গাড়ির ব্যাটারি বা অটোমোটিভ ব্যাটারি হচ্ছে এক ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি যা মোটর গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল স্টার্টিং মোটরে(বৈদ্যুতিক শক্তি কর্তৃক চালিত) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, যা পর্যায়ক্রমে রাসায়নিক শক্তি দ্বারা চালিত অন্তর্দহন ইঞ্জিনকে সক্রিয় করে এবং এর মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে গাড়ি গতিপ্রাপ্ত হয়। একবার ইঞ্জিন চালু হয়ে গেলেও, ব্যাটারির মাধ্যমেই গাড়ির বৈদ্যুতিক সিস্টেমগুলিতে শক্তি সরবরাহ হয়, এক্ষেত্রে চাহিদার হ্রাস-বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে অল্টারনেটর ব্যাটারিকে চার্জ করে।
সাধারণত স্টার্টিং মোটর, ব্যাটারির ক্ষমতার ৩ শতাংশেরও কম ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে। একারণে অটোমোটিভ ব্যাটারিগুলিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে করে স্বল্প সময়ের জন্য সর্বাধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এজন্য এই ব্যাটারিগুলিকে মাঝেমধ্যে "এসএলআই ব্যাটারি" (স্টার্টিং, লাইটিং এবং ইগনিশন) নামেও উল্লেখ করা হয়। এসএলআই ব্যাটারিগুলিকে ডিপ-ডিসচার্জিং-এর উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয় না এবং একটি সম্পূর্ণ ডিসচার্জ ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে ফেলতে পারে। [১]
ইঞ্জিন চালু করার পাশাপাশি, যখন চার্জিং সিস্টেম থেকে সরবরাহকৃত শক্তির তুলনায় গাড়ির বৈদ্যুতিক শক্তি চাহিদা বেড়ে যায় তখন একটি এসএলআই ব্যাটারি এই অতিরিক্ত শক্তির যোগান দেয়। এটি যন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর ভোল্টেজ স্পাইক-কে নিয়ন্ত্রণ করে, এভাবে এটি একটি স্ট্যাবিলাইজার হিসেবেও কাজ করে।[২] ইঞ্জিন চলমান অবস্থায়, অল্টারনেটরের মাধ্যমে বেশিরভাগ শক্তি সরবরাহ করা হয় যেখানে একটি ভোল্টেজ রেগুলেটর থাকে যার ফলে আউটপুট ভোল্টেজ ১৩.৫ থেকে ১৪.৫ ভোল্টের মধ্যে থাকে। [৩] আধুনিক এসএলআই ব্যাটারিগুলি লেড-এসিড ধরনের হয়ে থাকে, যেখানে সিরিজ সংযোগে সংযুক্ত ছয়টি সেলের মাধ্যমে ১২ ভোল্ট সিস্টেম (বেশিরভাগ যাত্রীবাহী যানবাহন এবং হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে) অথবা বারোটি সেলের মাধ্যমে ২৪ ভোল্ট সিস্টেম (ভারী ট্রাক ও মাটিকাটা ক্রেনগাড়ি এর ক্ষেত্রে) গঠনের মাধ্যমে শক্তি সরবরাহ করা হয়। [৪]
ব্যাটারির ঋণাত্বক তড়িৎদ্বারে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটতে পারে যেখানে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরী হতে পারে, এটি হয় মূলত ব্যাটারির ভেন্টগুলি ব্লক থাকার কারণে অথবা ইগনিশন উৎসের সাথে মিলিতভাবে ত্রুটিপূর্ণ ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার কারণে। ইউএস ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ১৯৯৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, যানবাহনের ব্যাটারি বিস্ফোরণজনিত কারণে হতাহত হবার ঘটনাগুলির ৩১ শতাংশই ঘটেছে যখন ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছিল। এরপরের সবচেয়ে সাধারণ ঘটনাগুলির (যখন ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়) মধ্যে রয়েছে, যখন ক্যাবল তারের সংযোগ নিয়ে কাজ করা হয়, জাম্প স্টার্ট করার সময়, চার্জিং সোর্সের আগে ডেড-ব্যাটারির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে এবং গাড়ির চ্যাসিস-এর সাথে সংযোগ স্থাপন না হয়ে বরং সরাসরি গ্রাউন্ডেড ব্যাটারি পোস্টে সংযুক্ত হবার ফলে এবং যখন ফ্লুইড লেভেল পরীক্ষা করা হয়। আহতদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কেমিকাল বার্নে ভুগেছে এবং প্রায় তিন চতুর্থাংশ অন্যান্য সম্ভাব্য ইঞ্জুরিগুলির মধ্যে চোখের ইঞ্জুরিতে আহত হয়েছে।
১৯ শতকের শুরুর দিকে ইলেকট্রিকাল যানবাহন গুলির ডিজাইন অন্তর্দহন ইঞ্জিনসম্পন্ন যানবাহনের বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনের সামনে টিকতে পারছিলো না। অন্তর্দহন ইঞ্জিনসম্পন্ন গাড়িগুলির উচ্চ গতির কারণে পরিবহন সেক্টরে এগুলি ছিল বেশ দক্ষ এবং কার্যকরী সমাধান। বিশ্বব্যাপী যান-পরিবহনের জন্য জীবাশ্ম-জ্বালানীর চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া এবং অন্তর্দহন ইঞ্জিন এর গাড়িগুলি পরিবেশ দূষণে বিশাল ভূমিকা রাখার কারণে ১৯৯০ এর দশক থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও উন্নয়ন সংঘটিত হয়। [৫]
ইলেকট্রিক গাড়িগুলিকে (ইভি) উচ্চ-ভোল্টেজ সম্পন্ন ইলেকট্রিক-গাড়ির-ব্যাটারি দ্বারা শক্তি সরবরাহ করা হয় তবে এগুলিতে সাধারণত একটি অটোমোটিভ ব্যাটারিও থাকে যাতে করে গাড়িগুলো স্ট্যান্ডার্ড অটোমোটিভ এক্সেসরিজসমূহ (১২ ভোল্টে চালানোর জন্য ডিজাইন করা) ব্যবহার করতে পারে। এগুলিকে প্রায়শই অক্সিলিয়ারি ব্যাটারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অন্তর্দহন ইঞ্জিনযুক্ত যানবাহনের মত প্রচলিত পদ্ধতিতে ইলেকট্রিক গাড়িগুলি কাজ করে না, এগুলি অন্তর্দহন ইঞ্জিনবিশিষ্ট গাড়ির মত অল্টারনেটর ব্যবহার করে অক্সিলিয়ারি ব্যাটারিকে চার্জ করে না - বরং এগুলি উচ্চ ভোল্টেজকে কমিয়ে এনে প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ লেভেল (সাধারণত প্রায় ১৪ ভোল্ট) তৈরীর জন্য ডিসি-টু-ডিসি কনভার্টার ব্যবহার করে। [৬]
আগেকার দিনে গাড়িগুলিতে ব্যাটারি ছিল না কারণ সেগুলিতে ইলেকট্রিকাল সিস্টেম খুব সীমিত পর্যায়ে ছিল। ইলেকট্রিক হর্নের পরিবর্তে সাধারণ ঘন্টা/বেল ব্যবহৃত হত, হেডলাইটগুলি ছিল গ্যাসচালিত এবং ক্র্যাঙ্কের মাধ্যমে ইঞ্জিন চালু করা হতো। ১৯২০ সালের কাছাকাছি সময়ে এসে গাড়ির ব্যাটারিগুলির ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয় কারণ সেসময় গাড়িগুলি ইলেকট্রিক স্টার্টার মোটর সম্পন্ন ছিল। ১৯৭১ সালে সিল্ড ব্যাটারি উদ্ভাবিত হয় যেগুলিতে কোনোরকম রিফিলিং-এর প্রয়োজনীয়তা নেই।[৭]
সর্বপ্রথম স্টার্টিং এবং চার্জিং সিস্টেমগুলিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যেন এগুলি ৬ ভোল্ট ও পজিটিভ-গ্রাউন্ড সিস্টেমে কাজ করে ও একইসাথে ব্যাটারির পজিটিভ প্রান্তের সাথে গাড়ির চ্যাসিস সরাসরি সংযুক্ত থাকে।[৮] আজকের দিনে, রাস্তার প্রায় সব যানবাহনেরই নেগেটিভ গ্রাউন্ড সিস্টেম রয়েছে।[৯] এক্ষেত্রে, ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্তের সাথে গাড়ির চ্যাসিস সংযুক্ত থাকে।
১৯১৮ সালে হাডসন মোটর কার কোম্পানী-ই সর্বপ্রথম স্ট্যান্ডার্ডাইজ্ড ব্যাটারি ব্যবহার করেছিল যখন তারা ব্যাটারি কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল ব্যাটারি ব্যবহার করা শুরু করেছিল। বিসিআই হল এমন একটি সংস্থা যা ব্যাটারির ডাইমেনশনাল স্ট্যান্ডার্ড মান নির্ধারণ করে। [১০]
১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত গাড়িগুলি ৬ ভোল্ট ইলেকট্রিকাল সিস্টেম ও ব্যাটারি ব্যবহার করতো। এরপর যখন উচ্চতর কমপ্রেশন-রেশিও সম্পন্ন বড় ইঞ্জিনগুলি চালু হতে অধিক পরিমাণ তড়িৎ শক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো, তখন ইলেকট্রিকাল সিস্টেম ও ব্যাটারি ৬ ভোল্ট থেকে ১২ ভোল্ট সিস্টেমে উন্নীত হল।[১১] তবে ছোট গাড়িগুলি যেগুলি চালনা করতে কম শক্তি প্রয়োজন, সেগুলি ৬ ভোল্ট সিস্টেমেই পরিচালিত হত উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি সময়ের ভল্ক্সওয়াগেন বিটল্ এবং ১৯৭০ এর সিট্রোয়েন টু-সিভি।
১৯৯০ এর দশকে একটি ৪২ ভোল্ট ইলেকট্রিকাল সিস্টেমের প্রস্তাব করা হয়েছিল। আরো অধিক শক্তিশালী তড়িৎচালিত এক্সেসরিজসমূহ এবং হালকা অটোমোবাইল তার সরঞ্জামাদির সংযোগের জন্য এই সিস্টেমকে তৈরী করা হয়েছিল। উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন মোটরের প্রাপ্যতা, নতুন নতুন তার-সংযোগের কৌশলসমূহ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ-ভোল্টেজসম্পন্ন স্টার্টার/জেনারেটর ব্যবহার করে এমন হাইব্রিড যানবাহনের সিস্টেমের উপর ফোকাস রাখার কারণে প্রধান অটোমোটিভ ভোল্টেজ থেকে পরিবর্তিত হওয়ার চাপ অনেকাংশেই কমে গিয়েছে।[১২]
ওয়েট সেল ব্যাটারির একটি উদাহরণ হচ্ছে অটোমোবাইল ব্যাটারি যেখানে ছয়টি সেল রয়েছে। লেড স্টোরেজ ব্যাটারির প্রত্যেকটি সেল পর্যায়ক্রমিক লেড-অ্যালয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত যা স্পঞ্জ লেড(ক্যাথড প্লেট) দিয়ে পূর্ণ থাকে অথবা লেড অক্সাইড(অ্যানোড) দিয়ে কোটিং করা থাকে। [১৩] প্রতিটি সেলে ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে সালফিউরিক এসিড দ্রবণ ব্যবহৃত হয়। শুরুর দিকে, প্রতিটি সেলেই একটি করে ফিলার ক্যাপ ছিল যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রোলাইটের লেভেল দেখা যেত এবং সেলে পানি যোগ করা যেত। ফিলার ক্যাপে একটি ভেন্ট-হোল/ছিদ্র থাকত যার ভেতর দিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস (চার্জিং এর সময় উৎপন্ন) সেল থেকে বেরিয়ে যেতে পারতো।
একটি সেলের পজিটিভ প্লেটগুলির সাথে তার সংলগ্ন সেলের নেগেটিভ প্লেটগুলির মধ্যে ছোট ও ভারী স্ট্র্যাপের মাধ্যমে সেলগুলি পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির উপরে এবং কখনো কখনো পাশে একজোড়া ভারী টার্মিনাল, যেটি সীসা দিয়ে প্লেটিং করা থাকে (ক্ষয়রোধের জন্য) স্থাপন করা হয়। প্রথমদিকের অটো ব্যাটারিগুলিতে শক্ত রাবারের কেস এবং কাঠের প্লেট সেপারেটর/বিভাজক হিসেবে ব্যবহার করা হত। তবে আধুনিক ব্যাটারিগুলিতে প্লেটসমূহের স্পর্শ ও শর্ট-সার্কিট রোধ করতে প্লাস্টিকের কেস এবং উভেন-শীট ব্যবহৃত হয়।
অতীতে, অটো ব্যাটারিগুলি সক্রিয়কালীন সময়ে যে পানির বিশ্লেষণ/ডিকম্পোজিশন হতো, সেই পানিকে প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যাটারিগুলির নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হত। "লো-মেইন্টেনেন্স" (কখনো কখনো "জিরো-মেইন্টেনেন্স"-ও বলা হয়) ব্যাটারিগুলির প্লেটের উপাদান হিসেবে ভিন্ন ধরনের সংকর পদার্থ ব্যবহৃত হয়, যার ফলে চার্জিং-এর সময় বিশ্লেষিত পানির পরিমাণ হ্রাস পায়। একটি আধুনিক ব্যাটারির কার্যকর আয়ুকালীন সময়ে অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন নাও থাকতে পারে; কিছু ধরনের ব্যাটারিতে, সেলগুলিতে যে পৃথক ফিলার ক্যাপ থাকে সেটি অপসারণ করা হয়েছে। এধরনের ব্যাটারিগুলির একটি দুর্বলতা হচ্ছে এগুলো ডিপ-ডিসচার্জিং সহ্য করতে পারে না, উদাহরণস্বরূপ গাড়ির লাইট অন করে রেখে দিলে এর ব্যাটারি সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যায়। এতে লেড-প্লেট ইলেকট্রোডের উপর লেড সালফেট জমা হয়ে কোটিং পড়ে এবং এর ফলে ব্যাটারির আয়ু এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ভিআরএলএ ব্যাটারি, যা এবজর্বড গ্লাস ম্যাট (এজিএম) ব্যাটারি নামেও পরিচিত, ডিপ-ডিসচার্জিং-এ তুলনামূলকভাবে এগুলি অধিক সহ্যক্ষমতাসম্পন্ন তবে এগুলি বেশ ব্যয়বহুল। [১৪] ভিআরএলএ ব্যাটারির কোষে পানি যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তীব্র ওভারচার্জিং অথবা অভ্যন্তরীন কোনো ত্রুটির কারণে ব্যাটারির কেসটি ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিটি সেলে একটি করে অটোমেটিক প্রেশার রিলিজ ভাল্ভ থাকে। ভিআরএলএ ব্যাটারিতে ইলেক্ট্রোলাইট ছড়িয়ে পড়তে পারে না, একারণে এই ব্যাটারিগুলো মোটরসাইকেলের মত যানবাহনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
ব্যাটারি সাধারণত সিরিজ সার্কিটে সংযুক্ত ছয়টি গ্যালভ্যানিক কোষ দ্বারা গঠিত। সম্পূর্ণ চার্জে মোট ১২.৬ ভোল্ট পাওয়া যায় যেখানে প্রতিটি সেল ২.১ ভোল্ট সরবরাহ করে।[১৫] ডিসচার্জিং-এর সময় নেগেটিভ(লেড) টার্মিনালে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যার ফলে বাহ্যিক বর্তনীতে ইলেকট্রন মুক্ত হয়। অপরদিকে পজিটিভ (লেড-অক্সাইড) টার্মিনালে আরেকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যেখানে বাহ্যিক বর্তনী থেকে ইলেকট্রন শোষিত হয়। এভাবে বাহ্যিক বর্তনীতে(তড়িৎ সুপরিবাহী) ইলেকট্রনের প্রবাহ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ব্যাটারি ডিসচার্জিং এর সময় ইলেক্ট্রোলাইটের এসিড প্লেটের উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে ফলে প্লেটের পৃষ্ঠতলে লেড-সালফেট তৈরী হয়। অন্যদিকে ব্যাটারি যখন রিচার্জ হয়, তখন রাসায়নিক বিক্রিয়াটিও উলটে যায়; লেড সালফেট পুনরায় লেড অক্সাইড গঠন করে। অতঃপর প্লেটগুলি পুনরায় তাদের আগের অবস্থায় ফিরে যায়, এভাবে প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
কিছু কিছু গাড়ি অন্যান্য স্টার্টার ব্যাটারি ব্যবহার করে। ২০১০ সালের পোর্শে নাইন-ওয়ান-ওয়ান জিটি-থ্রি আরএস-এ ওজন বাঁচানোর জন্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে।[১৬] ভারী যানবাহনগুলিতে ২৪ ভোল্ট সিস্টেমের জন্য সিরিজে সংযুক্ত দুটি ব্যাটারি থাকতে পারে অথবা সিরিজ-প্যারালাল কম্বিনেশনে সংযুক্ত অনেকগুলি ব্যাটারির গ্রুপ থাকতে পারে যা ২৪ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। [১৭]
ফিজিক্যাল সাইজ, ধরন ও টার্মিনালের অবস্থান এবং মাউন্টিং এর প্রকারের উপর ভিত্তি করে ব্যাটারিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। [১৪]
অ্যাম্পিয়ার আওয়ারস (এ.এইচ) হচ্ছে ব্যাটারির শক্তি সঞ্চয় ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত একটি একক। ইউরোপের আইন অনুসারে এই রেটিংটি আবশ্যক।
অ্যাম্পিয়ার আওয়ার রেটিং-টি হচ্ছে মূলত (৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৬.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) তাপমাত্রায় ব্যাটারি ২০ ঘন্টা ধরে স্থির হারে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে (যেসময় ভোল্টেজ ড্রপের কাট-অফ মান হচ্ছে ১০.৫ ভোল্ট) এর সাথে ২০ ঘন্টার গুণফল। তাত্ত্বিকভাবে, ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়, একটি ১০০ এ.এইচ ব্যাটারি ১০.৫ ভোল্ট ভোল্টেজ বজায় রেখে টানা ২০ ঘন্টা ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৫ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। এটি উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে এ.এইচ ক্ষমতা এবং ডিসচার্জিং হারের মধ্যে সম্পর্ক লিনিয়ার নয়; ডিসচার্জিং-এর হার বাড়ার সাথে সাথে এ.এইচ ক্ষমতা কমতে থাকে। ১০০ এ.এইচ রেটিং-এর একটি ব্যাটারি স্থির ১০ অ্যাম্পিয়ার হারে ডিসচার্জ হওয়ার সময় ১০ ঘন্টা ধরে ১০.৫ ভোল্টের বেশি ভোল্টেজ বজায় রাখতে সক্ষম হবে না। তাপমাত্রার সাথে সাথেও এ.এইচ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
একটি ব্যাটারির ন্যূনতম বৈদ্যুতিক লোড বজায় রাখার ক্ষমতা; ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট(২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) তাপমাত্রায়, একটি লেড-এসিড ব্যাটারি এর ভোল্টেজ ১০.৫ ভোল্টের নিচে নামার আগ পর্যন্ত যতটুকু সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ২৫ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম সেটিই হচ্ছে ব্যাটারির আরসিএম।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্যাটারি কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল (বিসিআই) গ্রুপ সাইজ একটি ব্যাটারির ফিজিকাল ডাইমেনশন যেমন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা নির্দিষ্ট করে। এই সংস্থাটি এসব গ্রুপ নির্ধারণ করে থাকে। [২১] [২২]
ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত তাপ, উদাহরণস্বরূপ- যখন উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ইলেকট্রোলাইট বাষ্পীভূত হয়, তখন ইলেক্ট্রোলাইটের সংস্পর্শে আসা প্লেটের কার্যকর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল হ্রাস পায় এবং সালফেশন হয়ে থাকে। তাপমাত্রার সাথে সাথে গ্রিডের ক্ষয়হার বাড়তে থাকে। এছাড়া কম তাপমাত্রার কারণেও ব্যাটারি খারাপ হয়ে যেতে পারে।
যদি ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়ে এমন অবস্থানে চলে আসে যে এটির দ্বারা ইঞ্জিন চালু করা সম্ভব না, তখন শক্তির একটি বাহ্যিক উৎসের মাধ্যমে ইঞ্জিনটির জাম্প-স্টার্ট করানো যেতে পারে। ইঞ্জিনটি একবার চালু হয়ে গেলে এটি ব্যাটারিকে রিচার্জ করতে পারবে, তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে অল্টারনেটর এবং চার্জিং সিস্টেম অক্ষতিগ্রস্ত ও সক্রিয় হতে হবে।
ব্যাটারির টার্মিনালে ক্ষয়ের ফলে তড়িৎ রোধজনিত কারণে গাড়ি চালু নাও হতে পারে, তবে ডাইইলেক্ট্রিক গ্রিজের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। [২৩] [২৪]
যখন ব্যাটারির ইলেকট্রোড লেড সালফেটের কঠিন স্তর দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ে তখন এটিকে সালফেশন বলে, এর ফলে ব্যাটারি দুর্বল হয়ে পড়ে। যখন ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জিত অবস্থায় থাকে না ও ডিসচার্জড থাকে তখন সালফেশন হতে পারে। [২৫] ব্যাটারির ক্ষতি রোধ করতে সালফেটেড ব্যাটারিগুলি ধীরে ধীরে চার্জ করা উচিত। [২৬]
এসএলআই ব্যাটারিগুলি ডিপ-ডিসচার্জিং এর জন্য বানানো হয় না এবং ডিপ-ডিসচার্জিং এর কারণে এগুলির আয়ু কমে যায়। [২৭]
গাড়ির যেসব ব্যাটারিগুলি লেড-এন্টিমনি প্লেট ব্যবহার করে, সেগুলিতে তড়িৎ-বিশ্লেষণ ও বাষ্পীভবনের কারণে কমে যাওয়া পানিকে প্রতিস্থাপন করতে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পূরণ করতে হয়। প্লেটের গাঠনিক উপাদান ক্যালসিয়ামে পরিবর্তন করে সম্প্রতি ব্যাটারির যেসব ডিজাইনগুলো বানানো হয়েছে, সেগুলিতে পানি লস এর হার কমেছে। আধুনিক গাড়ির ব্যাটারিগুলির মেইন্টেনেন্স চাহিদা হ্রাস পেয়েছে এবং এই ব্যাটারিগুলির সেলে পানি সংযোজনের জন্য ক্যাপ নাও থাকতে পারে। এধরনের ব্যাটারিতে প্লেটের উপর অতিরিক্ত ইলেক্ট্রোলাইট থাকতে পারে।
কিছু ব্যাটারি উৎপাদনকারী ব্যাটারির চার্জের অবস্থাটি দেখানোর জন্য এতে একটি বিল্ট-ইন হাইড্রোমিটার সংযুক্ত করে থাকে।
ব্যাটারি অকেজো হওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াটি হচ্ছেঃ ব্যাটারির প্লেটের সক্রিয় উপাদানটি ক্ষয় হয়ে সেল্গুলির নিচের দিকে এসে জমা হয় এবং এর ফলে প্লেটগুলি শর্ট সার্কিট হয়ে যেতে পারে। তবে ব্যাটারির এক সেট প্লেটগুলিকে ভেদ্য পদার্থ দিয়ে তৈরী প্লাস্টিকের পৃথকীকরণ ব্যাগে আবদ্ধ করার মাধ্যমে এই সমস্যাটি যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব। এর ভিতর দিয়ে ইলেক্ট্রোলাইট ও আয়নসমূহ গমন করতে পারে তবে এটি স্লাজ(নরম কাদার ন্যায় পদার্থ) গঠনের মাধ্যমে প্লেটগুলির মধ্যে কোনোরকম সংযোগ স্থাপন হতে দেয়না। এই স্লাজ মূলত উভয় ইলেকট্রোডে তৈরী হওয়া লেড-সালফেট দিয়ে গঠিত।
অটোমোটিভ ব্যাটারিগুলির রিসাইক্লিং/পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য কাঁচামালের চাহিদা হ্রাস পায়, ল্যান্ড-ফিল-এ পড়ে থাকা বিষাক্ত সীসা সরানো সম্ভব এবং অনুপযুক্তভাবে ব্যাটারির ডিসপোজাল এর ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব। একবার যখন লেড-এসিড ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা শেষ হয়ে যায় তখন এটি ইউজড-লেড-এসিড ব্যাটারি(ইউএলএবি) হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাসেল কনভেনশন এর অধীনে এটিকে বিপজ্জনক বর্জ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা-এর তথ্য অনুসারে ১২ ভোল্টের গাড়ি-ব্যাটারি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পুনর্ব্যবহৃত হওয়া পণ্য। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন অটো ব্যাটারি প্রতিস্থাপিত হয় এবং এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ-ই রিসাইক্লিং/পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রয়োগ করা হয়। [২৮] তবে এই রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াটি অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ভুলভাবে করা হতে পারে। গ্লোবাল ওয়েস্ট ট্রেড / বৈশ্বিক বর্জ্য বাণিজ্যের অংশ হিসেবে ইউজড-লেড-এসিড ব্যাটারিগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে এর ভিতরের উপাদানসমূহ পুনরুদ্ধারের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলি থেকে ব্যাটারিগুলিকে উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে আসা হয়। এই লেডের প্রায় ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। পিওর-আর্থ এর হিসাবমতে ইউজড-লেড-এসিড-ব্যাটারি প্রক্রিয়াকরণ থেকে ১২ মিলিয়নেরও বেশি তৃতীয় বিশ্বের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। [২৯]