![]() | এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি পরিবর্ধন বা বড় কোনো পুনর্গঠনের মধ্যে রয়েছে। এটির উন্নয়নের জন্য আপনার যে কোনো প্রকার সহায়তাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। যদি এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি কয়েকদিনের জন্য সম্পাদনা করা না হয়, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এই টেমপ্লেটটি সরিয়ে ফেলুন। ৩৭ দিন আগে InternetArchiveBot (আলাপ | অবদান) এই নিবন্ধটি সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন। (হালনাগাদ) |
গেরাল্ড ডারেল | |
---|---|
![]() আস্কানিয়া নোভায় ডারেল, ১৯৮৫ | |
জন্ম | গেরাল্ড ম্যালকম ডারেল ৭ জানুয়ারি ১৯২৫ |
মৃত্যু | ৩০ জানুয়ারি ১৯৯৫ সেন্ট হেলিয়ার, জার্সি | (বয়স ৭০)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
পরিচিতির কারণ |
|
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
পিতা-মাতা | |
আত্মীয় |
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
Author abbrev. (zoology) | Durrell |
গেরাল্ড ম্যালকম ডারেল (ইংরেজি: Gerald Malcolm Durrell; ৭ জানুয়ারি, ১৯২৫ – ৩০ জানুয়ারি, ১৯৯৫) ছিলেন একজন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ, লেখক, চিড়িয়াখানার রক্ষক, সংরক্ষণকর্মী ও টেলিভিশন উপস্থাপক। ব্রিটিশ ভারতের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণকারী ডারেল ১৯২৮ সালে পিতার মৃত্যুর সময় ইংল্যান্ডে চলে আসেন। ১৯৩৫ সালে ডারেল পরিবার কোরফুতে স্থানান্তরিত হন এবং সেখানেই চার বছর থেকে যান। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই পরিবার বাধ্য হন যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে। ১৯৪৬ সালে পিতার ইচ্ছাপত্র থেকে তিনি যে পরিমাণ অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন তা দিয়ে তিনি ব্রিটিশ ক্যামারুন ও ব্রিটিশ গায়ানাতে পশু-সংগ্রহ অভিযানে ব্যবহার কএন। ১৯৫১ সালে তিনি জ্যাকি রাসেনকে বিবাহ করেন। এই সময় ডারেল দম্পতির কাছে অর্থ খুবই কম ছিল। তাই জ্যাকি স্বামীকে ক্যামারুনে প্রথম অভিযানের কাহিনি লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। এরই ফলশ্রুতি ডারেলের দি অভারলোডেড আর্ক গ্রন্থটি। এটি ভালোই বিক্রি হয় এবং ডারেলও অন্যান্য অভিযানের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। ১৯৫৩ সালে তিনি আর্জেন্টিয়া ও প্যারাগুয়েতে একটি অভিযানে যান এবং তিন বছর পর কোরফুতে বসবাসের স্মৃতিচারণা করে মাই ফ্যামিলি অ্যান্ড আদার অ্যানিম্যালস গ্রন্থটি রচনা করেন। এটি একটি বেস্টসেলার বইতে পরিণত হয়।
১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ডারেল নিজস্ব চিড়িয়াখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তৃতীয়বারের জন্য ক্যামেরুনে যান এবং ফেরার পথে বোর্নমাথ ও পুল নগর পরিষদ দু’টিকে স্থানীয় চিড়িয়াখানা চালু করার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। এই পরিকল্পনাগুলি সফল না হলেও তিনি শেষপর্যন্ত জার্সি দ্বীপে একটি উপয্যক্ত স্থান খুঁজে পান এবং ১৯৫৯ সালের শেষদিকে সম্পত্তিটি লিজ নেন। জার্সি চিড়িয়াখানাকে তিনি নিছক জনসাধারণের সামনে পশুর প্রদর্শনীর পরিবর্তে পশু পর্যবেক্ষণ এবং বন্দীদশায় পশুর প্রজননের এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে এই চিড়িয়াখানার নিয়ন্ত্রণভার জার্সি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ট্রাস্টের হাতে অর্পিত হয়। চিড়িয়াখানাটি পরের কয়েক বছরে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার অবস্থায় আসে। ডারেল এটির জন্য লেখালিখি ও তহবিল বৃদ্ধির আবেদনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেন। চিড়িয়াখানার স্থানটি লিজ নেওয়া হয়েছিল। এটির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে ১৯৭০ সালে ডারেল সম্পত্তিটি কিনে নেওয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহে নামেন এবং সাফল্যও অর্জন করেন। তিনি অন্যান্য অভিযান, চিড়িয়াখানা এবং কোরফুতে ও যুদ্ধের পরবর্তীকালে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়েও লেখালিখি করেন।
ডারেল ছিলেন মদ্যপায়ী। মদ্যপানের জন্য বারবার তিনি সমস্যায় পড়তে শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে ডারেলের পত্নী পৃথক বসবাস শুরু করেন; ১৯৭৯ সালে দু’জনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে যায় এবং ডারেল লি ম্যাকজর্জ নামে এক মার্কিন প্রাণীবিদকে বিবাহ করেন। তিনি ও লি মিলে ১৯৮০-এর দশকে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন, যেগুলির অন্যতম ছিল ডারেল ইন রাশিয়া ও আর্ক অন দ্য মুভ। দু’জনে একসঙ্গে রচনা করেন দি অ্যামেচার ন্যাচারালিস্ট। অপেশাদারদের উদ্দেশ্যে রচিত এই বইটি শুধুমাত্র বিশ্বের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়কই নয়, বরং এতে বিশ্বের প্রধান বাস্তুতন্ত্রগুলির প্রত্যেকটি সম্পর্কেও পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই বইটি ডারেলের সবচেয়ে সফল বই। বইটির দশ লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয় এবং এটি অবলম্বনে একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকও নির্মিত হয়।
১৯৮২ সালে ডারেল এক ওবিই হন। ১৯৮৪ সালে তিনি ডারেল কনজারভেশন অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন সংরক্ষণবিদদের বন্দীদশায় পশুদের প্রজনন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ প্রভাবশালী। এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তীর্ণ সহস্রাধিক পড়ুয়ার মধ্যে রয়েছেন লন্ডন চিড়িয়াখানার এক পরিচালক। উল্লেখ্য লন্ডন চিড়িয়াখানা এক সময়ে ডারেলের কাজের বিরোধিতা করেছিল। ১৯৯৪ সালে ডারেলের যকৃতের ক্যান্সার ও সিরোসিস ধরা পড়ার পর যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু পরের জানুয়ারিতেই তিনি প্রয়াত হন। মৃতদেহ দাহ করা হয় এবং ভস্মাবশেষ ডার্সি চিড়িয়াখানায় সমাহিত করা হয়।
১৯২৫ সালের ৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের জামশেদপুর (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত) শহরে ডারেল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লরেন্স স্যামুয়েল ডারেল ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার; মায়ের নাম ছিল লুইসা ফ্লোরেন্স ডারেল (বিবাহপূর্বে ডিক্সি)। ডারেলের দুই দাদা লরেন্স ও লেসলি এবং এক দিদি মার্গারেট ছিলেন। আরেক বোন মার্গারি শৈশবেই মারা যায়।[১] ডারেলের বাবা-মা দু’জনেই ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মায়ের পরিবার ছিল কর্কের আইরিশ প্রোটেস্টান্ট এবং ডারেলের ঠাকুরদা (যিনি সাফোকের বাসিন্দা ছিলেন) ভারতে এসে এক অ্যাংলো-আইরিশ মহিলাকে বিবাহ করেন। ডারেলের পিতা চাইতেন সেকালের আইরিশ-ভারতীয় নারীদের ন্যায় লুইসাও গৃহস্থালী সামলান এবং ভারতীয় ভৃত্যদের প্রতি মাতাসুলভ আচরণ করুন। কিন্তু লুইসা অনেক বেশি স্বাধীনতাকামী ছিলেন। তিনি অনেক সময় কাটাতেন রাঁধুনির সঙ্গে, শিখতেন তরকারি রান্না। এছাড়া ধাত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন।[২] সচরাচর অ্যাংলো-ভারতীয় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ নজর দিত না এবং বাড়িতে বাচ্চাদের মানুষ করার জন্য একজন আয়া এবং এক ক্যাথলিক গভর্নেস ছিলেন।[৩]
ডারেল যখন চোদ্দো মাসের শিশু তখনই এই পরিবার জামশেদপুর ছেড়ে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। সেখানে ডারেলের বাবা দক্ষিণ লন্ডনের ডালউইচে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। এই বাড়ির কাছেই ডারেলের দুই দাদা স্কুলে ভর্তি হন। এই পরিবার ১৯২৬ সালের শেষে বা ১৯২৭ সালের গোড়ায় আবার ভারতে ফিরে আসে এবং লাহোরে বসবাস শুরু করে। সেখানে লরেন্স এক চুক্তিভিত্তিক কাজে যোগ দিয়েছিলেন।[৪] লাহোরে থাকাকালীনই পশুপাখির প্রতি গেরাল্ডের মুগ্ধতার সূত্রপাত হয় প্রথম যখন তিনি একটি পরিখার মধ্যে দু’টি বিরাট স্লাগকে পাকানো অবস্থায় দেখেন এবং পরে যখন তিনি লাহোর চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যান। চিড়িয়াখানাটি দেখে তিনি মোহিত হয়ে পড়েছিলেন। পরে লিখেছিলেন, "বাস্তবে চিড়িয়াখানাটি খুবই ছোটো এবং খাঁচাগুলি ছিল আরও ছোটো। হয়তো কখনও পরিষ্কার করা হয়নি সেগুলি। যদি আজ আমি সেই চিড়িয়াখানাটি দেখতাম তাহলে নিশ্চয়ই আমিই প্রথম সেটি বন্ধ করে দিতাম। কিন্তু শিশু হিসেবে তখন সেটি আমার কাছে ছিল ঐন্দ্রজালিক স্থান। একবার সেখানে যাওয়ার পর আর আমাকে কেউ আটকে রাখতে পারেনি।"[৫] ডারেল পরিবার অল্পকালের জন্য একজোড়া হিমালয়ান ভালুকছানা পুষেছিলেন। লুইসার ভাই জন ছিলেন শিকারী। তিনিই এই ভালুকছানা দু’টি এই পরিবারকে দেন। কিছুকাল পর লুইসার মনে হয় এই ভালুকছানারা ভয়ংকর, তাই তিনি সেগুলিকে চিড়িয়াখানায় দিয়ে দেন।[৬]
১৯২৮ সালের গোড়ার দিকে ডারেলের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেরিব্রেল হেমোরেজের ফলে ১৬ এপ্রিল প্রয়াত হন। স্বামীর মৃত্যুতে লুইসা খুবই ভেঙে পড়েন। কিন্তু গেরাল্ড বাবার বদলে নিজের মা ও আয়ার বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন। গেরাল্ডের বাবাও ব্রিটিশ ভারতে নিজের কাজে বেশি ব্যস্ত থাকতেন বলে সন্তানদের বিশেষ সময় দিতে পারতেন না। তাই বাবার মৃত্যুতে গেরাল্ড খুব একটা আহত হননি।[৭] লুইসা পরিবারকে ভারতের রাখার কথা ভাবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং বোম্বাই থেকে ফেরার জাহাজ ধরেন।[৮] ১৯২৬ সালে ডালউইচে যে বাড়িটি লরেন্স কিনেছিলেন সেটি ছিল বড়ো বাড়ি এবং সেটির পরিচর্যাও ছিল খরচসাপেক্ষ। ১৯৩০ সালে লুইসা পরিবার সহ দক্ষিণ লন্ডনেই আপার নরউডে কুইন’স হোটেলের লাগোয়া একটি ফ্ল্যাটে উঠে আসেন।[৯] পরের বছর গোড়ার দিকে এই পরিবার বোর্নমাথের কাছে পার্কস্টোনে চলে আসে।[১০] লুইসা খুবই একা হয়ে পড়েন। সেই সময় গেরাল্ডই ছিলেন মায়ের একমাত্র সঙ্গী। কারণ অন্য সন্তানেরা সেই সময় বিদ্যালয়ে ছিল বা অন্যত্র পড়াশোনা করছিল। পরবর্তীকালে ডারেল এই ঘটনার স্মৃতিচারণা করে বলেছেন যে, এই সময় লুইসা অনেক বেশি করে মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং শেষপর্যন্ত সেকালে যেটিকে স্নায়ুদৌর্বল্য বলা হত, তার শিকার হন।[note ২] একজন গভর্নেস ছাড়া সেই সময় গেরাল্ডের সঙ্গে বাড়িতে কেউ ছিল না। লুইসা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত গেরাল্ড এই গভর্নেসের কাছেই ছিলেন। শেষে যখন লুইসা সুস্থ হলেন তখন গেরাল্ডকে নিকটবর্তী কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হল। সেখানে অবশ্য গেরাল্ডের সময় ভালোই কাটে। বিশেষত সেখানে তিনি এমন এক শিক্ষককে পান যিনি প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে গেরাল্ডের আগ্রহকে উৎসাহ দিতেন এবং গোল্ডফিশ ও পুকুরের শামুক সহ একটি অ্যাকোরিয়াম এনে দেন।[১২]
১৯৩২ সালে লুইসা আবার পরিবারকে নিয়ে উঠে যান অন্যত্র। এবার তিনি আসেন বোর্নমাথের একটি আরও ছোটো বাড়িতে। পরের বছর গেরাল্ডকে তিনি ভর্তি করে দেন উইচউড স্কুলে। গেরাল্ড স্কুলটি পছন্দ করতেন না; কেবল প্রাকৃতিক ইতিহাসের ক্লাসটিই ছিল পছন্দের। স্কুলে না যাওয়ার জন্য তিনি চিৎকার করতেন ও লড়াই করতেন।[১৩] নয় বছর বয়সে স্কুলের হেডমাস্টার গেরাল্ডকে বেত্রাঘাত করলে লুইসা ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।[১৩][১৪] লুইসা গেরাল্ডকে একটি কুকুর দেন। গেরাল্ড সেটির নাম রেখেছিলেন রজার। এই কুকুরটি ছিল তার বিধ্বস্ত সময়ের সঙ্গী।[১৩] এরপর গেরাল্ড আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেননি,[১৩] অবশ্য মধ্যে মধ্যে তিনি গৃহশিক্ষকদের কাছে শিক্ষালাভ করেছিলেন।[১৫]
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|orig-date=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)|orig-date=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)|orig-date=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)