![]() গুরজিত কাউর | |||||||||||||||||
ব্যক্তিগত তথ্য | |||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জন্ম |
পাঞ্জাব, ভারত | ২৫ অক্টোবর ১৯৯৫||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৬৭ মি | ||||||||||||||||
মাঠে অবস্থান | রক্ষণ | ||||||||||||||||
জাতীয় দল | |||||||||||||||||
২০১৪– | ভারত | ৭২ | (৩৩) | ||||||||||||||
পদক রেকর্ড
|
গুরজিত কাউর (জন্ম ২৫শে অক্টোবর ১৯৯৫) একজন মহিলা ফিল্ড হকি খেলোয়াড়।[১][২][৩] তিনি ডিফেন্ডার অবস্থানে খেলেন এবং ভারতীয় দলের মনোনীত ড্র্যাগ ফ্লিকার (কৌশলী গোলদাতা)। তিনি সম্প্রতি, হকি বিশ্বকাপ ২০১৮ এ, আন্তর্জাতিকস্তরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৮ টি গোল করে, তিনি ভারতীয় দলের সবচেয়ে সফল গোলদাতা ছিলেন, এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দলটি বিজয়ী হয়ে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন হয়।[৪] তিনি ৫৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন, জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত।[১][৫]
১৯৯৫ সালের ২৫শে অক্টোবর গুরজিত কাউর জন্মগ্রহণ করেন। পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলার মিয়াদি কালান গ্রামে একটি কৃষক পরিবারে তার জন্ম হয়। তার বাবা ও মায়ের নাম যথাক্রমে সতনাম সিং ও হরজিন্দর কাউর। তার একজন বড় বোন আছেন, প্রদীপ কাউর। তাকে এবং তার দিদিকে ভালো শিক্ষা দেওয়া, তার বাবা-মায়ের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই তারা তাদের দুই কন্যাকে, গ্রামের স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠানোর পরিবর্তে, ১৩ কিমির ও বেশি দূরে আনজালের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য ঠিক করেন। গুরুজিতের বাবা সতনাম সিং তার দুই কন্যাকে তার সাইকেলে বসিয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন এবং তাদের বিদ্যালয়ের পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত, সারা দিন অপেক্ষা করে, তারপর তাদের বাড়ি নিয়ে যেতেন।।[৬]
যেহেতু এটি একটি বাস্তব সম্মত ব্যবস্থা ছিল না, তাই তাদের বাবা-মা অবশেষে ২০০৬ সালে, দুই মেয়েকে, ৭০ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাবের তরণতারণ জেলার কাইরনে অবস্থিত একটি বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। [৭] কাইরন দেশের প্রাচীনতম এবং সর্বাধিক বিখ্যাত মহিলা হকির আঁতুড়ঘরের মধ্যে একটি, এবং এই দুই বোন সেখানে এই খেলার প্রতি তাদের আবেগকে আবিষ্কার করেন। হকিতে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, এই বিদ্যালয়ের সরকারী বিভাগে তাদের স্থান পাকা করে। এর ফলে তাদের বিনামূল্যে শিক্ষা এবং খাবারের ব্যবস্থা হয়, যা, তাদের অর্থ সংকটে থাকা বাবা মা কে যথেষ্ট স্বস্তি দেয়।[৬]
গুরজিত কাউর ২০১১ সাল পর্যন্ত কাইরনে তার পড়া চালিয়ে যান, এরপর তিনি তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জলন্ধরেরর লায়লপুর খালসা কলেজ ফর উইমেন-এ চলে যান – এখানেই তিনি ড্র্যাগ-ফ্লিকিং সম্পর্কে গম্ভীরভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এর পরে, তিনি এলাহাবাদে ভারতীয় রেলওয়েতে জুনিয়র ক্লার্ক হিসাবে চাকরি পান।[৮]
গুরুজিত কৌর ২০১৪ সালে দেশের হয়ে খেলার জন্য প্রথম ডাক পান, যখন সিনিয়র ন্যাশনাল ক্যাম্পের জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল। যদিও, তিনি দলে জায়গা করতে পারেন নি।[৬][৭] ২০১৭ সাল থেকেই তিনি ভারতীয় মহিলা হকি দলের স্থায়ী সদস্য হয়েছেন। এরপর, গুরজিত কাউর, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কানাডায় টেস্ট সিরিজ খেলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে হকি ওয়ার্ল্ড লীগের ২য় রাউন্ড খেলেন এবং ২০১৭ সালের জুলাইয়ে হকি ওয়ার্ল্ড লিগ সেমিফাইনাল খেলেন।
ভারতের প্রধান ওলন্দাজ হকি প্রশিক্ষক, সোয়ের্ড মারিন, ড্র্যাগ ফ্লিকিং এ ভাল ফল পেতে তার হকিস্টিক পরিবর্তনে তাকে উৎসাহিত করেন, যা তার খেলাকে আরও উন্নত করে। "আমি আগে যে স্টিক ব্যবহার করতাম তা হাল্কা লাগত এবং আমি যথেষ্ট জোর পেতাম না। তাই, যখন আমরা হল্যান্ড গিয়েছিলাম, মারিন একটি অন্য স্টিক দিয়ে ড্র্যাগ ফ্লিকিং চেষ্টা করার জন্য আমাকে বলেন। এটা অনেক ভাল ছিল এবং আমি আরো জোর পাচ্ছিলাম। পরিবর্তন করে আমার উপকার হয়েছে,” ট্রিবিউনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে গুরজিত বলেন।[৬] ওলন্দাজ প্রশিক্ষক টুন সিপম্যান যাতে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন, তার ব্যবস্থাও মারিন করেন। তিনি ড্র্যাগ ফ্লিকিং এর মূল বিষয়গুলি, যেমন দেহভঙ্গি, পায়ের কাজ ইত্যাদি উন্নত করতে সাহায্য করেছিলেন।
২০১৭ সালের এশিয়া কাপের সময় গুরুজিত কাউরের নাম সবার সামনে আসে, যেখানে ভারতীয় দল মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ফলস্বরূপ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য লন্ডনে হকি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আটটি গোল করে কাউর তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করেন, এবং ভারতীয় দলের শীর্ষ গোলদাতা হন। কোয়ার্টার ফাইনালে কাজাখস্তানের বিপক্ষে তিনি সাতটি পেনাল্টি কর্ণার থেকে গোল করেন, যার মধ্যে একটি হ্যাটট্রিক ছিল। সেমিফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী জাপানের বিরুদ্ধে তিনি দুবার গোল করেন।[৪][৯]
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমস ২০১৮-এ গুরজিত কাউর দুর্দান্ত খেলা দেখিয়েছেন। যদিও ভারত চতুর্থ হয়ে বিজয়ী মঞ্চে উঠতে ব্যর্থ হয়, দ্বিতীয় পুল খেলায় মালয়েশিয়ার বিপক্ষে দুটি পেনাল্টি কর্ণারকে গোলে রূপান্তরিত করে গুরজিত সকলে মনোযোগ আকর্ষণ করেন, ভারত সেটিতে ৪-১ ব্যবধানে জেতে।[১০]
২০১৮ সালের হকি বিশ্বকাপের আগে, স্পেন সফরে স্প্যানিশ জাতীয় দলের সঙ্গে ভারতীয় দলটি পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলেছিল, যেটি তারা ৪-১ এ জেতে। ফাইনাল ম্যাচে, অধিনায়ক রাণী রামপালের পাশাপাশি গুরজিত কাউর দুটি গোল করেন, খেলা শেষ হয় ৪-১ এ।[১১][১২]
ভারতের ডিফেন্ডার এবং ড্র্যাগ ফ্লিকার হিসেবে হকি ওয়ার্ল্ড কাপ দলেও গুরজিত কাউর জায়গা পেয়েছেন।[১৩]