ভূতত্বের ব্যাখ্যা অনুসারে গম্বুজ(ভূতত্ত্ব) বা ডোম একধরনের বাঁকা, উঁচু ভূমিভাগের গঠন কাঠামো যা প্রায় একটি অর্ধগলোকের ন্যায় আকৃতিযুক্ত। ভূমির উপর বসানো একটি উল্টানো বাটি বা একটি অর্ধেক কাটা কমলালেবুকে কল্পনা করলে গম্বুজের আকার কিছুটা অনুমান করা যাবে, যদিও গম্বুজকে একটি আদর্শ অর্ধগোলক কখনোই বলা যাবেনা। প্রকৃতির বেশিরভাগ গম্বুজ গোলাকার, অর্ধগোলাকার থেকে উপবৃত্তাকার আকৃতির হয় যার একটি কেন্দ্রীয় অক্ষ বর্তমান। কোনো কোনো গম্বুজের চুড়ো চ্যাপ্টাও হয়। গম্বুজের গঠন কাঠামো ভালোভাবে লক্ষ্য করলে কখনো কখনো তার গায়ে রিং বা বলয় আকৃতির প্রতিকৃতি লক্ষ্য করা যায় যা গম্বুজকে সমান্তরালে বেষ্টন করে থাকে। উপর থেকে দেখলে এই রিং গুলির বিভিন্ন পরত খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে নবীন শিলাস্তরের বেষ্টনী থাকে বাইরের অংশে এবং তারপর যতই ভেতর দিকে হওয়া হয় পাথরের স্তর পুরোনো হতে থাকে এবং সবচেয়ে পুরাতন শিলাস্তর অবস্থান করে গম্বুজের কেন্দ্রস্থলে। এই স্তরগুলি জমার সময় হয়তো আনুভূমিক ছিল, পরে গম্বুজ গঠনের সাথে সাথে বলয়াকার ধারণ করেছে।[১][২]
গম্বুজ গঠনের অনেকগুলি সম্ভাব্য প্রক্রিয়া রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রভাব-পরবর্তী উত্থান(পোস্ট-ইমপ্যাক্ট আপলিফ্ট), পুনর্নির্মাণ(রিফোল্ডিং) এবং ডায়াপিরিজম।
একটি অতি দ্রুতগামী ভূপ্রাকৃতিক জড়পদার্থের সাথে যদি আরো এক বেশি ভরযুক্তর জড়পদার্থের সংঘাত হয় তাহলে সংঘর্ষস্থলে এক সুবিশাল গর্ত তৈরী হয় এবং সেই গর্তের কেন্দ্রবিন্দুতে কখনো কখনো গম্বুজ আকৃতির ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে উঠিত গম্বুজ সাধারণত বেশ বড় আকারের (মিটার-এর ১০ গুন্ পরিমাপের) হয় এবং এর উৎপত্তির কারণ হিসাবে জমির ভিত্তি এবং স্তরগুলির প্রভাব পরবর্তী দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়। এই দুর্বলতা গম্বুজের উত্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভূমিরূপের অগঠিত ও দুর্বল শিলার উলম্বদিকে স্থানচ্যুতি কারণেই এবং গম্বুজের নতুন নতুন স্তর তৈরী হয় এবং গম্বুজের উচ্চতা বৃদ্ধি হয়।[৩] উলম্ব চ্যুতির কারণ হিসাবে গম্বুজ গঠনের আগে যে দুটি বৃহৎ জড়পিন্ড বা শিলার সংঘর্ষ হয়েছিল সেই সংঘর্ষস্থলের কেন্দ্রে অবস্থানকারী ভূতাত্বিক দৃঢ় ভিত্তি ও বিভিন্ন স্তরযুক্ত কোনো শিলাসমষ্টির অবস্থানকেও দায়ী করা হয় এবং এই উলম্ব চ্যুতির প্রক্রিয়া মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে যুক্ত। আগে বলা হতো এই ধরনের গম্বুজের উচ্চতার কারণ প্রতিক্ষেপন(রিবাউন্ডিং) প্রক্রিয়া, কিন্তু এই প্রক্রিয়ার শর্ত হলো ভূমিরূপের শিলাগুলির স্থানচ্যুতি নমনীয় ভাবে(ইলাস্টিকালি) হতে হবে। শিলার নমনীয় স্থানচ্যুতি একটি অতি বিরল ঘটনা এবং তা কেবলমাত্র শিলার ব্যাপক ভাঙ্গন এবং তার পরবর্তী আংশিক গলন ইত্যাদি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব যার ফলে শিলার গতিভিত্তিক ধর্মেরও(মেকানিকাল প্রপার্টিস) ব্যাপক পরিবর্তন হয়।[৩][৪]
গঠনগত গম্বুজ নির্মাণের আরেকটি প্রক্রিয়া হল পুনর্ভাজ (রিফোল্ডিং) যাতে অনুভূমিক চাপের মাধ্যমে একটি স্তরের উপর আরেকটি স্তরের উপরিপতন ঘটিয়ে গম্বুজ আকৃতির নির্মাণ করা হয়। প্রাথমিক একটি অনুভূমিক চাপের মাধ্যমে ভূমিরূপের একদিকে খাড়াই ভূমির ভাঁজ বা স্তর গঠিত হয় যা মূল চাপের ৯০ ডিগ্রী কৌণিক অবস্থানের অপর একটি অনুভূমিক চাপের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। এরই পদ্ধতি অনেকটা তরঙ্গ হস্তক্ষেপ (ওয়েভ ইন্টারফেরেন্স) প্রক্রিয়ার অনুরূপ যার মাধ্যমে গিরিখাত ও গম্বুজ জাতীয় ভূমিরূপ গঠিত হয়।[৫][৬]
ডায়াপিরিজম হল গম্বুজ গঠনের একটি প্রক্রিয়া। পৃথিবীর কোনো অংশে ভূপৃষ্ঠের উপর ও ভূঅভ্যন্তরে একে উপরের উপর অবস্থিত বিভিন্ন ভূমিস্তরের মধ্যে যদি বিক্ষিপ্ত শিলাখণ্ড অবস্থান করে তখন তা কাঠামোকে অস্থির করে তোলে যার ফলে সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রে ঘনত্ব নতির (ডেন্সিটি গ্রেডিয়েন্ট) উৎপন্ন হয়। তখন সাম্যাবস্থা গঠনের জন্য কম ঘনত্বের স্তরটি ভূপৃষ্ঠের দিকে উত্থিত হতে থাকে এবং একটি "অশ্রুর ন্যায়" আকারযুক্ত ভূমিরূপের গঠন করে যার গোলাকার প্রান্তটি ভূপৃষ্ঠের একে উপরের উপর অবস্থিত ভূমিস্তরের সংলগ্নে অবস্থান করে। যদি এই একে উপরের উপর অবস্থিত ভূমিস্তরগুলি যথেষ্ট পরিমানে দুর্বল হয় তাহলে সাম্যাবস্থা লাভের সময় যখন বিভিন্ন স্তরে অবস্থিত শিলাখণ্ডের বিচ্যুতি ঘটে তখন এই ভূমিস্তরগুলির গঠনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে গম্বুজ আকৃতির নির্মাণ হয়।বিশেষত ভূমিস্তরের যে অংশটি অতিমাত্রায় দুর্বল তাকে বিদীর্ণ করে তার নিম্নস্থিত ভূমিস্তর উর্ধে উঠে আসে। ভূমিরূপ গঠনের এই প্রক্রিয়াকে বলে ডায়াপিরিজম যেখানে ডায়াপার হল এক বিশেষ আকৃতিযুক্ত বক্র নমনীয় ভূমিভাগ। কখনো কখনো ভূমিস্তরের মধ্যে লবণের স্তর অবস্থান করে যা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে যায়। এই লবণের স্তরের অবস্থান ভূমিভাগের স্তরগুলিকে পর্যাপ্ত দুর্বলতা দান করে যা গম্বুজ গঠনে সহায়ক। [৭][৮]