ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | গোষ্ঠ বিহারী পাল | ||
জন্ম | ২০ আগস্ট ১৮৯৬ | ||
জন্ম স্থান | বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত | ||
মৃত্যু | ৮ এপ্রিল ১৯৭৬ | (বয়স ৭৯)||
মৃত্যুর স্থান | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | ||
মাঠে অবস্থান | রক্ষক | ||
জার্সি নম্বর | ৫ | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) |
১৯০৭–১৯১২ | কুমারটুলি, কলকাতা | ১১ | (০) |
১৯১২–১৯৩৬ | মোহনবাগান | ৬১৭ | (৪৩) |
জাতীয় দল | |||
১৯২৪ – ১৯৩০ | ভারত | ৩৭ | (৫) |
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
গোষ্ঠ পাল (২০ আগস্ট ১৮৯৬ - ৮ এপ্রিল ১৯৭৬) (ইংরেজি: Gostha Pal) একজন বিখ্যাত বাঙালি ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। রক্ষণে খেলার জন্য খ্যাতিলাভ করেছিলেন। দৈনিক ইংলিশম্যান তাকে চিনের প্রাচীর উপাধিতে ভূষিত করেছিল।[১]
গোষ্ঠ পাল তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি মাদারীপুর মহকুমা বর্তমান নড়িয়ার ভোজেস্বর গ্রামে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ২০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা শ্রীযুক্ত বাবু শ্যামলাল পাল ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। গোষ্ঠ পাল ফুটবল খেলে উপমহাদেশে সেই বিংশ শতাব্দীতে নাম কুড়ালেও কখনোই বাংলাকে ভোলেননি। তিনি কলকাতার "সারদাচরণ এরিয়ান ইনস্টিটিউশন" এ স্কুলজীবন কাটিয়েছেন। তাঁর আত্মজীবনীতেও তিনি বারবার লিখেছেন বাংলার কথা, তৎকালীন পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) কথা। আত্মজীবনীতে লিখেছেন,
‘পূর্ব বঙ্গের ফরিদপুরের মাদারীপুর সাব ডিভিশনের ভোজেস্বর গ্রামে আমার জন্ম হয়, দিনটি ১৮৯৬ সালের ২০শে আগস্ট, দিনের আলো ফুটিবার আগেই আমি ধরিত্রীর মুখ দেখিয়াছিলাম, আমার পিতা সেই সময় ঘরে ছিলেন না, পিতৃদেবের নাম শ্রীযুক্ত বাবু শ্যামলাল পাল, বরিশালের ঝালকাটি বন্দরে তেজারতির কারবার করিতেন, আমি পিতার প্রথম এবং একমাত্র সন্তান’।[২]
গোষ্ঠ পাল ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলা আরম্ভ করেছিলেন। ১৯০৭ সালে মাত্র ১১ বছর বয়েসে তিনি কলকাতার কুমারটুলি ক্লাবে যোগ দেন এবং ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সেখানে খেলেছিলেন। মোহনবাগানের খেলোয়াড় রাজেন সেনের সাহায্যে তিনি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগান ক্লাবে যোগ দেন। এর আগের বছরই মোহনবাগান বিদেশীদের হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জয় করেছিল।
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে মোহনবাগানের হয়ে তিনি প্রথম খেলেন। এরপর ২৩ বছর ধরে মোহনবাগানের হয়ে তিনি খেলেন। ১৯২০ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব প্রথম যে দল গড়ে তাতে ছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার গোষ্ঠ পাল। ১৯২০ সালে ইস্টবেঙ্গল একটাই টুর্নামেন্ট হারকিউলিস কাপে খেলতে মোহনবাগান থেকে তাকে হায়ারে নেওয়া হয়েছিল এবং চ্যাম্পিয়নও হয় লাল-হলুদ।[৩] ১৯২১ থেকে টানা ৫বছর তিনিই ছিলেন মোহনবাগানের ক্যাপ্টেন৷[৪] ১৯২৪ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় দলেরও অধিনায়কত্ব পান।[২][৫] তিনি খেলতেন রাইট ব্যাক পজিসনে। খেলার সময় বুটপরা ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের তিন খালি পায়ে খেলে প্রতিরোধ করতেন। ভারতীয় দল নিয়ে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিংহলে (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) যান। তিনি হকি খেলাতেও দক্ষ ছিলেন এবং ক্রিকেট ও টেনিসও খেলতেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।[১]
গোষ্ঠ পাল ৮ এপ্রিল ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় মৃত্যবরন করেন।[৪]
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে গোষ্ঠ পাল ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন।[৬] তিনি ছিলেন প্রথম ফুটবল খেলোয়াড় যিনি পদ্মশ্রী উপাধি পেয়েছিলেন।[৪]
১৯৮৪ সালে কলকাতায় স্থাপিত হয় তার ভাস্কর্য। খালি পায়ে ফুটবল খেলার ঔদ্ধত্যটাই বোঝানো হয়েছে এই ভাস্কর্যে। সেই ভাস্কর্যের নিচে লেখা আছে,
‘ভারতীয় ফুটবলে সর্বকালের সেরা ব্যাক। সে যুগে বুটপরা ইউরোপীয় ফুটবলারদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে খেলে দুর্ভেদ্য চীনের প্রাচীর নামে খ্যাত। খেলার মাঠে স্বজাতির সম্মান প্রতিষ্ঠায় ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষে অন্যতম সৈনিক।’[৫]
ইডেন গার্ডেন্স ও মোহনবাগান মাঠের সামনে দিয়ে যাওয়া কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির গোষ্ঠ পাল সরণি।
তার স্বরণে ডাকটিকিটও প্রকাশিত হয়েছে।
মোহনবাগান ক্লাব ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে মরনোত্তর মোহনবাগান রত্ন উপাধিতে ভূষিত করে।
মোহনবাগান ক্লাবের ভিতরে তার নামে একটি সংগ্রহশালা গোষ্ঠ পাল সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে।[১]
সেন্ট্রাল কলকাতা গোষ্ঠ পাল মেমোরিয়াল স্পোর্টিং ক্লাব ও গোষ্ঠ পাল চাম্পিয়ান্স বেবি লিগ- ২০১৯।[৭]