গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া | |
---|---|
![]() | |
প্রাক্তন নাম | গিলবার্ট |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
স্থাপত্যশৈলী | ইন্দো সারাসেনিক |
অবস্থান | মুম্বই, মহারাষ্ট্র |
ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা | ১০ মি (৩৩ ফু) |
নির্মাণ শুরু | ৩১শে মার্চ, ১৯১১ |
সম্পূর্ণ | ১৯২৪ |
উদ্বোধন | ৪ই ডিসেম্বর, ১৯২৪ |
নির্মাণব্যয় | ₹ ২.১ মিলিয়ন (১৯১১) |
গ্রাহক | ভারত |
স্বত্বাধিকারী | ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ |
উচ্চতা | ২৬ মি (৮৫ ফু) |
মাত্রা | |
ব্যাস | ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) |
নকশা ও নির্মাণ | |
স্থপতি | জর্জ উইট্টেট |
স্থাপত্য সংস্থা | গ্যামন ইন্ডিয়া[১] |
সংস্কারণ দল | |
স্থপতি | জর্জ উইট্টেট |
গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া (মারাঠি: गेटवे ऑफ इंडिया) হলো পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বই শহরে ব্রিটিশ ভারতে সময় নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ।[২] এটি দক্ষিণ মুম্বইয়ের এপলো বান্ডার এলাকার জলাশয়ের তীরে অবস্থিত এবং এখান থেকে আরব সাগর দেখা যায়। [৩][৪] এই স্থাপত্যটি ২৬ মিটার(৮৫ ফুট) ব্যাসল্টের তৈরী একটি তোরণ। এটি মুম্বই হারবারের জলাশয়ের কিনারায় অবস্থিত ছত্রাপতি শিভাজী মার্গ -এর শেষপ্রান্তে অবস্থিত।[৫] এই স্থাপত্যটি প্রথমে জেলে সম্প্রদায়ের স্থানীয় জেটি হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং পরবর্তীতে এটিকে সংস্কার করা হয় এবং ব্রিটিশ সরকার ও অন্যান্য প্রখ্যাত ব্যক্তিদের অবতরণস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হত। প্রথম দিকে, কেউ মুম্বই নৌকায় করে এলে এই স্থাপত্যটি প্রথমে দেখতে পেত।[৬][৭] এটাকে মুম্বই-এর তাজমহল বলা হয়[৮] এবং পর্যটকদের জন্য এটি অন্যতম একটি আকর্ষণ।[৯] নয়াদিল্লীর ইন্ডিয়া গেট দেখতে এই স্থাপত্যের মতই। এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল কিং জর্জ ফাইভ এবং কুইন ম্যারি এর ১৯১১ সালে এপলো বান্ডার আগমনের স্মৃতি রক্ষার্থে। ইন্দো সারাসেনিক স্টাইলে নির্মিত, এই স্থাপত্যর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ৩১শে মার্চ, ১৯১১। জর্জ উইট্টেট এর চূড়ান্ত নকাশ ১৯১৪ সালে পাশ হয়েছিল এবং স্থাপত্যের কাজ ১৯২৪ সালে শেষ হয়েছিল। পরবর্তীতে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া দিয়ে ভাইসরয় এবং বোম্বের তৎকালীন নতুন সরকার উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবেশ করেছিলেন। স্থাপত্যটি থেকে ভারত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হত। [১০] একবিংশ শতকের শুরু থেকে এই স্থাপত্যে তিনটি সন্ত্রাসী হামলা হয়। ২০০৩ এ দুইটি এবং ২০০৮ সালে চারজন বন্দুকধারী তাজমহল প্যালেস হোটেল আক্রমণ করে।
দিল্লী দর্বার তৈরীর পূর্বে, গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া ১৯১১ সালে কিং জর্জ ফাইভ এবং কুনি মেরি মুম্বই আগমনের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এই স্থাপত্যটির শুধু কার্ডবোর্ড মডেল দেখে যেতে পেরেছিলেন, কেননা নির্মাণকাজ ১৯১৫ সালের পরে শুরু হয়েছিল।[১১] বোম্বের সরকার স্যার জর্জ সিডেনহাম ক্লার্ক ১৯১১ সালের ৩১শে মার্চ স্থাপত্যটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চূড়ান্ত নকশা ১৯১৩ সালের ৩১শে মার্চ অনুমোদিত হয়। গেটওয়েটি হলুদ ব্যাসল্ট এবং কংক্রিট দিয়ে বানানো হয়েছিল।[১২] ফাউন্ডেশনের কাজ ১৯২০ সালে এবং পুরো কাজ শেষ হয়েছিল ১৯২৪ সালে। [১৩] ভাইসরয় দি আর্ল অব রিডিং ১৯২৪ সালের ৪ই ডিসেম্বর গেটওয়েটি উন্মুক্ত করেন।[৬]
ভারতের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রথম ব্যাটেলিয়ান সমারসেট লাইট ইনফ্যান্ট্রি এই গেট দিয়ে ১৯৪৮ এর ২৮শে ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়া ত্যাগ করে, যা ব্রিটিশ রাজত্বের পরিসমাপ্তি নির্দেশ করে। [৬][১৪]
স্কটিস আর্কিটেক্ট জর্জ উইট্টেট ষোড়শ শতকের গুজরাত স্থাপত্য এবং রোমান বিজয়তোরণ এর ডিজাইন একত্রে করে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার ডিজাইন করেন। [১৫] এর ডিজাইন হিন্দু এবং মুসলমান স্থাপত্যগুলোর ধরনের সমন্বয়ে করা হয়েছে। এখানে দেখা যায় তোরণটি মুসলমান স্থাপত্যের আদলে আর সজ্জা গুলো হিন্দু স্থাপত্যের আদলে।[১৬] গেটওয়ে তৈরি হয়েছিল হলুদ ব্যাসল্ট এবং কংক্রিট দিয়ে। [১১] পাথর স্থানীয়ভাবে পাওয়া গেছে এবং সচ্ছিদ্র পর্দা গুলো গ্বলিওর থেকে আনা হয়েছে। [১৭] গেটওয়েটি এপলো বান্ডার থেকে মুম্বই হার্বারের সম্মুখে স্থাপিত।[১৮]
মাঝের গম্বুজের পরিধি ৪৮ ফিট এবং মাটি থেকে ৮৩ ফুট উঁচু।[১৯] পরিকল্পিতভাবে ফাঁকা জায়গা রাখার জন্য পুরো হার্বারের সম্মুখভাগ পুনঃনির্মাণ করা হয়, যেটা সরাসরি শহরের কেন্দ্র চলে গেছে। তোরণের প্রত্যেক পাশে ৬০০ জন ধারণক্ষম দুইটি হল তৈরি করা হয়েছে। [১১] স্থাপত্যের ব্যয় হয়েছিল সেসময়ের ২.১ মিলিয়ন রুপি যার পুরোটাই ভারত সরকার দিয়েছিল। অর্থস্বল্পতার কারণে প্রবেশ সড়ক কখনো তৈরি করা হয়নি এবং তোরণটির দিকে যাওয়া প্রধান রাস্তার সাথে এটি সামান্য কোণে বেঁকে আছে। [৬][১৯]
ভাইসরয় এবং গভর্নরের ভারত আগমনের সময় গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া ব্যবহার করতেন। যদিও এটি নির্মাণ করা হয়েছিল তখনকার ব্রিটিশ ভারত এবং ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৯১১ সালের কিং জর্জ ফাইভকে স্বাগতম জানাতে, বর্তমানে এটি ভারতে ব্রিটিশ কলোনিয়াল আমলের স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে রয়েছে। [১০] তাজ মহল প্যালেস হোটেল-এর পাশে স্থাপিত এই গেটওয়ে ছিল ব্রিটিশ সম্রাজ্যের শক্তি ও মহিমার প্রতিক। [৩]
গেটওয়ের বিপরীতদিকে শিবাজীর একটি ভাস্কর্য আছে, যেটি নির্মাণ করেছিলেন সতেরো শতকের গেরিলা যুদ্ধ করে সাহীয়াদ্রীতে প্রতিষ্ঠিত মারাঠা সম্রাজ্যের রাজা। [২০] এই ভাস্কর্য ছিল মারাঠাদের গর্ব ও সাহসের প্রতীক। [২১] এই ভাস্কর্য ১৯৬১ সালের ২৬শে জানুয়ারী ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে আবৃত করা হয়।[২২][২৩] এছাড়া সেখানে স্বামী বিবেকানন্দের আরেকটা ভাস্কর্য আছে।[২৪]
গেটওয়েতে ৫ টি জেটি আছে। [২৫] প্রথম জেটি ভবা পারমাণবিক গবেষণা সেন্টারের নিজস্ব, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়টি ব্যবসায়িক ফেরী চলাচলে ব্যবহার করা হয়, চতুর্থটি বন্ধ এবং পঞ্চমটি রয়েল বোম্বে ইয়ট ক্লাবের।
২০০৮ সালে মুম্বই আক্রমণের পরে, প্রস্তাব করা হয়েছে বোম্বে প্রেসিডেন্সি রেডিও ক্লাবের নিকটে দুইটা নতুন জেটি খুলে পুরাতন সবগুলো জেটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। [২৬] দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জেটি দুইটি এলেইফেন্টা কেইভস ভ্রমণের শুরুর স্থান, নৌকায় ৫০ মিনিটের পথ। [২৭][২৮] অন্য রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে, গেটওয়ে থেকে আলিবাগ ও মান্ডাতে ফেরীযাত্র। অভিযোগ আছে, এই ফেরীগুলো অনুমোদিত যাত্রীর চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করে। [২৯]
গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া ভ্রমণের জন্য একটি প্রধান গন্তব্য এবং স্থানীয়, পথের বিক্রেতা ও আলোকচিত্রীদের একটি প্রিয় জমায়েত। [১৮] অতিরিক্ত মানুষ জমায়েতের কারণে ২০১২ সালে মহারাষ্ট্র পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন "নাচ ও গানের হস্তী উৎসব" এলেফেন্টা কেইভস(২৩ বছর ধরে এখানেই এই উৎসব পালিত হত) থেকে সরিয়ে এখানে নিয়ে আসে। এখানে ২০০০ থেকে ২৫০০ মানুষের জমায়েত সম্ভব, কিন্তু আগের ভেন্যুতে ৭০০/৮০০ এর বেশি মানুষ একসাথে থাকতে পারত না। .[৩০][৩১]
২০০৩ সালে ট্যাক্সিতে বসানো একটি বোমা বিস্ফোরণ হয় গেটওয়ের কাছাকাছি।[৯] ২০০৩ সালের আগস্টেও একটি বড়সর বোমা হামলা হয় এবং ২০০৮ এর মুম্বই হামলার সন্ত্রাসীরা এখানেই প্রথমে জমায়েত হয়। সেসময় চারজন বন্দুকধারী তাজ মহল প্যালেস হোটেল আক্রমণ করে। [৩২] ২০০৮ সালের হামলার পর থেকে জনগণের চলাচলের উপর এখানে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। [৩৩]