গুজগান

গুজগান রাজ্য

গুজগান পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া -এ অবস্থিত
গুজগান
গুজগান
গুজগান (পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া )
সরকাররাজতন্ত্র
ঐতিহাসিক যুগপ্রাচীন যুগ
বর্তমানে যার অংশআফগানিস্তান
গুজগানের ঝুলাদ ছিলেন গুজগান অঞ্চলের একজন ইরানী শাসক এবং টোখারিস্তানের ইয়াবঘুসের একজন ভাসাল। মুদ্রারটি ৬৮৮ সালের।

গুজগান ( ফার্সি: گوزگان) (আরবিতে জুজ্জান) গোজগান, গুজগানান বা কুজগান নামেও পরিচিত, একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল, যা উত্তর আফগানিস্তানের প্রাথমিক মধ্যযুগীয় রাজত্ব ছিল। গুজগানের নির্দিষ্ট সীমা ছিলনা। ঐতিহাসিক কারণে এর সীমানার ক্রমাগত হ্রাসবৃধি ঘটে। অঞ্চলটি বিভিন্ন সময় আরব, পারস্য, তাং রাজবংশ ও সুলতান মাহমুদের অধীনে শাসিত হয়েছে।

ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

এলাকাটি ফারসি শব্দে "গুজগান" বা বহুবচনে "গুজগানান" নামে পরিচিত ছিল, আরবীয়রা "জুজ্জান" নামে চিনতো। প্রাচ্যবিদ ভ্লাদিমির মিনরস্কির মতে গুজগান নামের অর্থ " আখরোট ", আখরোটের জন্য এলাকাটি আজও পরিচিত। ১৯ শতকের পণ্ডিত হেনরি জর্জ রাভার্টি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে মুরঘাব নদীর তীরে দেশটির দুটি অংশে বিভক্ত হওয়ার ফলে বহুবচনে 'গুজগানান' নামের উদ্ভূত হয়েছিল।[]

ভূগোল

[সম্পাদনা]
জাওজান প্রদেশের নিকটে সার্পিলাকার নদী

গুজগানের সীমানা কখনই সঠিকভাবে নির্ণিত হয়নি এবং সময়ের সাথে সাথে সীমানার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। গুজগানের সাথে অবশ্যই জওজান প্রদেশের আধুনিক প্রশাসনিক সীমানা ও প্রতিবেশী ফারিয়ব প্রদেশের সাথে কোন সম্পর্ক নেই , কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে মায়মনা (ফারিয়ব প্রদেশের রাজধানী), আন্দখুই, শিবরঘান (জওজান প্রদেশের রাজধানী) সার-ই পোল ( সারে পোল প্রদেশের রাজধানী) আশেপাশের জমিগুলিকে গুজগানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[][] মধ্য এশীয় স্তেপ এবং ইরানি মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত, গুজগান উর্বর নদী উপত্যকায় আসীন, যাযাবর উপজাতিদের পাশাপাশি শহুরে জনসংখ্যার মিশ্রণে বিকশিত, যাযাবর উপজাতিদের পশুপালন এই অঞ্চলের জীবিকা ছিল যা মধ্যযুগীয় ভূগোলবিদদের দৃষ্টিতে রাজ্যের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ্য।[] এটি প্রায়শই ইরান থেকে মধ্য এশিয়ায় সৈন্যবাহিনীর অগ্রসর হওয়ার পথ হিসাবে ব্যবহৃত হত।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

সপ্তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে, গুজগান অঞ্চলকে তুখারিস্তানের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে এবং অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকের আইনী নথি দ্বারা প্রত্যয়িত যে, এলাকাটি একটি স্থানীয় পরিবার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল, যারা গুজগান দেশের নাম তাদের রাজবংশীয় নাম হিসাবেও ব্যবহার করত। দেশের নামে রাজবংশের নাম সে যুগের রীতি ছিল।[] ঝুলাদ গোজগান এবং স্কাগ গোজগান সহ বেশ কয়েকজন শাসকের নাম পাওয়া যায়, যারা সম্ভবত সে পরিবারের উত্তরসূরি হবেন।[] রব রাজ্য, যেখানে ব্যাক্ট্রিয় ভাষায় অসংখ্য নথি পাওয়া গেছে, গুজগান রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল।[]

আরব বিজয়

[সম্পাদনা]
দ্বিতীয় খসরুর মুদ্রার উপরের ডান সীমানায় স্কাগ গোজগান কর্তৃক ।

মুসলিম পারস্য বিজয়ের অংশ হিসেবে ৬৫৩-৬৫৪ সালে আল-আহনাফ ইবনে কায়েসের অধীনে আরবরা গুজগান জয় করে; কিন্তু রাশিদুন খলিফা আলীর (৬৫৬-৬৬১) শাসনামলে আরবদের পূর্ব ইরান থেকে নিশাপুর পর্যন্ত বিতাড়িত করা হয় এবং তৃতীয় সাসানিয়ান পিরোজের রাজত্বে তোখারিস্তানের ইয়াবঘুরের সাহায্যে সিস্তানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।[] ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম তুর্কি খগানাত নিজেই তাং রাজবংশের দ্বারা অধিকৃত হয়েছিল, এবং খাগনাতের বেশিরভাগ অঞ্চলগুলি তাং সাম্রাজ্যের সংরক্ষিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল এবং আঞ্চলিক কমান্ডারে সংগঠিত হয়েছিল, যেমনটি গুজগান অঞ্চলের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।[][][]

৭৩৭ সালে, এলাকাটি আসাদ ইবনে আবদুল্লাহ আল-কাসরীর অধীনে আরবদের এবং খাগান সুলুকের অধীনে তুর্গেশের মধ্যে খারিস্তানের সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের স্থান ছিল।[][] ৭৪৩ সালে, জায়েদ ইবনে আলীর পুত্র আলীদ ইয়াহিয়া ইবনে জায়েদ বিদ্রোহ করেছিলেন কিন্তু গুজগানে উমাইয়া গভর্নর নাসর ইবনে সায়ারের কাছে পরাজিত ও নিহত হন। তার সমাধি পরে তীর্থস্থান ছিল।[][] আব্বাসীয় সময়ে, গুজগানের স্থানীয় গভর্নর আনবারে (সম্ভবত আধুনিক সার-ই পোলে) বসবাস করতেন, কিন্তু অন্যান্য বিবরণে শিবরঘানকে রাজধানী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভূগোলবিদ আল-মুকাদ্দাসী এবং ইয়াকুত আল-হামাউই আল -ইয়াহুদিয়া (আধুনিক মায়মনা) কে রাজধানী হিসাবে বিবেচনা করেছেন।[]

ফরিঘুনি শাসন

[সম্পাদনা]

আরব বিজয় সত্ত্বেও, পারস্যের পৌরাণিক নায়ক ফেরেদুন রাজার বংশধর দাবী করা একটি স্থানীয় রাজবংশ, ফরিঘুনি, তাদের রাজধানী কুন্দুরম থেকে শাসন করতে থাকে। একারণে ফরিঘুনিরা গুজগান-খুদা উপাধি ধারণ করেছিল।[][] তারা প্রথমে সামানিদের ও তারপর গজনীর সুলতান মাহমুদ গজনভীর অধীনস্ত হয়। ফারিঘুনিদের আমির আবুল-আব্বাস মামুন ফারিগুন সুলতান মাহমুদের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। ১০১৬ সালে ফরিগুনকে তার নিজ সেনারা হত্যা করে, তখন সুলতান মাহমুদ তার সভাসদ ইয়ালাংতুশকে গুজগানের শাসনভার দিয়েছিলেন।[]

ফরিঘুনিরা শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ছিল; তাদের শাসনামলে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্ম হল বেনামী ভুগোলবিদের গ্রন্থ হুদুদ উল-আলাম মিন আল-মাশরিক ইলা আল-মাগরিব[][১০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. লি ১৯৯৬, পৃ. ৮ (টীকা ১১)।
  2. হার্টম্যান ১৯৬৫, পৃ. ৬০৮।
  3. সিম্স‌-উইলিয়ামস ২০০১, পৃ. ৯।
  4. "...documents from the kingdom of Guzgan or Juzjan in northern Afghanistan , which is northwest of the kingdom of Rob, source of most of the other known Bactrian documents..." in বুলেটিন অব দ্য এশিয়া ইন্সটিটিউট (ইংরেজি ভাষায়)। ওয়াইন স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রেস। ২০০০। পৃষ্ঠা ১৩২। 
  5. "The definitive annexation of Tokharistan and Gandhara to the Western Türk Empire was to take place some years later, in c. 625, when Sasanian Iran became involved in the war against Byzantium that ultimately led to its eclipse." in দানি, আহমাদ হাসান; লিটভিন্সকি, বি এ (জানুয়ারি ১৯৯৬)। History of Civilizations of Central Asia: The crossroads of civilizations, A.D. 250 to 750 (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনেস্কো। পৃষ্ঠা ৩৭০–৩৭৫। আইএসবিএন 978-92-3-103211-0 
  6. দানি, আহমেদ হাসান; লিটভিন্সকি, বি এ (জানুয়ারি ১৯৯৬)। History of Civilizations of Central Asia: The crossroads of civilizations, A.D. 250 to 750 (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনেস্কো। পৃষ্ঠা ৩৭১–৩৭৫। আইএসবিএন 978-92-3-103211-0 
  7. সিম্স‌-উইলিয়ামস, নিকোলাস (২০০২)। "Nouveaux document bactriens du Guzgan (note d'information)"Comptes rendus des séances de l'Académie des Inscriptions et Belles-Lettres১৪৬ (৩): ১০৪৮। ডিওআই:10.3406/crai.2002.22500 
  8. লি ১৯৯৬, পৃ. ১১।
  9. লি ১৯৯৬, পৃ. ১২।
  10. ভ্লাদিমির মিনরস্কি, ভাসিলি ভাদিমিরোভিচ বারতলʹদ, ক্লিফোর্ড এডমন্ড বসওর্থ। হুদুদ আল-আলম; "দ্য রিজিয়ন্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড": এ পারসিয়ান জিওগ্রাফি, ৩৭২ (হিজরি) - ৯৮২ (খৃষ্টীয়) লুজাক প্রকাশনি, ১৯৭০

গ্রন্থতালিকা

[সম্পাদনা]
  • বসওর্থ, সি ই (২০০৯)। "JOWZJĀN"এনসাইক্লোপেডিয়া ইরানিকা, Vol. ১৫, Fasc. ১: Joči – Judeo-Persian communities of Iran, V.। নিউ ইয়র্ক: এনসাইক্লোপেডিয়া ইরানিকা ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা ৮১–৮২। 
  • হার্টম্যান, আর (১৯৬৫)। "Djūzdjān"অর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজনLewis, B.; Pellat, Ch. & Schacht, J.The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume II: C–G। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা ৬০৮–৬০৯। 
  • লি, জোনাথন এল (১৯৯৬)। The 'Ancient Supremacy': Bukhara, Afghanistan and the Battle for Balkh, 1731-1901। লেইডেন ও নিউ ইয়র্ক: ব্রিল। আইএসবিএন 978-90-04-10399-3 
  • সিম্স‌-উইলিয়ামস, নিকোলাস (২০০১)। "Bactrian Legal Documents from 7th- and 8th-Century Guzgan"। বুলেটিন অব দ্য এশিয়া ইন্সটিটিউট১৫: ৯–২৯। জেস্টোর 24049036