গুঁড়িপানা

গুঁড়িপানা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
জগৎ/রাজ্য: প্লান্টি (Plante)
গোষ্ঠী: ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes)
ক্লেড: সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস)
গোষ্ঠী: মনোকট্‌স (Monocots)
বর্গ: Alismatales
পরিবার: আরাসি (Araceae)
গণ: Wolffia
(লিনিয়াস) হর্কেল এক্স উইমার
প্রজাতি: W. arrhiza
দ্বিপদী নাম
Wolffia arrhiza
(লিনিয়াস) হর্কেল এক্স উইমার
পানির উপরিতলে গুঁড়িপানার স্তর

গুঁড়িপানা (বৈজ্ঞানিক নাম: Wolffia arrhiza) পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সপুষ্পক আবৃতবীজী সংবাহী উদ্ভিদ[][][] এটি জলজ উদ্ভিদসমৃদ্ধ আরাসি পরিবারভুক্ত প্রজাতিক সদস্য। অ্যারাম বা পিস্টিয়া প্রভৃতি গণও এই পরিবারভুক্ত।

বাসস্থান

[সম্পাদনা]

এটি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি। এছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে অভিযোজিত উদ্ভিদ হিসেবেও পাওয়া যায়।[][] এটি এমন একধরনের জলজ উদ্ভিদ, যা সাধারণত শান্ত পানি যেমন পুকুরে জন্মে থাকে।

শারীরতত্ত্ব

[সম্পাদনা]

গুঁড়িপানা উদ্ভিদের সবুজ অংশ অর্থাৎ পাতা একটি চ্যাপ্টা গোলীয় তল, যা উদ্ভিদকে পানিতে ভাসতে সাহায্য করে। উদ্ভিদটি প্রস্থে ১ মিমি চওড়া। এতে মাত্র কয়েক সারি পত্ররন্ধ্র বিদ্যমান।[] এতে কোনো মূল থাকে না। একটিমাত্র পুংকেশরগর্ভকেশরযুক্ত ফুল উৎপাদন করে। তবে প্রায়শই এর গোলাকার অংশ থেকে অঙ্গজ জননের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদ জন্ম নেয়।[][] শীতকালে গুঁড়িপানা সুপ্তাবস্থায় চলে যায় এবং পানির তলদেশে স্টুরিওন বা কন্দ হিসেবে অবস্থান করে। স্টুরিওন হলো এক ধরনের রূপান্তরিত বিটপ যা থেকে শীতের শেষে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়।[] এই উদ্ভিদটি উভজীবী হিসেবে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যেমন নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে, তেমনি পরিবেশ থেকে দ্রবীভূত কার্বন হিসেবেও শক্তি শোষণ করে।[]

পুষ্টি উপাদান

[সম্পাদনা]

এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। এর সবুজ অংশের শুষ্কভরের প্রায় ৪০% প্রোটিন এবং কন্দের ৪০% হলো শ্বেতসার[][] এতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড, তুলনামূলক অধিক পরিমাণে ভোজ্য খনিজ লবণ ও পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কভিটামিন বি১২ রয়েছে।[] সহজলভ্য ও সস্তা খাদ্য হিসেবে বহু আগে থেকেই বার্মা, লাওসথাইল্যান্ডে গুঁড়িপানা খাওয়ার চল রয়েছে। এসব দেশে উদ্ভিদটি খাই-নাম (পানির ডিম) নামে পরিচিত।[১০]

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

গুঁড়িপানা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। মাত্র ৩ থেকে ৪ দিনেই ভাসমান বেডে চাষ করা যায়। ইন ভিট্রো পদ্ধতিতেও মাত্র চারদিনে দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।[১১]

পয়ঃনিষ্কাশন

[সম্পাদনা]

কৃষিক্ষেত্রেপৌর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় গুঁড়িপানা অত্যন্ত উপযোগী।[১২] চিংড়ি খামারের তরল বর্জ্য শোষণ ও আত্তীকরণের কাজে গুঁড়িপানা ব্যবহৃত হয়।[১৩] উদ্ভিদটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পানি থেকে বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেনফসফরাস শোষণ করে।[] পয়ঃনিষ্কাশনে উৎপন্ন গুঁড়িপানা বিভিন্ন চাষযোগ্য প্রাণি, যেমন কার্পমাছ, নীলনদের তেলাপিয়া এবং মুরগির পরিপূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।[][১৪][১৫]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Pietryczuk, A., et al. (2009). The effect of sodium amidotrizoate on the growth and metabolism of Wolffia arrhiza (L.) Wimm. পোলিশ জার্নাল অব এনভাইরনমেন্টাল স্টাডিজ ১৮:৫ ৮৮৫-৯১।
  2. প্যান, এস. ও এস. এস. সি. চেন (১৯৭৯) The morphology of Wolffia arrhiza: A scanning electron microscopic study. বট বুল একাডেমিয়া সিনিকা ২০ ৮৯-৯৫।
  3. Czerpak, R., et al. (2004). Biochemical activity of auxins in dependence of their structures in Wolffia arrhiza (L.) Wimm. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে Acta Societatis Botanicorum Poloniae 73:4 269-75.
  4. "Wolffia arrhiza"জার্মপ্লাজম রিসোর্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (জিআরআইএন)কৃষি গবেষণা পরিসেবা (এআরএস), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৮ 
  5. "Wolffia arrhiza in Flora of North America @ efloras.org"efloras.org 
  6. "MoBot: Wolffia arrhiza"। ২৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০২০ 
  7. Al Khateeb, N. Duckweed use for sewage treatment and fodder production in Palestine. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে পানি ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা, ফিলিস্তিন
  8. Fujita, M., et al. (১৯৯৯). Nutrient removal and starch production through cultivation of Wolffia arrhiza. Journal of Bioscience and Bioengineering 87:2 194-8.
  9. Czerpak, R. and I. K. Szamrej. (2003). The effect of β-estradiol and corticosteroids on chlorophylls and carotenoids content in Wolffia arrhiza (L.) Wimm. (Lemnaceae) growing in municipal Bialystok tap water. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখে পোলিশ জার্নাল অব এনভিরনমেন্টাল স্টাডিজ ১২:৬ ৬৭৭-৮৪
  10. Bhanthumnavin, K. and M. G. McGarry. (1971). Wolffia arrhiza as a possible source of inexpensive protein. Nature (letter) 232:495.
  11. ন্যাশনাল একাডেমি অব সাইন্সেস Making aquatic weeds useful: Some perspectives for developing countries. ১৯৭৬, পৃষ্ঠা ১৪৯
  12. Körner, S., et al. (2003). The capacity of duckweed to treat wastewater. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ মার্চ ২০১২ তারিখে Journal of Environmental Quality 32:5 1583-90.
  13. Suppadit, T., et al. (2008). Treatment of effluent from shrimp farms using watermeal (Wolffia arrhiza). ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ScienceAsia 134 163-8.
  14. Naskar, K., et al. (1986). Yield of Wolffia arrhiza (L.) Horkel ex Wimmer from cement cisterns with different sewage concentrations, and its efficacy as a carp feed. Aquaculture 51:3-4 211-16.
  15. Chareontesprasit, N. and W. Jiwayam. (2001). An evaluation of Wolffia meal (Wolffia arrhiza) in replacing soybean meal in some formulated rations of Nile tilapia. Pakistan Journal of Biological Sciences 4:5 618-20.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]