গ্যাসপারে গোরেসিও (১৮০৮-১৮৯১) একজন ইতালীয় প্রাচ্যবিদ ও তিব্বতবিদ ছিলেন।[১] তিনি মূল সংস্কৃত রামায়ণ সুষ্ঠু সম্পাদনা ও প্রকাশ করে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছরেরও (১৮৪৩-১৮৬৭) বেশি সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ক'রে পারি থেকে তিনি ১২টি খণ্ডে সম্পাদনা কার্য শেষ করেন। উল্লেখ্য গোরেসিওর মাতৃভাষা ইতালিয় হওয়ায় গ্রন্থটির ভূমিকা ও টীকা-টিপ্পনীর ভাষাও ছিল ইতালিয়। গ্রন্থটি মূলতঃ তিনটি পর্যায়ে বিন্যস্ত ছিল, প্রথম কয়েকটি খণ্ডে ছিল মূল সংস্কৃত রামায়ণ, পরের পর্যায়ে ছিল ইতালিয় ভাষায় এর অনুবাদ ও বিভিন্ন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আর অন্তিম পর্যায়ে ছিল লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল রামায়ণের সাহিত্য সমালোচনা । এটি ছিল ইউরোপে ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের প্রথম সম্পাদনা।[২]
গোরেসিও বহু বিদ্বদসভার সভ্য ছিলেন । তিনি ফ্রান্সের রাজকীয় ইন্সটিউটের কোরেস্পন্ডিং মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। গোরেসিওর জীবিতকালে রামায়ণের আর একটি সংস্করণ হয়েছিল । এই দ্বিতীয় সংস্করণের শেষ খণ্ড উত্তরকাণ্ড ১৮৬৭ সালে পারি থেকে ছাপা হয়েছিল ।
১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জানুয়ারি উত্তর ইতালির বাগনাস্কোতে গোরেসিওর জন্ম। তার বাবা ছিলেন জিওভানি বাপ্তিস্তা গোরেসিও, মা ক্লোতিলদে দেয়ালবের্তি। মন্দভি'র ডায়াসেসন সেমিনারিতে পাঠ সমাপ্ত করে তিনি তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেদিও পাইরনের তত্ত্বাবধানে ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে গভীর জ্ঞান লাভ করেন। অতঃপর তিনি জেনোয়া নিবাসী শিক্ষাবিদ মারক্যুইস আন্তনিও -এর বদান্যতায় অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে ধ্রুপদী ভাষাতত্ত্বর উপর গবেষণা করেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তুরিন ফিরে এসে সামরিক শিক্ষালয়ের ইতিহাস বিষয়ের লেকচারার নিযুক্ত হন। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আরও দুই সহযোগীর সাথে বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা সাব আলপাইন 'এর প্রতিষ্ঠা করেন । এই বছরেই তিনি পারি গমন করেন এবং সেখানে তিনি অধ্যাপক ইউজিন ব্যুর্নুফ'এর তত্ত্বাবধানে সংস্কৃত ভাষাচর্চায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন । এই সময় তিনি সংস্কৃত রামায়ণের সঙ্গে পরিচিত হন এবং অধ্যাপক ইউজিন ব্যুর্নুফ'এর অনুপ্রেরণায় ইতালিয় ভাষায় সংস্কৃত রামায়ণ অনুবাদের প্রকৃত কাজটি শুরু করেন। এখানে তিনি ফরাসি ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে এখানকার মানুষদের নিকট আত্মীয় হয়ে ওঠেন। বিখ্যাত চিনাবিদ স্তানিসলাস জুলিয়েন'এর সংস্পর্শে এসে তিনি চিনাভাষাতেও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন।[১]
বিখ্যাত ফরাসি সংস্কৃত ভাষাবিদ ইউজিন ব্যুর্নুফের[৩] অনুপ্রেরণায় গোরেসিও সংস্কৃত রামায়ণের ইতালীয় অনুবাদের মত দুরূহ ও দুঃসাধ্য কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর এই মহান কাজে ইতালির রাজা আলবেয়ার সর্বোতভাবে গোরেসিও-কে আর্থিক সাহায্য জুগিয়ে তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন ও উৎসাহ জোগান।[২]
১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে গোরেসিও তুরিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের ডিরেক্টর নিযুক্ত হন; সেই সঙ্গে তুরিনের বিজ্ঞান আকাদেমিরও স্থায়ী সম্পাদকের কাজে যোগ দেন। তাকে লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। বহু সম্মানে সম্মানিত এই জ্ঞানতপস্বী ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মে ইতালির তুরিন শহরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |