গোটা পট্টি অথবা গোটার কাজ হল ভারতের রাজস্থান রাজ্যে তৈরি একরকম সূচিশিল্প।[১][২][৩] এই প্রক্রিয়ায় অ্যাপ্লিক কৌশল ব্যবহৃত হয়। কারুকার্যের নকশা সম্প্রসারিত করার জন্যে বুননের সঙ্গে ছোট ছোট করে কাটা জরির ফিতে কিনারা দিয়ে লাগানো হয়। এই গোটা সূচিশিল্প দক্ষিণ এশিয়ার বিবাহ অনুষ্ঠান এবং যথাবিহিত পোশাকাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
গোটা হল লখনউ থেকে আনা সোনা অথবা রুপোর ফিতে।[৪] বিভিন্ন রকমের এবং বিভিন্ন রঙের রঙিন সুতো আলাদা আলাদা মাপে সাটিন অথবা তেরছা বোনা কাপড়ে বুনলেও তাকে গোটা বলা হয়। এটা কিনারা বরাবর ব্যবহার করা হয়। গোটাযুক্ত পোশাকগুলো কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান অথবা বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। [৩] গোটার কাজ করা হয় সাটিন কিংবা তেরছা বোনা বিভিন্ন রঙের সোনা অথবা রুপোর ফিতের টুকরো দিয়ে অ্যাপ্লিক কায়দায় বুনে। জর্জেট অথবা বন্ধিনি সোনা দেওয়া কাপড়ের বুনন দিয়ে জমির নকশাকে নানা সৃষ্টিশীল রূপ দেওয়া হয়। [২]
আসলে সূচিশিল্পে আগে প্রকৃত সোনা এবং রুপো ব্যবহৃত হোত, কিন্তু এগুলো ব্যয়বহুল হওয়ার জন্যে পরবর্তীকালে বিকল্প হিসেবে তামার ওপর রুপোর পরত দিয়ে কাজ চালানো হোত। এখনকার দিনে এমনকি আরো বেশি ব্যয়বহুল বিকল্পও পাওয়া যায়। তামার বদলে পলিয়েস্টার ফিল্ম নিয়ে তার ওপর প্রয়োজন অনুযায়ী ধাতব পরত সৃষ্টি করে কাজ চালানো হয়। একে বলে প্লাস্টিক গোটা এবং এটা অনেক বেশি টেকসই, কেননা, এটা বাষ্পরোধক এবং ধাতব গোটার মতো কলঙ্ক ধরেনা।[২]
এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং সময় সাপেক্ষ। প্রথম ধাপ হল কাপড়ের ওপর নকশার খসড়া বসানো। কাপড়ের ওপর নকশা সহ ট্রেসিং পেপার চাপিয়ে এবং তার ওপর আঠালো চক পাউডার লেপে এটা করা হয়। নকশার ওপর নির্ভর করে গোটাকে বিভিন আকারে কাটা এবং ভাঁজ করা হয়। এরপর একে হেম সেলাই অথবা পিছন দিক থেকে সেলাই করে কাপড়ের ওপর অ্যাপ্লিক করা হয়।[২]
অঞ্চলভিত্তিক বিশেষত্ব অনুযায়ী আকর্ষণীয় ধরনের গোটা দেখা যায়, এবং একেকটি মূলভাব অনুযায়ী আলাদা আলাদা নামকরণ করা হয়। এই মূল ভাবগুলো সাধারণত প্রকৃতি থেকে উৎসারিত এবং ফুল, পাতা এবং প্রাণিকূল, যেমন ময়ূর, টিয়া ও হাতিদের নামে গঠিত হয়ে থাকে।
গোটা দেখতে সমৃদ্ধ এবং ভারি সুন্দর কিন্তু পরতে হালকা।[২]
রাজস্থানে নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে গোটার কাজ করা সাজসজ্জা পরা হয়। সাধারণত দোপাট্টা, পাগড়ির কিনারা এবং ঘাগরার ওপর গোটার কাজ করা হয়ে থাকে।[২]