গুজগান রাজ্য | |
---|---|
সরকার | রাজতন্ত্র |
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাচীন যুগ |
বর্তমানে যার অংশ | আফগানিস্তান |
গুজগান ( ফার্সি: گوزگان) (আরবিতে জুজ্জান) গোজগান, গুজগানান বা কুজগান নামেও পরিচিত, একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল, যা উত্তর আফগানিস্তানের প্রাথমিক মধ্যযুগীয় রাজত্ব ছিল। গুজগানের নির্দিষ্ট সীমা ছিলনা। ঐতিহাসিক কারণে এর সীমানার ক্রমাগত হ্রাসবৃধি ঘটে। অঞ্চলটি বিভিন্ন সময় আরব, পারস্য, তাং রাজবংশ ও সুলতান মাহমুদের অধীনে শাসিত হয়েছে।
এলাকাটি ফারসি শব্দে "গুজগান" বা বহুবচনে "গুজগানান" নামে পরিচিত ছিল, আরবীয়রা "জুজ্জান" নামে চিনতো। প্রাচ্যবিদ ভ্লাদিমির মিনরস্কির মতে গুজগান নামের অর্থ " আখরোট ", আখরোটের জন্য এলাকাটি আজও পরিচিত। ১৯ শতকের পণ্ডিত হেনরি জর্জ রাভার্টি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে মুরঘাব নদীর তীরে দেশটির দুটি অংশে বিভক্ত হওয়ার ফলে বহুবচনে 'গুজগানান' নামের উদ্ভূত হয়েছিল।[১]
গুজগানের সীমানা কখনই সঠিকভাবে নির্ণিত হয়নি এবং সময়ের সাথে সাথে সীমানার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। গুজগানের সাথে অবশ্যই জওজান প্রদেশের আধুনিক প্রশাসনিক সীমানা ও প্রতিবেশী ফারিয়ব প্রদেশের সাথে কোন সম্পর্ক নেই , কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে মায়মনা (ফারিয়ব প্রদেশের রাজধানী), আন্দখুই, শিবরঘান (জওজান প্রদেশের রাজধানী) সার-ই পোল ( সারে পোল প্রদেশের রাজধানী) আশেপাশের জমিগুলিকে গুজগানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১][২] মধ্য এশীয় স্তেপ এবং ইরানি মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত, গুজগান উর্বর নদী উপত্যকায় আসীন, যাযাবর উপজাতিদের পাশাপাশি শহুরে জনসংখ্যার মিশ্রণে বিকশিত, যাযাবর উপজাতিদের পশুপালন এই অঞ্চলের জীবিকা ছিল যা মধ্যযুগীয় ভূগোলবিদদের দৃষ্টিতে রাজ্যের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ্য।[২] এটি প্রায়শই ইরান থেকে মধ্য এশিয়ায় সৈন্যবাহিনীর অগ্রসর হওয়ার পথ হিসাবে ব্যবহৃত হত।[২]
সপ্তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে, গুজগান অঞ্চলকে তুখারিস্তানের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে এবং অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকের আইনী নথি দ্বারা প্রত্যয়িত যে, এলাকাটি একটি স্থানীয় পরিবার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল, যারা গুজগান দেশের নাম তাদের রাজবংশীয় নাম হিসাবেও ব্যবহার করত। দেশের নামে রাজবংশের নাম সে যুগের রীতি ছিল।[৩] ঝুলাদ গোজগান এবং স্কাগ গোজগান সহ বেশ কয়েকজন শাসকের নাম পাওয়া যায়, যারা সম্ভবত সে পরিবারের উত্তরসূরি হবেন।[৩] রব রাজ্য, যেখানে ব্যাক্ট্রিয় ভাষায় অসংখ্য নথি পাওয়া গেছে, গুজগান রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল।[৪]
মুসলিম পারস্য বিজয়ের অংশ হিসেবে ৬৫৩-৬৫৪ সালে আল-আহনাফ ইবনে কায়েসের অধীনে আরবরা গুজগান জয় করে; কিন্তু রাশিদুন খলিফা আলীর (৬৫৬-৬৬১) শাসনামলে আরবদের পূর্ব ইরান থেকে নিশাপুর পর্যন্ত বিতাড়িত করা হয় এবং তৃতীয় সাসানিয়ান পিরোজের রাজত্বে তোখারিস্তানের ইয়াবঘুরের সাহায্যে সিস্তানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।[৫] ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম তুর্কি খগানাত নিজেই তাং রাজবংশের দ্বারা অধিকৃত হয়েছিল, এবং খাগনাতের বেশিরভাগ অঞ্চলগুলি তাং সাম্রাজ্যের সংরক্ষিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল এবং আঞ্চলিক কমান্ডারে সংগঠিত হয়েছিল, যেমনটি গুজগান অঞ্চলের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল।[৬][৭][২]
৭৩৭ সালে, এলাকাটি আসাদ ইবনে আবদুল্লাহ আল-কাসরীর অধীনে আরবদের এবং খাগান সুলুকের অধীনে তুর্গেশের মধ্যে খারিস্তানের সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের স্থান ছিল।[২][৮] ৭৪৩ সালে, জায়েদ ইবনে আলীর পুত্র আলীদ ইয়াহিয়া ইবনে জায়েদ বিদ্রোহ করেছিলেন কিন্তু গুজগানে উমাইয়া গভর্নর নাসর ইবনে সায়ারের কাছে পরাজিত ও নিহত হন। তার সমাধি পরে তীর্থস্থান ছিল।[২][৮] আব্বাসীয় সময়ে, গুজগানের স্থানীয় গভর্নর আনবারে (সম্ভবত আধুনিক সার-ই পোলে) বসবাস করতেন, কিন্তু অন্যান্য বিবরণে শিবরঘানকে রাজধানী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভূগোলবিদ আল-মুকাদ্দাসী এবং ইয়াকুত আল-হামাউই আল -ইয়াহুদিয়া (আধুনিক মায়মনা) কে রাজধানী হিসাবে বিবেচনা করেছেন।[২]
আরব বিজয় সত্ত্বেও, পারস্যের পৌরাণিক নায়ক ফেরেদুন রাজার বংশধর দাবী করা একটি স্থানীয় রাজবংশ, ফরিঘুনি, তাদের রাজধানী কুন্দুরম থেকে শাসন করতে থাকে। একারণে ফরিঘুনিরা গুজগান-খুদা উপাধি ধারণ করেছিল।[২][৯] তারা প্রথমে সামানিদের ও তারপর গজনীর সুলতান মাহমুদ গজনভীর অধীনস্ত হয়। ফারিঘুনিদের আমির আবুল-আব্বাস মামুন ফারিগুন সুলতান মাহমুদের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। ১০১৬ সালে ফরিগুনকে তার নিজ সেনারা হত্যা করে, তখন সুলতান মাহমুদ তার সভাসদ ইয়ালাংতুশকে গুজগানের শাসনভার দিয়েছিলেন।[৯]
ফরিঘুনিরা শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ছিল; তাদের শাসনামলে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্ম হল বেনামী ভুগোলবিদের গ্রন্থ হুদুদ উল-আলাম মিন আল-মাশরিক ইলা আল-মাগরিব।[১][১০]