গম্ভীর সিং মুড়া

গম্ভীর সিং মুড়া
জন্ম১৯৩০
মৃত্যু৯ নভেম্বর, ২০০২
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩০-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-২০০২)
পরিচিতির কারণছৌ নাচ
সন্তানকার্তিক সিং মুড়া
গণেশ সিং মুড়া
পরশুরাম সিং মুড়া
পিতা-মাতাজিপা সিং মুড়া
পুরস্কারপদ্মশ্রী
সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার

গম্ভীর সিং মুড়া (১৯৩০- ৯ নভেম্বর ২০০২) একজন ভারতীয় ছৌ নাচ শিল্পী ছিলেন[][][], যিনি তার নৃত্যকুশলতার জন্য ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন।

প্রথম জীবন

[সম্পাদনা]

গম্ভীর সিং মুড়া ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের মানভূম জেলার অন্তর্গত অযোধ্যা পাহাড়ের নিকটস্থ পিটিদিরি নামক একটি গ্রামে[] ছৌ নৃত্যশিল্পী জিপা সিং মুড়ার কনিষ্ঠ পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেন।[] জন্মের পর তার নাম রাখা হয় বাবু সিং। খুব অল্প বয়সে পিতৃহীন গম্ভীরা তার মাতুলালয় পিটিদিরি গ্রামে চৌদ্দ বছর পর্য্যন্ত বসবাস করেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার পৈতৃক ভিটে চড়িদা গ্রামে চলে যান। এই সময় চড়িদা গ্রামের নিকটস্থ জঙ্গলে বসবাসকারী পশুপাখিদের অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করে তিনি ছৌ নাচের জন্য চাল তৈরী করেন। তিনি সাত গ্রামের গরু চরাতেন এবং গরু চরাতে চরাতে বনে প্রকৃতির অনুষঙ্গ থেকে ঝুমুরের তালিম নেন। তিনি বলতেন তার শিক্ষাগুরু কামধেনু। মানভূমের ঝুমুরিয়া গোলাম মহম্মদ খাঁ'র উদ্যোগে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে বাঘমুন্ডির রাজদরবারে ছৌ নাচের আসরে মহিষাসুরের ভূমিকায় অভিনয় করে সম্মান অর্জন করেন।[]

নৃত্য জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে নতুন দিল্লি শহরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস চলাকালীন রাষ্ট্রপতি ভবনে পূর্ব ভারতের লোকনৃত্যের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতায় পুরুলিয়ার ছৌ নাচ দল মহিষাসুর-বধ পালা করে প্রথম স্থান অধিকার করে। এই পালায় গম্ভীর সিং মুড়া মহিষাসুরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। [n ১] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যাপক আশুতোষ ভট্টাচার্য ও মিলেনা সলভিনী নামক এক ফরাসির সহায়তায় গম্ভীর সিং একটি ছৌ দল নিয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লন্ডন, প্যারিস,[] নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি[] প্রভৃতি শহরে যাত্রা করে পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য পরিবেশন করেন।

স্বীকৃতি

[সম্পাদনা]
  • ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারত সরকার গম্ভীর সিং মুড়াকে চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করে।[]
  • ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার প্রাপক হিসেবে গম্ভীর সিং মুড়ার নাম ঘোষণা করা হয়।[] চড়িদা গ্রামে তার একটি বৃহৎ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

দেশে ও বিদেশে সম্মান ও পুরস্কার লাভ করলেও গম্ভীর সিং মুড়ার ব্যক্তিগত জীবন ছিল দারিদ্র্যে পরিপূর্ণ। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর কলকাতা শহরে তার চোখের অপারেশন হয়। ৯ই নভেম্বর ৩১৫ আপ হাওড়া চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেনে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া যাত্রা করার সময় গম্ভীর সিং মুড়ার মৃত্যু হয়।[]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. নিজেই সাজ করলাম। মুখোশ বাঁধলাম। আমি মহিষাসুর, ক্ষীরোদ গণেশ, অনিল দুর্গা আর ভুবি কার্তিক। ক্ষীরোদ মঞ্চে ঢুকে দু-চার পাক নাচামাত্র দর্শকরা শান্ত। তারপর আমি প্রায় ভুঁইমেশা হয়ে স্টেজে ঢুকে একটু বুক তুলে গণেশের দিকে তাকিয়েছি। তারপর পাশে রাখা ঢাল তর‍্যাল নিয়ে দৌড়ে গিয়ে সামনে পিছনে কয়েকটা ভল্ট দিলাম। চড়চড় করে হাততালি পড়ল, আর থামতে চায় না। তারপর আর জানি নাই-- কোথায় বারিপদা, কোথায় মণিপুর। দুর্গা গণেশ কার্তিওকের সঙ্গে যুদ্ধে মাতাই গেলি। একসময় শুনলাম, বলছে পুরুলিয়ার ছৌ ফার্স্ট।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Chhau village comes alive at Kharagpur puja"। Times of India। ১৬ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  2. "Baghmundi is the place of Chhow dance"। Baghmundi Block Development Office। ২০১৫। ২ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  3. M. D. Muthukumaraswamy, Molly Kaushal (২০০৪)। "Folklore, Public Sphere, and Civil Society"। National Folklore Support Centre। পৃষ্ঠা 317। আইএসবিএন 9788190148146। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  4. "Famous Personalities"। Purulia District Official site। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  5. "Nepal Chandra Sutradhar"। Daricha। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  6. শতপথী, ইন্দ্রাণী দত্ত (আগস্ট ২০০৮)। ছৌ। লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র। আইএসবিএন 978-81-89956-08-0 
  7. বিরিঞ্চি দে, পদ্মশ্রী গম্ভীর সিং মুড়া, ছত্রাক সাহিত্য সংখ্যা, ১৩৯০ বঙ্গাব্দ
  8. "National Institute of Chhau and Folk Dances"। National Institute of Chhau and Folk Dances। ২০১৫। ২ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  9. "Padma Shri" (পিডিএফ)। Padma Shri। ২০১৫। নভেম্বর ১৫, ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৮, ২০১৫