গুয়ানো মূলত সামুদ্রিক পাখি, গুহাবাসী বাদুড় বা সীলের স্তুপীকৃত বর্জ্য বা বিষ্ঠা। গুয়ানো শব্দটি মূলত স্প্যানিশ শব্দ যা কেচুয়া শব্দ উয়ানো থেকে উদ্ভূত। উচ্চ মাত্রার নাইট্রোজেন আর ফসফরাস থাকার কারণে আর অজৈব রাসায়নিক পদার্থের অনুপস্থিতির জন্য উৎকৃষ্ট সার হিসেবে গুয়ানোর গুরুত্ব অপরিসীম। বারুদের অন্যতম উপাদান নাইট্রাস গুয়ানোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যেসব মাটিতে জৈব পদার্থের অভাব রয়েছে, গুয়ানো সার প্রয়োগে সেসব মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বহুলাংশে বাড়ানো যায়। গুয়ানে পানকৌড়ি (Phalacrocorax bougainvillii) ঐতিহাসিকভাবে গুয়ানো উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এই প্রজাতির গুয়ানো অন্যসব সামুদ্রিক পাখির গুয়ানোর তুলনায় নাইট্রোজেনে বেশি সম্বৃদ্ধ। এছাড়া পেরুভিয়ান প্যালিকেন (Pelecanus thagus) আর পেরুভিয়ান বুবিও (Sula variegata) উৎকৃষ্ট গুয়ানো উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
গুয়ানোর মূল উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়াম অক্সালেট আর ইউরেট, এছাড়া রয়েছে উচ্চমাত্রার নাইট্রেট। অন্যান্য উপাদানের মধ্য রয়েছে ভূমিজ লবণ ও উপাদান। পাখির গুয়ানোতে রয়েছে ১১ থেকে ১৬ শতাংশ নাইট্রোজেন, ৮ থেকে ১২ শতাংশ ফসফরিক এসিড এবং ২ থেকে ৩ শতাংশ পটাশ।[১] বাদুড় আর সীলের গুয়ানোতে পাখির গুয়ানোর তুলনায় গুণাগুণ কম থাকে।
গুয়ানো শব্দটির উৎপত্তি আন্দিজ পর্বতমালা অঞ্চলের কেচুয়া ভাষা থেকে। কেচুয়া ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে "সামুদ্রিক পাখির বিষ্ঠা"। সে অঞ্চলের লোকেরা মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য পেরুর সমুদ্র উপকূল থেকে গুয়ানো সংগ্রহ করত। ইনকা সম্রাটেরা গুয়ানোকে বেশ গুরুত্ব দিত। গুয়ানো পাওয়া যায় এমন অঞ্চলে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল এবং যারা পাখিদের উত্ত্যক্ত করত তাদের এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হত।[২]
পেরুর উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ পাথুরে আর দুর্গম হওয়াতে মানুষ আর শিকারী প্রাণীর প্রকোপ থেকে এসব এলাকা সুরক্ষিত। যার ফলে পাখিরা এখানে কলোনি করে বসবাস করতে শুরু করে আর শতাব্দীর পর শতাব্দী এসব পাখির বিষ্ঠা জমে জমে প্রকাণ্ড সব বিষ্ঠার পাহাড় গড়ে ওঠে।
১৮০২ সালে আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট পেরুর কালাওয়ে সার হিসেবে গুয়ানোর গুণাগুণ ও এর উপাদান নিয়ে গবেষণা করেন এবং এ বিষয়ে তার লেখালেখির মাধ্যমেই ইউরোপবাসী গুয়ানো সম্বন্ধে প্রথম জানতে পারে
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)