গ্ত্সাং-স্ম্যোন-হেরুকা (তিব্বতি: གཙང་སྨྱོན་ཧེ་རུ་ཀ་, ওয়াইলি: gtsang smyon heruka) বা সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: sangs rgyas rgyal mtshan) (১৪৫২-১৫০৭) একজন বিখ্যাত তিব্বতী গ্রন্থ রচয়িতা ও বৌদ্ধ সাধক ছিলেন।
গ্ত্সাং-স্ম্যোন-হেরুকা ১৪৫২ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য তিব্বতের ম্খার-খা (ওয়াইলি: mkhar kha) নামক স্থানে ম্যাং (ওয়াইলি: myang) নামক পরিবারগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল সাংস-র্গ্যাস-দ্পাল-ল্দান (ওয়াইলি: sangs rgyas dpal ldan) এবং মাতার নাম ছিল সাংস-র্গ্যাস-'দ্রেন (ওয়াইলি: sangs rgyas 'dren)। তিনি কুন-দ্গা'-সাংস-র্গ্যাস (ওয়াইলি: kun dga' sangs rgyas) নামক পণ্ডিতের নিকট শিক্ষার্থীর শপথ গ্রহণ করেন এবং তার নাম রাখা হয় সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: sangs rgyas rgyal mtshan)। তিনি শা-রা-বা-রাব-'ব্যাম্স-পা-সাংস-র্গ্যাস-সেং-গে (ওয়াইলি: sha ra rab 'byams pa sangs rgyas seng ge) নামক বিখ্যাত বৌদ্ধ সাধকের নিকট তিনি বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন। এরপ্র তিনি র্গ্যাল-র্ত্সে (ওয়াইলি: rgyal rtse) নামক স্থানে অবস্থিত দ্পাল-'খোর-ছোস-স্দে (ওয়াইলি: dpal 'khor chos sde) বৌদ্ধবিহারে গ্যু-লুং-পা-য়োন-তান-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: g.yu lung pa yon tan rgya mtsho) নামক ভিক্ষুর নিকট হেবজ্র সহ বিভিন্ন তন্ত্র সম্বন্ধে অধ্যয়ন করেন। তিনি কুন-দ্গা'-দ্পাল-'ব্যোর নামক দ্বিতীয় র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা এবং থাং-স্তোং-র্গাল-পো (ওয়াইলি: thang stong rgyal po) নামক দ্পাল-ছেন-রি-বো-ছে (ওয়াইলি: dpal chen ri bo che) বৌদ্ধবিহারের প্রধানের নিকট শিক্ষালাভ করেন।[১]
একুশ বছর বয়সে তিনি বৌদ্ধবিহারে বসবাস ছেড়ে দিয়ে ভিক্ষুর জীবন অতিবাহিত না করে ভবঘুরে জীবন যাপন শুরু করেন। এই সময় তিনি এমন প্রথাবিরুদ্ধ ব্যবহার করতেন, যার ফলে তিব্বতের বেশিরভাগ বৌদ্ধ পণ্ডিত তাকে এড়িয়ে চলতেন। তিনি বড় বড় চুল রাখা শুরু করেন এবং খট্বাঙ্গ ও মানুষের মাথার খুলি বা কপাল প্রভৃতি তন্ত্র বিষয়ক জিনিস বয়ে বেড়াতেন। এই সময় তিনি কাপড়ের বদলে মৃত মানুষের দেহের অংশ পরে থাকতেন এবং অদ্ভুত রকম ভাবে কখনো হাসতেন বা কখনো কাঁদতেন। তার এই অদ্ভুত আচরণের জন্য তিনি মধ্য তিব্বতের পাগল বা গ্ত্সাং-স্ম্যোন নামে পরিচিত হন। জীবনের শেষ তিরিশের ওপর বছর তিনি তিব্বত, মুস্তাং ও নেপালের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান ও সাধনায় লিপ্ত থাকেন। ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের রাজা রত্নমল্লের অনুরোধে কাঠমান্ডু শহরে অবস্থিত স্বয়ম্ভূনাথ স্তূপ সংস্কার করেন।[১]
মধ্য তিরিশের বয়সে লাবচি নামক স্থানে তিন বছর ধরে বসবাসকালে তিনি মি-লা-রাস-পা নামক সুবিখ্যাত বৌদ্ধ সাধকের জীবনী ও সঙ্গীত সংকলন বিষয়ক তার সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত গ্রন্থ দুটি রচনা করেন। এই রচনা দুটি লিখতে গিয়ে তিনি মি-লা-রাস-পার জীবনযাপনকে অনুসরণ করেন। মি-লা-রাস-পা যে সমস্ত স্থানে বসবাস ও সাধনা করেছিলেন, তিনিও সেই সমস্ত স্থানে বসবাস ও সাধনা করেন। কাঠের ব্লকে অভিনব পদ্ধতিতে ছেপে তিনি এই গ্রন্থ দুটি সমগ্র তিব্বতে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। বর্তমানে এই দুইটি গ্রন্থ সমগ্র তিব্বতে বহুল প্রচলিত এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত। তিনি স্ন্যান-ব্র্গ্যুদ (ওয়াইলি: snyan brgyud) নামক মি-লা-রাস-পার ছাত্রদের দ্বারা প্রচারিত এক শিক্ষা বিষয়ক এবং ১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে মার-পা-ছোস-ক্যি-ব্লো-গ্রোসের জীবনী ও সঙ্গীত সংকলন বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি এছাড়াও বহু সঙ্গীত ও দোঁহা রচনা করেন।[১]
র্গোদ-ত্শাং-রাস-পা (ওয়াইলি: rgod tshang ras pa), ল্হা-ব্ত্সুন-রিন-ছেন-র্নাম-র্গ্যাল (ওয়াইলি: snyan brgyud) এবং দ্ঙ্গোস-গ্রুব-দ্পাল-'বার (ওয়াইলি: dngos grub dpal 'bar) নামক তার তিন প্রধান শিষ্য ছিলেন ও কুন-তু-ব্জাং-মো (ওয়াইলি: kun tu bzang mo) নামক তার ধর্মসঙ্গিনী গ্ত্সাং-স্ম্যোন-হেরুকার জীবনী রচনা করেন এবং তার সঙ্গীত সংকলন ছাপেন।[২] এই সমস্ত গ্রন্থ রাস-ছুং-ফুগ (ওয়াইলি: ras chung phug) এবং ব্রাগ-দ্কার-র্তা-সো (ওয়াইলি: brag dkar rta so) নামক দুইটি স্থানে সংরক্ষিত হয়, কিন্তু সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সেগুলি সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[১]
|তারিখ=
(সাহায্য)