গোয়ালপাড়া জেলা গোৱালপাৰা জিলা | |
---|---|
জেলা | |
![]() Shiva temple at Sri Surya Pahar | |
![]() আসামের মানচিত্রে গোয়ালপাড়া জেলার অবস্থান | |
রাজ্য | আসাম |
দেশ | ![]() |
আয়তন | |
• মোট | ১,৮২৪ বর্গকিমি (৭০৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১০,০৮,৯৫৯ |
• জনঘনত্ব | ৫৫০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় মান সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-AS-GP |
ওয়েবসাইট | http://goalpara.gov.in/ |
গোয়ালপাড়া জেলা (অসমীয়া: গোৱালপাৰা জিলা) ভারতের আসাম) রাজ্যের একটি প্রশাসনিক জেলা। ১৯৮৩ সালে পুরোনো গোয়ালপাড়া জেলাকে ৩খান জেলায় বিভক্ত করা হয়- গোয়ালপাড়া জেলা, ধুবড়ী আর কোকড়াঝাড় জেলা। নতুনভাবে গঠিত গোয়ালপাড়ার সদর স্থাপন করা হয় গোয়ালপাড়া শহরে। শুরুতে জেলাটির মহকুমা ছিল ২ টি- গোয়ালপাড়া ও উত্তর শালমারা মহকুমা। ১৯৮৯ সালে বঙাইগাঁও জেলা গঠিত হলে উত্তর শালমারা মহকুমা বঙাইগাঁও জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। বর্তমান জেলাটির মহকুমা মাত্র একটি।[১][২]
প্রাচীনকালে গোয়ালপাড়া জেলার পরিসর বৃহৎ ছিল। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অনেকখানি অঞ্চল যেমন বর্তমানের রংপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়িকে ধরে এক বৃহৎ অঞ্চল গোয়ালপাড়া জেলার অন্তর্গত ছিল। তখনকার এই বৃহৎ অঞ্চলেের নাম ছিল ``রত্নপীঠ``।
প্রাচীন কামরূপ রাজ্য চারটি ভাগে বিভক্ত ছিল।
১) পশ্চিমের করতোয়া নদী ( বর্তমান বাংলাদেশে)-র থেকে পূর্বে সোনকোষ নদী পর্যন্ত রত্নপীঠ।
২) সোনকোষ থেকে রূপহী নদী পর্যন্ত কামপীঠ।
৩) রূপহীর থেকে ভরলী নদী পর্যন্ত স্বর্ণপীঠ।
৪) ভরলীর থেকে দিকরাই পর্যন্ত সৌমরপীঠ।
পশ্চিমের সেই রত্নপীঠ আজকের গোয়ালপাড়া (অবিভক্ত) জেলা। প্রাচীনকালে অসম প্রাগজ্যোতিষপুর ও কামরূপ নামে প্রসিদ্ধ ছিল। প্রাগজ্যোতিষপুরের সীমা পশ্চিমে করতোয়া নদী (বর্তমান বাংলাদেশে) ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তেমনিভাবে বর্তমান অসম, বাংলাদেশ ও ভুটান প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
সেই প্রাচীনকালে ব্রহ্মপাল (আঃ ৯৯০-১০১০) কামরূপের রাজা হন ও পালবংশের পত্তন করেন। অবশ্য ব্রহ্মপালের আগে বহু বংশের বহু রাজাই এই অঞ্চলগুলিতে বা কামরূপে রাজত্ব করেছিলেন। ব্রহ্মপালের পরে ক্রমে রত্নপাল (আঃ ১০১০-১০৪০), ইন্দ্রপাল (১০৪০-১০৬৫), গোপাল (১০৬৫-১০৮০), হর্ষপাল (১০৮০-১০৯৫), ও ধর্মপাল (১০৯৫-১১২০) কামরূপর রাজা হন। রত্নপালের সময় রাজ্যের পশ্চিম অংশে ``গাল্লিটিপ্পক`` বিষয়ে মহামাণ্ডলিক ছিলেন ঈশ্বরঘোষ এবং ঈশ্বরঘোষের তাম্রলিপিতে ``গাল্লিটিপ্পক`` বিষয়র উল্লেখ আছে। ধর্মপাল রাজা হয়ে রাজধানী প্রাগজ্যোতিষপুর থেকে কামরূপ নগর স্থানান্তরিত করেন এবং তখনকার কামরূপ নগর হয়তো বর্তমানের উত্তর গুয়াহাটি। ধর্মপাল `কামরূপ নগর` রাজধানীর থেকে শাসন করতেন এবং সেখান থেকেই সেই ঈশ্বরঘোষের তাম্রলিপিতে থাকা `গাল্লিটিপ্পকই` পরবর্তীকালে গোয়ালপাড়া হয়।[৩]
চীনা পরিব্রাজক হিউএনসাঙের প্রবেশপথ ধরে স্যার এডোয়ার্ড গেইট মন্তব্য করেছেন যে, কামরূপের রাজা কুমার ভাস্কর বর্মণের রাজধানী গোয়ালপাড়া জেলায় নতুবা কোচবিহারে ছিল। ১৭৭৫ সালে গোয়ালপাড়া জেলা ব্রিটিশদের অধীনে আসে। ব্রিটিশদের হাতে আসার আগে পর্যন্ত গোয়ালপাড়া কোচ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ১৯২৬ সালে ইয়াণ্ডাবু সন্ধি যোগে ব্রিটিশরা অসম দখল করে। ১৮২৬ সালে গোয়ালপাড়া জেলাকে ব্রিটিশ আসামের সাথে সংযুক্ত করা হয় ও জেলাটির সদর কার্যালয় ধুবরীতে স্থাপন করা হয়।
১৯৮৩ সালে পুরানো গোয়ালপাড়া জেলাটির ৩ টি মহকুমা - গোয়ালপাড়া, ধুবরী ও কোকরাঝাড়কে জেলা পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। নতুনভাবে গঠিত গোয়ালপাড়া জেলার সদর স্থাপন করা হয় গোয়ালপাড়া শহরে। জেলাটিকে ২ টা মহকুমায় বিভক্ত করা হয় - ১) গোয়ালপাড়া মহকুমা ও ২) উত্তর শালমারা মহকুমা।[৪] ১৯৮৯ সালে কোকরাঝাড় ও গোয়ালপাড়া জেলার বিভাজন করে বঙাইগাঁও জেলা গঠন করা হয়। ফলস্বরূপ, উত্তর শালমারা মহকুমা বঙাইগাঁও জেলায় সামিল হয়। বর্তমান গোয়ালপাড়া জেলার মহকুমা মাত্র একটি।[৪]
২০০৬ সালে ভারত সরকার ভারতের অতি অনগ্রসর ২৫০ টি জেলার ভিতর গোয়ালপাড়াকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গোয়ালপাড়া জেলা 'অনগ্রসর অঞ্চল অনুদান পূুঁজি' (Backward Regions Grant Fund Programme) লাভ করা আসামের ১১ টি জেলার অন্যতম।[৯]
২০১১ সালের লোকগণনা অনুসারে গোয়ালপাড়া জেলার জনসংখ্যা ১,০০৮,৯৫৯ জন। জনসংখ্যার দিক থেকে জেলাটি ভারতের ৬৪০ টি জেলার ভিতর ৪৪৪ নং স্থান লাভ করেছে। ২০০১- ২০১১ দশকটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২২.৭৪%। ১০০০ জন পুরুষের বিপরীতে মহিলার সংখ্যা ৯৬২ জন। সাক্ষরতার হার ৬৮.৬৭%। জেলাটিতে বাস করা প্রধান সম্প্রদায়গুলি হল- রাভা, গারো, হাজং, কলিতা, কোচ রাজবংশী, দেশী মুসলমান ‚অবিভাষী মুছলমান‚ বড়ো ইত্যাদি।[২][১২]