গীতা জয়ন্তী | |
---|---|
পালনকারী | হিন্দু |
ধরন | হিন্দু |
উদযাপন | গীতা দান, গীতা পাঠ |
তারিখ | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ [১] |
সংঘটন | বার্ষিক |
সম্পর্কিত | মোক্ষদা একাদশী |
গীতা জয়ন্তী বা গীতা মহোৎসব হল ভগবদ্গীতাকে কেন্দ্র করে একটি অনুষ্ঠান, যা হিন্দু পঞ্জিকার মাগশীর্ষ (বাংলা পঞ্জিকার অগ্রহায়ণ) মাসের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশীর দিনে উদযাপিত হয়। ইতিহাসের এই দিনে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের কাছে ভগবদ্গীতা জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। এই মহান দিনটিকে স্মরণ করতে এই উৎসবটি উদযাপন করা হয়।[২][৩]
ভগবদ গীতা ("ভগবানের গান") বিশিষ্ট হিন্দু ধর্মগ্রন্থ যা মহাকাব্য মহাভারতের একটি অংশ। [৪] ভগবদ্গীতা গঠনগতভাবে ১৮ অধ্যায়ে বিভক্ত, এতে ৭০০টি শ্লোক রয়েছে। [৫] [৬]
ভগবদ্গীতা অর্জুন এবং ঈশ্বরের মূর্ত রূপ শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে একটি কথোপকথন হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তু উপনিষদ থেকে প্রাপ্ত। এতে জ্ঞান , কর্ম এবং ভক্তি এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং জীবাত্মার মোক্ষ লাভের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ভগবদ্গীতার সংলাপ আরম্ভ হয়েছিল। সমঝোতার অনেক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরও যুদ্ধ অনিবার্য ছিল। অবশেষে যুদ্ধের দিন সমাগত হল, এবং দুই বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হল। যুদ্ধ যখন শুরু হতে চলেছে ঠিক তখনই অর্জুন কৃষ্ণকে যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে রথ নিয়ে যেতে বললেন যাতে বিরোধী শক্তিকে আরও কাছ থেকে দেখতে পারেন। বিরোধী পক্ষ তার আত্মীয়, গুরু এবং বন্ধুদের নিয়ে গঠিত দেখে, অর্জুন তাদের সাথে লড়াই করার বিষয়ে নৈতিক দ্বিধায় পড়েন এবং কৃষ্ণের কাছে সাহায্য চান। যে কথোপকথনটি তৎসময়ে শুরু হয়েছিল, অর্জুনের প্রতি কৃষ্ণের উপদেশ, বার্তা এবং শিক্ষা, বর্তমানে ভগবদ্গীতা নামে বিখ্যাত। [৭]
ভগবদ্গীতা আরতি [৮] বা গীতা আরতি হল ভগবদ্গীতার একটি প্রার্থনা।
পূজাকে আরও প্রভাবান্বিত করতে আরতি করা যেতে পারে বা বাদ্যযন্ত্রের সাথে আরতি গান গাওয়া যায়। সাধারণত পূজা অনুষ্ঠানের শেষে আরতি করা হয়। বলা হয়, পুজোয় কোনো ত্রুটি থাকলে আরতির মাধ্যমে তা পূরণ হতে পারে। [৯]
গীতা আরতির প্রথম স্তবকটি নিম্নরূপ হতে পারে :
জয় ভগবদ্ গীতে
জয় ভগবদ্ গীতে
হরি হিয় কমল বিহারিণী
সুন্দর সুপুণীতে
জয় ভগবদ্ গীতে— স্তবক ১
আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব চলাকালীন, কুরুক্ষেত্র শহরের ব্রহ্মা সরোবরের চারপাশে ৩০০ টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্টল স্থাপন করা হয় ।[১০] তীর্থযাত্রীরা কুরুক্ষেত্রের ৪৮ কোস পরিক্রমাও করেন।
২০১৬ সালে, হরিয়ানা সরকার ৬ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসবের আয়োজন করেছিল। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি উৎসবের উদ্বোধন করবেন; পরে তা করেছিলেন হরিয়ানার রাজ্যপাল কাপ্তান সিং সোলাঙ্কি এবং মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার।[১১]
২০১৭ সালে, ২৫ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত গীতা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ উদ্বোধন করেছিলেন।[১২]
আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব ২০২৯ হরিয়ানার মুখ্য সচিব কেশনি আনন্দ অরোরা হরিয়ানার থানেসারে ব্রহ্মা সরোবর জলের পুলের তীরে ২৩ নভেম্বর ২০১৯-এ উদ্বোধন করেছিলেন।
হরিয়ানা সরকার ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব উদযাপন করেছে।[১৩]
২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে গীতা মহোৎসব অত্যন্ত আড়ম্বরে পালিত হয়েছিল।[১৪] এই উদযাপনটি কুরুক্ষেত্রে ২ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[১৫] আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব কুরুক্ষেত্র উন্নয়ন পর্ষদ, হরিয়ানা পর্যটন, জেলা প্রশাসন, উত্তর অঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পাতিয়ালা এবং তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ হরিয়ানা দ্বারা আয়োজিত হয়।
এ বছর ১৯ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গীতা জয়ন্তী মহোৎসবের আয়োজন করা হবে। আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব ২০২২-এর অধীনে, ৪ ডিসেম্বর, ১৮,০০০ শিক্ষার্থী থিম পার্কে গীতা পাঠ করে। পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুর ইসকনে ৫০০০ ভক্তের সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় গীতা শ্লোক।[১৬]
গীতা পাঠ সাধারণত গীতা ধ্যানম্ এবং গীতা আরতি দিয়ে শুরু হয় যা কখনও কখনও সমস্ত গীতা অধ্যায়ের শুরুতে বা শেষে পাওয়া যায়।[১৭] [১৮]