গণেশপুরাণ

গণেশ মূর্তি, বার্লিন সংগ্রহালয়।

গণেশপুরাণ (সংস্কৃত:गणेश पुराणम्) হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি উপপুরাণহিন্দু দেবতা গণেশের পৌরাণিক উপাখ্যান ও তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই পুরাণের প্রধান আলোচ্য বিষয়।[] এছাড়া গণেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টিতত্ত্ব, বিভিন্ন রাজবংশের বংশলতিকা, রূপক কাহিনি, যোগ দর্শন-সহ সাধারণ দর্শনতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্বও গণেশপুরাণে আলোচিত হয়েছে।[][]

গণেশপুরাণ দু’টি বৃহদায়তন "খণ্ড" বা বিভাগে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডটির নাম "উপাসনাখণ্ড"। এই খণ্ডে ৯২টি অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ধর্মতত্ত্ব ও ভক্তিযোগ। ১৬৫টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত দ্বিতীয় খণ্ডের নাম "ক্রীড়াখণ্ড"। গণেশ-সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যান ও বিভিন্ন রাজবংশের বিবরণ এই খণ্ডের আলোচ্য বিষয়।[][] গণেশপুরাণের অনেকগুলি পাঠান্তর পাওয়া যায়।[] মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামি শাসনকালের রাজনৈতিক সংঘর্ষের যুগে এই পুরাণ রচিত ও পরিমার্জিত হয়েছিল।[][][] সকল প্রধান পুরাণের বৈশিষ্ট্য ও উপাখ্যানগুলি এই পুরাণে সন্নিবেশিত হয়েছে। বেইলির মতে, অন্যান্য পুরাণগুলির মতো গণেশপুরাণেও সমসাময়িক যুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটেছে।[১০]

ব্রহ্মব্রহ্মাণ্ড মহাপুরাণ এবং মুদ্গল উপপুরাণের মতো গণেশপুরাণও গণেশ-সংক্রান্ত একটি বিশ্বকোষতুল্য গ্রন্থ।[] যদিও চারটি পুরাণের মূল বিষয়বস্তু আলাদা। ব্রহ্মপুরাণ মতে গণেশ "নির্গুণ" (অর্থাৎ, সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণরহিত ও নিরাকার), ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ মতে গণেশ "সগুণ" (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণাত্মক ও সাকার), মুদ্গলপুরাণে গণেশকে বলা হয়েছে "সম্যোগ" (পরম সত্য ও আত্মার বিমূর্ত সমন্বয়) এবং গণেশপুরাণে বলা হয়েছে যে গণেশ একাধারে সগুণ ও নির্গুণ এবং সগুণ গণেশ নির্গুণ গণেশেরই আদি রূপ।[]

গণেশপুরাণ গ্রন্থটি গণেশ-উপাসক গাণপত্য সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ।[১১][১২]

গুরুত্ব

[সম্পাদনা]
গণেশ দরবার, খ্রিস্টীয় ১৯শ শতাব্দীর চিত্রকলা। এই চিত্রে হিন্দু স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত পঞ্চদেবতার অন্যতম গণেশ (উপরে মধ্যে) শিব (উপরে বাঁদিকে), পার্বতী (উপরে ডানদিকে), বিষ্ণু (নিচে বাঁদিকে) ও সূর্যের (নিচে ডানদিকে) অবস্থান করছেন।

গণেশপুরাণ ও গণপত্যথর্বশীর্ষ (বা গণপত্যুপনিষদ্) গণেশ-উপাসক গাণপত্য সম্প্রদায়ের দু’টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ।[১৩] গণেশের যে উপাখ্যানগুলি এই পুরাণে পাওয়া যায়, তা এই সম্প্রদায়ের একটি বিশিষ্ট অংশ।[১৪] গণেশ হলেন হিন্দুধর্মের সর্বাধিক পূজিত দেবতা। হিন্দুধর্মের প্রতিটি প্রধান সম্প্রদায়ে (শৈব, বৈষ্ণব, শাক্তস্মার্ত) গণেশকে সকল দেবতার আগে পূজা করার নিয়ম আছে।[১৫] গণেশপুরাণে প্রাচীন পুরাণকথা ও বৈদান্তিক ধ্যানধারণাকে গণেশভক্তির কাঠামোর মধ্যে নিবদ্ধ করা হয়েছে।[১৬]

বৌদ্ধজৈন ধর্মের পুরাণকথা ও ধর্মতত্ত্বে গণেশের উল্লেখ থাকায় এই দুই ধর্মের ইতিহাসের প্রেক্ষিতেও গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে।[১৭][১৮]

রচনাকাল

[সম্পাদনা]

গণেশপুরাণ ও মুদ্গলপুরাণ অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে (খ্রিস্টীয় ১৩০০ থেকে ১৬০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে) রচিত হয়েছিল।[১৯][] স্টিটেনক্রনের মতে, খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে অধুনা মহারাষ্ট্র অঞ্চলে হিন্দু মারাঠা শক্তির সঙ্গে ইসলামি সুলতানি শাসকদের সামরিক সংঘর্ষের যুগে গণেশপুরাণ রচিত হয়।[২০]

অবশ্য উক্ত দুই পুরাণের সঠিক রচনাকাল ও পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষকদের মতভেদ রয়েছে। দুই গ্রন্থেই কয়েকটি সময়ভিত্তিক স্তর দেখা যায়। গবেষকেরা এই স্তরগুলি নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হননি। উপরন্তু দুই পুরাণেরও প্রাপ্ত পাঠগুলির কোনও কোনও স্তরে পারস্পরিক প্রভাব লক্ষিত হয়। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে একটি পুরাণে অপর পুরাণটির সূত্রও প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশ করা হয়েছে।

গণেশপুরাণের রচনাকাল সম্বন্ধে মতামতগুলি পর্যালোচনা করে থাপান এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, পুরাণটির মূল অংশ সম্ভবত খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীর রচনা এবং পরবর্তীকালে কিছু প্রক্ষিপ্তাংশ এটিতে সংযোজিত হয়।[২১] থাপান এও বলেছেন যে, অন্যান্য পুরাণগুলির মতো গণেশপুরাণও ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিমার্জিত হতে হতে একটি বহুস্তরীয় গ্রন্থে পরিণত হয়েছে।

লরেন্স ডব্লিউ. প্রেস্টনের মতে, গণেশপুরাণের রচনাকাল আনুমানিক ১১০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়। তিনি এই মতটিকেই সর্বাধিক যুক্তিযুক্ত মনে করেন। কারণ এই পুরাণে সমসাময়িক নাগপুরবারাণসীর তীর্থস্থানগুলির বর্ণনা পাওয়া যায়।[২২][২৩] আর. সি. হাজরাও এই সময়কালটিকে গণেশপুরাণের রচনাকাল মনে করেন।[২৪] তবে ফারকুহারের মতে এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ৯০০ থেকে ১৩৫০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ের রচনা,[২৫] আবার স্টিভেনসনের মতে এটি সপ্তদশ শতাব্দীর পরবর্তীকালে রচিত।[২৬][]

বিন্যাস

[সম্পাদনা]

পুণ্যচরিত্র রাজন্যবর্গ

এই পুণ্যচরিত্র রাজন্যবর্গ একে অপরের নিন্দা করেন না,
একে অপরের স্ত্রীর প্রতিও দৃষ্টিপাত করেন না,
একে অপরের ক্ষতি করেন না,
একে অপরের ধন আকাঙ্ক্ষাও করেন না।

—গণেশপুরাণ, চন্দ্রাঙ্গদের উপাখ্যান
উপাসনা খণ্ড, ৫৪। ২৫ – ৫৪। ২৬[২৭]

গণেশপুরাণ উপাসনাখণ্ড ও ক্রীড়াখণ্ড নামে পরিচিত দু’টি "খণ্ড" বা বিভাগে বিভক্ত। ৯২টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত উপাসনাখণ্ডের আলোচ্য বিষয় ভক্তিতত্ত্ব এবং ১৫৫টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত ক্রীড়াখণ্ডের আলোচ্য বিষয় গণেশ-সংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনি।[] পরিশিষ্টভাগে ক্রীড়াখণ্ডটিকে উত্তরখণ্ড নামেও অভিহিত করা হয়েছে।[২৮] উপাসনাখণ্ডের ৪৬শ অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত গণেশ সহস্রনাম স্তোত্রটি (গণেশের ১০০০টি নাম ও গুণাবলির প্রশস্তিমূলক স্তোত্র) গণেশপুরাণের সর্বাধিক পরিচিত পাঠটির প্রধান সূত্র।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অন্যান্য সকল পুরাণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য গণেশপুরাণেও বিদ্যমান: "খণ্ড", "মাহাত্ম্য", "উপাখ্যান", "গীতা" ও একটি আখ্যানমূলক অংশ।[২৯] নৈমিষারণ্যের ঋষিসমাবেশে ব্যাসের কথকতার আদলে এই পুরাণ রচিত।[২৯] রচনাভঙ্গি শিক্ষামূলক ও পৌরাণিক। এই পুরাণের উপাখ্যান অংশের রূপকল্প ও কাঠামো অন্যান্য পুরাণগুলির মতোই।[২৯] বেইলির মতে, গণেশপুরাণের চারটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, এতে পুরাণসাহিত্যের "পঞ্চলক্ষণ" অনুপস্থিত; দ্বিতীয়ত, এতে "ধর্মশাস্ত্র" ধারার শিক্ষামূলক উপস্থাপনা কম; তৃতীয়ত, পৌরাণিক কাহিনিগুলির কাঠামো এমনভাবে সজ্জিত হয়েছে, যাতে মনে হয় গণেশ সকল পুরাণের উপাখ্যানগুলিতে হস্তক্ষেপ করছেন; এবং চতুর্থত, পৌরাণিক আখ্যানগুলিতে গণেশকে সর্বদাই অন্যান্য দেবতাদের জীবনস্বরূপ ও আদর্শস্থানীয় রূপে উপস্থাপনা করা হয়েছে।[৩০]

বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]
মহারাষ্ট্রের পুণে শহরের এক পূজামণ্ডপে অষ্টভূজ গণেশের মূর্তি

উপাসনাখণ্ড: বিমূর্ত ধ্যান ও ভক্তিপূজা

[সম্পাদনা]

গণেশপুরাণের উপাসনাখণ্ডে দুই মতে দুই প্রকার পূজার কথা বলা হয়েছে।[৩১][৩২] প্রথম মতানুসারে, গণেশই পরমেশ্বর ও পরমাত্মা; তিনি গুণাতীত ও পরমসত্ত্বা। এই মতে বেদান্ত দর্শনে বর্ণিত পরব্রহ্মের ধারণায় গণেশের ধ্যান ও আধ্যাত্মিক মননের কথা বলা হয়েছে।[৩৩] দ্বিতীয় মতে, গণেশ সগুণ ব্রহ্ম এবং তাঁর মূর্তি পুষ্পাদি দ্বারা সুসজ্জিত করে নানা উপচারে ও উৎসব পালনের মাধ্যমে পূজা করা উচিত।[৩১][৩৪] উপাসনাখণ্ডে এই ধারণাগুলি পরপর সাজানো পৌরাণিক কাহিনি ও সৃষ্টিরহস্য আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। এই অংশে প্রাচীন পুরাণকথাকে ক্রিয়াশীল অভিজ্ঞতাপ্রসূত সত্যজ্ঞান ও গণেশকে বেদান্তে বর্ণিত পরব্রহ্ম অর্থাৎ অপরিবর্তনীয় পরম সত্য রূপে দর্শানো হয়েছে।[৩৫][৩৬]

ক্রীড়াকাণ্ড: গণেশগীতা

[সম্পাদনা]

নিজের আত্মাকে জানো

গণেশ বললেন, "যাঁরা নিজের আত্মায় সুখভোগ করেন এবং নিজের আত্মাতেই নিমগ্ন থাকেন, তাঁরা পরমানন্দ ও অবিনশ্বর সুখ লাভ করেন। কারণ ইন্দ্রিয়সুখে কোনও আনন্দই নেই। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুসকল হতে যে সুখ জন্মে, তা দুঃখের কারণ হয়। সেই সুখ জন্ম ও সংহারের সহিত যুক্ত। জ্ঞানীগণ সেই সুখের প্রতি আকৃষ্ট হন না। (...)

"যিনি আত্মায় নিবদ্ধ, যিনি আত্মায় উজ্জ্বল, আত্মাতেই যাঁর আনন্দ, যিনি আত্মার সুখে মগ্ন, তিনি অবশ্যই অবিনাশী ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্ত হন এবং সকল লোকের হিতসাধন করেন। (...)

"শোনো! যাঁরা নিজ আত্মাকে জানেন, তাঁরা সর্বত্র ব্রহ্মদর্শন করে থাকেন। (...)"

—গণেশপুরাণ, ক্রীড়াকাণ্ড, ১৪২। ২১ – ১৪২।[৩৭]

ক্রীড়াখণ্ডের ১৩৮শ থেকে ১৪৮শ অধ্যায় পর্যন্ত অংশটি গণেশগীতা নামে পরিচিত। এই অংশে গণেশ পরমেশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।[৩৮] গণেশগীতা রাজা বরেণ্য ও গণেশের গজানন অবতারের কথোপকথনের আকারে রচিত।

যুবরাজ কৃষ্ণনের মতে, গণেশগীতার নব্বই শতাংশ শ্লোকই ভগবদ্গীতা থেকে সামান্য পরিমার্জিত আকারে গৃহীত।[৩৯] উভয় গ্রন্থের বিষয়বস্তুও এক। কর্মযোগ, জ্ঞানযোগভক্তিযোগ দুই গ্রন্থেই আলোচিত হয়েছে। শুধু গণেশগীতায় কৃষ্ণের পরিবর্তে গণেশই কথক ও পরমেশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।[৩৯]

গ্রেগ বেইলির মতে, ভগবদ্গীতা গণেশগীতার সম্ভাব্য উৎস হলেও গণেশগীতায় মাত্র ৪১২টি শ্লোক রয়েছে। ভগবদ্গীতার একটি বড়ো অংশ এই গ্রন্থে অনুল্লিখিত রয়ে গিয়েছে। তাই দুই গ্রন্থ সর্বতোভাবে একই প্রকারের এবং গণেশগীতায় শুধুমাত্র গণেশকে কৃষ্ণের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে বললে ভুল হবে।[৪০] তাছাড়া গণেশগীতায় গণেশ ও রাজা বরেণ্যের কথোপকথনের ভঙ্গিটিও ভিন্নরূপ। ভগবদ্গীতায় অনুসন্ধিৎসু অর্জুন কৃষ্ণকে দার্শনিক প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু গণেশগীতায় রাজা বরেণ্য গণেশ সম্পর্কেই জানতে চেয়েছেন। তাই এই চরিত্রটি অর্জুন অপেক্ষা দুর্বলতর। যদিও বেইলি এই কথাও স্বীকার করেছেন যে উভয় গ্রন্থে আলোচিত ধর্মতত্ত্ব বস্তুত একই।[৪০]

ক্রীড়াকাণ্ড: চতুর্যুগে গণেশ

[সম্পাদনা]
চতুর্ভূজ গণেশমূর্তি; এশিয়ান সিভিলাইজেশন্স মিউজিয়াম, সিঙ্গাপুর।

গণেশপুরাণের ক্রীড়াখণ্ডে গণেশের চার অবতারের উপাখ্যান বিবৃত হয়েছে। এই চার অবতার চার যুগে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলে কথিত।[৩৯][৪১] ক্রীড়াখণ্ডের ১৫৫টি অধ্যায় চার যুগের আখ্যানের ভিত্তিতে বিভক্ত। ১ম থেকে ৭২শ অধ্যায় সত্যযুগ, ৭৩শ থেকে ১২৬শ অধ্যায় ত্রেতাযুগ এবং ১২৭শ থেকে ১৩৭শ অধ্যায় পর্যন্ত দ্বাপরযুগের বর্ণনা পাওয়া যায়।[৪২] ১৩৮শ থেকে ১৪৮শ পর্যন্ত অধ্যায়গুলি গণেশগীতা নামে পরিচিত। ১৪৯শ অধ্যায় বর্তমান কলিযুগের কথা বর্ণিত হয়েছে।[৪২] অবশিষ্ট ১৪৯শ থেকে ১৫৫শ অধ্যায় পর্যন্ত অংশটি আলোচনামূলক। একটি প্রামাণ্য পুরাণ গ্রন্থের যে সকল সাহিত্যগুণ থাকা প্রয়োজন, তা এই অংশেই সন্নিবেশিত হয়েছে।[৪২]

গণেশপুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী, সত্যযুগে গণেশের বিনায়ক অবতার। ইনি দশভূজ, বৃহদাকার, দানশীল ও সিংহবাহন।[৪৩][৪৪] ত্রেতাযুগে গণেশ ষড়ভূজ, শ্বেতবর্ণ ও ময়ূরবাহন ময়ূরেশ্বর রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।[৪২] এরপর দ্বাপরযুগে গণেশ শিবপার্বতীর পুত্র গজানন রূপে অবতীর্ণ হন। গজানন চতুর্ভূজ, রক্তবর্ণ ও মুষিকবাহন।[৪৩] আবার কলিযুগে গণেশের ধূম্রকেতু অবতার। ইনি দ্বিভূজ, ধূম্রবর্ণ ও অশ্ববাহন।[৪২][৪৫] গণেশপুরাণে কথিত হয়েছে, কলিযুগে গণেশ বর্বর সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে দৈত্যদানব হত্যা করবেন।[৪৩]

পুথি ও সংস্করণ

[সম্পাদনা]

গ্রেম এম. বেইলি গণেশপুরাণের উপাসনাখণ্ডের একটি ইংরেজি অনুবাদ ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন যে, ভারতের গ্রন্থাগারগুলিতে এই পুরাণের কয়েকশো পুথি রক্ষিত আছে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, খ্রিস্টীয় সপ্তদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই পুরাণ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।[৪৬][৪৭]

মহারাষ্ট্রের অন্যতম অষ্টবিনায়ক মন্দিরের জন্য খ্যাত মোরগাঁওয়ের শ্রীযোগীন্দ্র মঠের অধ্যক্ষ বালবিনায়ক মহারাজ লালসারে দুই খণ্ডে গণেশপুরাণের একটি অনুবাদ প্রকাশ করেন। এই অনুবাদের উপাসনাখণ্ডটি ১৯৭৯ সালে এবং ক্রীড়াকাণ্ডটি ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।[৪৮] গাণপত্য সম্প্রদায়ের বিবর্তন সম্পর্কে থাপান যে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, তাতে তিনি এই সংস্করণটিই সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।[৪৯]

শ্রীযোগীন্দ্র মঠের প্রকাশনার আগেও গণেশপুরাণের নিম্নোক্ত প্রকাশনাগুলির কথা জানা যায়:[৪৯]

  • পুণে, ১৮৭৬
  • বোম্বাই, ১৮৭৬
  • বোম্বাই, ১৮৯২, গোপাল নারায়ণ অ্যান্ড কোম্পানি

অষ্টাদশ শতাব্দীতে গণেশপুরাণ তামিলে অনূদিত হয়। তামিল সংস্করণে এই পুরাণের নাম হল বিনায়ক পুরাণ।[৫০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Brown 1991, পৃ. 95।
  2. Bailey 1995, পৃ. 12, 52-53, 71-72, 89-91।
  3. Brown 1991, পৃ. 88-92।
  4. Bailey 1995, পৃ. ix, 115।
  5. Rocher 1986, পৃ. 174।
  6. Bailey 1995, পৃ. 115-117।
  7. Bailey 2008, পৃ. xi-xii, 70-78।
  8. Thapan 1997, পৃ. 30-33।
  9. Brown 1991, পৃ. 95-97।
  10. Bailey 1995, পৃ. 4, 116।
  11. Thapan 1997, পৃ. 304।
  12. Bailey 1995, পৃ. ix।
  13. Brown 1991, পৃ. 1-3।
  14. Bailey 1995, পৃ. ix-x।
  15. Brown 1991, পৃ. 1-3, 19, 122-124।
  16. Oliver Leaman (২০০৬)। Encyclopedia of Asian Philosophy। Routledge। পৃষ্ঠা 440–442। আইএসবিএন 978-1-134-69114-2 
  17. R Stevenson, Analysis of Ganesa Purana with special reference to the history of Buddhism, Journal of the Royal Asiatic Society, Vol 8, pages 319-329
  18. Brown 1991, পৃ. 101-107।
  19. Bailey 2008, পৃ. 70-78।
  20. Bailey 2008, পৃ. xi-xii, 78-85।
  21. For a review of major differences of opinions between scholars on dating see Thapan, op. cit., pp. 30–33.
  22. Preston, Lawrence W., p. 103. "Subregional Religious Centers in the History of Maharashtra: The Sites Sacred to Gaṇeśa", in: N. K. Wagle, ed., Images of Maharashtra: A Regional Profile of India.
  23. Bailey 2008, পৃ. 80-85।
  24. R. C. Hazra, "The Gaṇeśa Purāṇa", Journal of the Ganganatha Jha Research Institute, Vol. 9, 1951, pp. 79–99. For dating see p. 97.
  25. Farquhar, J. N., An Outline of the Religious Literature of India, pp. 226 and 270.
  26. R Stevenson, গুগল বইয়ে Analysis of Ganesa Purana, Journal of the Royal Asiatic Society, Art 16, Vol 8, page 319
  27. Bailey 1995, পৃ. 287।
  28. Encyclopaedia of Hinduism edited by Nagendra Kumar Singh , First edition 2000, published by Anmol Publistions Pvt. Ltd., New Delhi আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৪৮৮-১৬৮-৭ (set) P. 883
  29. Bailey 1995, পৃ. 116।
  30. Bailey 1995, পৃ. 116-120।
  31. R Stevenson, গুগল বইয়ে Analysis of Ganesa Purana, Journal of the Royal Asiatic Society, Art 16, Vol 8, page 320
  32. Bailey 1995, পৃ. 89-91, 103-105।
  33. Bailey 1995, পৃ. 50-51, 104, 147-150, 255-259, 263-265, 458।
  34. Bailey 1995, পৃ. 65-66, 104-118।
  35. R Stevenson, গুগল বইয়ে Analysis of Ganesa Purana, Journal of the Royal Asiatic Society, Art 16, Vol 8, page 321
  36. Bailey 1995, পৃ. 51-52, 65-68, 392-393।
  37. Bailey 2008, পৃ. 386-387।
  38. Rocher, Ludo. "Gaṇeśa's Rise To Prominence", p. 73 in: Ganesh: Studies of an Asian God, Robert L. Brown, editor. (State University of New York: Albany, 1991) আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৯১৪-০৬৫৭-১
  39. Krishan 1999, পৃ. 79–80
  40. Bailey 2008, পৃ. 617।
  41. Brief summaries of events in each incarnation are given in John A. Grimes. Ganapati: Song of the Self. pp. 100–105. (State University of New York Press: Albany, 1995) আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৯১৪-২৪৪০-৭
  42. Bailey 2008, পৃ. 5।
  43. Bailey 2008, পৃ. 5 with footnote 2।
  44. Ganesha Purana I.46.28 in the 1993 Sharma edition. In the version used by Bhāskararāya in his Khadyota commentary on the Ganesha Sahasranama the verse is numbered I.46.33 and the name is given as Kaśyapasuta.
  45. Yuvraj Krishan, op. cit. p. 84, footnote 13, says that in the Ganesha Purana 2.131.32, Dhūmraketu is said to have four arms but in ibid. 2.1.21 and 2.85.15 he is said to have only two arms. The version given in Grimes mentions only two arms.
  46. Bailey 1995
  47. Bailey 2008
  48. Gaṇeśa PurāṇaSri Balvinayak maharaj lalsare (head of Śrī Yogīndra Maṭha), related texts such as 'Ganesha Vijaya', 'Ganesha Vwangmaya also published.। ১৯৭৯। 
  49. Thapan 1997, পৃ. 32।
  50. Thapan 1997, পৃ. 33।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]