্ত্রিক প্রীতিকর সমাজ" গঠনে "বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নয়ন", এ কর্মসূচিতে জিয়াং-এর শাসনামলের উদ্বৃত্তসমূহ ধীরে ধীরে অপসারিত হয়। হু জিনতাও এর উত্থানের বছরগুলোতেও চীনে মানবাধিকার সংক্রান্ত পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল।
তাইওয়ানের রাজনৈতিক অবস্থান এবং এর ভবিষ্যত অনিশ্চিত রয়ে যায়, তবে চীনা সমাজতান্ত্রিক দল ও চীনের প্রতি অপেক্ষাকৃত কম বিরুদ্ধভাবাপন্ন তাইওয়ানের কতিপয় পার্টির মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গৃহীত হয়, এসকল পার্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সমাজতান্ত্রিক দলের প্রাক্তন প্রতিদ্বন্দ্বী কুওমিনতাং।
চীনের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে তাদের সাফল্যের ফলশ্রুতিতে চীন ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজক হিসেবে মনোনীত হয়। তবে, এতে করে হু জিনতাও প্রশাসন সারা বিশ্বের নজরদারির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যদিও ২০০৮ এর অলিম্পিক আয়োজন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের 'খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার' একটি আয়োজন ছিল, তথাপি, ২০০৮ সালের তিব্বত প্রতিবাদের ফলে সরকারকে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অলিম্পিক মশাল বহন করে নেয়ার পথে তা ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলনের সম্মুখীন হয়। চীনের অভ্যন্তরে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমের পক্ষপাতিত্ব বলে অভিযোগ তোলে।
২০০৮ সালের মে মাসে চীনের সিছুয়ান প্রদেশে রিখটার স্কেলে ৮.০ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, সরকারি হিসেবে এই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয় প্রায় ৭০,০০০। পরিস্থিতি সামাল দিতে, অতীতের দুর্যোগসমূহের তুলনায় সরকার এবার বেশ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেসকল এলাকায় ভূমিকম্পের প্রচন্ডতা সর্বাধিক ছিল সেসকল এলাকায় বিদেশী গণমাধ্যমসমূহকে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। সরকারের দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে, এবং চীনা নাগরিকদের সাহায্যার্থে বিস্তৃত এলাকায় ত্রাণ-বিতরণ কর্মসূচি গৃহীত হয়। ২০০৮ সালের মে ও জুন মাসে চীনের দক্ষিণাংশে অতিবৃষ্টির কারণে ব্যাপক আকারে বন্যা দেখা দেয়, যাতে আনহুই, হুনান, চিয়াংশি, ফুচিয়েন এবং কুয়াংতুং প্রদেশসমূহ আক্রান্ত হয়। বন্যায় কয়েক শত মানুষ নিহত হয় এবং ১০ লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়। ২০০৯ সাল থেকে চীন ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করে এবং শত শত নতুন ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
Mao's responsibility for the extinction of anywhere from 40 to 70 million lives brands him as a mass killer greater than Hitler or Stalin, his indifference to the suffering and the loss of humans breathtaking