সময় | প্রাচীন গ্রীস |
---|---|
তারিখ | আনু. খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ – আনু. ৮০০ অব্দ |
পূর্বসূরী | মিসিনিয়ান গ্রীস |
উত্তরসূরী | আর্কাইক গ্রীস |
গ্রীসের ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
গ্রিক অন্ধকার যুগ, হোমেরিক যুগ (মহাকবি হোমারের নামে নামকরণ করা হয়েছে) বা জ্যামিতিক যুগ (এসময়ের জ্যামিতিক শিল্পকলার বৈশিষ্ট অনুযায়ী নামকরণ করা হয়েছে)[১] নামেও পরিচিত, গ্রীসের ইতিহাসের একটি যুগ, যা মিসিনিয়ান সভ্যতার শেষ দিকে খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দ থেকে শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রীসের প্রথম নিদর্শন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে এই যুগের পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়, কারণ মিসিনিয়ান সময়ের বড় প্রাসাদ ও শহর ধ্বংস হয়েছিল বা পরিত্যাগ করা হয়েছিল। এই সময়কালীন হাইত্তিত সভ্যতা মারাত্মক রকমের অসংহতি দেখা যায় এবং ট্রয় থেকে গাজা শহর পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই ধ্বংসের পরে ছোটখাট বসতিতে খরা দেখা দেয় এবং জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। গ্রীসে মিসিনিয়ান আমলাদের ব্যবহৃত গ্রিক ভাষার লিনিয়ার বি রচনাবলী বাজেয়াপ্ত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দের পরে প্রাচীন গ্রিক তৈজসপত্রের অলঙ্করনে মিসিনিয়ান অলঙ্করণ কমতে থাকে এবং খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে ৭০০ অব্দে জ্যামিতিক পদ্ধতির অলঙ্করণ দেখা যায়।
অল্পবিস্তর সাংস্কৃতিক উন্নতির কারণে পূর্বে ধারণা করা হত এই সময়ে প্রধান ভূমি হেলেনেসের এবং বিদেশীদের মধ্যকার সকল যোগাযোগ বিচ্যুত হয়েছে। কিন্তু ইউবোয়ার লেলান্টাইন সমভূমির লেফকান্দি থেকে প্রাপ্ত হস্তনির্মিত দ্রব্যাদি থেকে জানা যায় পূর্বাঞ্চলের সাথে তাদের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল, বিশেষ করে খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ থেকে লেভান্ত উপকূলের সাথে। এছাড়া উপ-মিসিনিয়ান সাইপ্রাস-এ ও সিরীয় উপকূলে আল মিনায় হেলেনেসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মিসিনিয়ান সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দ থেকে ধ্বংস হতে থাকে। প্রত্নতত্ত্ব অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দ থেকে মিসিনিয়ার সুসংগঠিত সংস্কৃতির প্রাসাদ ও অন্যান্য বসতিসমূহ পরিত্যক্ত এবং ধ্বংস হতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ অব্দের মধ্যে মিসিনিয়ান সংস্কৃতি মুছে যেতে থাকে এবং জনসংখ্যা ব্যাপক হারে কমতে থাকে।[২] অনেকে মিসিনিয়ান সভ্যতার পতন ও ব্রোঞ্জ যুগ ধ্বংস হওয়ার পিছনে ডোরীয় এবং সামুদ্রিক মানুষদের আক্রমণ বা লোহার তৈরি সূক্ষ্ম ও দাড়ালো অস্ত্র আবিস্কারের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অন্যতম কারণ বলে বর্ণনা করেন।
এসময়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কিছু অংশে বড় রকমের বিপ্লব দেখা দেয় এবং আশেপাশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তৎকালীন অধিষ্ঠিত রাজ্যসমূহ বিজয় বা দখলের চেষ্টা চলে। মূলত যেসব স্থানে প্লেগ মহামারী আকার ধারণ করে এবং জনগণ দুর্দশাগ্রস্থ তারা এধরনের আক্রমণ চালায়। তথাকথিত সামুদ্রিক মানুষগণ হিত্তিত রাজ্য আক্রমণ করে এবং দখল করে। তারা সম্ভবত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য অংশ, যেমন কৃষ্ণ সাগর, এজিয়ান, এনাতোলিয়ান অঞ্চল থেকে আগত। সামুদ্রিক মানুষদের কারণে কার্নাক ও লুক্সর-এ প্রাপ্ত খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ ও ১২শ শতাব্দীর খোদাইকৃত মূর্তিই এই যুগ সম্পর্কে জানার একমাত্র উৎস। সামুদ্রিক মানুষ শব্দগুচ্ছ মিশরীয়রা উদ্ভাবন করে এবং একাধিক মিশরীয় সামরিক সাফল্যে তা ব্যবহৃত হয়।[৩]
এই ধরনের মানুষেরা সম্মিলিতভাবে দুইবার মিশর আক্রমণের চেষ্টা করে, একবার মার্নেপ্তাহর রাজত্বকালে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২০৮ অব্দে এবং রামিসেস ৩ এর রাজত্বকালে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১১৭৮ অব্দে।
বড় বড় প্রাসাদসমূহ ধ্বংস হওয়ার পর আর কোন পাথরের স্থাপনা নির্মিত হয় নি এবং দেওয়ালে অঙ্কনের রীতি ও লিনিয়ার বি লিখনের পান্ডুলিপি জব্দ করা হয়, বাণিজ্যিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং শহর ও গ্রাম পরিত্যক্ত হতে থাকে। লিনিয়ার বি পান্ডুলিপিসমূহ জব্দ করার প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক ধ্বস এবং লিনিয়ার বি লিখন পদ্ধতিতে পান্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়া।[৪] গ্রীসের জনসংখ্যা কমতে শুরু করে,[৫] এবং সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী, রাজা, রাজকর্মকর্তা, ও অন্যান্য রাজপদ্ধতি বিলুপ্ত হতে থাকে। এই যুগের বেশিরভাগ তথ্য পাওয়া যায় সমাধি ও সমাধিস্থ দ্রব্যাদি থেকে।
এই সময়ের তৈজসপত্রের ধরনে (এথেন্সের রক্ষণশীল, নসসের সারগ্রাহী) বস্তুগত সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় ও শায়ত্বশাসিত সংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়। তৈজসপত্রের প্রোটো-জ্যামিতিক ধরন পূর্বের নকশা থেকে কম জঠিল। নতুন নকশাসমূহ ছিল খুবই সরল, শুধু সরলরেখা ও বক্ররেখা সহজসরল সমাজব্যবস্থার নির্দেশক। অন্ধকার যুগের সমাজব্যবস্থাকে পৃথকীকরণ করাটা ভুল, কারণ গ্রীসের বিভিন্ন সংস্কৃতিকে বিশাল অন্ধকার যুগের সমাজব্যবস্থা শ্রেণীতে ভাগ করা যায় না।[৬] লৌহ যুগের থেসালি ও ক্রীটে থলস সমাধি পাওয়া যায় কিন্তু আর কোন স্থানে পাওয়া যায় নি এবং অ্যাটিকায় শবদাহ ছিল একটি প্রচলিত রীতি কিন্তু পাশের আর্গোলিড-এ কবর দেওয়া হত।[৭] মিসিনিয়ান প্রাসাদের কিছু পূর্ববর্তী স্থান, যেমন আর্গোস ও নসস দখল হতে থাকে। এছাড়া অন্যান্য স্থানসমূহ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে একটি বা দুটি প্রজন্ম বাস করতে শুরু করে যা জেমস হুইটলি বিগ ম্যান-এর সাথে সম্পর্কিত। বিগ ম্যান মূলত নিজেদের প্রতিভার বিকাশ এবং জন্মগত অস্থিতিশীলতা, যাকে হুইটলি লেফকান্দি বলে উল্লেখ করেছেন।[৮]
গ্রীসের কিছু অঞ্চল, যেমন অ্যাটিকা, ইউবোয়া, ও মধ্য ক্রীট, অন্য অঞ্চলসমূহের তুলনায় দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠে, কিন্তু দরিদ্র গ্রিকরা তাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না, যা শতাব্দীকাল ধরে হয়ে আসছে। তখনো কৃষিকাজ, বুনন, ধাতব, তৈজসপত্রের কাজ হত কিন্তু স্থানীয় ধরনের খুব কম উৎপাদন হত। প্রোটো-জ্যামিতিক ধরন (খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ থেকে ৯০০ অব্দ) শুরু হওয়ার পর খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ অব্দ থেকে শুরু করে কিছু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন হয়, যেমন উন্নত ফুলদানীর আকৃতি তৈরির জন্য কুম্ভকারদের চাকা ও অলঙ্করনের কাজে নির্ভুলভাবে বৃত্ত ও অর্ধবৃত্ত আঁকার জন্য কম্পাসের ব্যবহারসহ তৈজসপত্র বানানোর উন্নত ধরনের প্রযুক্তি। উচ্চ তাপমাত্রায় কাদামাটি পুড়িয়ে আরও চকচকে করা হত। ফলে, সর্বোপরি তৈজসপত্র বানানো আরও সহজ, কম জটিল তৈজসপত্র, ও কম কাঁচামালে সুন্দর শিল্প গড়ে তোলা হত।
সাইপ্রাস ও লেভান্তে-এ প্রথম লোহা গলানো শুরু হয় এবং লোহার আকরিক কাজে লাগানো হয়, যা মিসিনিয়ানরা পূর্বে উপেক্ষা করেছিল। এসময়ে অনভিজাত সৈন্যরা লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করে। যদিও সার্বজনীন লোহার ব্যবহার অন্ধকার যুগের একটি বৈশিষ্ট,[৯] কিন্তু ঠিক কখন থেকে কামারশালায় নির্মিত লোহার অস্ত্র এবং বর্ম ব্রোঞ্জ থেকে বেশি জনপ্রিয়তা পায় তা অনিশ্চিত। খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ অব্দ থেকে ছোট ছোট লৌহ শিল্প গড়ে ওঠে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ থেকে সব ধরনের অস্ত্র লৌহনির্মিত হতে থাকে।
সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের শুরুর দিকে গ্রীসের প্রধান ভূমি থেকে অ্যানাতলিন উপকূলের মিলেতাস, ইফেসাস, ও কলোফন শহরে বসতি স্থাপনার কারণে গ্রীসের লৌহ যুগের উপভাষার তারতম্য দেখা যায়, কিন্তু এ সম্পর্কিত সমসাময়িক প্রমাণ অপ্রতুল। সাইপ্রাসে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে গ্রিক সিরামিকের সন্ধান পাওয়া যায়।[১০] সিরীয় উপকূলের আল মিনায় ইউবোয়ীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠেছিল এবং এশিয়া মাইনর উপকূলের ক্রীট ও স্যামস-এ খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর অ্যাটিক প্রোটো-জ্যামিতিক তৈজসপত্র থেকে এজিয়ান গ্রিক বিনিময়ের সন্ধান পাওয়া যায়।[১১]
সাইপ্রাসে মিশ্র পেলাসজিয়ান ও ফনিসিয়ান জাতি বাস করত। তারা এই যুগে প্রথম গ্রিক বসতি স্থাপিত হলে একত্রিত হয়। সাইপ্রাসের কুম্ভকারেরাই খ্রিস্টপূর্ব ১০ম ও ৯ম শতাব্দীতে প্রথম সবচেয়ে সুন্দর এবং নতুন তৈজসপত্র বানানোর পদ্ধতি 'সাইপ্রো-ফোনিসিয়ান' 'ব্ল্যাক অন রেড' আবিষ্কার করে।[১২] এই পদ্ধতিতে তারা ছোট বোতল ও জগ তৈরি করে, যাতে মূল্যবান জিনিসপত্র, খুব সম্ভবত গন্ধযুক্ত তেল রাখা হত। গ্রিক ইউবোয়ীয় সিরামিকের জিনিসপত্রের সাথে এই ধরনের তৈজসপত্রও রপ্তানি করা হত এবং যা লেভান্তিনের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান টায়ার, লেবানন ও খ্রিস্টপূর্ব ১১শ শতাব্দীর শেষের দিকে ও ১০ম শতাব্দীতে দূরবর্তী সমভূমিতে পাওয়া যায়। সাইপ্রিয়ট ধাতব জিনিসপত্র ক্রীটের সাথে বিনিময় করা হত।
ধারণা করা হয় এই যুগে গ্রীস দলবদ্ধভাবে স্বাধীন অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এছাড়া ঐকৈ বা গৃহস্থালী ছিল, যা পরবর্তীতে পলিস-এ রূপান্তরিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১১৫০ অব্দে অন্ধকার যুগের সম্প্রদায়ের খননকার্য যেমন পেলোপনিসের নিচরিয়ায় খননকার্যের ফলে ব্রোঞ্জ যুগের পরিত্যক্ত শহর আবিস্কৃত হয়, পরে খ্রিস্টপূর্ব ১০৭৫ অব্দে তা একটি ছোট গ্রামের সাথে যুক্ত হয়। সে সময়ে মাত্র ৪০টি পরিবার বাস করত এবং তাদের প্রচুর কৃষি জমি ও গবাদি পশু ছিল। মেগারনসহ খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর বাকি দালানকোঠা ছিল গ্রামের প্রধানদের বাড়ি। মেগারন ছিল আশেপাশের বাকি দালানকোঠাসমূহের চেয়ে বড় কিন্তু একই উপাদান দিয়ে নির্মিত। এছাড়াও মেগারন ধর্মীয় স্থান ও সম্প্রদায়ের খাদ্য সংরক্ষণের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হত। অন্ধকার যুগে অভিজাত লোকজন বাস করত কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান গ্রামের সাধারণ জনগণের চেয়ে উন্নত ছিল না।[১৩] বেশিরভাগ গ্রিকরা আলাদাভাবে বাস না করে ছোট বসতিতে বাস করত। দেখা যায় যে, এই যুগের দুই থেকে তিনশ বছর পরে, প্রত্যেক পরিবারের সম্পত্তির প্রধান উৎস ছিল তাদের পূর্বপুরুষ ঐকৈ বা ক্লিরোদের জমিজমা এবং এই সম্পত্তি ছাড়া কেউ বিবাহ করতে পারত না।[১৪]
ইউবোয়া দ্বীপের লেফকান্দি ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকের উন্নত জনবসতি ছিল,[১৫] সম্ভবত প্রাচীন ইরিত্রিয়ার সাথে খোঁজ পাওয়া যায়।[১৬] মিসিনিয়ান সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ থেকে লেফকান্দি খুব দ্রুত বেরিয়ে আসে এবং ১৯৮১ সালে একটি সমাধি খননের ফলে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত গ্রীসের খ্রিস্টপূর্ব ১০শ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দালান পাওয়া যায়।[১৭] হেরুন নামে পরিচিত ৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট দালানটিতে দুইটি সমাধি রয়েছ। একটিতে চারটি ঘোড়া ও অপরটিতে লৌহ নির্মিত অস্ত্রসহ পুরুষদের সমাধি রয়েছে এবং সোনার অলংকার পরিহিত মহিলাদের কবর রয়েছে।[১৮] পুরুষদের হাড় তাদের শিকারের চিত্রসহ সাইপ্রাসে নির্মিত ব্রোঞ্জের পাত্রে রাখা হয়েছে। মহিলাদের চুল সোনার কেশবিন্যাস, হাতে সোনার আংটি, সোনার বর্ম, হেয়ারলুম নেকলেস দিয়ে সজ্জিত এবং মাথার কাছে ছোরা রাখা রয়েছে। ঘোড়াসমূহ সমাধির জন্য উৎসর্গকৃত এবং কয়েকটি ঘোড়ার মুখে লোহার খলীন দেওয়া। দালানটি সমাধির উপর নির্মিত বা বীর বা স্থানীয় সমাজপতিদের এই সমাধিতে সমাধিস্থ করা হয়েছে কিনা তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় নি। তবে ইহা সত্য যে বাড়িটি কিছুদিনের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে বৃত্তাকার মাউন্ড হয়ে গিয়েছিল।
পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৮২০ অব্দের শেষের দিকে এই দালানটির পূর্ব পাশে সেখানকার সম্প্রদায়ের ধনী সদস্যদের সমাধিস্থ করা হত। তাদের খ্রিস্টানদের মত সাধু ব্যক্তিদের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হত, এবং আশেপাশের ৮০টির মত সমাধিতে আমদানিকৃত জিনিসপত্রের উপস্থিতি দেখা যায়, যা লেফকান্দিতে প্রাপ্ত সমাধির অভিজাত রীতি হিসেবে উল্লেখ্য।
বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্রীসের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়। এথেন্সের কেরামেইকোস বা লেফকান্দির সমাধি এবং অলিম্পিয়ার পবিত্র স্থান, ডেলফি বা সামোসের হেরাইয়ন মন্দিরে প্রাচ্য, মিশর, ইতালির তৈলস্ফটিক ও গজদন্ত তৈরি উপকরণ দিয়ে দামী অর্ঘ্য প্রদান করা হত। এছাড়া গ্রিক তৈজসপত্র লেভান্তে উপকূলের আল মিনা এবং উত্তর রোমের ভিলানোভান সংস্কৃতির অঞ্চলে রপ্তানি করা হত। তৈজসপত্রের অলংকরণ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং হোমারের মহাকাব্যের গল্পের চরিত্রসমূহ অঙ্কিত হতে থাকে। লোহার যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের গুণগত মান উন্নত হতে থাকে। পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য নবায়নের ফলে কপার ও টিনের যোগান বাড়ে, যা দিয়ে ব্রোঞ্জের জিনিসপত্র, যেমন উৎসর্গীকৃত তেপায়া, যা অ্যাকিলিস-কে পেট্রোক্লাস-এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খেলার পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল।[১৯] ইউবোয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রীসের অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলে পুনরায় পূর্ব ও মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় গড়ে ওঠে এবং এসময়ের গড়ে ওঠা সম্প্রদায়সমূহের তদারকি করে পূর্বের বাসিলাস বা সমাজপতিদের পরিবর্তে একদল অভিজাত শ্রেণী।[২০]
খ্রিস্টপূর্ব মধ্য ৮ম শতাব্দী সময়ে একজন গ্রিক ফিনিশিয়ান সভ্যতার একটি নতুন বর্ণমালা পদ্ধতি গ্রহণ করে। গ্রিকরা ফিনিশিয়ানদের লেখার এই পদ্ধতি গ্রহণ করে, এতে স্বর ধ্বনি যুক্ত করা হয় এবং প্রথম সত্যিকারের বর্ণমালা লেখন পদ্ধতি (আবজাদ-এর বিপরীত) সৃষ্টি হয়। এই নতুন বর্ণমালা দ্রুত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং শুধু গ্রিক ভাষাই নয় বরং ফ্রিজিয়ান ভাষা ও অন্যান্য পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ভাষার লেখনীতে ব্যবহৃত হতে থাকে। গ্রীসের উপনিবেশসমূহ পশ্চিমে সিসিলি ও ইতালির (পিথেকৌসায়ে, কুমায়ে) দিকে বাড়তে থাকলে, এই নতুন ব্যঞ্জনের প্রভাব বাড়তে থাকে। ইউবোয়ীয় সিরামিকের হস্তনির্মিত জিনিসপত্রে গ্রিক ব্যঞ্জনে খোদাই করা লেখা কিছু ছত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পিথেকৌসায়েের ইসচিয়ার একটি সমাধি থেকে প্রাপ্ত আনুমানিক ৭৩০ অব্দের নেস্টর্স কাপ। এটি ইলিয়াড-এর সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত উৎস।[২১] খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে ইতালিতে প্রাচীন ইতালিক বর্ণমালার বিকল্প উদ্ভাবনের ফলে এট্রুস্কানরা উপকৃত হয়। বর্ণমালার অন্য বিকল্পসমূহ দেখা যায় লেমনিয়ান ও এশিয়া মাইনরের বর্ণমালায়। পূর্বের লিনিয়ার পান্ডুলিপি একেবারে পরিত্যক্ত হয় নি। লিনিয়ার এ লিপির বংশধর সাইপ্রিয়ট সিলেবারি লিপি সাইপ্রাসে আর্কাদোসাইপ্রিয়ট ও ইটিয়সাইপ্রিয়ট খোদাইয়ের কাজে হেলেনিস্টিক যুগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হতে থাকে।
কয়েকজন পণ্ডিত গ্রিক অন্ধকার যুগ ধারণার সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন এই যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দুষ্প্রাপ্যতার মূল কারণ এই সময়ের লিপির অভাব (যে কারণে অন্ধকার), যাকে তারা ঐতিহাসিক বিষয় না বলে আবিস্কারের ভুল বলে অভিহিত করেছেন।[২২]
|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)