ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | গ্যারি জন কোজিয়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | রিচমন্ড, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া | ২৫ এপ্রিল ১৯৫৩|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৭৪) | ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৩১) | ২০ ডিসেম্বর ১৯৭৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ ওডিআই | ১৬ জুন ১৯৭৯ বনাম কানাডা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭১, ১৯৮০-৮১ | ভিক্টোরিয়ান বুশর্যাঞ্জার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭৪–১৯৭৭ | সাউথ অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৭৭–১৯৮০ | কুইন্সল্যান্ড বুলস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ |
গ্যারি জন কোজিয়ার (ইংরেজি: Gary Cosier; জন্ম: ২৫ এপ্রিল, ১৯৫৩) ভিক্টোরিয়ার রিচমন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও কুইন্সল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করার পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন গ্যারি কোজিয়ার।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৮টি টেস্ট ও ৯টি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে দূর্দান্তভাবে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। নবম অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার বিরল গৌরব অর্জন করেন। তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যেই ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’ দেখাতে পেরেছেন গ্যারি কোজিয়ার।
মেলবোর্নে গ্যারি কোজিয়ারের জন্ম। সেখানেই তার শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। ইউনিভার্সিটি হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। বিদ্যালয়ের প্রথমে একাদশ দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এ অবস্থাতেই অস্ট্রেলীয় ক্ষুদে দলের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনের সৌভাগ্য হয় তার।[১] ঐ সফরের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বার্বাডোসের বিপক্ষে ৯৬ রান তোলা।[২]
নর্থকোটের সদস্যরূপে ক্লাব ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন গ্যারি কোজিয়ার। এ সময় ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিখ্যাত ক্রিকেটার বিল লরি। ১৮ বছর বয়সে ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এ পর্যায়ে বিল লরি’র সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে মাঠে নেমেছিলেন।[৩] শুরুরদিকে কিছুসংখ্যক ক্রিকেট লেখক বিল লরি’র সাথে তাকে তুলনা করতেন। ভিন্নধর্মীয় ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বলেছিলেন যে, বিল লরি’র প্রভাবেই প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে বেশ মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ব্যথা নিয়েও বিল লরি অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছিলেন ও সবকিছুই তার প্রতিকূল অবস্থায় ছিল।[৪]
ঐ মৌসুমের গ্রীষ্মকালেও ভিক্টোরিয়ান কোল্টস দলের পক্ষে রডনি হগ ও পল হিবার্টের ন্যায় খেলোয়াড়ের সাথে খেলেছেন।[৫]
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নিজস্ব ওজনের সমস্যা নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। এর পাশাপাশি জন্মকালীন ত্রুটিপূর্ণ পিঠের সমস্যা নিত্য সঙ্গী ছিল। তার মেরুদণ্ড সোজা অবস্থায় থাকতো। ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ সালে তিনি বলেন যে, আমি সবসময় কঠিন ধরনের শারীরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারতাম না। আমি স্বাভাবিকভাবে দৌঁড়ুতে কিংবা ব্যয়াম করতে পারতাম না।[৪]
নিয়মিতভাবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্য নিয়ে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার দিকে ধাবিত হন। পরবর্তীতে তিনি বলেন যে, আমি অধিক রান সংগ্রহ করতে পারছিলাম না। একদিনের খেলার উইকেট-রক্ষক রে জর্ডনের উদ্দীপনায় অ্যাডিলেডে খেলার সুযোগ পেয়েছি।
তখনকার সংবাদপত্রের প্রতিবেদন লেখক রে’র সাথে যোগাযোগ না হবার পূর্ব-পর্যন্ত আমি কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এক নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন যে, আমি নিশ্চিতরূপেই দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় খেলার সুযোগ পেতে পারি।[৬] ফলশ্রুতিতে অ্যাডিলেডভিত্তিক ক্লাব দলগুলোর কাছ থেকে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা আসে। এরফলে, ১৯৭৪ সালে গ্যারি কোজিয়ার স্থানান্তরিত হন।
দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের প্রভাবে গ্যারি কোজিয়ার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ব্যাটিংয়ের দিকে অগ্রসর হন। এক পর্যায়ে শীর্ষস্তরে চলে যান। তবে, ইয়ান চ্যাপেলের কাছে খেলায় তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
১৯৭৪-৭৫ মৌসুমের গ্রীষ্মকালে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৮১ রানের ইনিংস উপহার দেয়া।[৭] ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ব্যাট হাতে চমৎকার মৌসুম অতিবাহিত করেন গ্যারি কোজিয়ার। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের বিপক্ষে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে ১৩০ রান তুলে টেস্ট খেলার উপযোগী করে তুলেন নিজেকে।[৮] এরপর এনএসডব্লিউ’র বিপক্ষে ৭৬ [৯] কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন।[১০] ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে ১৩-সদস্যের অস্ট্রেলীয় দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১১] ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৭১ ও ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।[১২] মাংসপেশীতে টান পড়া সত্ত্বেও ব্যাট হাতে রানার নিয়ে মাঠে নামেন।[১৩]
অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে একদিনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক ঘটে গ্যারি কোজিয়ারের। খেলায় তিনি ১/৩৩ ও অপরাজিত ২৫ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ উইকেটের ব্যবধানের জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[১৪] তৃতীয় টেস্টে টেরি জেনারের পরিবর্তে খেলার জন্যে মনোনীত হন।[১৫] ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের বিপক্ষে ১০৭ রানের আরও একটি সেঞ্চুরি করে এ সুযোগ পান তিনি।[১৬]
অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করার বিরল গৌরব অর্জন করেন গ্যারি কোজিয়ার।[১৭] এ প্রসঙ্গে কোজিয়ার পরবর্তীকালে উল্লেখ করেন যে:
আমার স্পষ্ট মনে আছে, বিকাল ৫টায় ব্যাট হাতে মাঠে নামি ও অ্যান্ডি রবার্টস দ্বিতীয় নতুন বল মাত্র হাতে নিয়েছেন। এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তের কাছাকাছি পর্যায়ের দিকে চলে গিয়েছিলাম। তখন আমি পাঁচ রানে অপরাজিত অবস্থায় ছিলাম। আমার জানামতে আমি বলটিকে আঘাত করেছি। তবে, আমি আম্পায়ার রবিন বেইলহেচ সম্পর্কে জানতাম না। তিনি আমাকে অপরাজিত ঘোষণা করেছিলেন যা নিঃসন্দেহে ধন্যবাদের যোগ্য ছিল। পরেরদিন মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে ৯৯ রানে অপরাজিত থাকি। সেঞ্চুরি করাকালে পিতা-মাতা ও বন্ধুরা তা উপভোগ করে ও আমি অত্যন্ত সুখী অনুভব করি।[১৮]
এরপর পরবর্তী টেস্টে ২৮ রানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে গ্রেগ চ্যাপেলের সাথে ৯৯ রানের জুটি গড়েন।[১৯][২০] এ প্রসঙ্গে গ্যারি কোজিয়ার মন্তব্য করেন যে, গ্রেগের সাথে জুটি গড়ে ২৮ রানের ইনিংস খেলাকে আমার টেস্ট সেঞ্চুরির চেয়েও মহামূল্যবান ছিল। এ ধরনের ইনিংস দলের জন্য কিছু অর্থ প্রকাশ করে। এমনকি আমার জন্যেও।[২১]
জিলেট কাপের সেমিফাইনালে ফিল্ডিংরত অবস্থায় বাউন্ডারি সীমানা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে তার দল পরাজিত হয়েছিল।[২২] আরোগ্য লাভের পর ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৯৪ ও ৪/৯৫ পান।[২৩]
এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৭ রান তুলেন।[২৪][২৫] খেলা চলাকালীন পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হন ও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। ফলশ্রুতিতে, ষষ্ঠ টেস্টে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন।[২৬] তার পরিবর্তে রিক ম্যাককস্কার স্থলাভিষিক্ত হন।[২৭] আরোগ্য লাভের পর ঐ বছরে সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে শেফিল্ড শিল্ডের শিরোপা জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমের গ্রীষ্মকালে ধীরলয়ে যাত্রা শুরু করেন গ্যারি কোজিয়ার। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দলে সৌভাগ্যবশতঃ স্থান পেয়েছিলেন তিনি।[২৮] এছাড়াও, সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে বেশ কয়েকটি খেলায় অধিনায়কত্ব করেছেন। কোজিয়ার বলেন আমি এটি ভালোবাসি। দর্শকেরা বলে থাকেন যে, এটি আমার ব্যাটিংকে সমৃদ্ধ করেছে কিন্তু, ঐ পর্যন্তই।[২৯] জেফ থমসনের নেতৃত্বাধীন কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ রানের ইনিংসটি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নিজের সেরা ইনিংসরূপে আখ্যায়িত করেছেন গ্যারি কোজিয়ার।[২৯]
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৩ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এ পর্যায়ে তিনি ও রড মার্শ জয়ের দিকে ধাবিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।[৩০][৩১]
এরফলে গ্যারি কোজিয়ার বেশ সমালোচিত হন। এ প্রসঙ্গে জানুয়ারি, ১৯৭৭ সালে ইয়ান চ্যাপেল ক্রিকেটার সাময়িকীতে নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৬৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।[৩২] এরপর কোজিয়ার চ্যাপেলের প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, প্রকৃত ঘটনা হলো আমি তার বক্তব্যকে ভুল প্রমাণিত করতে সচেষ্ট ছিলাম। ঐ নিবন্ধ প্রকাশের ফলেই আমি সেঞ্চুরি পেয়েছি।[২৯]
তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫০ রান তুলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে, অস্ট্রেলিয়া পরাজয়ের মুখোমুখি হয়।[৩৩]
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, ‘আমার নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দিহান ছিলাম। আমি তখনো টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। আমাকে বহুদূর যেতে হবে। ঐ মুহুর্তে আমি একটি ভালো ইনিংস খেললেও পরবর্তী তিনটিতে ব্যর্থ হচ্ছি। আমি জানি না কেন তা হচ্ছে। খুব সম্ভবতঃ আমার বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। সর্বোপরি আমি নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছিলাম। আমি শুনতে পেরেছি যে আমাকে অফ স্ট্যাম্পের দিকে যেতে হবে। আমি অতিরিক্ত ওজনকে টেনে ধরছি।’[৩৪]
নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যক্তিগতভাবে তেমন স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি। প্রথম টেস্টে ২৩ ও ২ রান করেছিলেন।[৩৫] দ্বিতীয় খেলায় করেন ২১ রান।[৩৬] তবে, প্রস্তুতিমূলক খেলায় নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের বিপক্ষে ৯২ বল ৯৩ রান তুলেছিলেন।[৩৭]
শতবার্ষিকী টেস্টে গ্যারি কোজিয়ারকে খেলানো হয়। তিনি ১০ ও ৪ রান তুলতে পেরেছিলেন।[৩৮] ১৯৭৭ সালের অ্যাশেজ খেলার জন্য মনোনীত হন।[৩৯]
খেলা চলাকালে গ্যারি কোজিয়ার লক্ষ্য করেন যে, অস্টিন রবার্টসন খেলোয়াড়দেরকে বাদামী বর্ণের খাম হস্তান্তর করছেন। এ প্রসঙ্গে কোজিয়ার পরবর্তীকালে উল্লেখ করেন যে,
জানতে চাইলে তিনি বলেন যে কিছু থিয়েটারের টিকিট বিতরণ করছেন ও সর্বদাই খেলোয়াড়দের দেখাশোনা করায় আমি কোন সন্দেহপোষণ করিনি। তিনি অনেক খেলোয়াড়ের প্রিয়জন ছিলেন। হয়তোবা তারচেয়েও বেশি অন্তরঙ্গ ছিল। আমি কোন সঙ্কেতই পাইনি যে ঐ রাতে কিছু একটা হতে চলেছে।[১৮]
পিঠের আঘাতের কারণে গ্যারি কোজিয়ারের সূচনা তেমন ভালো হয়নি। ফলে, একটি খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন।[৪০] পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া দলের অধিকাংশ সদস্যই বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দলের অবস্থা আরও তথৈবাচৈ অবস্থায় নিপতিত হয়। গ্যারি কোজিয়ার, জিওফ ডাইমক, কিম হিউজ ও ক্রেগ সার্জেন্ট - এ চারজনই কেবল আমন্ত্রিত হননি।[৪১] দ্বিতীয় ওডিআইয়ে অংশ নেন গ্যারি কোজিয়ার। মিডিয়াম পেস বোলিং করে ৫/১৮ পান। তাসত্ত্বেও, অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং দূর্বলতার প্রেক্ষিতে খেলায় পরাজিত হয়।[৪২]
ঐ সফরে গ্যারি কোজিয়ারকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করানো হয়নি। ডেভিড হুকস, রিচি রবিনসন, ক্রেগ সার্জেন্ট ও কিম হিউজকে খেলানো হলেও তাকে বাদ রাখা হয়। সফরের কোজিয়ারের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৫৬ রানের ইনিংস খেলা।[৪৩] ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ৫৬[৪৪] ও নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ১০০ রান তুলেন।[৪৫][৪৬]
বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের প্রেক্ষিতে গ্যারি কোজিয়ার অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী স্বল্প কয়েকজন খেলোয়াড়দের অন্যতম হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী সাম্প্রতিক টেস্ট খেলায় অভিজ্ঞতালব্ধ ছিলেন। আকর্ষণীয় চুক্তিতে কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে খেলেন। গ্রীষ্মের শুরুতে ব্রিসবেনের দিকে ধাবিত হন। ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫০ বলে ৫৫ রান ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম টেস্ট খেলার জন্য নির্বাচিত হন।[৪৭][৪৮]
প্রথম টেস্টে ব্যাটিং উদ্বোধনে মাঠে নেমে ১৯ ও ০ রান তুলেন।[৪৯] আঘাতের কবলে পড়ে দ্বিতীয় টেস্টে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। তৃতীয় টেস্টে নিজেকে মেলে ধরেন। ৬৭ ও ৩৪ রান তুললেও অস্ট্রেলিয়ার পরাজয় রোধ করতে পারেননি তিনি।[৫০][৫১]
চতুর্থ টেস্টে করেন ১৭ ও ৬৮ রান।[৫২][৫৩] পঞ্চম টেস্টে ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করেন। ১ ও ৩৪ রান তুলেন তিনি। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ তালুবন্দী করে দলের জয়ে বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন।[৫৪]
গ্যারি কোজিয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শুরুতে বেশ ভালো করেন। প্রথম একদিনের খেলায় ৭৮ বলে ৮৪ রান তুলেন।[৫৫] প্রথম টেস্টে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে ৪৬ রান তুলেন। এ পর্যায়ে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দল মাত্র ৯০ রানে গুটিয়ে যায়।[৫৬]
দ্বিতীয় টেস্টে দুবারই ব্যর্থ হন। ১ ও ৮ রান তুলেন।[৫৭] তবে, প্রস্তুতিমূলক খেলায় গায়ানার বিপক্ষে ১১৪ রান করেন।[৫৮][৫৯] তৃতীয় টেস্টে ৯ ও ০ রান পান।[৬০] উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডসের বিপক্ষে বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাত পান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, ঐ সফরে আর কোন খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তার।[৬১][৬২]
পরবর্তী গ্রীষ্মকালের শুরুতে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৯৪ রান তুলে সুন্দর শুভসূচনা করেন।[৬৩] ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলার জন্য তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অধিনায়ক গ্রাহাম ইয়ালপের সহযোগী মনোনীত হন তিনি।[৬৪] ঐ খেলা চলাকালে ঘোষণা করা হয় যে, ক্রীড়া মাঠ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ১০-বছর মেয়াদে বার্ষিক $৫০,০০০ ডলারে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।[৬৫][৬৬]
ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে আবারও ১ ও ০ রান করেন।[৬৭] দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করেন। খেলায় ৪ ও ৪৭ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসের সংগ্রহটি অস্ট্রেলিয়ার ঐ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বাধিক সংগ্রহ ছিল। তবে, অ্যালান বর্ডারের অন্তর্ভুক্তিতে কোজিয়ারকে বাদ দেয়া হয়।[৬৮][৬৯]
ঐ গ্রীষ্মের একদিনের সিরিজেও গ্যারি কোজিয়ারকে দলে রাখা হয়।[৭০] ইনিংসের শেষদিকে ১৪ বলে ২৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে ৪র্থ ওডিআইয়ে জয়লাভে প্রভূতঃ সহায়তা করেন।[৭১][৭২]
পরের খেলায় ৩/২২ পান ও ৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ঐ খেলায়ও তার দল আরও একটি জয় পেয়েছিল।[৭৩][৭৪]
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।[৭৫][৭৬]
স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রান ও ০/২৪ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন গ্যারি কোজিয়ার।[৭৭] খেলায় তার দল ৬ উইকেটে পরাজয়বরণ করেছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩/৫৪ লাভ করলেও শূন্য রানে বিদায় নেন। [৭৮] ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া ৮৯ রানে পরাজিত হয়। এর দূর্বল প্রতিপক্ষ কানাডার বিপক্ষে অস্ট্রেলীয়রা স্বান্তনাসূচক ৭ উইকেটে জয় পায় ও প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়। খেলায় তিনি ২/১৭ পেয়েছিলেন।[৭৯]
ভারত গমনে তাকে বাদ দেয়া হয়।[৮০]
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তির ফলে রাজ্য দলে খেলার সুযোগ হারান। এ প্রসঙ্গে কোজিয়ার মন্তব্য করেন যে,
সত্যিকার অর্থেই গ্রেগ চ্যাপেলের সাথে আমার সম্পর্ক মধুময় ছিল। কিন্তু বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট থেকে প্রত্যাবর্তনের পর কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে খেলা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায় ও আমি আকস্মিকভাবে মুষড়ে পড়ি। আমার জন্যে খেলায় অংশগ্রহণ করা বেশ কষ্টকর পর্যায়ে উপনীত হয়।[১৮]
গ্যারি কোজিয়ার মৌসুমের শুরুতে বেশ ভালো করেন। এক পর্যায়ে তার ব্যাটিং গড় ৭১ ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই তা নিচেরদিকে গড়াতে থাকে।[৮১]
এরপর নিজ জন্মভূমি মেলবোর্নে ফিরে আসতে বাধ্য হন। সেখানে ১৯৮০-৮১ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে আরও দুইটি খেলায় অংশ নিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটকে বিদায় জানান। এ প্রসঙ্গে কোজিয়ার বলেন যে,
আমার ন্যায় স্বল্প কয়েকজন খেলোয়াড় তাদের খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা দূর্দান্তভাবে শুরু করলেও পরবর্তীকালে তা আর ধরে রাখতে পারেননি। এটি অনেকাংশে প্রথম আরোহণকালে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণের মতো যেখানে পরবর্তী চূড়ার অবস্থান জানা যায়নি? ঐ সময়ে নেটওয়ার্কের বিরাট সহযোগিতা পেলেও কর্মীর অভাব লক্ষ্য করা যায়।[১৮]
বেশ কয়েকবছর ইনডোর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন গ্যারি কোজিয়ার।[৮২]
১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে ভিক্টোরিয়ার কোচ ও দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।[৮৩] তিন বছর তাঞ্জিয়ারে বসবাস করেন। আব্দুর রহমান বখতিয়ারের পরিচালনায় ক্রিকেট ও গল্ফের ব্যবস্থাপনায় অংশ নেন। উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে আট দলের জাতীয় লীগে সম্পৃক্ত হন ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ৯৫% অংশগ্রহণ ছিল বলে গর্বের সাথে দাবী করেন। জাতীয় দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন ও আইসিসির সদস্যের পথে নিয়ে যান। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন তিনি এবং কোচিং ও ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার দিকে ধাবিত হন।
সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে বার্ষিক কানিংহাম ডিস্ট্রিক্ট বোলস অ্যাসোসিয়েশন পুরুষ একক লন বোলস চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন।
লালচে চুলের অধিকারী গ্যারি কোজিয়ার মাঝারিসারিতে ব্যাট হাতে মাঠে নামতেন। নিজের সেরা দিনে নির্দয়ভাবে বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরাতেন। চার মৌসুমের অধিক সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জন্যে নিজেকে তৈরি করেন। তবে, টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে কখনোই মানিয়ে নিতে পারেননি। এরই মাঝে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়া দলের সহঃঅধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দুইবার টেস্ট পর্যায়ে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে মেলবোর্নে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি ও পরের মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬৮ রান সংগ্রহ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক ছিল। তবে, টেস্ট বোলারেরা খুব দ্রুত তার দূর্বলতা খুঁজে পায়। ব্যাট অল্প উঁচিয়ে রাখা ও ত্রুটিপূর্ণ পায়ের কাজই তাকে সমস্যায় ফেলে দেয়। স্বল্প চাতুর্য অবলম্বন করে সর্বশক্তি প্রয়োগে রান সংগ্রহের দিকে অগ্রসর হতেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে ব্যাটিংয়ের ধরন পরিবর্তনে অগ্রসর হন। এ সময়ে তিনি ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো মিডিয়াম-পেসার হিসেবেও দলে ভূমিকা রেখেছেন। উপযোগী পিচে ঠিকই তার বোলিং প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত একদিনের আন্তর্জাতিকে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ৫/১৮ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। তবে, টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে তার বোলিং তেমন কার্যকরী ছিল না। নিজস্ব ত্রয়োদশ টেস্টে প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করতেন তিনি। মূলতঃ স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থাকতেন।