গলদা সময়গত পরিসীমা: Valanginian–Recent | |
---|---|
![]() | |
American lobster, Homarus americanus | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
উপপর্ব: | Crustacea |
শ্রেণী: | Malacostraca |
বর্গ: | Decapoda |
উপবর্গ: | Pleocyemata |
অধোবর্গ: | Astacidea |
পরিবার: | Nephropidae Dana, 1852 |
Genera [১] | |
|
গলদা-চিংড়ি (ইংরেজি: Lobster) মোটা মাথাবিশিষ্ট ও কঠিন খোলসে মোড়ানো এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। এটি সন্ধিপদী (আর্থ্রোপোডা) প্রাণী হিসেবে পরিচিত চিংড়ির গোত্রবিশেষ। উচ্চ মূল্যমানের অধিকারী সামুদ্রিক খাদ্য হিসেবে এ ধরনের চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায়শঃই উপকূলীয় এলাকার অধিবাসীরা অধিক লাভবানের নিমিত্তে এ ধরনের চিংড়ি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।[২] এ চিংড়ির সম্মুখের পা দুটোর থাবা কাঁকড়ার পায়ের ন্যায় বেশ বড়, চ্যাপ্টা ও সমতূল্য।
গলদা-চিংড়ির পরিচয়ে কঠিন খোলার আবরণে ঢাকা প্রাণী হিসেবে অনেক ধরনের চিংড়ি রয়েছে। তন্মধ্যে - স্পাইন লবস্টার, স্লিপার লবস্টার, স্কোয়াট লবস্টার, রীফ লবস্টার অন্যতম। থাবাযুক্ত গলদা-চিংড়িই এ নামের সাথে বেশ মানানসই। কিন্তু স্পাইন লবস্টার, স্কোয়াট লবস্টার কিংবা স্লিপার লবস্টারে কোন থাবা নেই। সবচেয়ে কাছের গোত্রীয় হিসেবে থাবাযুক্ত গলদা চিংড়ি হিসেবে রয়েছে প্রবাল-প্রাচীরের কাছাকাছি অবস্থানরত রীফ লবস্টার এবং স্বাদু জলে বিচরণে নিয়োজিত এক প্রকার প্রাণী ক্রেফিসের তিনটি গোত্র।
জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, প্রায় ১৪০.২ ± ৩.০ থেকে ১৩৬.৪ ± ২.০ মিলিয়ন বছর পূর্বেকার ভ্যাল্যাংগিয়ান যুগ থেকে প্রসারিত হয়ে প্রায় ১৪৫.৫ ± ৪.০ থেকে ৬৫.৫ ± ২.০ মিলিয়ন বছর পূর্বেকার ক্রেট্যাসিয়াস সময়কালের মধ্যে থাবাযুক্ত গলদা-চিংড়ি এসেছে। [৩]
অন্যান্য জলজ প্রাণীর ন্যায় শৈশবকালীন সময়ে অনেক প্রজাতির গলদা-চিংড়িও আত্মরক্ষার্থে শরীরের রঙ পরিবর্তন করে থাকে। এর ১০টি হাটার উপযোগী পা রয়েছে। তন্মধ্যে - সামনের ৩ জোড়া পা থাবার উপযোগী কাঁটাযুক্ত। সামনের পা জোড়া বড় হয়। একাদিক্রমে অন্যান্য জোড়াগুলো একে-অপরের চেয়ে ছোট আকৃতির হয়ে থাকে।[৪] এছাড়াও, জলজ প্রাণীদের সাথে মিল রেখে এটিও বড়ধরনের দ্বিপাক্ষিক প্রতিসাম্য বজায় রাখে। প্রায়শঃই এরা পরিবর্তনশীল ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি রাজ কাঁকড়ার ন্যায় বিশেষ থাবার অধিকারী।
এ ধরনের চিংড়ির মাথায় শূড়, এন্টিনুলস্, চোয়াল, ১ম এবং ২য় ম্যাক্সিলা এবং ১ম, ২য় ও ৩য় ম্যাক্সিলিপেড থাকে। গলদা-চিংড়ি সাগরের তলদেশের অন্ধকারময় পরিবেশে অবস্থানজনিত কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলাচলের জন্য ইন্দ্রিয় হিসেবে শূড় ব্যবহার করে।
শামুক এবং মাকড়শার ন্যায় গলদা চিংড়িতে নীল রক্ত বহমান। হিমোসায়ানিনে কপার পদার্থের উপস্থিতিজনিত কারণেই গলদা চিংড়িতে নীল রক্ত রয়েছে।[৫] (এর বিপরীতক্রমে মেরুদণ্ডী অন্যান্য অনেক প্রাণীর শরীরে হিমোগ্লোবিনে লোহার প্রাচুর্যতাজনিত কারণে লাল রক্ত বহমান।) এ চিংড়ি সবুজ রঙের হেপাটোপ্যানক্রিয়েসের অধিকারী যা প্রাণীদেহের ন্যায় যকৃৎ এবং অগ্ন্যাশয়ের কাজ করে থাকে।[৬] এটি শেফ বা বাবুর্চীদের কাছে তোম্যালে নামে পরিচিত।
সাম্প্রতিককালের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, গলদা-চিংড়ি বয়সের সাথে সাথে তাদের কর্মক্ষমতা হারানো, দূর্বলতা কিংবা বয়সজনিত কারণে প্রজনন শক্তির বিলুপ্তি ঘটে না। অধিকন্তু ছোট গলদা-চিংড়ির তুলনায় তাদের প্রজনন শক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই দীর্ঘ জীবনের জন্য টেলোমেরেজ নামক এক ধরনের এনজাইম বিশেষ ভূমিকা রাখে যা টিটিএজিজি প্রক্রিয়ায় ডিএনএ ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে ক্ষয়পূরণ করে দেয়।[৭] এ ধারাবাহিকতাকে প্রায়শঃই ডিএনএ'র টেলোমেরেজ নামে অভিহিত করা হয়।[৮][৯]
সকল মহাসাগরেই গলদা-চিংড়ি দেখতে পাওয়া যায়। তারা পর্বতময়, বালুকাময় কিংবা কর্দমাক্ত সমুদ্রতটে বসবাস করতেই পছন্দ করে বেশি। গলদা-চিংড়ি সর্বভূক প্রাণী হিসেবে পরিচিত। শিকার হিসেবে সচরাচর এরা ক্ষুদ্রাকৃতি মাছ, শম্বুকজাতীয় কোমলাঙ্গ জন্তু, পোকা, কিছু জলজ উদ্ভিদ খেয়ে জীবনধারণ করে। এছাড়াও, গলদা চিংড়ির পাকস্থলীতে তাদেরই চামড়া দেখা গেছে।[১০]
সাধারণতঃ গলদা-চিংড়ি লম্বায় ২৫–৫০ সেন্টিমিটার (১০–২০ ইঞ্চি)* হয়ে থাকে। সমুদ্রের তলদেশে খুব ধীরে নড়াচড়ার মাধ্যমে চলাফেরা করে থাকে। যখন তারা ভেসে বেড়ায় তখন তাদের তলপেট কুচকিয়ে যায়। এটি সেকেন্ডে ৫ মিটার হিসেবে ঘণ্টায় ১১ মাইল গতিবেগে চলাচল করে।[১১]
গলদা-চিংড়ি তাদের দীর্ঘজীবনের কারণে অবিশ্বাস্য রকমের বড় ও আকার-আকৃতির হয়ে থাকে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গলদা-চিংড়ি পাওয়া গেছে কানাডার নোভা স্কোটিয়ায়। এটি ২০.১৫ কিলোগ্রাম (৪৪.৪ পাউন্ড) ওজনের।[১২][১৩]
উত্তর আমেরিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ সময় পর্যন্ত আমেরিকান লবস্টার তেমন কোন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। নিউইয়র্ক এবং বোস্টনবাসীদের আগমনের প্রেক্ষাপটেই গলদা-চিংড়ির স্বাদ সম্বন্ধে জনগণ অবগত হয় ও বাণিজ্যিকভিত্তিতে এর চাষ হতে থাকে।[১৪] ঐ সময়ে গলদা-চিংড়িকে দারিদ্র্যের খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অথবা, গৃহভৃত্য হিসেবে মেইন, ম্যাসাচুসেটস এবং কানাডার ম্যারিটাইমসে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে এ খাদ্য গ্রহণে বাধ্য করতো কিংবা চুক্তিনামায় উল্লেখ করা থাকতো যে তাদেরকে সপ্তাহে দু'দিনের বেশি গলদা-চিংড়ি খাওয়ানো হবে না।[১৫]
আমেরিকান লবস্টার তখন মূলতঃ জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপকরণ সার হিসেবে অথবা মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিংশ শতাব্দীতে এসে এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়। তখন এটি অন্যান্য টিনের পাত্র বা ক্যানে রক্ষিত প্রধান খাদ্যের চেয়ে অধিক মূল্যমানের হয়ে যায়।[১৬]
বাংলাদেশের রফতানী বাণিজ্যে মৎস্য খাতের মধ্যে গলদা চিংড়ি বিরাট অবদান রাখছে ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলরূপে বিবেচিত। বিশ্বব্যাপী এর ক্রমবর্ধিষ্ণু চাহিদা, স্বাদ ও মূল্যমানের কারণে এর চাষ দ্রুত বাড়ছে। লবণাক্ততার কারণে সামুদ্রিক চিংড়ি উপকূলীয় এলাকাভিন্ন অন্য কোন স্থানে চাষ করা না গেলেও স্বাদু পানির মাছ হিসেবে এটি দেশের সকল স্থানে চাষ করা যায়। মিঠা পানির সর্ববৃহৎ চিংড়ি প্রজাতি হিসেবে গলদা চিংড়ি সুপরিচিত। সত্তরের দশক হতে বাংলাদেশ চিংড়ি রপ্তানি করে। [১৭]