গোয়ালপাড়ীয়া ভাষা | |
---|---|
উচ্চারণ | Goālpāriya[১] |
দেশোদ্ভব | ভারত |
অঞ্চল | পশ্চিম অঞ্চল |
জাতি | গোয়ালপাড়ীয়া |
মাতৃভাষী | |
ইন্দো-ইউরোপীয়
| |
উপভাষা |
|
অসমীয়া বর্ণমালা | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | – |
গ্লোটোলগ | None |
গোয়ালপাড়ীয়া ভাষা বা গোয়ালপাড়ীয়া আসামের গোয়ালপাড়া অঞ্চলে বহুলভাবে প্রচলিত অসমীয়া ভাষার উপভাষা (রাজনৈতিক ভাবে)। কিন্তু গোয়ালপাড়ীয়া ভাষার সাথে কামতাপুরী অর্থাৎ রংপুরী ভাষার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বর্তমানেে রাজনৈতিভাবে এটি অসমীয়ার উপভাষা হিসেবেে গণ্য হয়।
পশ্চিম আসামে প্রচলিত অসমীয়ার দুই উপভাষার মধ্যে গোয়ালপাড়ীয়া অন্যতম। অন্য উপভাষাটি হল কামরূপী উপভাষা বা কামরূপীয়া। গোয়ালপাড়ীয়া ভাষা অঞ্চলের পশ্চিমে উত্তর বঙ্গীয় উপভাষা অঞ্চল এবং এর আশে-পাশে তিব্বত-বর্মী ভাষার সম্প্রদায় আছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার শব্দ সংমিশ্রণ গোয়ালপাড়ীয়া উপভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।[২][৩] এই ভাষা বলা মানুষের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।[৪] গোয়ালপাড়ীয়া লোকসঙ্গীত-এর বিখ্যাত শিল্পী প্রতিমা বড়ুয়া পাণ্ডে গোয়ালপাড়ীয়া ভাষাকে জাতীয় দরবারে পরিচিতি দিয়েছিলেন।
গঙ্গা নদীর উত্তর দিকের অঞ্চলসমূহে পূর্ব মাগধী প্রাকৃত ভাষার থেকে অবধী, বরেন্দ্রী, কামরূপী এবং বঙ্গ ভাষার উৎপত্তি হয়েছিল। কামরূপ অঞ্চলে প্রচলিত ভারতীয়-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর কামরূপী ভাষা থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার গোয়ালপাড়ীয়া আদি ভাষা এবং উত্তরবঙ্গের কোচ রাজবংশী ভাষার উৎপত্তি হয়েছিল।
গোয়ালপাড়ীয়া উপভাষাকে তিনটি ভাগে শ্রেণী বিভাজন করা হয়। এই তিনটি হল;
আসাম-এর ভাষাবিদগণ এই তিনটি উপভাষাকেে অসমীয়া ভাষার উপভাষা হিসাবে উল্লেখ করেন। কিন্তু বাংলা ভাষাবিদ চ্যাটার্জী (১৯২৬) পশ্চিম গোয়ালপাড়ীয়া উপভাষাকে উত্তরবঙ্গের উপভাষাসমূহর সঙ্গে এবং বাকী দুটি ভাগকে কামতাপুরী ভাষার উপভাষা হিসাবে উল্লেখ করেন। বীরেন্দ্রনাথ দত্ত গোয়ালপাড়ীয়া উপভাষাকে তিনটি মুখ্য ভাগে বিভক্ত করেছেন। পূর্ব গোয়ালপাড়ীয়াকে অভয়াপুরী এবং গোয়ালপাড়া শহরে প্রচলিত এবং কৃষ্ণাই, দুধনৈ, ধূপধরা অঞ্চলের ভাষা হিসাবে দুটি শাখাতে ভাগ করেছেন। স্থানীয় ভাবে এই অঞ্চলের ভাষা সমূহ হাব্রাঘাটীয়া, বাউসীয়া, নামদানীয়া এবং বারাহাজারী হিসাবে পরিচিত।[৬]
পশ্চিম গোয়ালপাড়ীয়াকে গৌরীপুর অঞ্চল (স্থানীয় ভাবে ঘূলীয়া) এবং চালকোচা অঞ্চলের আশে পাশে প্রচলিত ভাষা এই দুই শাখাতে ভাগ করেছে। চালকোচার ভাষাকে তিনি মধ্যমীয়া গোয়ালপাড়ীয়া হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[৭]
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার পশ্চিম অংশে গোয়ালপাড়া অঞ্চলে গোয়ালপাড়ীয়া উপভাষা প্রচলিত। প্রাচীন কালে এই অঞ্চল কামরূপ রাজ্য-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কামরূপ রাজ্যের রত্নপীঠে গোয়ালপাড়া অঞ্চল ছিল।[৮]
পরে এই অঞ্চল কামতা রাজ্য এবং তারপর কোচ হাজোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজা রঘুদেব এবং পরীক্ষিত নারায়ণের রাজত্বকালে গোয়ালপাড়া অঞ্চল ১৫৮১ সাল থেকে ১৬১৫ সাল মোগলদের অধীন ছিল। ১৮শ শতকে ব্রিটিশগণ এই অঞ্চল বঙ্গ থেকে দেওয়ানি হিসাবে লাভ করেছিলেন এবং ১৮২৬ সালের ইয়াণ্ডাবু সন্ধির পর এই অঞ্চল ঔপনিবেশিক আসামের অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে এই অঞ্চল আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় অবস্থিত।
গোয়ালপাড়ীয়া লোকসঙ্গীত আসাম-এর প্রধান দুধরনের লোকসঙ্গীতের মধ্যে অন্যতম। গোয়ালপাড়া অঞ্চলে অতীত থেকে এইধরনের সঙ্গীতের চর্চা চলে আসছে। গোয়ালপাড়ীয়া সঙ্গীতের বিখ্যাত শিল্পী প্রতিমা বড়ুয়া পাণ্ডের প্রচেষ্টায় এই সঙ্গীত জাতীয় দরবারে পরিচিতি পেয়েছিল। গোয়ালপাড়ীয়া লোকসঙ্গীত এর সুকীয়া ভাষা (কথিত গোয়ালপাড়ীয়া ভাষা), সুর, জন-জীবনের দৃশ্য এবং বাদ্যযন্ত্রের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে গোয়ালপাড়ীয়া লোকসঙ্গীতের অ্যালবাম মুক্তি দেওয়া হয়।