গুজরাত সালতানাত ગુજરાત સલ્તનત | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৪০৭–১৫৭৩ | |||||||||||||
পতাকা | |||||||||||||
![]() ১৫২৫ সালে গুজরাত সালতানাত[১] | |||||||||||||
অবস্থা | সালতানাত | ||||||||||||
রাজধানী | পাতন (১৪০৭–১৪১১) আহমেদাবাদ (১৪১১–১৪৮৪, ১৫৩৫–১৫৭৩) মুহাম্মাদাবাদ (১৪৮৪–১৫৩৫) | ||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | পুরনো গুজরাতি উর্দু ফার্সি | ||||||||||||
ধর্ম | হিন্দুধর্ম ইসলাম জৈন | ||||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||||
মুজাফফরি রাজবংশ | |||||||||||||
• ১৪০৭–১৪১১ | প্রথম মুজাফফর শাহ | ||||||||||||
• ১৪১১–১৪৪৩ | প্রথম আহমেদ শাহ | ||||||||||||
• ১৪৪৩–১৪৫১ | প্রথম মুহাম্মদ শাহ | ||||||||||||
• ১৪৫১–১৪৫৮ | দ্বিতীয় কুতুবউদ্দিন আহমেদ শাহ | ||||||||||||
• ১৪৫৮–১৫১১ | মাহমুদ বেগারহা | ||||||||||||
• ১৫১১–১৫২৮ | দ্বিতীয় মুজাফফর শাহ | ||||||||||||
• ১৫২৬-১৫৩৭ | বাহাদুর শাহ | ||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||
• প্রথম মুজাফফর শাহ কর্তৃক দিল্লি সালতানাত থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা | ১৪০৭ | ||||||||||||
১৫০৯ | |||||||||||||
১৫৩১ | |||||||||||||
১৫৩৪ | |||||||||||||
১৫৩৭ | |||||||||||||
১৫৪৬ | |||||||||||||
• আকবর কর্তৃক অধিকৃত | ১৫৭৩ | ||||||||||||
| |||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | গুজরাত, দমন ও দিউ এবং মুম্বাই |
গুজরাত সালতানাত ছিল ১৫শ শতাব্দীর প্রথম দিকে গুজরাতে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন সালতানাত। ১৩৯১ সালে শাসক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জাফর খানকে দিল্লি সালতানাতের পক্ষ থেকে গুজরাতের গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয়।[৩] তিনি রাজপুতদের তাঙ্কা গোত্র [৪][৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩][১৪] বা খাত্রি[১৫][১৬][১৭][১৮][১৯] গোত্রের ছিলেন। জাফর খান (পরবর্তীতে প্রথম মুজাফফর শাহ) পাতনের নিকটে ফারহাত-উল-মুলককে পরাজিত করে শহরে নিজ রাজধানী স্থাপন করেন। ১৪০৭ সালে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার নাতি প্রথম আহমেদ শাহ তার পরে সুলতান হন এবং তিনি ১৪১১ সালে সাবরমতি নদীর তীরে নতুন রাজধানী হিসেবে আহমেদাবাদ স্থাপন করেন। একে তিনি শহর-ই-মুয়াজ্জাম (মহান শহর) উপাধি দেন। প্রথম মাহমুদ শাহ বেগারহার সময় সালতানাতের সমৃদ্ধি সর্বোচ্চ শিখরে পৌছায়। ১৫০৯ সালে দিউর যুদ্ধের পর পর্তুগিজরা গুজরাত সালতানাতের কাছ থেকে দিউ ছিনিয়ে নেয়। ১৫৩৫ সালে মুঘল সম্রাট হুমায়ুন গুজরাত আক্রমণ করেন। ১৫৭৩ সালে আকবর গুজরাতকে নিজ সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেন। এরপর গুজরাত মুঘল সুবায় পরিণত হয়। শেষ শাসক তৃতীয় মুজাফফর শাহকে বন্দী করে আগ্রা নিয়ে যাওয়া হয়। ১৫৮৩ সালে তিনি পালিয়ে যান এবং অভিজাত ব্যক্তিদের সহায়তায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। এরপর আকবরের সেনাপতি আবদুর রহিম খান-ই-খানান তাকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন।[২০]
দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুগলক ১৩৭৭ সালে মালিক মুজাফফর (ফারহাত-উল-মুলক নামেও পরিচিত ছিলেন) ও রাস্তি খানকে গুজরাতের গভর্নর নিয়োগ দেন। ১৩৮৭ সালে তার বদলে সিকান্দার খানকে নিয়োগ দেয়া হয়, কিন্তু ফারহাত-উল-মুলক নির্দেশ অমান্য করে সিকান্দার খানকে হত্যা করেন। ১৩৯১ সালে সুলতান নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ বিন তুগলক জাফর খানকে গুজরাতের গভর্নর নিয়োগ দেন এবং তাকে মুজাফফর খান উপাধি দেন। ১৩৯২ সালে মুজাফফর খান ফারহাত-উল-মুলককে পাতনের নিকটে কাম্বইয়ের যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং শহরটি অধিকার করেন।[২১][২২][২৩]
১৪০৩ সালে তার পুত্র তাতার খান তাকে দিল্লির দিকে অগ্রসর হওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তিনি তাতে স্বীকৃতি দেননি। ফলে তাতার খান তাকে বন্দী করে নিজে মুহাম্মদ শাহ উপাধি ধারণ করে সুলতান হন। এরপর তিনি দিল্লির দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু পথিমধ্যে তার চাচা শামস খান তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন। এরপর মুজাফফর শাহ মুক্তি পান এবং পুনরায় দায়িত্বগ্রহণ করেন। ১৪০৭ সালে তিনি নিজেকে সুলতান ঘোষণা করেন। তিনি সুলতান মুজাফফর উপাধি ধারণ করেন এবং নিজ নামে মুদ্রা চালু করেন। ১৪১১ সালে তার মৃত্যুর পর তার নাতি ও তাতার খানের পুত্র আহমেদ শাহ সুলতান হন।[২১]
সিংহাসনে বসার পর আহমেদ শাহ তার চাচাদের বিদ্রোহের মুখোমুখি হন। তার বড় চাচা ফিরোজ খান বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন এবং নিজেকে সুলতান ঘোষণা করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ফিরোজ ও তার ভাইয়েরা আহমেদ শাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই বিদ্রোহের সময় মালওয়ার সুলতান হোশাং শাহ গুজরাত আক্রমণ করেছিলেন। তাকে প্রতিহত করা হলেও ১৪১৭ সালে তিনি কানদেশের শাসক নাসির খানের সাথে পুনরায় আক্রমণ করেন এবং সুলতানপুর ও নন্দুরবার অধিকার করে নেন। গুজরাতের সেনারা তাদের পরাজিত করে। পরবর্তীতে ১৪১৯, ১৪২০, ১৪২২ ও ১৪৩৮ সালে আহমেদ শাহ চারবার মালওয়ায় অভিযান চালান।[২৪]
১৪২৯ সালে ঝালাওয়ারের কানহা রাজা বাহমানি সুলতান আহমেদ শাহর সহায়তায় নন্দুরবার ধ্বংস করেন। তবে গুজরাতের সেনারা বাহমানিদের পরাজিত করে এবং বাহমানিরা দৌলাতাবাদে পালিয়ে যায়। বাহমানি সুলতান আহমেদ শাহ অতিরিক্ত সেনা পাঠান এবং কানদেশের সেনারা তাদের সাথে যোগ দেয়। এবারও গুজরাতের কাছে তারা পরাজিত হন। শেষপর্যন্ত আহমেদ শাহ বাহমানিদের কাছ থেকে থানা ও মাহিম অধিকার করতে সক্ষম হন।[২৪]
শাসনামলের শুরুর দিকে তিনি আহমেদাবাদ শহর প্রতিষ্ঠা করেন এবং পাতন থেকে এখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন। তার শাসনামলে আহমেদাবাদ জামে মসজিদ ও তিন দারওয়াজা নির্মিত হয়।[২৫]
১৪৪৩ সালে সুলতান আহমেদ শাহ মারা যান এবং এরপর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ সুলতান হন।[২৪]
মুহাম্মদ শাহ ইদার আক্রমণ করে এর শাসক রাজা হরি রায়কে তার আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। এরপর তিনি রাওয়াল থেকে কর আদায় করেন। ১৪৪৯ সালে তিনি চাম্পানিরের দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু চাম্পানিরের শাসক রাজা কনক দাস মালওয়া সুলতান মাহমুদ শাহ খিলজির সহায়তায় তাকে প্রতিহত করেন। ফেরার পথে মুহাম্মদ শাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৪৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মারা যান। এরপর তার পুত্র দ্বিতীয় কুতুবউদ্দিন আহমেদ শাহ সুলতান হন।[২৬]
দ্বিতীয় কুতুবউদ্দিন আহমেদ শাহ ১৪৫৮ সালে মারা যান। এরপর অভিজাত ব্যক্তিরা তার চাচা দাউদ খানকে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু অল্প সময় পড়ে তারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং দ্বিতীয় মুহাম্মদ শাহর পুত্র ফাতেহ খানকে সিংহাসনে বসায়। ফাতহ খান সিংহাসনে বসার পর আবুল ফাতেহ মাহমুদ শাহ উপাধিধারণ করেন। কিন্তু তিনি মাহমুদ বেগারহা নামে পরিচিত ছিলেন। বেগারহা অর্থ দুই দুর্গ বিজেতা। গিরনার ও চাম্পানির দুর্গ জয়ের পর এই নামে তিনি পরিচিত হয়ে থাকতে পারেন।
আমদাবাদে তাঁর জন্ম ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৪৫৮ খ্রিস্টাদে সিংহাসনে অভিষেক হয় তাঁর। এর পর ১৫১১ খ্রিস্টাব্দ অবধি প্রায় ৫৩ বছর ধরে শাসন করেছিলেন তিনি। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁর ভোজনের জন্য। তিনি প্রতি দিন প্রাতরাশে খেতেন এক পাত্র ভর্তি ঘি, আর এক পাত্র পূর্ণ মধু। সঙ্গে থাকত কলা। তাঁর দৈনন্দিন আহারের বড় অংশ জুড়ে ছিল মিষ্টান্ন। খাবারের শেষপাতে খাকত শুকনো বাসমতি চালের তৈরি মিষ্টি পদ। তাঁর শয্যার পাশে দু’টি থালায় সাজানো থাকত মাংসের পুর ভরা শিঙাড়া।
১৪৭২ সালে তার হাতে দ্বারকার দ্বারকাধীশ মন্দির (কৃষ্ণ মন্দির) ধ্বংস হয়, যা পরবর্তীতে পুনর্নির্মিত হয়।
১৪৮৩ সালে চম্পানীর - পাভাগড় দখলের উদ্দেশে সেখানে তার সৈন্য ঘাঁটি করে অবস্থান করে। সেসময় তার নির্দেশে চম্পানীর জামা মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৪৮৪ সালে পাভাগড় দখলের পর সালতানাতের রাজধানী ভাডোদারা শহরের নিকটবর্তী নামাঙ্কিত মুহাম্মাদাবাদ (চম্পানীর) -এ স্থানান্তরিত হয়।
১৫১১ সালের ২৩ নভেম্বর মাহমুদ মারা যান।[২৭] তাকে আহমেদাবাদ শহরের নিকটবর্তী সরখেজ রোজা-য় সমাহিত করা হয়।
মাহমুদ বেগারহার পুত্র খলিল খান তার পিতার উত্তরসূরি হন এবং মুজাফফর শাহ উপাধি ধারণ করেন। ১৫১৯ সালে রানা সাঙ্গা মালওয়া ও গুজরাত সালতানাতে জোটবাহিনীকে পরাজিত করেন এবং মালওয়ার দ্বিতীয় মাহমুদ শাহকে বন্দী করেন। পরবর্তীতে রানা সাঙ্গা গুজরাত আক্রমণ ও লুন্ঠন করেন।[২৮] মুজাফফর শাহ ১৫২৬ সালের ৫ এপ্রিল মারা যান এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিকান্দার সুলতান হন।[২৯]